বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

১৫ মিনিট নির্যাতনের পর তাকে হত্যা করা হয়

১৫ মিনিট নির্যাতনের পর তাকে হত্যা করা হয়

নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর মাজেদ আলী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে র‌্যাব। নৌকায় ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে তাকে ১৫ মিনিট ধরে নৃশংস নির্যাতনের পর গলাটিপে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে মূল হোতা মহিউদ্দিন বুলু (৪২), তার সহযোগী সুলতান মাহমুদ বাবু (৩৬) ও নৌকার মাঝি সোহেলকে (২১)।

র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী শমসের উদ্দিন মঙ্গলবার বিকেলে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত ১৩ মার্চ নাজমা বেগম নামে এক নারী র‌্যাব-১১ তে অভিযাগে করেন তার স্বামী মাজেদ আলী ১০ মার্চ থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। এ বিষয়ে ওই নারী ফতুল্লা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। যার নম্বর- ৬৩৪-১২/৩/১৯। 


 

গ্রেফতার মহিউদ্দিন বুলু

 অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, মহিউদ্দিন বুলু নামে এক আদম ব্যবসায়ী তার স্বামীকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে ২ লাখের বেশি টাকা নেয়। তাদেরকে নিজ বাড়ি পাবনা থেকে এনে ফতুল্লার টানপাড়ার একটি বাসায় রাখে। কিন্তু তার স্বামীকে বিদেশে না পাঠিয়ে বিভিন্ন টালবাহানা করে বুলু।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন ১০ মার্চ বিকেলে বুলু তার স্বামী মাজেদ আলীকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। কিন্তু রাতে বুলু ফিরে এসে বলেন- মাজেদ আলীর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়েছে। ঝগড়ার সময় মাজেদ তার কনিষ্ঠ আঙুলে কামড়ে দেয়। পরে নাজমা বেগমকে নিয়ে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে গিয়ে বুল চিকিৎসা নেয়। একপর্যায়ে কৌশলে পালিয়ে যায় বুলু। এরপর থেকে তার স্বামী আর ফিরে আসেনি। তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগ পেয়ে মাঠে নামে র‌্যাব। মাজেদ আলীর সন্ধান না পেলেও গত ৮ এপ্রিল ফতুল্লার একটি মার্কেট থেকে মহিউদ্দিন বুলুকে আটক করা হয়। 

 

গ্রেফতার সুলতান মাহমুদ বাবু


প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বুলু জানায়, মাজেদকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে ২ লাখের বেশি টাকা নিয়েছে সে। ঘটনার দিন সে ও মাজেদ নৌকায় ঘুরতে যায়। পরে তাদের মাঝে ঝগড়া হয় ও মাজেদ আলী তার কনিষ্ঠ আঙুলে কামড়ে দেয়। মাজেদকে রেখে সে ফিরে আসে। কিন্তু অনেক রাত হয়ে গেলেও মাজেদ আলী ফিরে না আসলে তার স্ত্রী কান্নাকাটি করতে থাকলে সে পালিয়ে যায়। নিজের মোবাইল ফোনটিও বন্ধ করে দেয় যেন নাজমা বেগম তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে। কিন্তু সে মেজেদ আলীকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেনি।

তিনি আরো বলেন, পরে প্রযুক্তির সহায়তায় তার মোবাইল ফোনের কল লিস্ট চেক করা হয়। ঘটনার দিন তার গতিবিধি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিকেলে মেঘনা ব্রিজ ও সন্ধ্যায় মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া এলাকার মেঘনা নদীর তীরে অবস্থান করছিল সে। ধারণা করা হয় টাকা আত্মসাতের জন্য বুলু মাজেদ আলীকে হত্যা করে গুম করে থাকতে পারে। এসব কারণে ৯ এপ্রিল নাজমা বেগম ফতুল্লা থানায় একটি মামলা করেন। আর ছায়া তদন্ত করতে থাকে র‌্যাব।

পরে অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই দিন বুলু, মাজেদ আলী ও বাবুকে নৌকায় ঘুরতে নিয়ে যায় সোহেল নামে নৌকার এক মাঝি। ১০ মে মাঝি সোহেলকে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে একে একে বেরিয়ে আসে মাজেদ হত্যার লোমহর্ষক তথ্য।


 

গ্রেফতার সোহেল

 সোহেল জানায়, তার এলাকায় বিয়ে করার সূত্রে সুলতান মাহমুদ বাবু’র সঙ্গে তার পরিচয়। ১০ মার্চ সকালে এলাকার জামাই সুলতান মাহমুদ বাবু নদীতে সারাদিন ঘুরতে যাওয়ার জন্য ১ হাজার টাকায় তার নৌকা ভাড়া করেন। পরে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে দাউদকান্দি ব্রিজের পশ্চিম পাশে চাষির বালুর মাঠ থেকে বাবুর দুই পরিচিত ব্যক্তি নৌকায় ওঠে। 

তারা নৌকায় ভ্রমণে বের হলে তাদের আলোচনা থেকে বুলু ও মাজেদের নাম জানতে পারে সোহেল।  এক পর্যায়ে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বাবু ও বুলু কিল ঘুষি মেরে মাজেদ আলীকে নৌকার পাটাতনে শুইয়ে ফেলে। প্রায় ১৫ মিনিট নির্মম নির্যাতনের পর গলা টিপে মাজেদকে হত্যা করে তারা। 

নির্যাতনের সময় মাজেদ চিৎকার করলে বাবু সোহেলকে ইঞ্জিনের শব্দ বাড়িয়ে দিতে বলে। নির্যাতনের একপর্যায়ে মাজেদ বুলুর আঙুল কামড়ে দেয়। হত্যাকাণ্ডের পর মাজেদের লাশ মেঘনা নদীতে ফেলে দেয় তারা। 

সোহেল আরো জানায়, মাজেদকে নির্যাতনের সময় নৌকার পাটাতনে রক্ত লেগে যায়। পরে সোহেলকে দিয়ে বাবু সে রক্ত ধুয়ে ফেলে। এ বিষয়ে সোহেল গতকাল আদালতে জবানবন্দী দেয়। পরে রাত দেড়টার দিকে গজারিয়ার গোয়াগাটিয়ার শিমুলিয়া’র নিজ বাড়ি থেকে সুলতান মাহমুদ বাবুকে আটক করা হয়। 

আলোকিত সিরাজগঞ্জ