শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যমুনা ও ইছামতিতে মাছের আকাল

যমুনা ও ইছামতিতে মাছের আকাল

যৌবনহীন যমুনা-ইছামতি। তার বাঁকে বাঁকে এখন বালির পাহাড়। সেইসাথে কাশবন আর ডুবোচর। সবমিলে পানির প্রবাহ একেবারেই কমে এসেছে। ফলে  এক সময়ের মাছের খনি নামে যমুনা-ইছামতি নদীর রসনাতৃপ্ত পাঙ্গাশ ও বাঘাআইড় মাছের স্বাদ ভুলতে বসেছে। দেশখ্যাত যমুনার ৩০-৪০ কেজি ওজনের পাঙ্গাশ আর ৮-১০ মণ ওজনের বাঘা আইড় মাছের কথা এখন আর চিন্তাই করা যায় না। 

 পানি প্রবাহ অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে এই দুই নদীতে মাছের আকাল । ফলে জেলেদের অভাবনীয় দুর্দিন চলছে। প্রয়োজন হয়ে পড়ছে সুদমুক্ত ঋণের। বর্ষা মৌসুমের তুলনায় বর্তমানে মাছের উৎপাদন কমেছে ৪০ শতাংশ। এতে নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত মিলে প্রায় ৩ হাজার জেলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সরকারিভাবে কোনো সহায়তা না পাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে তাদের জীবন-জীবিকাও। ফলে অনেকেই এ পেশা বদলের চিন্তা-ভাবনা করছে। অপরদিকে এ অবস্থায় সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে যমুনা ও ইছামতি নদী খননের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তারা বলেছেন, বাঁধ ও তীর সংরক্ষণের মতো নদীশাসন প্রকল্প নিয়েই শুধু পড়ে থাকলে হবে না। মৎস্য সম্পদ রক্ষাসহ নদীকেন্দ্রিক জীবন-জীবিকা টিকিয়ে রাখতে হলে যমুনা ও ইছামতি নদী খনন কাজও জরুরি হয়ে পড়েছে।

মৎস্য অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যমুনা ও ইছামতি নদীতে প্রায় ৩ হাজার জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এসব জেলের মধ্যে ১ হাজার ৭শ’ ৭০ জন সরকারিভাবে নিবন্ধিত এবং বাকি প্রায় দেড় হাজার জনের নিবন্ধন এখনও হয়নি। যমুনা-ইছামতি নদীতে বছরে ৬৯২ মেঃটন মাছ পাওয়া যায়। বর্ষা মৌসুমে পাওয়া যায় ৪২০ মেঃটন, শুস্ক মৌসুমে উৎপাদন হয় ২৭২ মেঃটন উৎপাদন হয়। তবে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে পানিপ্রবাহ সবচেয়ে কম থাকায় মাছের উৎপাদন আরও কমে যায়। যমুনা নদী তীরবর্তী এলাকার জেলেরা জানিয়েছেন, বর্তমানে নদীর অনেক স্থানে জাল ফেলার মতো পানি নেই। নাটুয়ারপাগড়া জেলে পল্লীর বাসিন্দা গৌতম, লিটন আক্ষেপ করে বলেন, যে দু’-এক জায়গায় পানি আছে সেখানে জাল ফেলেেল ৫০০ টাকার মাছও পাওয়া যায় না। বরইতলী পল্লীর বাসিন্দা বিমল, চিত্তরঞ্জন জানান, কাঙ্খিত মাছ না পাওয়ায় তারা বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না। এ অবস্থায় জেলেদের সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা হলে তাদের দুর্ভোগ-দুর্দশা অনেককাংশে হ্রাস পাবে। 

কাজিপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা  মাহমুদুল হাসান জানান, পানির অভাবে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়া জেলেদের নদীর স্বল্প পানিতে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শুস্ক মৌসুমের তিন থেকে চার মাস খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে ৫০-৬০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। জেলেরা জানিয়েছেন, খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ ক্ষেত্রে যে পুঁজির দরকার, সরকারিভাবে তা পাওয়া না গেলে তাদের পক্ষে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে পেশা পরিবর্তন করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। 

মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, শুস্ক মৌসুমে যেন কর্মহীন থাকতে না হয় সে জন্য নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত জেলেদের খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নদীর যে অংশে পানি আছে সেখানে নেই দিয়ে ১০০ বর্গফুট (১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থ) এলাকা ঘিরে খাঁচা তৈরী করে তাতে মাত্র ৪ মাসে ১২ প্রজাতির মাছ চাষ করা সম্ভব। জেলেদের খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের পরামর্শ দিচ্ছি। মাছের পোনা কোথায় পাওয়া যাবে সেটাও আমি তাদের জানিয়েছি। একটি খাঁচায় ৪ মাসে মাছ চাষ করে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। যদি কেউ আগ্রহী হয় তাহলে আমরা তাদের প্রক্রিয়াগত সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছি। মৎস্য অফিসের খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের উদোগ্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিমল নামে এক জেলে বলেন, খাঁচা পদ্ধতি ভালো। কিন্তু সেটা তৈরি করতে এবং মাছের পোনা কিনতে তো টাকা লাগবে। তা কে দেবে। যদি সরকারিভাবে ঋণ দেয়া হতো তাহলে আমরা সুবিধা পেতাম। 

জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন আরচেস-এর সমন্বয়ক রবিউল আওয়াল বলেন, নদীর নাব্য ফেরানোর পরিকল্পনা না নিলে চরাঞ্চলে এবং নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত লাখো মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। তাই বাস্তবমুখী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা জরুরীভাবে গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞমহল তাদের সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করেছেন।  

 

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

শিরোনাম:

স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট
এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
পুলিশকে সাহায্য করবে ক্রাইম জিপিটি!
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর