শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা হত্যা, নির্যাতন, বাস্তুচ্যুতি বন্ধে মিয়ানমারকে নির্দেশ

রোহিঙ্গা হত্যা, নির্যাতন, বাস্তুচ্যুতি বন্ধে মিয়ানমারকে নির্দেশ

রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা-নির্যাতন বন্ধ, তাদের বাস্তুচ্যুতিরোধ এবং গণহত্যার অভিযোগ সংশ্লিষ্ট আলামতগুলো সংরক্ষণ করার জন্য মিয়ানমারের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নেদারল্যান্ডের দ্যা হেগে আইসিজে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা অভিযোগের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী পদক্ষেপ হিসাবে এ আদেশ দেয়। এই আদেশ বাস্তবায়নে মিয়ানমার কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা চার মাসের মধ্যে আদালতকে জানাতে হবে। এরপর অভিযোগের চ‚ড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারকে ছয় মাস অন্তর প্রতিবেদন দিতে হবে। একইসাথে গাম্বিয়াকে এ সব প্রতিবেদন সরবরাহ করতে হবে - যাতে দেশটি তাদের মতামত দিতে পারে।

ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে গাম্বিয়া জাতিসঙ্ঘের গণহত্যার সনদ ভঙ্গের অভিযোগে গত ১১ নভেম্বর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজেতে মামলা করে। গাম্বিয়ার অভিযোগ, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে, যার প্রক্রিয়া আজো অব্যাহত রয়েছে।

আইসিজে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারন পরিষদের অবিচ্ছেদ্দ অঙ্গ। আইসিজের রায় বা নির্দেশনা বাস্তবায়ন সনদ স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক। গাম্বিয়া ও মিয়ানমার উভয়েই এই সনদ সই করেছে। আইসিজের চ‚ড়ান্ত রায়ের পর আপিলের কোনো সুযোগ নেই। কোনো অভিযোগের ব্যাপারে আইসিজের রায় পেতে অন্তত পাঁচ বছর সময় প্রয়োজন হয়। তবে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য আইসিজে অভিযোগ নিষ্পত্তিতে সহায়ক হতে পারে - এমন প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারে।

আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদ ছাড়া বিশ্ব আদালতের রায় বা আদেশ কার্যকরের অন্য কোনো পদ্ধতি নেই। তবে এই আদেশ রোহিঙ্গা নৃশংসতার সাথে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে মিয়ানমারের ওপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির  আলাপকালে জানান, আইসিজের আদেশে প্রমাণিত হল অন্যায় বা অপরাধ করলে ছাড় পাওয়া যায় না। রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নৃশংসতার জন্য বিচারের পথে এটি এক ধাপ অগ্রগতি। এখন বাংলাদেশের কাজ হল রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সম্মানের সাথে টেকসইভাবে রাখাইনে ফেরত পাঠানো। আমরা আশা করি আইসিজের এই আদেশের পর মিয়ানমার রোহিঙ্গা ইস্যুটি পুনর্মূল্যায়ন করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে এগিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আইসিজের আদেশ মিয়ানমারের ওপর প্রচন্ড নৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে। এর মাধ্যমে প্রথমত, মিয়ানমার যে অপরাধ করেছে তা প্রতিষ্ঠিত হল, দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মিয়ানমারের ভাবমর্যাদা দারুণভাবে ক্ষুন্ন হল। রাখাইনের ওপর সম্প্রতি মিয়ানমার তাদের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করলেও যুদ্ধাপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে। তাই আমরা চাই মিয়ানমার অপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি নৃশংসতার শিকার রোহিঙ্গাদের যথাযথভাবে ক্ষতিপূরণ দিয়ে পুনর্বাসন করুক।

আইসিজের আদেশ মানতে মিয়ানমার কতটা বাধ্য এবং না মানলে কি হতে পারে জানতে চাইলে হুমায়ুন কবির বলেন, নিদের্শনা মানতে আইসিজের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। শর্ত মানার প্রতিশ্রæতি দিয়েই সদস্য রাষ্ট্রগুলো জাতিসঙ্ঘ গণহত্যা সনদে সই করেছে। আইসিজে অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়েছে। চ‚ড়ান্ত রায় এখনো আসেনি। তাই অন্তর্বর্তী আদেশ না মানাটা মিয়ানমারের জন্য ভাল পরিণতি ডেকে আনবে না। তিনি বলেন, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে এমনিতেই মিয়ানমার যথেষ্ঠ আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছে। এখন অভিযোগগুলোর শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির মাধ্যমে মিয়ানমার মানবাধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধার, রোহিঙ্গা ইস্যুতে অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান ও বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পারে।

‘বিশ্ব আদালত’ নামে পরিচিত জাতিসঙ্ঘের সর্বোচ্চ আদালত আইসিজে ১৫ জন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত, যারা নিরাপত্তা পরিষদ বা সাধারণ পরিষদ দ্বারা নির্বাচিত। আইসিজেতে গাম্বিয়া বা মিয়ানমারের কোনো বিচারক নেই। তাই গত ১০ ডিসেম্বর অভিযোগ শুনানীর প্রথম দিন গাম্বিয়ার পক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক নাভা নেডাম পিলাই এবং মিয়ানমারের পক্ষে জার্মান নাগরিক ক্লাউস ক্রেসকে এডহক বিচারক হিসাবে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। নেডাম পিলাই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিচারক হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার সংস্থার হাইকমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। অন্যদিকে ক্লাউস ক্রেস আন্তর্জাতিক ও অপরাধ আইনের অধ্যাপক। তিনি জার্মান বিচার মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক ছিলেন।

আইসিজেতে শুনানীর প্রথম দিন গাম্বিয়া বক্তব্য উত্থাপন করে। পরদিন বক্তব্য রাখে মিয়ানমার। শেষদিন গাম্বিয়া ও মিয়ানমার উভয়েই পাল্টাপাল্টি যুক্তিতর্ক উত্থাপন করে। শুনানী শেষ হওয়ার ছয় সপ্তাহ পর আইসিজে অন্তবর্তীকালীন পদক্ষেপের ব্যাপারে গতকাল সিদ্ধান্ত জানায়। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টা) আইসিজে সিদ্ধান্ত জানানোর প্রক্রিয়া শুরু করে, যা ঘন্টাব্যাপী চলে।

আইসিজের শুনানীতে গাম্বিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির বিচারমন্ত্রী ও আটর্নি জেনারেল আবুবাকার তামবাদু। অন্যদিকে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির রাষ্ট্রীয় পরামর্শক ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা অং সান সু চি। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজেতে অভিযোগ দায়েরে গাম্বিয়াকে সব ধরনের সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ, কানাডা ও নেদারল্যান্ডস। গতকালও এ সব দেশের প্রতিনিধিরা আইসিজেতে উপস্থিত ছিল।

আইসিজের আদশ : আইসিজে সর্বসম্মতভাবে অন্তর্বর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে আদেশ দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গণহত্যা প্রতিরোধ ও শাস্তি সংক্রান্ত সনদের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী মিয়ানমার তার ভ‚খন্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের কোনো সদস্যকে হত্যা, শরীরিক বা মানসিকভাবে গুরুতর আঘাত, সম্প্রদায়কে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসের লক্ষ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমন এবং তাদের সন্তান জন্মদানে বাধা প্রদানে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারবে না। মিয়ানমারকে নিশ্চিত করতে হবে তার সামরিকবাহিনী অথবা তার নির্দেশনায় পরিচালিত, নিয়ন্ত্রিত বা সমর্থিত কোনো অনিয়মিত সশস্র ইউনিট, সংস্থা বা ব্যক্তি গণহত্যার ষড়যন্ত্র, গণহত্যায় উষ্কানি দান অথবা গণহত্যা সংঘটনে বিরত থাকে।

আদেশে বলা হয়, গণহত্যার অভিযোগের সাথে সংশ্লিষ্ট আলামত ধ্বংসের কোনো প্রচেষ্টা রোধ করে তথ্য-প্রমাণ সংরক্ষণে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে নেয়া সব পদক্ষেপ সম্পর্কে মিয়ানমারকে চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে। এরপর চ‚ড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত ছয় মাস অন্তর প্রতিবেদন দিতে হবে।

জাতিসঙ্ঘের স্পেশাল রেপোর্টিয়ার : রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও দমন-পীড়ন বন্ধ এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের আলামত ধ্বংস না করার আইসিজে নিদের্শনা মিয়ানমার যথাযথভাবে অনুসরন করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের স্পেশাল রেপোর্টিয়ার ইয়াংহি লি।

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক স্পেশাল রেপোর্টিয়ার হিসাবে দায়িত্ব পালন শেষে আগামী মার্চে জাতিসঙ্ঘে প্রতিবেদন দেবেন ইয়াংহি লি। স্পেশাল রেপোর্টিয়ার হিসাবে বাংলাদেশে শেষ সফরে এসে গত কয়েকদিন তিনি কক্সবাজারে ছিলেন। এ সময় রোহিঙ্গা শরণার্থী, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিও প্রতিনিধিদের সাথে তিনি মতবিনিময় করেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের পক্ষে চীন ও রাশিয়ার ভ‚মিকাকে ‘বেদনাদায়ক’ হিসাবে আখ্যায়িত করে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের স্পেশাল রেপোর্টিয়ার ইয়াংহি লি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো ক্ষমতাধর এই দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের উচিত কক্সবাজারে এসে রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখে যাওয়া, প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন করা। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসাবে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতাসহ জাতিসঙ্ঘের সংস্কার প্রয়োজন বলে ইয়াংহি লি মন্তব্য করেন।

কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইন এখনো নিরাপদ নয় বলে উল্লেখ করে ইয়াংহি লি বলেন, রাখাইনে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে লড়াই চলছে। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল।

প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ থাকায় সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে এমন মানুষদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে মিয়ানমার কিছুই করছে না। সব কিছু আগের মতই চলছে। যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও গণহত্যা চলতে থাকায় মিয়ানমার নিয়ে উচ্চাশা পোষণের কোনো সুযোগ নেই।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর
ঈদের দিন ৩ হাসপাতাল পরিদর্শন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
আয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
জুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেই