শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিরাজগঞ্জে জনপ্রিয় হচ্ছে ফুল চাষ

সিরাজগঞ্জে জনপ্রিয় হচ্ছে ফুল চাষ

সিরাজগঞ্জে ব্যাপক আকারে ফুল চাষ না হলেও জেলার কিছু স্থানে বিশেষ করে সদর, উল্লাপাড়া ও কাজিপুর উপজেলায় ফুল চাষ করছেন কৃষকরা। আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ায় তারা দীর্ঘদিন থেকে ফুল চাষ করছেন।

রবি শস্য ও ধান চাষের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি লাভ ফুল চাষে। স্বল্প সময়ে ফুল উৎপাদন করা যায় এবং খরচ অনেক কম হয়। চাষিরা দেশি-বিদেশি গোলাপ, চাইনিজ গাঁদা, হাইব্রিড গাঁদা, দেশি গাঁদা, বর্ষালী গাঁদা, ডালিয়া, সূর্যমুখী, হাসনাহেনা, গন্ধরাজ, জবা, গেটফুল, চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিয়াসসহ নানা জাতের ফুল গাছের চাষ করছেন।

অপরদিকে, ফুল বাগানের সৌন্দর্য দেখতে বাগানগুলোতে অনেক দর্শণার্থী আসছেন। প্রতিদিন বিকেল হলেই শত শত লোকের সমাগম ঘটছে ফুলের বাগানগুলোতে। আর লাভবান হওয়ায় দেখাদেখী অনেকেই ফুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

উল্লাপাড়া উপজেলার বড়হর ইউনিয়নের চরগুয়াগাতী গ্রামের মাঠের পর মাঠ কাঁচা-পাকা রাস্তার ঢালে চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন জাতের ফুল। শুধু রাস্তার ঢালে নয়, বিঘা বিঘা জমিতেও হচ্ছে ফুল চাষ। পাশাপাশি ৩০ বছর যাবৎ ফুল চাষে জড়িয়ে আছেন ওই গ্রামের ইদ্রিস আলী। 

তিনি বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে ফুল চাষ করছেন। বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে ফুলের বীজ আমদানী করে এ বছর আড়াই বিঘা  জমিতে ফুল চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে  প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। এখনও জমিতে যে পরিমাণ ফুল রয়েছে তাতে কমপক্ষে আরও এক লাখ টাকা বিক্রি করা যাবে।

ইদ্রিস আলী আরও বলেন, কাঠ মালতি, গ্যালো লিয়াস, ডালিয়া, জিপসি, আলমেন্দা, গাঁদা, সূর্যমুখী, কসমস, বেলী, স্টেক, রজনীগন্ধা ও গোলাপসহ প্রায় ১৫ রকম বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করা হচ্ছে। শুধু জমিতেই নয়, এলাকার কাঁচা-পাকা রাস্তার ঢালেও এই ফুলের চাষ করা হচ্ছে।

 

এখানকার উৎপাদিত ফুল রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। স্থানীয় ৩০ জন কৃষক ওই এলাকায় প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করছে বলেও জানান তিনি। কাজিপুর উপজেলার একডালা গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালে তিনি নার্সারী করেন কিন্ত লাভবান হতে পারছিলেন না।

নার্সারীর একটি অংশে ফুল চাষ করেন। ফুলের উৎপাদন ভাল হয়। পরবর্তীতে নার্সারী বাদ দিয়ে তিনি ১০ বিঘা জমিতে গোলাপ, গ্লাডিয়াসসহ বিভিন্ন জাতের ফুলের আবাদ করছেন। ফুলের চাষ সর্ম্পকে জানার জন্য যশোর গিয়েছিলেন। সেখানকার ফুল চাষিদের অভিজ্ঞা নিয়ে ফুল চাষ করছেন।

তিনি আরও বলেন, এক বিঘা জমিতে ধান বা অন্যান্য ফসল আবাদ করে বছরে ২০-২৫ হাজার টাকার ওপরে লাভ করা যায় না। কিন্ত এক বিঘা জমিতে ফুল চাষ করে খরচ বাদে কমপক্ষে এক লাখ টাকা অনায়াসে লাভ করতে পারেন।

প্রতি বছরই মাতৃভাষা দিবস, বিশ্ব ভালবাসা দিবস, ঈদ, পূজা, পহেলা ফাল্গুন এবং বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ পালনসহ বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে ফুলের চাহিদা দ্বিগুণ হারে বেড়ে যায়। এ সময় দাম বৃদ্ধি পায়। ফুল আবাদ করে  এখন বছরে প্রায় ২০ লাখ টাকা আয় করছেন। একই গ্রামের রাজু বলেন, অমিনুলের ফুল চাষ দেখে চার বছর ধরে প্রায় ৪ বিঘা জমিতে গোলাপ, গাঁদা গ্লাডিয়াস ফুল চাষ করছি। ফুল আবাদ ভাল হয়েছে লাভবানও হচ্ছি।

উল্লাপাড়া উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কৃষি কর্মকর্তা আজমল হক বলেন, উপজেলার বড়হর চরগুয়াগাতী গ্রামে অনেক বছর ধরেই ফুল চাষ শুরু হয়েছে। এ বছর ফুল চাষ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, কৃষকরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। কৃষক পরিবারের পাশাপাশি স্থানীয় অনেক মহিলাদের কর্মসংস্থান হয়েছে। কৃষি অফিসের একটি টিম নিয়মিত মাঠে কাজ করছে এবং কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শও দেয়া হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাবিবুল হক বলেন, জেলায় সেভাবে ব্যাপক হারে ফুল চাষ হচ্ছে না। তবে সিরাজগঞ্জ সদর, উল্লাপাড়া ও কাজিপুর উপজেলায় কৃষক নিজ উদ্যোগে ফুল চাষ করছেন। এতে ফলন যেমন ভাল হচ্ছে দামও পাচ্ছেন কৃষক। যে কারণে জেলায় ফুল চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা ফুল ও ফল গাছ চাষিদের রেজিস্ট্রেশন করাচ্ছি। ইতোমধ্যে জেলায় ৬৫ জন চাষি নিবন্ধিত হয়েছেন। অন্যদেরও পর্যায়ক্রমে নিবন্ধিত করা হবে। কৃষকদের ফুল চাষের জন্য বিভিন্ন পরামর্শও দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ফুল চাষের আধুনিক পদ্ধতি সর্ম্পকে জানার জন্য চাষিদের হর্টিকালচার সেন্টারের প্রশিক্ষণের জন্য তাদের তালিকা করা হচ্ছে। এদের প্রশিক্ষিত করতে পারলে জেলায় আরও বেশি ফুলের চাষ হবে এবং উৎপাদন বাড়বে। 

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর
ঈদের দিন ৩ হাসপাতাল পরিদর্শন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
আয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
জুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেই