মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সাঈদীনামা: দেলু শিকদার থেকে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী

সাঈদীনামা: দেলু শিকদার থেকে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী

একাত্তরের আগে ছিলেন মুদি দোকানদার ও তাবিজ বিক্রেতা। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে হয়ে গেলেন প্রথমে শান্তি কমিটির সদস্য ও পরে রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার। নিজে জড়িত থেকে, নেতৃত্ব বা সহযোগিতা দিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং রাজাকার বাহিনী নিয়ে সংঘটিত করলেন হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ, লুট, ধর্ষণসহ জঘণ্যতম মানবতাবিরোধী নানা অপরাধ। আগের ‘দেইল্লা’ নামের সঙ্গে তাই রাজাকার যুক্ত হয়ে তাই কুখ্যাত হলেন ‘দেইল্লা রাজাকার’ নামে।

মুক্তিযুদ্ধের পরে দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর আবির্ভূত হলেন ‘আল্লামা মাওলানা’ পরিচয়ে। ওয়াজ করে বেড়ালেন দেশে-বিদেশে। কালক্রমে হলেন যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতের নায়েবে আমির। এভাবেই বাবা-মায়ের দেওয়া দেলোয়ার হোসেন শিকদার ওরফে ‘দেইল্লা’ বা ‘দেইল্লা রাজাকার’ নামক ব্যক্তিটি হয়ে গেলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।

জিয়ানগরের সাঈদখালি গ্রাম আগে পরিচিত ছিল সাউদখালি নামে। এখনো অনেকে আগের নামেই চেনেন। তবে সাউদখালির নামের রূপান্তর ঘটেছে এই গ্রামেরই এক বিখ্যাত এবং বিতর্কিত মানুষ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ঘিরে।

এই গ্রামেই ১৯৪০ সালে জন্ম নেন জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।

বিয়াল্লিশ বছর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় জিয়ানগরে ঠিক কি ঘটেছিল, তা নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে বিতর্ক ছিলো দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে ঘিরে, যিনি ধর্মীয় জলসার জনপ্রিয় বক্তা থেকে এখন পরিণত হয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর এক গুরুত্বপূর্ণ নেতায়।

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সালে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনের কিছু অংশ হুবহু তুলে ধরা হলোঃ

সাঈদখালির মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে, জন্মের পর তিনি এলাকায় পরিচিত ছিলেন দেলোয়ার শিকদার নামে।

সাঈদখালির ইউপি সদস্য হারুণুর রশীদ বলেন, ওনাকে সবাই দেলোয়ার শিকদার নামে চিনতো। ওনার বংশ শিকদার বংশ। ওনার নাম কিভাবে সাঈদী হলো সেটা বলতে পারবো না।

বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের যে ওয়ার্ডটির অধীনে সাঈদখালি গ্রাম, সেই ওয়ার্ডের একজন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হারুণুর রশীদ। টেলিফোনে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য তিনি নিশ্চিত করেছেন।

“ওনাকে সবাই দেলোয়ার শিকদার নামে চিনতো। স্বাধীনতার সময় তো আমার বয়স খুব কম ছিল। এ বিষয়ে আমি বলতে পারবো না। তবে আমি শুনছি এইটা। ওনার বংশ শিকদার বংশ। ওনার নাম কিভাবে সাঈদী হলো সেটা বলতে পারবো না। হয়তো সাউদখালি নাম থেকেই উনি নিজের নাম করেছেন সাঈদী,” জানালেন তিনি।

স্থানীয় সাংবাদিক নাসিরউদ্দীন বলছেন, সাউদখালি গ্রামকে এখন সাঈদখালি বলা হচ্ছে, সাঈদীর নামের সঙ্গে মিলিয়ে।

বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলছেন, দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর বাবা ছিলেন গ্রামের খুব সাধারণ এক গৃহস্থ। “ওনার বাবা একজন সাধারণ মানুষ ছিল। গ্রামে জমি-জিরাত ছিল। তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা যদিও অনেক তত নামকরা কোন পরিবার ছিল না।”

পরিবারের কাছে থেকে পাওয়া জীবনবৃত্তান্ত অনুযায়ী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পড়াশোনা করেছেন গ্রামের মক্তবে, এরপর শর্ষিনার পীর পরিচালিত আলীয় মাদ্রাসা, বারুইপাড়া সিদ্দীকিয়া মাদ্রাসা এবং খুলনা আলীয়া মাদ্রাসায়।

স্থানীয় সাংবাদিক নাসিরউদ্দীন জানাচ্ছেন, পড়াশোনা শেষে তিনি গ্রামের কাছে এক বাজারে কিছুদিন ব্যবসা করেছেন বলেই তারা জানেন।

“উনি মূলত এর আগে পারের হাটে ব্যবসা করতেন ভায়রা ভাইয়ের সাথে মিলে। মুদি দোকানের ব্যবসা ছিল। তখন কিন্তু তিনি এত নামকরা লোক ছিলেন না। সাধাসিদে জীবন-যাপন করতেন। কিন্তু আশির দশকে উনি ওয়াজ নসিহত করা শুরু করেন। পরে আস্তে আস্তে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। এখান থেকেই উনার নাম ছড়িয়ে পড়ে।”

উপরের তথ্যভিত্তিক নিউজটি ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সালে বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত হয়।

সাঈদীর (দেইল্লা রাজাকার) হত্যার ইতিহাসঃ

একাত্তরের ৪ মে মধ্যম মাছিমপুর বাসস্ট্যান্ডের পেছনে জমায়েত হওয়া ২০ জন নিরীহ বাঙালিকে গুলি করে হত্যা।

একইদিন মাছিমপুর হিন্দুপাড়ায় আক্রমণ চালিয়ে বিজয় কৃষ্ণ মিস্ত্রী, উপেন্দ্রনাথ মিস্ত্রী, সুরেন্দ্রনাথ মিস্ত্রী, মতিলাল মিস্ত্রী, যজ্ঞেশ্বর মন্ডল, সুরেন মন্ডলসহ ১৩ ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

একইদিন ধোপাবাড়িরে সামনে দেবেন্দ্রনাথ মন্ডল, খগেন্দ্রনাথ, পুলিন বিহারী, মুকুন্দ বালাকে হত্যা।

৫ মে পিরোজপুরের এসডিপিও ফয়জুর রহমান আহমেদ, এসডিও মো. আব্দুর রাজ্জাক, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সাঈফ মিজানুর রহমানসহ কয়েকজনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা।

২৫ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়ে আন্ধাকুল গ্রামের বিমল হাওলাদারের ভাই ও বাবাকে ধরে কুড়িয়ানা হাইস্কুল ক্যাম্পে নিয়ে তাদেরসহ ২৫০০/৩০০০ নিরীহ বাঙালিকে কুড়িয়ানা পেয়ারা বাগানে নিয়ে হত্যা।

২৫ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময়ের যে কোনো এক দিন হোগলাবুনিয়া গ্রামে আক্রমণ চালিয়ে তরণী সিকদার ও তার ছেলে নির্মল সিকদার, শ্যামকান্ত সিকদার, বানীকান্ত সিকদার, হরলাল কর্মকার, মাইঠভাঙ্গারের প্রকাশ সিকদারসহ ১০ জনকে গুলি চালিয়ে হত্যার পর নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া।

৪ মে হতে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে পাড়েরহাটে আক্রমণ করে হরলাল মালাকার, অরকুমার মির্জা, তরণীকান্ত সিকদার, নন্দকুমার সিকদারসহ ১৪ হিন্দুকে রশিতে বেঁধে পাকিস্তানি সেনাছাউনীতে নিয়ে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া।

সাঈদীর(দেইল্লা রাজাকার) ধর্ষণের ইতিহাসঃ

হোগলাবুনিয়া গ্রামের মধুসুধন ঘরামীর স্ত্রী শেফালী ঘরামীকে ধর্ষণ: ১ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে হোগলাবুনিয়া গ্রামের মধুসুধন ঘরামীর স্ত্রী শেফালী ঘরামীকে আটক করে ধর্ষণ করে সাঈদী(দেইল্লা রাজাকার)। পিরোজপুরের ৮১ বছর বয়সী মধুসুধন ঘরামী সাঈদী(দেইল্লা রাজাকার) সম্পর্কে যে সাক্ষ্য দেয় তা গা শিউরে ওঠার মত। মধুসুধন বলেন, “সে দিন আমি বাড়ি ফেরার পর আমার স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বল্ল, যে তুমাকে মুসলমান বানিয়েছে সে দেইল্লা রাজাকার এসেছিল। আমাকে ধর্ষণ করেছে। এই যন্ত্রণা আমি আর সইতে পারছি না, তুমি পালাও, আমার কথা ভেবনা।’’ ধর্ষণের শিকার বেদনার্ত স্ত্রীর কথা বর্ণনা দিতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পরে মধুসুধন। এবং এক সময় বলে বিগত ৮০ বছর ধরে আমি এই বেদনা বয়ে বেড়াচ্ছি। কুছুদিন পরে আমার স্ত্রী গর্ভবতী হয়ে পরে, তাঁর একটা কন্যা সন্তান হয়। কিন্তু লোকের কানাঘুসার অপমান সইতে না পেরে আমার স্ত্রী ওই কন্যাটাকে নিয়ে একদিন ভারতে চলে যায়। সে এখন আর ফিরে আসেনি”।

২৫ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে উমেদপুর পাড়েরহাট বন্দরের গৌরাঙ্গ সাহার বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার তিন বোন মহামায়া, অন্যরাণী ও কমলা রাণীকে সেনাক্যাম্পে নিয়ে ধর্ষণ।

৩ মে থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিপদ সাহার মেয়ে ভানু সাহাকে নিজ বাড়িতে আটকে নিয়মিতভাবে ধর্ষণ।
এছাড়া ২৫ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে পাড়েরহাট বন্দরের কৃষ্ট সাহাকে হত্যার পর তার মেয়েসহ হিন্দুপাড়ার অসংখ্য নারীকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা।

২৫ জুন হতে ৩১ জুনের মধ্যে মধুসুদন ঘরামী, অজিত কুমার শীল, বিপদ সাহা, নারায়ন সাহা, গৌরাঙ্গ পাল, সুনীল পাল, হরিলাল, অমূল্য হাওলাদার, শান্তি রায়, জুরান, ফকির দাস, জোনা দাসসহ ১০০/১৫০ জন হিন্দুকে জোর পূর্বক ধরমান্তর করায় দেইল্লা রাজাকার ও তাঁর বাহিনীরা।

সাঈদীর(দেইল্লা রাজাকার) নাম জালিয়াতিঃ

সাঈদীর এইসব কর্মকান্ডের বিচার যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ট্রাইবুনাল-১ এ চলছিলো তখন দেইল্লা রাজাকারের আইনজীবিরা ট্রাইবুনালে প্রমাণ করবার চেষ্টা করছিলো যে একাত্তর সালের যে দেলু শিকদার বা দেইল্লা রাজাকারের কথা অভিযোগে বলা হচ্ছে সেই ব্যাক্তি আর বর্তমানের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো দেলোয়ার হোসেন সাঈদী এক ব্যাক্তি নয়। এই প্রমাণ করবার চেষ্টা হিসেবে দেলু রাজাকার আদালতে এও বলেছে যে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট যদি দেখা হয় তবে সেখানে তার নাম দেলোয়ার হোসেইন সাঈদী লেখা রয়েছে। সুতরাং অভিযোগের দেলু বা দেইল্লা রাজাকার সে নয় বরং ভিন্ন ব্যাক্তি।

কিন্তু বিধি বাম। এডুকেশন ডট নেট নামে একটি ওয়েব সাইট একদিন প্রকাশ করে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর নাম ও বয়স কেলেংকারীর কথা। তাদের অনুসন্ধানী রিপোর্ট টি ছিলো অত্যন্ত তথ্যবহুল এবং সেখানে সকল প্রমাণ দিয়েই কথা বলা হয়েছিলো।

এই ওয়েব সাইটের অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে যে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী বলে আজকে আমরা যাকে চিনি সেই সাঈদী দাখিল এবং আলিম পরীক্ষার সার্টিফিকেটে নাম দেয় আবু নাঈম মোঃ দেলোয়ার হোসাইন। উল্লেখ্য যে সাঈদী দাখিল পাশ করে ১৯৫৭ সালে দারুস সুন্নাত শর্শীনা মাদ্রাসা থেকে এবং আলীম পাশ করে ১৯৬০ সালে বরই পাড়া মাদ্রাসা থেকে।

এসময় সাঈদী তার জন্মতারিখ ব্যাবহার করে ০১-০১-১৯৪৫, যার মানে দাঁড়ায় সাঈদী জন্মের ১২ বছর বয়সেই দাখিল পাশ করে যা এক কথায় সম্ভব না। এখানকার প্রাপ্ত তথ্য থেকেই জানা যায় যে সাঈদী তার আলিম ও দাখিল পরীক্ষার উল্লেখিত ওই নামটি পরিবর্তন করতে উদ্যোগী হয় ২০০৮ সালের ৫ ই নভেম্বর। যার মানে দাঁড়ায় দাখিল পাশ করবার প্রায় ৫১ বছর পর এবং আলিম পাশ করবার ৪৮ বছর পর সাঈদী তার নাম পরিবর্তন করে রাখে দেলোয়ার হোসেইন সাঈদী।

 

নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত আইনঃ

অথচ নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত আইনে আছে যে সার্টিফিকেটে নামে ভুল থাকলে এই ভুল সংশোধন করতে হবে পাশ করবার ২ বছরের মাথায়। কিন্তু ৫১ বছর পর সাঈদী কিভাবে তার নাম পরিবর্তন করলো এটার উত্তর কোনোভাবেই দিতে পারেনি নাম ও বয়স সংশোধন সংক্রান্ত তৎকালীন কমিটির সদস্য সাবেক মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ ইউসুফ (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত), মাদ্রাসা বোর্ডের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক হাফিজুর রহমান (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত), সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আবদুর নূর, এবং মাদ্রাসা বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবু ছালেহ আহমেদ। উল্লেখ্য যে, এই মোহাম্মদ আব্দুর নূর ২০০৩ সালে সাঈদীর সুপারিশেই তৎকালীন সময়ে পদোন্নতি পেয়েছিলেন।

নিচের ছবিতে সাঈদী যখন নাম পরিবর্তন করে তখন দৈনিক সংগ্রামে যে এফিডিভেটের বিজ্ঞাপন দিয়েছিলো সেটি। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে এইখানে সাঈদী তার বয়স লিখেছে ০১-০১-১৯৪৫।

এফিডেভিটে যা লেখা রয়েছে তা হুবুহু নীচে উল্লেখ করা হলোঃ

‘আমি দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদী জন্ম তাং ০১-০১-১৯৪৫ ইং পিতা মাওলানা ইউসুফ সাঈদী বাড়ি নং ৯১৪ শহীদবাগ ঢাকা। আমি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা। আমি পূর্ব পাকিস্তান মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বর্তমানে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডর অধীনে আলিম ও দাখিল পাস করি, দাখিল পাসের সন ১৯৫৭ ১ম বিভাগ রোল নং ৩৯২০ কেন্দ্র সারসিন । দাখিল পরীক্ষায় ভুলবশত: আমার নাম দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদীর পরিবর্তে আবু নাঈম মোহাম্মদ দেলাওয়ার হুসাইন লিপিবদ্ধ হয়েছে। আলিম পাসের সন ১৯৬০ সাল রোল নং ১৭৬০ কেন্দ্র খুলনা বিভাগ ৩য়। আলিম পরীক্ষায় ভুলবশত: আমার নাম দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদীর পরিবর্তে আবু নাঈম মোহাম্মদ দেলাওয়ার হুসাইন লিপিবদ্ধ হয়েছে।প্রকৃতপক্ষে আমার শুদ্ধ ও সঠিক নাম হবে দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদী । এ ব্যাপারে আমি অদ্য ৫/১১/২০০৮ ইং নোটারী পাবলিক ঢাকা এর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে আমার নাম সংশোধনের বিষয়ে হলফ করলাম। দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদী, পিতা মাওলানা ইউসুফ সাঈদী, বাড়ি নং ৯১৪ শহীদবাগ, ঢাকা। সংগ্রাম পি-৭২১২/০৮’

লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এই এফিডেভিটের মাধ্যমে সাঈদী ২০০৮ এর নভেম্বর ৫, তারিখে কেবলমাত্র তার নাম পরিবর্তন করে।

সাঈদীর(দেইল্লা রাজাকার) বয়স জালিয়াতিঃ

নিচের ছবিটি থেকে বোঝা যায়, সাঈদী নভেম্বর ৮, ২০০৮ সালে তার বয়স পরিবর্তন করবার জন্য এফিডেভিট জমা দেয়। সাঈদী তার সার্টিফিকেটে এতদিন লিখে রেখেছিলো যে তার জন্ম ১৯৪৫ সাল যেই হিসেবে সাঈদী ১২ বছর বয়সে দাখিল পাশ করে। যেহেতু সাঈদী বুঝতে পেরেছে যে এত কম বয়সে দাখিল পাশ করা যায়না, সেহেতু সে আবার তার বয়স পরিবর্তন করছে। কিন্তু এইখানেও সাঈদী আইন ভঙ্গ করেছে। কেননা বয়স সংক্রান্ত এফিডেভিটের ক্ষেত্রে এফিডেভিট করতে হয় ব্যাক্তির মাকে কিংবা বাবাকে যদি জীবিত থাকে। কিন্তু ২০০৮ সালে সাঈদীর মা জীবিত থাকতেও সাঈদী নিজে নিজে সাক্ষর করে এফিডিভেট করছে যেটি সম্পূর্ণ রূপে অবৈধ।

আবার,নিচের ছবিটি লক্ষ করলে দেখা যায়, সাঈদী ২০০৮ সালের নভেম্বরের ৮ তারিখে সাক্ষরের স্থানে লিখেছে “দেলোয়ার হোসেন সাঈদী” সেখানে মাত্র ২২ দিনের মাথায় নির্বাচনী প্রত্যয়ন পত্রে সাঈদী তার সাক্ষর পরিবর্তন করে লিখেছে “আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী“, মানে দাঁড়াচ্ছে সাঈদীর সাক্ষর দুই যায়গায় দুই রকম মাত্র ২২ দিনের ব্যবধানে।

সার্টিফিকেটে জন্ম সাল ১৯৪৫ হলেও নির্বাচনের সময় ১৯৪০

সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা আলিম পাশ কিন্তু নামের আগে আল্লামাঃ

এখন প্রশ্ন দাঁড়ায় সাঈদী কি তার নামের আগে আল্লামা লিখতে পারে ? কেননা ২০০৮ সালের নির্বাচনী প্রত্যয়ন পত্রে সাঈদী লিখেছে যে তার সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা হচ্ছে আলীম পাশ। মানে ইন্টারমিডিয়েট সমতূল্য। সুতরাং আলীম পাশ যেখানে সাঈদীর সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা সেখানে নামের আগে সাঈদী কোন হিসেবে আল্লামা লিখে? এই কথাটি সাঈদীর বিরুদ্ধে আসা রায়ের ৮ নাম্বার পাতায় লেখা রয়েছে।

সাঈদীর ২০০৮ সালের প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখিত সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং রায়ে উল্লেখ করা সেই অংশটি নীচে দেয়া হলোঃ

মিথ্যে অর্থের হিসেবঃ

২০০৮ সালের নির্বাচনে সাঈদী নির্বাচন কমিশনে তার নিজের যেই আয় ও ব্যয়ের হিসেব দেখিয়েছিলো সেটির সাথে বাংলা লিক্সের প্রকাশ করা সাঈদীর বক্তব্যের কোনো মিল নেই। আয়কর এর কাগজ পত্রে সাঈদীর ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ দেখা যাচ্ছে ৬ লক্ষ নয় হাজার আটশ চার টাকা। অথচ বাংলা লিক্সের মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া একটি কনভারসেশন যেখানে সাঈদী তার আইনজীবি আব্দুর রাজ্জাকের সাথে কথা বলছে সেখানে দেখা যাচ্ছে যে সাঈদী স্বীকার করছে তার ব্যাংকে কয়েকশ কোটি টাকা আছে এবং এই তথ্য সে নির্বাচনের সময় পুরোপুরি এড়িয়ে গেছে। যেই ব্যাক্তি তার নির্বাচনের সময় দাখিল কৃত কাগজ পত্রে দেখিয়েছে যে তার নীট সম্পত্তির পরিমাণ সব মিলিয়ে ৮০ লক্ষ পনের হাজার সাতশ সত্তর টাকা সেখানে কয়েক বছরের ব্যবধানে সাঈদীর ব্যাংকে কয়েকশ কোটি টাকা এলো কিভাবে?

নীচে সাঈদীর নির্বাচনের প্রদত্ত হিসাব

বাংলা লিক্সের মাধ্যমে প্রকাশিত কথপোকথনের অডিও শুনতে ক্লিক করু

[ ভিডিওর ২ মিনিট ১০ সেকেন্ড থেকে শুনুন]

ইংল্যান্ডের পত্রিকায় সাঈদীকে জানোয়ার বলে উল্লেখ করলোঃ

ধর্ষক, লম্পট, খুনী সাঈদী (দেইল্লা রাজাকার) শুধু দেশেই অপরাধ করে ক্ষান্ত হয়নি। তিনি ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডে গিয়ে ইসলাম ধর্মের কথা বলে সেখানে এই ধর্মকে সবার সামনে হেয় করেছিলো সাঈদী(দেইল্লা রাজাকার)। সে সময় সাঈদী বলেছিলো “ইংল্যান্ডে ও আমেরিকায় বোমা মারা একদম সঠিক। ইংল্যান্ড বোমা খাওয়া ডিজার্ভ করে” তখন ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ট্যাবলয়েড সাঈদী কে নিয়ে The Sun একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে ১৫-ই জুলাই ২০০৬ সালে। লেখাটির শিরোনাম ছিলো- Ban this beast and Kill Brits Hate Cleric let into UK, এখানে সাঈদীকে “জানোয়ার” হিসেবে অভিহিত করা হয়।

ইংল্যান্ডের পত্রিকা “দি মেইল” ও “দি টাইমসে” ওই একই সময় সাঈদীকে নিয়ে রিপোর্ট করে। সেখানেও তাকে নিয়ে নেতিবাচিক রিপোর্ট করেছে বৃটিশ পত্রিকাগুলো। নীচে দেখুন সেগুলো-

দি মেইলে-

দি টাইমসে-

সাঈদীকে জুতাপেটাঃ লন্ডন ও কানাডায়

১৯৯৯ সালে সাঈদী লন্ডনে বসবাসরত সিলেটী অভিবাসী সাধারণ নাগরিকদের কাছে জুতাপেটার মুখোমুখি হয় সাঈদী(দেইল্লা রাজাকার)। ১৯৯৯ সালের ১৫-ই জুলাই সাঈদী ওল্ডহামের কুইন এলিজাবেথ হলের এক সভায় বলে যে সিলেটি সম্মানিত অধিবাসীরা লন্ডনে যদি না আসত তবে বাংলাদেশে তারা নাকি রিকশাচালক হইতো কিংবা ড্রাইভার হইতো। সেই সাথে সাঈদী আরো বলে যে, এইখানকার তরুনীরা ইউনিভার্সিটি যাবার নাম করে কি করছে তা তাদের অভিভাবকেরা নাকি খোঁজ নেন না। সাঈদী আরো বলে যে, এই লন্ডনের মেয়েরা নাকি খুবই পাতলা কাপড় পড়ে যাতে তাদের শরীর দেখা যায় এবং এইসব কাপড় নাকি হিন্দু মেয়েরা পরে না। সাঈদী আরও বলে যে, এই দেশের ৯০ ভাগ মেয়েদের নাকি বয় ফ্রেন্ড আছে বলে তার কাছে তথ্য আছে।

সভাতে এইসব কথা বলার সাথে সাথেই সাঈদীর ওয়াজ শুনতে আসা ধর্মপ্রাণ ব্যাক্তিরা সাঈদীর দিকে জুতা ছুঁড়ে মারে এবং সাঈদীকে মারতে উদ্যত হয়।

এই ঘটনার কিছুদিন পর সাঈদী একটা সংবাদ সম্মেলন ডাকে এবং সেখানে বলে, সে যা বলেছে ঠিক বলেছে। ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসেনা। দেখুন নীচের ছবিগুলোঃ

এই ঘটনাটি পরবর্তীতে সাংবাদিক মোহাম্মদ শাহজাহান লিখেন লন্ডনের সাপ্তাহিক সুরমায় ২৬ শে আগস্ট ১৯৯৯ সালে। এই ঘটনার পর সাঈদীকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে ২০০৬ সালে আবার লন্ডনে এসে সাঈদী ইংল্যান্ড এবং আমেরিকা নিয়ে কটুক্তি করে এবং এই দুইটি দেশ বোমা হামলা ডিজার্ভ করে ২০০১ সালে এমন কথার প্রেক্ষিতে ইংলিশ মিডিয়া সাঈদীর ভিসা বাতিলের আবেদন জানায়।

এইদিকে সাঈদীকে কানাডার টরেন্টোতে জুতাপেটা করা হয় ২০০৪ সালে, আসুন আনোয়ার হোসেন মুকুলের নীচের রিপোর্টটি পড়িঃ

উপরের ছবিটি তখনকার নাহার মনিকা নামে এক ভদ্রমহিলার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নেয়া। যিনি এই ছবিটিকে বর্ণনা করেছেন এভাবে-

সময়টা ২০০৪ সাল। সাঈদী মন্ট্রিয়ালের মসজিদে ওয়াজ-মাহফিল করতে এলে আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। তার ওপরে জুতাও ছুড়ে মারা হয়েছিল। আমাদের মেয়ে চারণ-চিত্রণ স্লোগান শিখেছিল- ‘সাঈদীর দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’… সেই প্রথম স্লোগান আর ভুললো না।

সাঈদীর অপরাধের অস্বীকার এবং পিরোজপুরের জনতার জবাবঃ

ব্লগার এই আমি যাত্রীর একটি লেখা থেকে জানা যায় যে- ১৯৯৭ সালের ২৬শে অক্টোবর দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় এ সংবাদ টি ছাপা হয়।রাজাকার সাইদি বলেছিল, “তিনি রাজাকার কেউ প্রমান করতে পারবে না।” এরই প্রেক্ষিতে পিরোজপুরের ৪টি এলাকার মানুষ প্রমানসহ বলেন “সাইদী ছিল ভয়ঙ্করতম রাজাকার”

আলোকিত সিরাজগঞ্জ