সংগৃহীত
আমি অনেক বছর ধরে পাহাড়ে শিম চাষ করে আসছি। এবার ২৫০ শতক পাহাড়ি জায়গায় শিমের আবাদ করেছি। এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছি। আরোও হবে। পাশাপাশি লাউ, বরবটি, ঝিঙ্গাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছি। কথাগুলো বলছিলেন সীতাকুণ্ড উপজেলার চাষি মো. সোলেমান।
পাহাড়জুড়ে শুধু শিমের ক্ষেত চোখে পড়বে। কেউ ক্ষেতে পরিচর্যা করছেন, কেউ গাছ থেকে শিম তুলছেন। থোকায় থোকায় ঝুলছে বেগুনি রঙের শিম। এভাবে প্রতিদিন পরিশ্রমের ফসল চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সমতলের পাশাপাশি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার পাহাড়ে রূপবান শিম চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন কৃষকেরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সীতাকুণ্ড উপজেলায় উৎপাদিত রূপবান শিমের দেশজুড়ে বেশ কদর। এখানকার পাহাড়ে উৎপাদিত শিম বাজারে নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। পাহাড়ের পাদদেশে অপেক্ষায় থাকেন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহর থেকে আসা পাইকাররা। তারা সেখান থেকে শিম কিনে ট্রাকযোগে নিয়ে যান বিভিন্ন স্থানে। এ উপজেলা শিম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। রূপবান শিম ছাড়াও বিশেষ করে ছুরি, লইট্টা, বাঁটা শিমের চাহিদা বেশি। কিন্তু শিম সুস্বাদু ও লাভজনক হাওয়ায় দিন দিন এর চাষ বেড়ে চলেছে
কৃষকেরা জানান, রূপবান শিম ওঠার শুরুতে তারা প্রতি কেজি পাইকারি বিক্রি করেছেন ১৬০-১৭০ টাকা দরে। এখনো ১৩০-১৪০ টাকা দরে শিম বিক্রি করছেন। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হাওয়ায় এর উৎপাদন খরচ কিছুটা বেশি। চাষিদের অনেক কষ্ট করতে হয়। কোথাও ছড়া, কোথাও পিচ্ছিল পথ ও অনেক উঁচু টিলা বেয়ে শিমের ক্ষেতে যেতে হয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ৭৫ একর জমিতে রূপবান শিমের আবাদ হয়েছে। চাষ করেছেন প্রায় ৩০০ কৃষক। বাঁশবাড়িয়া ও কুমিরায় বেশিরভাগ পাহাড়ি এলাকায় রূপবান শিমের আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া সৈয়দপুর, বারৈয়ারঢালা ও সীতাকুণ্ড পৌর সদর এলাকায় রূপবান শিমের আবাদ হয়েছে।
শিম চাষি মনির আহম্মদ বলেন, আমি ৫ বছর ধরে পাহাড়ে রূপবান শিমের চাষ করেছি। এবার ১২০ শতক জায়গায় চাষ করেছি। এ পর্যন্ত ৩ লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছি। আরও ২-৩ মাস বিক্রি করতে পারবো। পাহাড়ে অনেক কষ্ট করতে হয়। অনেক পুঁজি লাগে। কিন্তু আমাদের কথা কেউ ভাবে না।
মহিউদ্দিন বলেন, আমি সারাবছরই পাহাড়ে পাহাড়ে রূপবান শিমসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছি। ৩ বছর ধরে পাহাড়ই আমার ঘর-বাড়ির মতো হয়ে গেছে। ২৫০ শতক এরিয়ায় শিম চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত ৮ লাখের বেশি টাকার শিম বিক্রি করেছি। আরও ৩ মাস বিক্রি করতে পারবো। তবে বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশা হলে ফুল ঝরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
পাইকারি ব্যবসায়ী মুনাফ বলেন, কেজিপ্রতি গড়ে ১৩০ টাকা করে ১১৪৫ কেজি শিম কিনেছি। এখন সেগুলো চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন কাঁচাবাজারে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করবো। জোগানের ওপর নির্ভর করে বাজারের দর ঠিক করে থাকি।
বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল মনছুর বলেন, সমতলে জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কৃষকেরা বাধ্য হয়ে পাহাড়ে চাষাবাদ করছেন। এলাকার শতাধিক কৃষক পাহাড়ে রূপবান শিম চাষ করেছেন। এই শিম চাষে তারা লাভবান হয়েছেন। উপজেলায় এক মৌসুমে ২০ কোটি টাকার শিম উৎপাদন হয়।
সীতাকুন্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, রূপবান শিমে দীর্ঘসময় ফলন হয়। শীতকালীন শিমের চেয়েও দাম বেশি। ফলে কৃষকেরা এ শিম চাষের দিকে ঝুঁকছেন। সারাদেশে এখানকার শিমের বেশ সুনাম আছে। আমাদের পক্ষ থেকে চাষিদের সব ধরনের পরামর্শের পাশাপাশি সহযোগিতা করা হয়।