শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সেদিনের রাজত্ব আল্লাহর

সেদিনের রাজত্ব আল্লাহর

মৃত্যু এমন এক বাস্তবতা, যার থেকে কেউ পালায়ন করতে পারবে না। প্রত্যেকটি প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা সূরা আম্বিয়ার ৩৫ নম্বর আয়াতে এরশাদ করেন, 

كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ.
‘প্রত্যেকটি প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’

قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِى تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُۥ مُلٰقِيكُمْ
‘হে নবী আপনি বলে দিন! মৃত্যু যার থেকে তোমরা পালায়ন করছো, সে অবস্যই তোমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। (সূরা: জুমাআহ,আয়াত নম্বর: ৮)।

أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِككُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنتُمْ فِى بُرُوجٍ مُّشَيَّدَةٍ.
‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, মৃত্যু তোমাদেরকে পাকরাও করবেই, যদিও তোমরা সুউচ্চ দুর্গে অবস্থান কর।’ (সূরা: নিসা,আয়াত নম্বর: ৭৮)।

لِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ ۚ إِذَا جَآءَ أَجَلُهُمْ فَلَا يَسْتَـْٔخِرُونَ سَاعَةً ۖ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ.
‘প্রত্যেকটা জাতিরই মৃত্যুর জন্য একটি নির্ধারিত সময় রয়েছে, যখন সেই নির্ধারিত সময় চলে আসে তখন তার থেকে এক মুহূর্তও আগ পিছ করা হয় না।’  (সূরা: ইউনুস, আয়াত নম্বর: ৪৯)।

এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী, যাকে নিয়ে তোমরা স্বপ্ন দেখছো, এই স্বপ্নের পৃথিবীও একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে।  কেয়ামতের সময় যখন নিকটবর্তী হবে তখন আল্লাহ তায়ালা নিজের দায়িত্ব পাপ্ত ফেরেশতাকে সিংগায় ফুৎকার দেয়ার আদেশ দেবেন। 

অতঃপর ফেরেশতা সিংগায় ফুৎকার দেবেন, তার ফলে পৃথিবী ও পাহাড় সমূহ উদ্ধলিত হবে,  চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। আকাশ ফেটে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে এবং নক্ষত্র সমূহ ঝড়ে পরবে। সূর্য তার কিরণ হারিয়ে ফেলবে। সমূ্দ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে। সেদিন কেয়ামতের ভূমিকম্প ও কেয়ামতের ভয়াভহ অবস্থা দেখে সবাই মৃত্যু বরণ করবে।

আল্লাহ তায়ালা বলছেন,

يٰٓأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ ۚ إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَىْءٌ عَظِيمٌ.
يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّآ أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكٰرٰى وَمَا هُم بِسُكٰرٰى وَلٰكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ.
‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ংকর ব্যাপার। সেদিন তোমরা দেখবে, প্রত্যেক স্তন্য দানকারীনি আপন  দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভধারিনী তার গর্ভপাত করে ফেলবে। তুমি দেখবে মানুষকে পাগলের মতো, আসলে ওরা পাগল নয়। তবে আল্লাহর আজাবেই হবে কঠিন।’ (সূরা: হাজ্জ,আয়াত নম্বর: ১-২)।

فَإِذَا نُفِخَ فِى الصُّورِ نَفْخَةٌ وٰحِدَةٌ. وَحُمِلَتِ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةً وٰحِدَةً.
‘অতঃপর যখন সিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে, একটি মাত্র ফুক। আর জমিন ও পর্বত মালাকে উদ্ধলিত করা হবে এবং মাত্র একটি আঘাতেই এগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে।’ (সূরা: হাক্বাহ, আয়াত নম্বর: ১৩-১৪)।

إِذَا السَّمَآءُ انفَطَرَتْ. وَإِذَا الْكَوَاكِبُ انتَثَرَتْ. وَإِذَا الْبِحَارُ فُجِّرَتْ. وَإِذَا الْقُبُورُ بُعْثِرَتْ. عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ وَأَخَّرَتْ.
‘যখন আসমান বিদীর্ণ হবে। আসমান ফেটে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। আর যখন নক্ষত্রগুলো ঝরে পড়বে। আর যখন সমূ্দ্রগুলোকে উত্তাল করে তোলা হবে। আর যখন কবরগুলোকে উন্মোচিত করা হবে, তখন প্রত্যকেই জানতে পারবে সে আগে কি পাঠিয়েছে এবং পরে কি পাঠিয়েছে। (সূরা:আল ইনফিতার, আয়াত নম্বর: ১-৫)।

সেদিন কেয়ামতের ভয়াবহতায় আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত প্রতিটি প্রাণীই প্রাণ হারাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

كُلُّ شَىْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُ.
‘সেদিন আল্লাহর মহান সত্তা ব্যতীত প্রত্যকটি জিনিষই ধ্বংস হয়ে যাবে। (সূরা: কাসাস,আয়াত: নম্বর: ৮৮)।

كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ. وَيَبْقٰى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلٰلِ وَالْإِكْرَامِ
‘সেদিন জমিনের ওপর যা কিছু রয়েছে সবই ধ্বংস হয়ে যাবে। আর শুধুমাত্র মহা-মহিম, মহান রব আল্লাহ তায়ালাই বাকি থাকবেন।’

তাফসীরে ইবনে কাছিরে বর্ণিত হয়েছে,

যখন হজরত ইসরাফিল (আ,) সিংগায় ফুৎকার দেবেন তখন সবাই মরে যাবে।  মালাকুল মাওত মৃত্যুর ফেরেশতা এসে আল্লাহ তায়ালাকে বলবে, হে আল্লাহ! সবাই মরে গেছে।  তিনি জিজ্ঞাসা করবেন অবশিষ্ট আর কে আছে?  মালাকুল মাওত উত্তর দেবে, হে আমার রব! আপনিই। আর আপনি তো হলেন চিরঞ্জীব। 

এ ছাড়াও বাকি আছে জিবরাঈল, মিকাঈল ও আরশ বহনকারী ফেরেশতারা।  তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, জিবরাঈল ও মিকাঈলেরও মৃত্যু হওয়া উচিত।  মৃত্যুর ফেরেশতা মালাকুল মাওত বলবে, হে প্রভু! জিবরাইল ও মিকাঈলও মরে গেছে।  তখন আল্লাহ তায়ালা জিজ্ঞেস করবেন, এখন আর কে বাকি আছে?  মালাকুল মাওত বলবে, এখন আমি বাকি আছি আর আরশ বহনকারী ফেরেশতারা বাকি আছে। তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, আরশ বহনকারী ফেরেশতাদেরকেও মরতে হবে, অতঃপর তারাও মরে যাবে। আল্লাহ তায়ালা আবার জিজ্ঞাসা করবেন, এখন আর কে বাকি আছে?

মালাকুল মাওত আজরাঈল (আ.) বলবেন, হে আমার রব! এখন আপনি বাকি আছেন এবং আমি বাকি আছি।  তখন আল্লাহ তায়ালা আজরাঈল (আ.)-কে বলবেন, তুমিও তো আমার মাখলুক! সুতরাং তুমিও মরে যাও। তিনি তাৎক্ষনাত মরে যাবেন, এবং শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালাই বাকি থাকবেন।।

অতঃপর আল্লাহ তায়ালা জমিনকে ভাজ করে ফেলবেন। এবং তিনি তিনবার বলবেন, 

على الجبار. على الجبار. على الجبار 
আমিই প্রতাপশালী, আমিই প্রতাপশালী, আমিই প্রতাপশালী।

অতঃপর তিনি তিনবার জিজ্ঞাসা করবেন,

لمن الملك اليوم.  لمن الملك اليوم. لمن الملك اليوم.
‘আজকের রাজত্ব কার? আজকের সার্বভৌমত্ব কার? আজকের আধিপত্য কার?’

তখন জবাব দেয়ার মতো কেউ থাকবে না। তিনিই আবার উত্তর দেবেন,

لله الواحد القهار
‘আজকের রাজত্ব, আজকের সার্বভৌমত্ব, আজকের আধিপত্য, পরাক্রমশালী একমাত্র আল্লাহর।’

ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্নিত, অপর এক হাদিসে এরশাদ হয়েছে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা আসমান ও জমিনকে ভাজ করে নিজ হাতে গুটিয়ে নেবেন, অতঃপর বলবেন,

آ للملك.  آللجبار.  آللمتكبر 
‘আমিই বাদশা, আমিই প্রতাপশালী, আমিই অহংকারী।’

اينا الملوك الارض.  اينا الجبارون.  اينا المتكبرون 
‘দুনিয়ার রাজা-বাদশারা কোথায়?  দুনিয়ার প্রতাপশালীরা কোথায়? দুনিয়ার অহংকারীরা কোথায়? তখন আল্লাহ তায়ালা সুউচ্চ কন্ঠে তিনবার জিজ্ঞেসা করবেন,

لمن الملك اليوم. لمن الملك اليوم. لمن الملك اليوم
‘আজকের রাজত্ব কার? আজকের সার্বভৌমত্ব কার? আজকের আধিপত্য কার?  অতঃপর তিনিই  তিনবার উত্তর দেবেন,

لله الواحد القهار
আজকের রাজত্ব, আজকের সার্বভৌমত্ব, আজকের আধিপত্য, পরাক্রমশালী একমাত্র আল্লাহর তায়ালার।।

সংগ্রহে: ওমর শাহ

 

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

শাহজাদপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের সাথে মতবিনিময় সভা
সিরাজগঞ্জে পুরোদমে চলছে কৃষিবান্ধব সোলার প্রকল্পের কাজ
সিরাজগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন
বেলকুচিতে বিএসটিআই অনুমোদন না থাকায় টেক্সটাইল মিলকে জরিমানা
বেলকুচিতে পুষ্টি বিষয়ক সমন্বয় কমিটির দ্বি-মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক-অফিসিয়াল যোগাযোগ বাড়াতে প্রস্তুত বাংলাদেশ
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ
এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির
গবেষণায় আরো জোর দিতে বললেন কৃষিমন্ত্রী
রংপুর ও ভোলার চরের মানুষদের সুখবর দিলেন পরিবেশমন্ত্রী
স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক