মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শীতকালীন ৯টি শাকের পুষ্টিগুণ

শীতকালীন ৯টি শাকের পুষ্টিগুণ

শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে শাক অন্যতম। কমবেশি আমরা সবাই শাক খেতে ভালোবাসি। শাক রান্না করা অনেকে এর ঝোল স্যুপের মতো করে খায়। অনেকে আবার শাক ভাজি কিংবা মাছের সঙ্গে রান্না করেও খেতে পছন্দ করেন। তবে যেভাবেই খান না কেন, শাক শরীরের জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত শাক খেলে নানা ধরনের রোগ-ব্যাধি দূর হয়। এতে শরীরও সুস্থ থাকে। এক্ষেত্রে সুস্থতায় জেনে রাখুন কোন শাকের কী গুণ রয়েছে-

১. পালংশাক: পালং শাক কমবেশি প্রায় সবারই প্রিয়। সাধারণত শীতকালে পাওয়া যায় এই শাক। এই শাক রান্না করা ঝোল অনেকে স্যুপের মতো করে খায়। এই শাক ভাজি হিসেবে খাওয়া যায়, রান্না করেও মাছের সঙ্গে খাওয়া যায় সহজেই। পালং শাক খেলে শরীর যেমন সুস্থ থাকে, তেমনি রোগ-ব্যাধি সারাতেও এই শাকের রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা।

পালং শাক শরীরের অন্ত্র সচল রাখতে সাহায্য করে। অন্ত্রের ভেতরে জমে থাকা মল সহজে বের করে দেয়। ডায়াবেটিস রোগীরা এই শাক পরিমাণমতো খেলে উপকার পান। এই শাকের বীজও খুব উপকারী। এর বীজের ঘন তেল কৃমি ও মূত্রের রোগ সারায়। পালং শাকের কঁচি পাতা ফুসফুস, কণ্ঠনালীর সমস্যা, শরীর জ্বালাপোড়া ইত্যাদি সমস্যা দূর করতেও ভালো কাজ দেয়। পালং শাক শরীর ঠান্ডা রাখে। জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এই শাক বিশেষ উপকারী। এই শাককে বলা হয় রক্ত পরিষ্কারক খাদ্য। রক্ত বৃদ্ধিও করে। চোখের জ্যোতি বাড়ায় এবং মুখের লাবন্য বৃদ্ধি করে। পোড়া ঘায়ে, ক্ষতস্থানে, ব্রনে বা কোথাও কালশিরা পড়লে টাটকা পালং পাতার রসের প্রলেপ লাগালে ভালোই উপকার পাওয়া যায়।

পুষ্টি তালিকা : প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে প্রোটিন আছে ২.০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট আছে ২.৮ গ্রাম, অাঁশ আছে ০.৭ গ্রাম, আয়রন ১১.২ মি. গ্রাম, ফসফরাস আছে ২০.৩ মি. গ্রাম, অ্যাসিড (নিকোটিনিক) ০.৫ মি. গ্রাম, রিবোফ্লোবিন থাকে .০৮ মি. গ্রাম, অক্সালিক অ্যাসিড থাকে ৬৫২ মি. গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৩ মি. গ্রাম, পটাশিয়াম ২০৮ মি. গ্রা, ভিটামিন-এ আছে ৯৩০০ আই. ইউ, ভিটামিন সি ২৭ মি. গ্রা, থায়ামিন আছে .০৩ মি. গ্রা। অতীতে বাজারে টক পালংও কিনতে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন তা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই শাকও ছিল খুবই উপকারী। শিশুদের জন্য পালং শাক বিশেষ উপকারী।

২. লালশাক: লাল শাক, ডাঁটা শাক বা ডাঙ্গা শাক, এরা সবই একই গোত্রের এবং এদের প্রজাতিও একই। বিশ্বের অন্য দেশে এদেরকে ফুলের গাছ হিসাবে ব্যবহার করা হলেও আমাদের বাংলাদেশে কিন্তু আমরা একে সবজি হিসাবে ব্যবহার করি।

লালশাকে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অন্য শাকের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। ১০০ গ্রাম লাল শাকে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ রয়েছে ৩৭৪ মিলিগ্রাম, যেখানে পুঁই শাকে ১৬৪ মিলিগ্রাম, মূলা শাকে ২৭.৯০ মিলিগ্রাম, পালং শাকে ৭৯ মিলিগ্রাম ও ডাঁটা শাকে ৮০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। ক্যালসিয়াম ছাড়া লাল শাকে অন্য যে সমস্ত পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা হলো- শর্করা ৪.৯৬ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ৫.৩৪ মিলিগ্রাম, স্নেহ ০.১৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.১০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ ০.১৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৪২.৯০ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১১.৯৪ মিলিগ্রাম, অন্যান্য খনিজ ১.০৬ মিলিগ্রাম, খাদ্য শক্তি ৪৩ কিলোক্যালরি।

ক্যালসিয়াম দেহের জন্য অত্যন্ত দরকারি উপাদান বিশেষ করে দাঁত এবং হাঁড় গঠনে। গর্ভবতী এবং প্রসূতি মাতাদের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা অনেক বেশি প্রায় ১৫০০-২০০০ মিলিগ্রাম। এ সময় ক্যালসিয়ামের অভাব হলে মা ও শিশুর নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়।

বাড়ন্ত শিশুর ক্যালসিয়ামের অভাব হলে দাঁত ও হাঁড়ের গঠন ঠিকমতো হয় না ফলে শিশুর দৈহিক গঠন দুর্বল হয় এবং হাঁটাও বিলম্ব হয়। ছোটবেলা থেকেই শিশুদের লাল শাক খাওয়ার অভ্যাস করা দরকার। ক্যালসিয়ামের অভাবে শিশুদের রিকেটস এবং বয়স্কদের অস্টিও পোরেসিস রোগ হয়। সুতরাং ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে অন্যান্য ক্যালসিয়ামযুক্ত খাদ্যের পাশাপাশি সস্তা এবং সহজলভ্য লাল শাক খাওয়া উচিত।

৩. কলমি শাক: অর্ধ জলজ লতা কলমি শাকের বৈজ্ঞানিক নাম ‘আইপোসিয়া অ্যাকোয়াটিক’। পূর্ব, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কলমির ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে। পানি বা স্যাঁতসেঁতে ভূমিতে সামান্য যত্নেই এই শাক ভালো জম্মে। পুষ্টিগুণে কলমি শাক অতুলনীয়। প্রতি ১০০ গ্রাম কলমি শাকে পাওয়া যায় ২৯ কিলোক্যালোরি, সোডিয়াম ১১৩ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৩১২ মিলিগ্রাম, খাদ্যআঁশ ২.১ গ্রাম, প্রোটিন ৩ গ্রাম, কর্বোহাইড্রেটস ৫.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৩ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৫০ মিলিগ্রাম, লৌহ ২.৫ মিলিগ্রাম, জলীয় অংশ ৮৯.৭ গ্রাম। কলমি শাকে থাকা এসব উপাদান আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।  এবার কলমি শাকের কিছু উপকারিতার কথা জেনে নেওয়া যাক- ১. কলমি শাকে ক্যালসিয়াম থাকে বলে এই শাক হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুদের কলমি শাক খাওয়ানো উচিত। ২. কলমি শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং রোগ প্রতিরোধ করে। ৩. এই শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যশক্তি থাকায় মানবদেহের দুর্বলতা খুব দ্রুত সরিয়ে তুলতে সাহায্য করে। ৪. কলমি শাক বসন্ত রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। ৫. কলমি শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে লৌহ থাকায় এই শাক রক্তশূন্যতার রোগীদের জন্য দারুণ উপকারী। সারা দেহে প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ ঠিক রাখতেও এই শাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ৬. ঋতুস্রাবের সমস্যা দূরীকরণে কলমি শাক উপকারী ভূমিকা পালন করে।

৪. কচু শাক: কচু শাকে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ থাকায় এ শাকের লৌহ দেহ কর্তৃক সহজে আত্তীকরণ হয়। প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দেয়া ছাড়াও প্রাচীনকাল থেকে কচুকে বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। মুখী ও পানিকচুর ডগা দেহের ক্ষত রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া জ্বরের রোগীকে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য দুধকচু খাওয়ানো হয়। ওলকচুর রস, উচ্চরক্তচাপের রোগীকে প্রতিষেধক হিসেবে খাওয়ানো হয়। আবার মান কচুর ডগা ও পাতা বাতের রোগীকে খাওয়ানোর প্রথা এ দেশের ঘরে ঘরে প্রচলিত রয়েছে। কচু শাকে পর্যাপ্ত আঁশ থাকায় এটি দেহের হজমের কাজে সহায়তা করে।

আয়রন সমৃদ্ধ বলে এর সমাদরও বেশি। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে সব ডাক্তাররাই কচু শাক খাওয়ার পরামর্শ দেন। কচু শাকে আছে প্রোটিন, চর্বি, ক্যালসিয়াম, শর্করা, আয়রন, খাদ্যশক্তি, ভিটামিন এ, বি৬ ও সি। সাধারণ কচুর ডগা এবং কালো রঙয়ের কচু শাকে আয়রন থাকে প্রচুর পরিমাণে। রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীদের জন্য কচু শাক খাওয়া একরকম আবশ্যক। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তাঁরা প্রচুর কচু শাক খেতে পারেন। কারণ কচুতে আছে অনেক আঁশ। যা খাবার সহজে হজম করতে সাহায্য করে।

কচু শাক সারা দেহে অক্সিজেনের সরবরাহ বজায় রাখতে জুড়ি নেই। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে এমনিতেই শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়। সেই সরবরাহ সচল রাখতে কচু শাক অনেক বেশি কার্যকর। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কচু শাক দারূণ ভূমিকা রাখে। এককভাবে কোনো নির্দিষ্ট অঙ্গপ্রত্যঙ্গের রোগের জন্য এই শাক কাজ না করলেও অন্যভাবে পুরো শরীরেরই উপকার করে। মাঝে মাঝে সামান্য গলা চুলকানো ছাড়া কচু শাকের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। শাকে যতোটুকু ক্ষতিকর অক্সালিক অ্যাসিড থাকে তা এক রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখলেই চলে যায়।

৫. পুঁইশাক: বাজারে এখন প্রচুর পুঁইশাক পাওয়া যাচ্ছে। প্রবাদে আছে-শাকের মধ্যে পুঁই, মাছের মধ্যে রুই। এ থেকেই বুঝা যায় ভোজনরসিকদের কাছে পুঁইশাক কতখানি পছন্দের। সবুজ ও লাল-এই দুই রঙের হয়ে থাকে পুঁইশাক। সবুজ রংয়ের গাছের নাম (বোটানিক্যাল) বেসেলা এলবালিন। আর লাল রঙের গাছের নাম রুবরালিন। এগুলোর মধ্যে স্বাদেও রয়েছে কিছুটা পার্থক্য।

পুঁইশাকে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন। তবে ভিটামিন ‘বি’, ‘সি’ ও ‘এ’-এর পরিমাণই বেশি। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে আছে ক্যালসিয়াম এবং আয়রণ। প্রতি ১০০ গ্রাম পুঁইশাকে অাঁশ আছে ২ দশমিক ৩ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ১ দশমিক ৫ গ্রাম, শর্করা আছে ৪ দশমিক ২ গ্রাম, লৌহ ১১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৬৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৬৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-‘বি’ ২৭ মিলিগ্রাম।

এই শাক কিছুটা গুরুপাক। তাই আমাশার রোগীদের তা না খাওয়া উচিত। রক্তে ইউরিক এসিড বেশি থাকলে বাতজনিত সমস্যা দেখা যায়। মাছের এ সমস্যা আছে তাদেরও বর্জন করা উচিত পুঁইশাক। এতে প্রচুর অাঁশ আছে বলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করে। এই শাক নানাভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। ভাজিও খাওয়া যায়। ইলিশ-পুঁই ও চিংড়ি-পুঁই অনেকের অতি প্রিয় তরকারি।

৬. সরিষা শাক: সরিষা শাক ভিটামিন ও মিনারেলের একটি সমৃদ্ধ উৎস। ভিটামিন এ, সি ও কে সৃমদ্ধ পরিপূর্ণ সরিষা শাক শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এতে আছে শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্ট যা নানা রকম ভাইরাল অসুখ থেকে আপনাকে সুরক্ষা দেয়। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে, ভিটামিন কে হাড়ের সুরক্ষা করে এবং মস্তিষ্ককে রাখে দারুণ সচল।

সরিষা শাকে আছে আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, পটাশিয়াম, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, প্রোটিন ও ফাইবার। যা আপনার হার্ট ভালো রাখে, রক্তের কোলস্টেরল কমায় এবং গর্ভবতী মায়েদের সুস্থ শিশু জন্মদানের সম্ভাবনা বাড়ায়।

এন্টিঅক্সিডেন্ট এর সব চেয়ে বড় গুণ হলো, এটি ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে বাধা দেয়। মাসসিক চাপ কমানো ও নানা ধরনের ক্যান্সার দূরে রাখতে সাহায্য করার পাশাপাশি এ শাক শরীরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। শারিরীক দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে সরিষা শাক। এটি শরীরে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে আনে, দেহের তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে, এবং হজমশক্তি বাড়ায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরিষা শাক হার্ট এটাক, আর্থ্রাইটিস ও ক্রনিক রোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনে। এতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতেও কার্যকর সরিষা শাক।  ত্বক, চুল, ওজন ও স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এই সাহায্য করে শাক।

৭. ধনেপাতা: ধনেপাতা অতিপরিচিত একটি সবজি। ধনেপাতা বেশির ভাগ বিভিন্ন সবজির মধ্যে দিয়ে খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। ধনেপাতার সঙ্গে লবণ, কাঁচা মরিচ ও লেবুর রস দিয়ে চাটনি করে খেতে অনেক মজা। আবার ধনে পাতা ভর্তা অতি মুখরোচক হয়। তবে আমাদের দেশে বেশির ভাগ শহরের মানুষ ধনেপাতা তরকারির মধ্যে ও সালাদে ব্যবহার করে থাকে। ধনেপাতার নানা ঔষধি গুণ রয়েছে। ধনেপাতার গুণাগুণ সম্পর্কে খুব কমই লোকে জানে।

ধনেপাতার মধ্যে রয়েছে ঔষধি নানা উপাদান যা রক্ত শোধন করে। আমাদের শরীরে নিয়মিত খাদ্যভ্যাসের কারণে তিলে তিলে জমা হতে থাকে বেশ কিছু ভারি ধাতু এবং বিষাক্ত পদার্থ। এই বিষাক্ত পদার্থ থেকে শরীরে কঠিন রোগ তৈরি হতে পারে। ধনেপাতা রক্তপ্রবাহ থেকে এই সমস্ত ক্ষতিকর উপাদান দূর করে শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে।

ধনেপাতায় রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, লোহা ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো বেশ কয়েকটি উপকারী খনিজ। এছাড়া ভিটামিন এ এবং ভিটামিন কে-র জোগান দেয় এই পাতা। শুধু তাই নয় এই উদ্ভিদ অ্যান্টিসেপ্টিক, অ্যান্টিফাংগাল এবং চামড়ার জ্বলনে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ।

দিল্লির এইমস-এর গবেষণাগারে রিউম্যাটিক আর্থারাইটিস রোগে আক্রান্ত ইঁদুরের পায়ে ধনেপাতার রস প্রবেশ করালে তার শরীরের জ্বলন ও ফোলা ভাব দূর হতে দেখা। আরও ধনেপাতায় আছে ভিটামিন সি। রয়েছে ভিটামিন-এ ফলিক অ্যাসিড। এটি এমন এক ধরনের ভিটামিন, যা ত্বকের উপকারে যথেষ্ট প্রয়োজনীয়। প্রতিদিনের পুষ্টি জোগায় এই ভিটামিনগুলো। এ পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি’তে ভরা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নামের উপাদান। কিছু সুগন্ধি তৈরির জন্যও ব্যবহার করা হয় ধনেপাতা। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলেন, প্রতিদিনের খাবারের মেন্যুতে ধনেপাতাকে স্থান দেওয়া উচিত। জেনে নেই ধনেপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

৮. পেঁয়াজ পাতা: শীতকালীন সবজির মধ্যে পেঁয়াজ পাতা বেশ সহজলভ্য। একে স্প্রিং অনিওন বা সবুজ পেঁয়াজও বলা হয়। পেঁয়াজ পাতা ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১২ এবং থায়ামিন সমৃদ্ধ। কোয়ারসেটিন নামক ফ্ল্যাভনয়েডের উত্স এই পেঁয়াজ পাতা। এবার দেখে নেয়া যাক পেঁয়াজ পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে কি ধরনের উপকার করে থাকে।

পেঁয়াজ পাতার ভিটামিন সি কোলেস্টেরল ও রক্ত চাপের উচ্চ মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে যা হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া পেঁয়াজ পাতার সালফার করোনারি হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি কমায়। অ্যান্টি ভাইরাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় পেঁয়াজ পাতা সাধারণ ঠাণ্ডা, ফ্লু ও ভাইরাল ইনফেকশনের ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সবুজ পেঁয়াজের সালফার যাতে অ্যালাইল সালফাইড থাকে তা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। সবুজ পেঁয়াজে ক্যান্সার রোধী উপাদান ফ্লেভনয়েড থাকে।

সবুজ পেঁয়াজ গ্যাস্ট্রো ইন্টেস্টাইনাল সমস্যা প্রশমনে উপকারী ভূমিকা রাখে। ডায়রিয়া এবং পাকস্থলীর জটিলতার ক্ষেত্রে শক্তিশালী প্রাকৃতিক প্রতিকার হচ্ছে স্প্রিং অনিওন। অধিকন্তু রুচি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ও পেঁয়াজ পাতার উচ্চ মাত্রার ফাইবার হজম সহায়ক। পেঁয়াজ পাতার খনিজ উপাদান সালফার ছত্রাকের বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে এবং ভিটামিন  কে রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। এছাড়াও শরীরে ভিটামিন বি১ এর শোষণের মাধ্যমে চাপ ও ক্লান্তি কমায়। শরীরের কলার প্রদাহ ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করে পেঁয়াজ পাতার ভিটামিন সি। পেঁয়াজ পাতায় উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি কোলাজেনের সমন্বয় সাধনে কাজ করে যা হাড়কে শক্তিশালী করে। অন্যদিকে ভিটামিন কে হাড়ের ঘনত্ব রক্ষায় প্রধান ভূমিকা পালন করে। লুটেইন ও জেনান্থিন নামক ক্যারোটিনয়েডের উপস্থিতির জন্য পেঁয়াজ পাতা চোখের প্রতিরক্ষায় প্রভাব বিস্তার করে। চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং স্বাভাবিক দৃষ্টির রক্ষণাবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ভিটামিন এ।

৯. মুলা শাক: মূলা শাক স্বাদে বেশি মজার না হলেও এর রয়েছে অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা। অনেকেই মূলা শাক একটু তিতা তিতা লাগে বলে খেতে চান না। আপনি হয়তোবা কখনো চিন্তাও করেননি তিক্ত স্বাদের এই শাকের রয়েছে এত গুণাবলী। সম্মানিত গ্রাহক আসুন এবার জেনে নেই মূলা শাকের উপকারিতা সম্বন্ধে বিস্তারিত ভাবে- মূলা শাক মুলা শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায় যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে দেহের রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়াও এতে মলিবডেনাম, পটাসিয়াম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ ফলিক এসিড রয়েছে। মূলা শাক অ্যান্টিক্যান্সার উপাদান সমৃদ্ধ সবজি, মুলা শাক গ্রহণ করলে অ্যালার্জি ও হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। মুলা শাক আমাদের দেহ থেকে ফ্রি র্যাডিকেল বা মুক্তমূলক পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। মুলা শাকের উপকারী উপাদান সমূহ শরীরের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টকে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে সাহয্য করে। ফলে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের আক্রমণ থেকে এটি শরীরকে রক্ষা করে থাকে। মুলা শাকে বিদ্যমান ফাইবার দেহের ব্লাড সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সতর্কতা মুলা শাকে প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট রয়েছে। অধিক পরিমাণে মুলা শাক গ্রহণ করার ফলে অক্সালেট জমাট বেধে শরীরে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া ক্যালসিয়াম শোষণে অক্সালেট বাধা সৃষ্টি করে থাকে। যারা কিডনি বা পিত্তথলির বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তাদের মুলা শাক এড়িয়ে চলা উচিৎ।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

শিরোনাম:

স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট
এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
পুলিশকে সাহায্য করবে ক্রাইম জিপিটি!
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর