মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ফরিদপুরে ‘ব্ল্যাক রাইস’ চাষে তরুণ উদ্যোক্তার বাজিমাত

ফরিদপুরে ‘ব্ল্যাক রাইস’ চাষে তরুণ উদ্যোক্তার বাজিমাত

ফরিদপুর সদরে চিকিৎসাসংক্রান্ত গুণাগুণ ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ “ব্ল্যাক রাইস” চাষে সফল হয়েছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হাসিবুল হাসান রন্টি। দুই বিঘা জমিতে চাষ করে তিনি ৬০ মন ধান পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া থেকে “ব্ল্যাক রাইস” ধানের জাত সংগ্রহ করেন তিনি। সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নে চাষ করা হয়েছে এ ধান। হাসিবুল হাসান রন্টির বাড়ি ফরিদপুর শহরের আলীপুর। 

চিকিৎসাসংক্রান্ত গুণাগুণের জন্য ব্ল্যাক রাইসের চালকে “ওয়ার্ল্ড সুপার ফুড” বলা হয়। এর দামও অন্য সব চালের তুলনায় অনেক বেশি। বিশ্বের ধনী দেশগুলোতে এই চালের ব্যাপক চাহিদা। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে কালো চালের বাজার আছে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এই চালের খাদ্যগুণ অনেক। রয়েছে ঔষধিগুণও। ১১টি অ্যামিনো অ্যাসিড আছে এতে। কপার, জিংক, ফাইবারের মাত্রাও বেশ। কার্বোহাইড্রেড অন্তত কম বলে ডায়াবেটিসের রোগীরাও তা খেতে পারেন। তা ছাড়া সাদা চাল বা পরিশোধিত ময়দার তুলনায় এটি স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে বেশি কার্যকর।

পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ও বাজারে দাম বেশি হওয়ায় দিন দিন ব্ল্যাক রাইস চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষিরা। এটি “কালো ধান” নামে পরিচিত। ঔষধি গুণাগুণের কারণে এই ধান চাষে ইচ্ছা জাগে হাসিবুল হাসান রন্টির।

তার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা ট্রিবিউনের। তিনি জানান, ইউটিউবে প্রথম এই ধানের চাষাবাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানেন তিনি। পরে ২ হাজার টাকা কেজি দরে অনলাইনে ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার দুই কেজি ব্ল্যাক রাইস ও দুই কেজি গোল্ডেন ব্ল্যাক রাইস ধানের বীজ সংগ্রহ করেন।

তিনি বলেন, “এক বিঘা জমিতে ব্ল্যাক রাইস ও এক বিঘা জমিতে গোল্ডেন ব্ল্যাক রাইস ধানের চারা রোপন করেছি। প্রায় ৭৫ দিন হলো ধান লাগিয়েছি। আর দু সপ্তহের মধ্যে ধান কাটতে পারবো। ব্ল্যাক রাইসের চাল একটু মোটা ও গোল্ডেন ব্ল্যাক রাইসের চাল চিকন হয়।”

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব সময় পর্যবেক্ষেণ করছে। তারা বীজ সংগ্রহ করার কথঅ জানিয়েছে রন্টিকে। এছাড়াও স্থানীয় কৃষকেরা এরই মধ্যে ১ হাজার টাকা কেজি দরে এই ধানের বীজ সংগ্রহ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইলিয়াস শেখ বলেন, “রন্টির ব্ল্যাক রাইস ধানের ক্ষেতের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। আমরা নিবিড় পরিচর্যা করে যাচ্ছি তার ক্ষেতে। এর আগে কিছু পোকার আক্রমণ হয়েছিল। ব্যবস্থা নেওয়ায় সেটিরও সমাধানি হয়েছে। এ ধানের ফলনও বেশি। অন্যান্য ধানে বিঘা প্রতি বিশ মণ হয়। তবে এই ধান ৩০ মণ পর্যন্ত পাওয়া যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জিয়াউল হক ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “সাধারণ ধানের চেয়ে কালো ধানের দাম ও চাহিদা অনেক বেশি। কালো ধানে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় শরীরের রোগপ্রতিরাধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে থাকা ফাইবার হার্টকে সুস্থ রাখে। এছাড়া ডায়াবেটিস, স্নায়ুরোগ ও বার্ধক্য প্রতিরোধক এই ধানের চাল।”

প্রসঙ্গত, কুমিল্লা, নওগাঁ, চট্টগ্রাম ও ঠাকুরগাঁওসহ কয়েকটি এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে আবাদ হচ্ছে কালো চালের ধান এবং প্রতিবছরেই আবাদ এলাকার পরিমাণ বাড়ছে।

 

আলোকিত সিরাজগঞ্জ