মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সিরাজগঞ্জে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত পরিবারে আতঙ্ক বাড়ছে

সিরাজগঞ্জে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত পরিবারে আতঙ্ক বাড়ছে

চার বছর ধরে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত সন্তানদের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের মশিপুর গ্রামের ভ্যান চালক হত দরিদ্র আব্দুল লতিফ এখন নিঃস্ব। ১৪ বছর ভ্যান চালিয়ে যা জমিয়েছিলেন তার সবটাই গেছে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত দুই সন্তানের চিকিৎসায়।
 
একাধিক এনজিও ও দাদন ব্যাবসায়ীদেরর কাছে তার এখন প্রায় ৫ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। মৃত পথযাত্রী ১১ বছর বয়সের মেয়ে বর্ষা ও ৭ বছরেরর ছেলে ওবায়দুল কে বাঁচাতে প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছেন মা-বাবা। তাই এখন তাদের নির্ঘুম যাচ্ছে প্রতিটি রাত। মেয়েটি শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারছে না। রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হলেও কোন কাজেই আসছে না। অপরদিকে কিছুটা সুস্থ দেখা গেলেও একমাত্র পুত্র সন্তান ওবায়দুলেরও থ্যালাসেমিয়ার কারণে লিভার ড্যামেজ ধরা পড়েছে। সময়মত চিকিৎসা না পাওয়ায় তাকে নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটানো তাদের পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। 
  
সরেজমিন বাড়িতে গেলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আব্দুল লতিফ ও আঞ্জুয়ারা। ইতিমধ্যেই উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক রেফার্ড করলেও টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। যার কারনে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া মেয়ে ও ছেলের যেন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন বাবা-মা। 
 
আব্দুল লতিফ জানান, চার ছেলে মেয়ের মধ্যে তৃতীয় মেয়ে বর্ষা ৭ বছর বয়সে এবং একমাত্র ছেলের ৫ বছর বয়সে ধরা পড়ে থ্যালাসেমিয়া। দীর্ঘ চার বছর যাবৎ বেসরকারি ও সরকারি হাসপাতালে ব্যয় বহুল এই চিকিৎসা করাতে সঞ্চিত টাকা খরচ সহ ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন তারা। সব শেষ গত ৭জানুয়ারী বর্ষা ও ওবায়দুল হাসানকে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ ব্যাগ রক্ত দিলেও কোন কাজে না আসায় এবং ছেলের লিভার ড্যামেজ ধরা পড়ায় এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে চিকিৎসক দুজনকেই উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন এই হাসপাতালের চিকিৎসক। কিন্ত উন্নত চিকিৎসার জন্য মোটা অংকের টাকার যোগান না থাকায় তিনি দু সন্তানকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ী ফিরেছেন। চোখের সামনে দু সন্তানের অসুস্থতায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
  
একই রোগে আক্রান্ত তাড়াশ উপজেলার নলুয়াকান্দি গ্রামের নাছিমা খাতুনের ৮বছরের মেয়ে আঁখিকেও রক্ত দেয়ার জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালে ১৫ দিন পর পর আনতে হচ্ছে। তার স্বামী কামরুল ইসলাম তিন বছর আগে মারা গেছেন। কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইলে সাবরেজিষ্টি অফিসে চাকুরী করেন আঁখির মা নাছিমা খাতুন। আঁখির পেট বড় হয়ে গেছে। এখন ১৫-২০দিন পর পর রক্ত দিতে হচ্ছে। আঁখির মা নাছিমা খাতুন জানান, আঁখির দেড় বছর বয়সে থ্যালাসেমিয়া রোগ ধরা পরে। রাজশাহীতে চিকিৎসা করানো হয়েছে। এখন সিরাজগঞ্জে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। চিকিৎসরা বলেছেন উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যেতে কিন্ত সে সামর্থ নেই। স্বল্প বেতনে চাকুরী করি। সংসার চালানোই কঠিন। 
 
উল্লাপাড়া উপজেলার কয়ড়া ইউনিয়নের খামার পাড়া গ্রামের দিন মজুর সোহেলের দুই ছেলে কাওসার আলী ও ফাহিম হোসেন থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। তাদের দেড় বছর বয়সে তা ধরা পড়ে। সাধ্যমত রাজশাহী ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে তাদের চিকিৎসা করানো হয়। এই অবস্থায় সোহেলের বড় ছেলে কাওসার আলী ১২বছর বয়সে ২০১৮সালে মারা যায়। ছোট ছেলে ফাহিম হোসেনের অবস্থাও ভাল নয়। সোহেল তার স্ত্রী শাপলা খাতুন যেন তাদের একমাত্র সন্তান ফাহিম হোসেনের মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। 
শাপলা খাতুন বলেন, এক ছেলেকে হারিয়েছি ছোট ছেলের অবস্থাও ভাল নয়। প্রতিমাসে রক্ত দিতে হচ্ছে। প্রতিমাসে প্রায় দুই হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হচ্ছে। টাকার অভাবে নিয়মিত ওষুধ খাওয়াতে পারছি না। শেষ পর্যন্ত ছোট ছেলেও মারা যাবে কষ্ট হলেও এমনটা ভাবতে হচ্ছে।
 
জেলায় থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত পরিবার গুলোর মধ্যে আতঙ্ক শঙ্কা বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত হবার প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নিতে পারলে দীর্ঘ দিন ভালভাবে জীবন যাপন করা যায়।
সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসে জেলায় থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্তদের সংখ্যার কোন তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যান অফিসার হুমায়ন কবির। তবে জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছেন এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা একেবারে কম নয়।
 
সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ ফরিদুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে প্রতিমাসে প্রায় ১৫জন থ্যালাসেমিয়ার রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এর মধ্যে কমপক্ষে ৬জন নতুন রোগী থাকে। বাকিরা  নিয়মিত রোগী যারা রক্ত নেয়ার জন্য আসেন। থ্যালাসেমিয়া রোগের কারন হিসেবে তিনি বলেন, এটি একটি রক্তবাহিত বংশগত রোগ। বংশের কারো মধ্যে এই রোগের জীবানু থাকলে তা যেকোন প্রজন্মের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে রোগের আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায় থেকে চিকিৎসা নিলে পরবর্তি জীবন ভাল ভাবেই কাটানো যায়। অর্থাৎ সময়মত উন্নত চিকিৎসায় থ্যালাসেমিয়া রোগ থেকে সম্পূর্ণ ভাল না হলেও অনেকাংশেই ভাল হয়। 
 
তিনি আরো জানান, এই রোগ আক্রান্ত হবার কারনে রক্ত তৈরী এবং রক্তভাঙ্গার সেলের স্পেইন বড় হতে থাকে এবং অকার্যকর হয়ে যায়। যার কারনে লিভার বড় হয় পর্যায় ক্রমে নষ্ট হয়ে যায়। প্রয়োজনে এই স্পেইন অপারেশন করে অপসারন করলে রোগী অনেক দিন ভাল ভাবে থাকতে পারেন।
 
হাসপাতালের শিশু বিভাগের জুনিয়র কনসাল্টেন ডাঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, থ্যালাসেমিয়ার একমাত্র চিকিৎসা মাসে মাসে রক্ত দিতে হবে। এ রোগের কারণে প্লিহা বা লিভার বড় হয়ে যেতে পারে। প্লি¬হা বড় হয়ে গেলে সেটা অপারেশনের মাধ্যমে কেটে ফেলতে হয় এবং লিভার ট্রান্সমিশন করতে হয়। যেটা অত্যান্ত ব্যয়বহুল। অনেকের পক্ষেই যা সম্ভব হয় না।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

শিরোনাম:

স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট
এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
পুলিশকে সাহায্য করবে ক্রাইম জিপিটি!
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর