বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে ‘অশ্লীলতা বন্ধে’ শপথ নিলেন টুনটুনি!

দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে ‘অশ্লীলতা বন্ধে’ শপথ নিলেন টুনটুনি!

নিজের ‘ভুল উপলব্ধি করে এখন থেকে সবার সহায়তায়  সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান আলোচিত ফেসবুক মডেল টুনটুনি আদ্রিতা।

চলমান নিরাপদ ইন্টারনেট ক্যাম্পেইনের অভিযানে সংবাদ প্রকাশিত হবার পর নিজের ফেসবুক আইডিতে এসে অতীতের সমস্ত ভুলের জন্য নেটিজনের কাছে ক্ষমা চেয়ে বিতর্কিত সব কন্টেন্ট তুলে নিয়েছেন টুনটুনি আদ্রিতা।

ফেসবুক লাইভে, টুনটুনি জানান, “সে সময় এসব করা একধরনের ‘পাগলামি ছিলো’ অনেকটা ঝোকের মাথায় করেছেন এসব ! কিন্তু এখন নিজেই সেসব দেখে খারাপ লাগে, তবে দেরি হয়ে গিয়েছে অনেক, ইতমধ্যেই তার কন্টেন্টগুলো ছড়িয়ে পড়েছে ইউটিউবের হাজারো চ্যানেলে।”

নিজের আইডি থেকে ভুল স্বীকার করার লাইভে অনেকটাই বিষাদগ্রস্থ্য দেখা যায় টুনটুনিকে, এক পর্যায়ে টুনটুনি জানান, ‘আমি মেনে নিয়েছি অনেক খারাপ লাইভ করেছি, আমি ভুল করেছি, ভুল স্বীকার করছি, দয়া করে আপনারা কেও যদি আমার আচরনে কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে ক্ষমা করে দিন। আমি ভবিষ্যতে আর কোনদিন এমন বিতর্কিত কিছুই করবোনা। আর সাইবার ক্রাইমের উদ্দেশ্যে বলছি, দয়া করে যদি সম্ভব হয় তাহলে বিভিন্ন চ্যানেলে ছড়িয়ে পড়া আমার ভিডিওগুলো আপনারা মুছে দেন।

এসময় টুনটুনি আরও বলেন, আসলে তখন তো ছোট ছিলাম হ্যা, এজন্য উলটা পালটা ফান টান, মজা টজা করছি। এখনতো আগের থেকে একটু বড় টড়ো হইছি এজন্য বুঝতে শিখছি, বোঝার পর থেকে আমি আর এরকম কোন লাইভ করছিনা’ ——- ।

প্রায় নয় মিনিটের লাইভে টুনটুনি জানান, ‘ভুল যেহেতু হয়েই গেছে , “আমি বারবার বলছি আমরা এসব ক্ষমার দৃস্টিতে দেখবেন– আমার একটা লাইফ আছে আমাকে সংসার করতে হবে, — মানে বেবির মা হতে হবে … আবেগতাড়িত হয়ে জানান, আমি ভাষা হারিয়ে ফেলছি। আমি সাইবার ক্রাইমের উদ্দেশ্যে বলছি, আমি আর এমন ভুল করবোনা। আমি চাই ভালোভাবে বাচতে, এবং ভালো একটা সমাজ গড়ুক’ …”

টুনটুনি জানান, তার স্বপ্নের কথা, নিজের ‘অপরাধ স্বীকার করে নিয়ে বলেন, এখন থেকে সমাজের জন্য প্রজন্মের জন্য ভালো কিছু করতে চান। প্রডাক্টিভ কোন কিছু করে উপহার দিতে চান সবাইকে। নিজের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বললেন, ‘আর এটা শুধু তখনই সম্ভব যখন তাকে পজিটিভলি সাপোর্ট করা হবে’।

এসময় তাকে ( টুনটুনিকে) ভালো হবার সুযোগ করে দিতেও অনুরোধ জানান তিনি । ভবিষ্যতে একজন সফল আইনজীবী হতে চাওয়া আইনের এই ছাত্রী টুনটুনি আদ্রিতার কন্ঠ জড়িয়ে আসে শেষের কথায়, কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘দেখেন আমার বাবা নেই। আমাকে সুস্থ্য হবার সুযোগ দেন আপনার। আমি চাচ্ছি সবাই ভালো হোক ,অশ্লীলতা বন্ধ হোক।

প্রসঙ্গত, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের নেতৃত্ব শুরু হওয়া নিরাপদ ইন্টারনেট কাম্পেইন অভিযানে মন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের সব সাইবার ইউনিট, র‌্যাব, বিটিআরসি, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের এ-টু-আই।

প্রাথমিকভাবে এই ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে সাইবার দুনিয়ায় পরিচিত ও সমালোচিতদের তালিকা তৈরি করে তাদের একে একে এনে কাউন্সিলিং করা হচ্ছে। ইতমধ্যে নিজের ভুল স্বীকার করে ‘মুচলেকার’ মাধ্যমে বিতর্কিত এসব কন্টেন্ট সরিয়ে নিয়েছেন দুজন। আর তৃতীয়জন  (টুনটুনি আদৃতা) পুলিশি জিজ্ঞসাবাদের আগেই ভুল স্বীকার করলেন চলমান প্রক্রিয়ার অংশে।

এর আগে গত রোববার মডেল সানাই মাহবুব সুপ্রভা ও মঙ্গলবার সালমান মুক্তাদিরকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ ও কাউন্সিলিং করা হয়।

এ বিষয়ে বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি ও ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম  বলেন, ‘যারাই ইন্টারনেটকে কলুষিত করবে তাদেরকেই আইনের আওতায় আনা হবে।

এসময় তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তারকাদের অনেকেই টিকটক ও বিগো লাইভ অ্যাপ ব্যবহার করেন। তারকাসহ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যারা এসব অ্যাপ ব্যবহার করেন, তাদের অনুরোধ করছি, আপনারা যদি এসব ব্যবহার বন্ধ করেন, তাহলে সাধারণ মানুষ এমনিতে সরে যাবে। এসব অ্যাপ তরুণদের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।’

উল্লেখ্য, সামাজিক মাধ্যমে কিছু মানুষ এসব অশ্লীল ভিডিওকে ‘সস্তা বিনোদনের খোরাক’ হিসেবে লুফে নিলেও বেশিরভাগ মানুষই এসব বিতর্কিত মডেলদের এমন অশ্লীলতায় বিরক্ত ছিলেন অনেক বেশি। তাদের সস্তা আবেদনময়ী ভিডিওগুলোতেও হাজারো মানুষের প্রতিবাদ ছিলো কড়া সমালোচনায়। কিন্তু এতদিন এসবের তোয়াক্কা করেননি তাদের কেওই । বরং অশ্লীলতা আর বিকৃতির প্রকাশ করে চলেছেন আরও বেশি উৎসাহে!

ধারাবাহিকভাবে এসব বিতর্কিতদের ‘আটক’ ও জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায় ইতমধ্যে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন হাজারো নেটিজন । এমন অশ্লীলতা দমনে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের প্রত্যক্ষ্য নির্দেশনা ও ‘সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন বিভাগকেও সাধুবাদ জানাচ্ছেন সচেতন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। এই সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদে মন্তব্যের ঘরে নেটিজনদের হাজারো মন্তব্য এমন অশ্লীলতা বন্ধের পক্ষেই। নিরাপদ ইন্টারনেট ক্যাম্পেইনের এই অভিযানকে ‘আশাব্যঞ্জক’ উল্লেখ করে এই অভিযান অব্যাহত রাখার দাবীও তাদের।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ