শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সপরিবারে করোনাজয়ী এমদাদুল দেবেন প্লাজমা

সপরিবারে করোনাজয়ী এমদাদুল দেবেন প্লাজমা

একাধারে সাংবাদিক, চলচ্চিত্র এবং নাট্যনির্মাতা এমদাদুল হক খান। স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে হাসপাতালে যখন করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন তখন তার ১০ বছরের ছোট্ট মেয়েটি ঘরে। অবশেষে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পর করোনাকে জয় করে বাসায় ফিরলেন তিনি।  

এমদাদুল শুধু করোনা জয় করেই থেমে থাকেননি। তিনি এখন করোনা আক্রান্তদের প্লাজমা দান করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার মতে, করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট পজেটিভ আসলেই ভয় পাবেন না। সৃষ্টিকর্তার ওপর অগাধ বিশ্বাস, সেই সঙ্গে দৃঢ় মনোবল আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এই যুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব।

এদিকে করোনা শনাক্তের পূর্ব ও পরবর্তী পরিস্থিতি, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়ে এমদাদুল হক খান কথা বলেছেন। তিনি জানান, গত ২৮ মার্চ প্রথমে শরীরে হাল্কা জ্বর ও শুষ্ক কাশি অনুভব করি। পয়লা এপ্রিল পরিচিত এক চিকিৎসককে সমস্যার কথা জানালে তিনি দ্রুত করোনা টেস্টের উপদেশ দেন। 

এমদাদুল বলেন, এরপর আমি করোনা টেস্টের জন্য আইইডিসিআর-এর হটলাইনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। এরইমধ্যে আমার অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকে। এদিকে ৪ এপ্রিল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে করোনা টেস্ট শুরু হলে ৫ এপ্রিল সকালে সেখানে যাই।চিকিৎসক এক্স-রে ও ব্লাড টেস্ট দেন। টেস্ট করে সন্ধ্যায় রিপোর্ট নিয়ে যাই। চিকিৎসক জানান, আমার করোনা হয়নি। এটা সিজনাল সমস্যা। তখন মনে মনে খুশি হই। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতে থাকি। কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি হয় না। 

এভাবে কেটে যায় আরো দুদিন। ৭ এপ্রিল একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞকে ফোন দেই। তিনি ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকের দেয়া ওষুধ কিছুটা পরিবর্তন করে নতুন দুটি ওষুধ দেন। কিন্তু এতেও কোনো কাজ হয় না। মনের মধ্যে করোনার ভয়টা দানা বাঁধে। আবারো আইইডিসিআর-এর হটলাইনে যোগাযোগের চেষ্টা করতে থাকি। সেদিনই আমার অবস্থা জানিয়ে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেই। 

সেটি দেখে ৯ এপ্রিল এক সহকর্মী জানান, আমাদেরই আরেক সহকর্মীর মেয়ে আইইডিসিআর এর চিকিৎসক। যোগাযোগ করি ডা.সাদিয়ার সঙ্গে। সব শুনে সে বলে, আঙ্কেল আপনি আর এক মুহূর্ত দেরি না করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) অথবা ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে করোনা টেস্ট করান। এরপর দ্রুত চলে যাই বিএসএমএমইউ করোনা ইউনিটে (সাবেক বেতার ভবন)। সেখানে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে করোনার নমুনা দেই। 

পরে ১০ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানানো হয়, আমার করোনা পজেটিভ। মুহূর্তে দুচোখে অন্ধকার নেমে আসে। মৃত্যুভয় ঘিরে ধরে চারপাশ থেকে। দুশ্চিন্তায় বুকের ব্যথাটা আরো বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে কাশি। কিছুক্ষণের মধ্যেই থানা থেকে ফোন দিয়ে বাসার ঠিকানা নেয়। তাদের বাসায় আসতে নিষেধ করলেও ১০ মিনিটের মধ্যে বাসায় এসে লকডাউন করে দেয়। 

এরপর প্রতিবেশী ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা বাসায় এসে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন। এদিকে করোনা পজেটিভের বিষয়টি জানাই আমার পেশার বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের। সন্ধ্যায় টেলিভিশন নাটকের পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টর গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এসএ হক অলিক ফোন করে জানান, উত্তরা রিজেন্ট হাসপাতালে আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাতে আমরা পরিবারের সবাই হাসপাতালে যাওয়ার পর আমাদের একই কেবিনে থাকতে দেয়া হয়। আর কোনো কেবিন খালি না থাকায় এই ব্যবস্থা নেয়া হয়। 

সেখানে ১২ এপ্রিল আমার স্ত্রী-সন্তানদের নমুনা নেয়া হয়। ১৪ তারিখ রিপোর্ট আসে বড় মেয়ে ও স্ত্রীর করোনা পজেটিভ। ছোট মোয়েটার নেগেটিভ। এখন কি হবে? মনে নানা দুশ্চিন্তা ভর করে। আমরা তিনজনই বাসায় ফিরতে পারব তো? নাকি হারাতে হবে কোনো একজনকে? এসব ভাবনায় আরো অসুস্থ হয়ে পড়ি। 

এক সময় নিজের মনে সাহস সঞ্চয় করি। ভাবি, জীবনে তো অনেক যুদ্ধ করেছি। কখনো হারিনি। তাই এবারও হারব না। মনে মনে সৃষ্টিকর্তার সহযোগিতা প্রার্থনা করি। ১৫ তারিখ ছোট মেয়েটাকে আমার শ্যালকের মাধ্যমে বাসায় পাঠিয়ে দেই। কিন্তু প্রতিবেশীরা তাদের বাসায় ঢুকতে বাধা দেন। পরে ভবনটির জমির মালিক তাদের বাসায় প্রবেশের ব্যবস্থা করেন। বাসায় ১০ বছরের ছোট মেয়ে আর হাসপাতালে আমরা তিনজন! 

এমদাদুল হক বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পর আমাকে রিকোনিল, এজেড ৫০০, মোনাস টেন, টোফেন, সিভিট দেয়া হয়। গার্গল করার জন্য দেয়া হয় ভায়োডিন। অন্যদিকে একটি ভিডিও দেখে আমি  প্রতিদিন একটি ইলেকট্রিক কেটলিতে আদা, লেবু, লবঙ্গ, দারুচিনি, গোলমরিচ দিয়ে পানি ফুটিয়ে সেই বাষ্পটা টেনে নেই। এভাবে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ বার ৭ থেকে ৮ মিনিট করে করি। পরে সেই পানিটা খেয়ে ফেলি। এছাড়া হাল্কা গরম পানির সঙ্গে ভায়োডিন দিয়ে দৈনিক গার্গল করি। 

আমাদের ২০ তারিখ পুনরায় নমুনা নেয়া হয়। ২২ তারিখ আমার স্ত্রীর রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তাকে ওইদিনই বাসায় পাঠিয়ে দেই। ২৩ তারিখ আমার ও বড় মেয়ের নেগেটিভ আসে। পরে ওইদিনই আমাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। 

তিনি বলেন, আমার মধ্যে করোনার নানা উপসর্গ থাকলেও আমার স্ত্রী ও বড় মেয়ের কোনো উপসর্গ ছিলো না। জিজ্ঞেস করলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আমাদের দেশে ৩০ শতাংশ লোক সম্পূর্ণ উপসর্গহীনভাবে করোনাভাইরাস বহন করছে। মূলত এদের মাধ্যমেই ভাইরাসটা বেশি ছড়াচ্ছে। ২৩ তারিখ বাসায় এসে আরো ১৪ দিন হোম কোয়ারাইন্টাইনে কাটাই। 

গত ১৬ মে  বিএসএমএমইউতে আবার এ্যান্টিবডি টেস্ট করাতে নমুনা দেই। গত ২০ এপ্রিল সেখানকার চিকিৎসক ডা. শরসিন্ধু জানান, আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। আমার শরীরে যথেষ্ট এ্যান্টিবডি আছে। তাই আমি চাইলে করোনায় আক্রান্ত সিরিয়াস ৪ জনকে প্লাজমা দিয়ে সহযোগিতা করতে পারব। আমি এখন সেই প্রস্তুতিই নিচ্ছি।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

শিরোনাম:

স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট
এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
পুলিশকে সাহায্য করবে ক্রাইম জিপিটি!
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর