• বুধবার   ২৯ মার্চ ২০২৩ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪২৯

  • || ০৭ রমজান ১৪৪৪

রমজানের আগে যেসব প্রস্তুতি জরুরি

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ১০ মার্চ ২০২৩  

হিজরি বছরের সবচেয়ে পবিত্রতম মাস রমজান। এ মাসে মুসলমানরা ফরজ ইবাদত রোজা পালন করেন। রোজা ফরজ হয় দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের আগের লোকেদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি (আল্লাহভীরু) হতে পারো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের তৃতীয়টি রোজা। রোজা ফারসি শব্দ। এর আরবি সমশব্দ হচ্ছে সওম, এর বহুবচন সিয়াম। সওম অর্থ বিরত থাকা, পরিত্যাগ করা। ইসলামি পরিভাষায় সওম হলো- আল্লাহর সন্তুটি কামনায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তসহকারে পানাহার থেকে বিরত থাকা।

বর্তমানে আমরাও রোজা রাখি। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে নিজেদের বিরত রাখি। কিন্তু একাধিক হাদিসের ভাষ্য হলো- শুধু না খেয়ে থাকার নাম রোজা নয়; বরং ইসলামে বিশেষত রোজাদার ব্যক্তিকে আরও বেশকিছু মন্দ বিষয় থেকেও বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আমরা মনে করি- রমজান শুরু হলে সমস্ত মন্দ কাজকর্ম থেকে বিরত থাকবো কিন্তু বাস্তবতা হলো- কোনোকিছুই যথার্থ প্রস্তুতি ছাড়া সুন্দর ও পরিপূর্ণভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এজন্য রোজা আসার আগেই সমস্ত মন্দ কর্ম পরিহারেরও প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।

সেই মন্দ বিষয়গুলো কী? হাদিস শরিফে যেগুলো থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে সেগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-

মিথ্যা পরিহার করা

মিথ্যা বলা মহাপাপ। মিথ্যাবাদীদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে কঠিন হুঁশিয়ারি এসেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মিথ্যাচারীরা ধ্বংস হোক।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ১০) রোজা রেখে মিথ্যা বলা আরও জঘন্য কাজ। হাদিস শরিফে এসেছে- ‘যদি কেউ রোজার সময় মিথ্যা বলে তবে তার রোজা রোজা নয় (তিরমিজি, হাদিস : ৭০৭)।

পরনিন্দা পরিত্যাগ করা

আমাদের মধ্যে অন্যের নিন্দা করা স্বভাবজাত। এটিও অত্যন্ত ভয়ানক গোনাহের কাজ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘দুর্ভোগ প্রত্যেকের যে সামনে নিন্দাকারী ও পেছনে গীবতকারী।’ (সুরা হুমাজা, আয়াত : ১)। কিন্তু কেউ যদি রোজা রেখে তা করে সেটি আরও মারাত্মক। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি কোনও রোজাদার ব্যক্তি কোনও মুসলমানের নিন্দা করে তবে মনে হয় যে সে আল্লাহর হালাল করা খাদ্য খেয়ে রোজা রেখেছিল এবং আল্লাহর নিষেধ করা কিছু দিয়ে রোজা ভেঙে ফেললো।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩৬৫৩)।

অনর্থক ও অশালীন কথাবার্তা না বলা

হাদিসে কুদসিতে এসছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখে, তখন সে যেন অশালীন কথাবার্তা না বলে ও হই চই না করে।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ১৯০৪)।

কটুকথা ও গালিগালাজ না করা

রাসুল (সা.) বলেন, ‘শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম রোজা নয়। রোজা হলো অনর্থক ও অশ্লীল কথা-কাজ বর্জন করার নাম। কেউ তোমাকে গালি দিলে বা তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে তুমি তার সঙ্গে তেমনটি না করে কেবল এটুকুই বলো– আমি রোজাদার।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস: ২৪১৬)।

মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা

খারাপ ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বাজে কথা ও কাজ ত্যাগ করলো না, তার পানাহার ত্যাগ নিছক উপবাস ছাড়া আর কিছু নয়।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ১৮০৪)।

উপরোল্লিখত বিষয়গুলো যে শুধু রমজানেই বিরত থাকতে হবে, এমনটি ভাববার কোনও সুযোগ নেই। এগুলো থেকে সবসময়ই নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার নির্দেশনা দেয় ইসলাম। তবে রোজা রেখে এগুলোতে লিপ্ত হলে আমাদের সারাদিন না খেয়ে থাকা অনেকটা মূল্যহীন হয়ে পড়ে। তখন আমাদের রোজা রেওয়াজে পরিণত হয়। এজন্য এখন থেকেই এসব মন্দ বিষয়গুলো থেকে আমরা নিজেদের বিরত রাখার প্রস্তুতি শুরু করবো। যাতে রমজানে আমাদের রোজা রাখা সার্থক হয়। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করেন। আমিন।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ
আলোকিত সিরাজগঞ্জ