রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও রাষ্ট্রগঠনের ইতিহাসে আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও রাষ্ট্রগঠনের ইতিহাসে আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান

সংগৃহীত

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও রাষ্ট্রগঠনের ইতিহাসে আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান এক অবিস্মরণীয় নাম। জাতীয় চার নেতার একজন হিসেবে তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মুজিবনগর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রেপ্তারের পর কামারুজ্জামানসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে গিয়ে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠনের উদ্যোগ নেন। ১০ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারে তিনি স্বরাষ্ট্র, কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। যুদ্ধকালীন সময়ে শরণার্থী ব্যবস্থাপনা, মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন ও অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাধীনতার পর তিনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী, পরবর্তীতে বাণিজ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন, যা দল ও রাষ্ট্র—উভয় ক্ষেত্রেই তার সাংগঠনিক দক্ষতার স্বীকৃতি বহন করে।

রাজনৈতিক জীবনে কামারুজ্জামান ছিলেন আদর্শনিষ্ঠ, ত্যাগী ও আপসহীন নেতা। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ছয় দফা, গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধ—প্রতিটি পর্যায়ে তিনি সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর কামারুজ্জামানসহ চার জাতীয় নেতাকে কারাবন্দী করা হয়। একই বছরের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করা হয়। এই দিনটি ইতিহাসে ‘জেল হত্যা দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত।

আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ছিলেন এমন এক রাষ্ট্রনায়ক, যিনি ব্যক্তিগত ক্ষমতার চেয়ে জাতির স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। তার জীবন, ত্যাগ ও নেতৃত্ব আজও বাংলাদেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গভীর প্রেরণার উৎস হয়ে রয়েছে।

সর্বশেষ:

শিরোনাম: