বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২

গ্রামটি এখন অতিথি পাখির স্বর্গরাজ্য

গ্রামটি এখন অতিথি পাখির স্বর্গরাজ্য

সংগৃহীত

পুরো গ্রামজুড়ে শুধু পাখির কলকাকলি। ডানার ঝাপটানোর আর কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত চারপাশ। যা দেখতে প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমণপিপাসুরা। হাজার হাজার ধূসর পাল‌কের বড় আকা‌রের এসব পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত এখন পুরো গ্রামটি। লম্বা পা ও হালকা ধূসর বর্ণের ঠোঁটের পা‌খিগু‌লো দেখ‌তেও বেশ। তারা আশ্রয় নিয়েছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাণীবহ ইউনিয়নের শিবরামপুর গ্রামের করবাড়ির শতবর্ষী গাছগুলোতে।

জানা গেছে, প্রতিবছরের মতো এবারও শীতপ্রবণ দূর দেশ থেকে উষ্ণতা ও খাদ্যের খোঁজে উড়ে এসেছে এসব অতিথি পাখি। এখানে দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির। পাখিগুলোর অধিকাংশ শামুকখোলা বা ওপেনবিল স্টর্ক, পানকৌড়ি ও সারস পাখি। যাদের কেউ আসে সাইবেরিয়া থেকে, কেউ বা হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চল থেকে। এই অতিথি পাখির প্রধান খাদ্য শামুক। প্রতিদিন সকা‌লে পাখিগু‌লো আশপা‌শের জলাশ‌য়, বিল ও পুকু‌রে যায় খাবা‌রের সন্ধানে, খাবার নি‌য়ে নী‌ড়ে ফি‌রে বিকেল বা সন্ধ‌্যায়। ততক্ষণ ডিম ও বাচ্চা পাহারায় থা‌কে অন্য পাখি।

সকালে সূর্যের আলো ফুটতেই শুরু হয় তাদের কিচিরমিচির, আর বিকেলে আকাশজুড়ে তাদের উড়াউড়ি যেন এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। রূপবৈচিত্র্যের এই বাংলাদেশে শীতের আগমনের আগেই অতিথি পাখিদের আগমন ঘটে। সারাটা দিন পাখির কলতান আর ডানা ঝাপটানোর শব্দে মুখর থাকে পুরো এলাকা। শিশু, কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্ক সব বয়সী মানুষই মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার পাখির কুজনে মুখর চারপাশ। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও উষ্ণতা ও খাদ্যের খোঁজে হাজার হাজার অতিথি পাখি জড়ো হয়েছে শিবরামপুর গ্রামের কর বাড়ির বাগানে। প্রায় ৪/৫ মাস ধরে তারা এখানে রয়েছে। দিনকে দিন এদের সংখ্যা বাড়ছে। প্রায় প্রতি‌টি বাসায় র‌য়েছে ডিমসহ পা‌খির বাচ্চা। কর বাড়ির পুকুরের চারপাশ গাছ-গাছালিতে ঘেরা। এসব গাছের ডালে ডালে বাসা বেঁধেছে এসব অতিথি পাখি। সাদা রঙের এ পাখিরা কিচিরমিচির করে গাছের এপাশ-ওপাশ উড়ে বেড়ায়। কখনও ডালে বসে, কখনও বা উড়ে চলে যায়। প্রতিদিন সকালে খাবারের উদ্দেশ্যে এরা দলবেঁধে বেরিয়ে পড়ে। আবার সন্ধ্যে নামার আগে দলবেঁধে নীড়ে ফিরে আসে। হাজার হাজার পাখির এমন আচরণ নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন উৎসুক মানুষ।

পাখি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসেন। কেউ ছবি তোলেন, কেউ কিচিরমিচির শব্দ রেকর্ড করেন। পাখির এ আগমনে প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্যে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে কলকাকলি। এ যেন প্রকৃতির ভিন্ন রকম উৎসব! পুরো এলাকায় এর আবহ।

পরিবেশবিদরা বলছেন, এসব পাখি নিজেদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের সন্ধানে এখানে আসে। তাই তাদের অতিথির মতোই সম্মান জানানো উচিত। কারণ প্রকৃতির ভারসাম্য ও সৌন্দর্য রক্ষায় এই অতিথি পাখিদের ভূমিকা অনন্য।

অতিথি পাখি দেখতে আসা কয়েকজন বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে শীতের শুরুতেই পাখিরা আসতে শুরু করে এবং পুরো শীতকাল জুড়ে থাকে তাদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি। সত্যিই, কর বাড়ির এই পাখিবাস এখন এক অনন্য ‘অতিথি পাখির স্বর্গরাজ্য’।

কর বাড়ির কর্তা মুকুল কর বলেন, দুই/তিন বছর ধরে আমাদের বাড়ির বাগানে অতিথি পাখি আসছে। এ বছর ১০ থেকে ১৫ হাজার পাখি এসে বসবাস করছে। তার ডিম পাড়ছে, বাচ্চা ফুটাচ্ছে। রাতভর কিচিরমিচির শব্দ আমাদের এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। অনেকেই এসে পাখিগুলো শিকার করতে চায়। আমরা তাদেরকে বাধা দেই। দূর-দূরান্ত থেকে পাখি দেখতে আমাদের বাড়িতে অনেকে ছুটে আসছে। বিষয়টি আমাদের কাছে দারুণ লাগে।

রাজবাড়ীর জীব ও পাখি নিয়ে কাজ করা সংগঠন আরামঘর জীববৈচিত্র্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা লিটন চক্রবর্তী বলেন, এই অতিথি পাখিগুলোকে রক্ষার জন্য ও তাদের নিরাপত্তার জন্য যাতে কেউ এগুলো বিলুপ্ত বা শিকার করতে না পারে এজন্য প্রশাসন ও বন বিভাগকে এগিয়ে আসতে হবে।

রাজবাড়ী সামাজিক বনায়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর সায়েদুর রহমান ব‌লেন, পাখিগুলো নিয়মিত নজরদারির মধ্যে রয়েছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং কোনো দুষ্কৃতিকারী যেন এ অতি‌থি পাখিকে ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য টহল কার্যক্রম প‌রিচালনা করা হচ্ছে। পা‌খির নিরাপত্তায় প্রতি‌দিন অফিসের একজন স্টাফ বিকেল ৪টা থেকে রাত ৭/৮টা পর্যন্ত ওখা‌নে দ্বা‌য়িত্ব পালন করছে। এছাড়া বিষয়টি জেলা প্রশাসন এবং বিভাগীয় বন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে। জনসচেতনতা তৈরিতে ওই এলাকায় মাইকিংসহ সাইনবোর্ড স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হ‌য়ে‌ছে।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, সদর উপজেলার বাণীবহ ইউনিয়নে একটি বাড়িতে প্রায় ৭/৮ মাস ধরে অতিথি পাখি অবস্থান করছে। পাখিগুলো সংরক্ষণের জন্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য বন বিভাগকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।

সূত্র: ঢাকা পোষ্ট

সর্বশেষ:

শিরোনাম: