মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

‘যখন মাঠে নামি, তখন কিন্তু বাংলাদেশ নামটা নিয়েই নামি’

‘যখন মাঠে নামি, তখন কিন্তু বাংলাদেশ নামটা নিয়েই নামি’

অধিনায়কত্বের শুরুটা হয়েছিল ২০০৯ সালে। ইনজুরির কারণে কয়েক দফায় বিরতি এসেছে এতে। তবে ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত পুরোদমে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলকে। যদিও টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন ২০১৭ সালের এপ্রিলে, তবু ছিলেন ওয়ানডে দলের অধিনায়ক।

আগামীকাল (শুক্রবার) জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের পর মুক্ত হয়ে যাচ্ছেন এ দায়িত্ব থেকেও। ঘোষণা দিয়েছেন কালকের পর আর অধিনায়কত্ব করবেন না ওয়ানডে দলেও। তবে সাধারণ খেলোয়াড় হিসেবে দলে থাকার জন্য যা করার দরকার তা করবেন তিনি।

ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসে চেয়ারে বসার পর প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরুর আগেই মাশরাফি নিজ থেকে বলে ওঠেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ। আমি কিছু কথা বলতে চাই। অধিনায়ক হিসেবে কালকেই আমার শেষ ম্যাচ। এত লম্বা সময় আমার প্রতি আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে। ধন্যবাদ জানাই আমার সাথে যত খেলোয়াড় খেলেছে তাদের। আমি নিশ্চিত মাঝের সময়টা এত সহজ ছিল না, গত ৫-৬ বছরের যাত্রাটা। আমি ধন্যবাদ জানাই টিম ম্যানেজম্যান্টকে, যাদের অধীনে আমি খেলেছি। তারা সবাই আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে।’

অধিনায়কত্ব শুরুর সময়টার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব শুরু হয়েছিল চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে দিয়ে। এর আগেও পেয়েছিলাম; কিন্তু ইনজুরির কারণে সেভাবে করতে পারিনি। হাথুরুসিংহেকে দিয়েই শুরু এরপর খালেদ মাহমুদ সুজন, স্টিভ রোডস আর (রাসেল) ডোমিঙ্গো..., নির্বাচক ও বোর্ডের কর্মকর্তা যারা আছেন, বোর্ডের প্রতিটি স্টাফ, সবাইকে ধন্যবাদ সহযোহিতার জন্য। মিডিয়ার যারা আছেন, সবাই সহযোগিতা করেছেন। আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। সবশেষে সমর্থকরা, যারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রাণ। আপনাদের সমর্থন ছাড়া সম্ভব হতো না (এত দূর আসা)।’

এরপর সঙ্গে করে আনা লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান মাশরাফি, ‘আজকে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাচ্ছি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি অধিনায়ক হিসেবে আমার শেষ ম্যাচ। খেলোয়াড় হিসেবে আমি চেষ্টা করব আমার সেরাটা দেওয়ার, যদি সুযোগ আসে। শুভকামনা থাকবে পরবর্তী অধিনায়কের জন্য।’

মাশরাফির বক্তব্য শেষ হওয়ার পর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। প্রায় ত্রিশ মিনিটের এ সংবাদ সম্মেলনে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মাশরাফি। কথা বলেছেন নিজের অধিনায়কত্ব জীবন নিয়ে, মতামত দিয়েছেন দেশের ক্রিকেটের সামগ্রিক অবস্থা নিয়েও।

পাঠকদের জন্য মাশরাফির এই দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনের সকল প্রশ্নোত্তর দেয়া হলো এক জায়গায়-

প্রশ্ন: এ সিরিজের আগেই বোর্ড প্রেসিডেন্ট একবার কথা প্রসঙ্গে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অধিনায়কত্বের ব্যাপারে। এখন সিদ্ধান্তটা কি বোর্ড আপনাকে নিয়ে দিল না আপনি নিজেই নিলেন?

মাশরাফি: না, সিদ্ধান্তটা আমিই নিয়েছি।

প্রশ্ন: আপনি কারো নাম বলবেন যে আপনার দায়িত্বটা বয়ে নিয়ে যেতে পারে?

মাশরাফি: কারো নাম বলা তো কঠিন। অবশ্যই এটা বোর্ডের সিদ্ধান্ত। তবে সিনিয়র যারা আছে, সাকিব তো এখন বাইরে, সিনিয়র আরো যে তিনজন (তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ) আছে..., আর প্রক্রিয়াটা কী আমি জানি না। মানে সাকিব আসার পরে কী হবে। এখন থেকে প্রক্রিয়াটা কাউকে দিয়ে শুরু হবে কি না। তবে আমি নিশ্চিত যে তিনজন বর্তমানে আছে তাদের অধিনায়কত্ব করার সামর্থ্য আছে। আমি আশা করছি যে সেরা তাকেই মনোনীত করা হবে।

প্রশ্ন: কতোটা আবেগপ্রবণ ছিল এই সিদ্ধান্তটা? কতোটা কঠিন ছিল অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া?

মাশরাফি: না, দেখেন অধিনায়কত্ব জিনিসটাকে কখনোই আমি এতোটা গুরুত্বের জায়গায় নেইনি। সবসময় গর্ববোধ করি যে, আমি জাতীয় দলের হয়ে খেলি বা খেলেছি। অধিনায়কত্বটা আমাকে বিসিবি সুযোগ দিয়েছে, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কখনও হয়েছে, কখনও হয়নি। তবে সিদ্ধান্ত তো নিতেই হবে। ধরেন সামনে বিশ্বকাপ আসছে ২০২৩ সালে। যেহেতু সবাই কথা বলছে আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনা করতে হবে। আমার কাছে মনে হয় নতুন কেউ আসার এটাই সঠিক সময়। সে দলকে এখন থেকেই গুছিয়ে নিক এবং আমি আশা করব যে পরিকল্পনা করা হয়েছে সেটায় যেন স্থির থাকা হয়। এই অধিনায়ক যেন ২০২৩ বিশ্বকাপের অধিনায়ক হয়।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপে আপনার নেতৃত্বে দল ভালো খেলেছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভালো খেলেছে। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মেলালে কোনো আক্ষেপ আছে কি না? কোনো কিছু না পাওয়ার হতাশা আছে কি না?

মাশরাফি: আমার ক্যারিয়ারটাই তো অনেক আগে শেষ হয়ে যেতে পারত। যতোটুকু পেয়েছি আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া যে এতোটুকু আসতে পেরেছি। প্রাপ্তির বিষয়ে একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে বলা খুব কঠিন। অপ্রাপ্তিটা খুব সহজেই বলতে পারা যায়।

সুতরাং অনেক অপ্রাপ্তি আছে, কিন্তু সেটাও দিন শেষে আমার কাছে প্রাপ্তি। কারণ একটা নির্দিষ্ট ধারায় কখনওই জীবন চলে না। ভালো-খারাপের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। আমার ক্ষেত্রেও ওটাই হয়েছে। তবে সত্যি বলতে বলবো যে আমি এই দায়িত্বটাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে পালনের চেষ্টা করেছি। এখন প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি তো আসলে আপনারা-সমর্থকরা ভালো জানেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা খোজার চেষ্টা করিনি কখনও।

প্রশ্ন: পরশু (মঙ্গলবার) বলেছিলেন ছেড়ে দিতে পারি, আবার বলেছিলেন ভাবি। এই অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে...,

মাশরাফি: সত্যি বলতে এতো ভাবাভাবি করিনি। আমার কাছে মনে হয় সবাই, যে কেউ..., আপনি যদি বাইরের চিন্তা করেন, সবাই চাচ্ছে ২০২৩ এর জন্য নতুন অধিনায়ক আনার সময় হয়েছে। তো আমি মনে করি আমার ভাবা উচিত ছিল। ভাবার চেষ্টা করেও আমি আসলে এতো ভাবতে পারিনি। আমি আসলে এতো ভাবিনি। আজকে সকালে মনে হয়েছে, যথেষ্ঠ হয়েছে! সত্যি বলছি আজকে সকালেই মনে হয়েছে। কালকে পর্যন্ত সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলাম। কিন্তু আজকে সকালে মনে হয়েছে, ‘ইটস এনাফ’।

তবে যেটা বললাম, যে কথাগুলো হয়েছে বা হচ্ছে সেগুলো আমার জায়গায় আপনি হলেও আপনাকে ভাবাবে। এটা অবশ্যই নরমাল প্রসেস। তবে যে কথাগুলো হয়েছে আমি আশা করবো সে কথায় যেন স্থির থাকে। পরবর্তী অধিনায়ক যেন হয় ২০২৩ এর। এমন যেন না হয় বিশ্বকাপের একবছর আগে হঠাৎ বলা হলো ওকে দিয়ে চলছে না। এমনটা বাংলাদেশে অহরহ হয়। সেটা হলে কিন্তু যে প্রসেসটা চালু হয়েছে সেটায় স্থির থাকা হলো না। আমি বিশ্বাস করি আমি পেশাদারিত্বের সঙ্গে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি। আমি আশা করব যারা পরবর্তী অধিনায়ককে নিয়ে ভাববে তারাও যেন যে পেশাদারিত্ব নিয়ে আলোচনা করেছে সেটা যেন ধরে রাখে। তাকে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে তারপর যেন ২০২৩ এর চিন্তা করা হয়।

প্রশ্ন: সাকিব না ফেরা পর্যন্ত আপনাকে রেখে দেওয়ার একটা কথা চলছিল....
মাশরাফি: না, আমার সাথে এরকম আলোচনা হয়নি আসলে। যেটা বললাম, আমি ভাবতে পারব তখনি..., আলোচনার ভিত্তিতে অনেক কিছু হতে পারে। আমার কাছে মনে হয় এতো আলোচনায় যাওয়ার আমার দরকারও ছিল না। আমার কাছে মনে হয়েছে, এই ভালো হলো।

প্রশ্ন: শুরু করার সময় একটা লক্ষ্য তো অবশ্যই ছিল। যেখানে রেখে যাচ্ছেন, লক্ষ্য কি পূরণ হয়েছে?

মাশরাফি: এটা পৃথিবীর কেউ বলতে পারবে না যে আপনি ফুলফিল করে যাচ্ছেন। তবে যেটা বললাম, প্রাপ্তির কথা আমি বলতে পারব না। অপ্রাপ্তির কথা চোখ বন্ধ করেই মানুষ বলে দিতে পারে যে আসলে ব্যর্থতাগুলো কী ছিল। আমি আসলে জানি না প্রাপ্তি কী ছিল, অপ্রাপ্তি কী ছিল। তবে এতোটুকু নিশ্চিত, আমাকে যখন জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করতে দেওয়া হয় আমি জানি যে এটার দায়িত্ব কতো, মানে এখানে শুধু চাপই না, শুধু চাপের কথাটাই বলি, এখানে কতো আবেগ জড়িয়ে আছে, কতো মানুষ তাকিয়ে থাকে যখন বাংলাদেশ টিম খেলে, বাংলাদেশ দলের খেলা দেখার জন্য বসে থাকে। ওই দায়িত্ব আমার কাছে সবসময় ছিল এবং এটার গুরুত্ব আমার কাছে সবকিছুর চেয়ে বেশি। যে আবেগটা মানুষ নিয়ে বসতো খেলা দেখতে। সে জায়গা থেকে আমি এতোটুকু বলতে পারি, আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিটা বলতে পারব না।

প্রশ্ন: সবকিছু মিলে আপনার তৃপ্তি কতোটা? আর এই ঘোষণার মধ্যে আপনার কোনো অভিমান আছে কি না?

মাশরাফি: আপনারা সবসময় যদি এগুলো বের করতে চান তাহলে খারাপ। আমি অনেক আগেই বলেছি যে অভিমান বা রাগ করা বা ক্ষোভ দেখানো...(হাসি) আমি আসলে কার ওপরই বা দেখাবো? এসব জিনিস থাকে না তা নয়, অনেকের থাকে, বলতে পারে। কিন্তু সামনের পরে এরকম বলার আসলে কিছু নেই প্রথমত। আর সত্যি কথা। অনেস্টলি বলছি। এরকম কিছু না। আমাকে একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আপনাদের সামনে এসে ঘোষণা দিলাম যে আমার এ দায়িত্বটা শেষ। কিন্তু এর ভেতরে যা হয়েছে মানা না মানা, ভালো-মন্দ সবকিছু নিয়েই তো এগিয়ে আসতে হয়েছে এই পর্যন্ত। তাই আমি নিশ্চিত যে আমি যদি কিছু ভুল করে থাকি তাহলে আমাকেও ওনারা বলেছেন... না ঠিক আছে, সামনের ম্যাচে ঠিক করতে হবে। আমার যদি কিছু খারাপ লেগে থাকে আমিও সেভাবে বাদ দিয়েছি। সবকিছুর সমন্বয় করে এভাবেই সামনে এগিয়ে যেতে হয় আর কি।

প্রশ্ন: এই সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিবারের সঙ্গে আপনি কতোটা আলোচনা করেছেন? এখন আপনার বর্তমান অবস্থায় শুধু খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে চাওয়া আপনার জন্য কতোটা চ্যালেঞ্জিং?

মাশরাফি: প্রথমত হচ্ছে যে আপনি ঘুম থেকে উঠলেন, খুব সুন্দরভাবে আপনার সামনে নাস্তা রাখা হলো। আপনি আবার শুয়ে থাকলেন, টিভি দেখলেন, দুপুরের খাবারটা রাখা হলো। বিকেলে একটু ঘুরে আসলেন, সন্ধ্যায় আবার নাস্তা দেয়া হলো, রাতে ডিনার। তাহলে আপনার জীবনের মূল্যটা কী থাকল? কিছুই থাকল না।

তো একজন মানুষ হিসেবে প্রত্যেকটা কাজই চ্যালেঞ্জিং। আমি উপভোগ করি সব যখন বিপক্ষে থাকে তখন। এটাই আমার জীবনের উপভোগ্য অধ্যায় এবং আমি বিশ্বাস করি সবকিছু যখন পক্ষে থাকে তখন আমার কাছে মনে হয় জীবনের মূল্য কিছুই না। সবকিছু যখন আপনার বিরুদ্ধে থাকবে তখন আপনি কতোটা সামনে যেতে পারেন, আপনি নিজেকে স্বার্থকতায়, চ্যালেঞ্জের জায়গায় আনতে পারবেন যে ‘ওকে, আমি এটা করে ফেললাম’ এবং সেটা আপনার পরিবার বা আপনার সঙ্গে যারা থাকে তাদের জন্য একটা শিক্ষা হতে পারে। খুব আরামে জীবন যাপনের বদলে।

আরেকটা কথা, যেটা তা হলো পরিবার হয়তো এমন টেকনিক্যাল সিদ্ধান্তের ব্যাপার ততোটা বোঝে না। তাদের ভালো লাগার জায়গা সবসময় থাকে যে ছেলে ভালো করছে, পরিবারের কেউ ভালো করছে। খারাপও লাগে এই ভেবে যে তারা খারাপ যাচ্ছে, মানুষ সমালোচনা করছে। তখন তাদের খারাপ লাগে। আমি শুধু বাসায় ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি যে ‘শেষ’। তারা শক্তভাবেই আমার পাশে আছে। যেমন টি-টোয়েন্টি থেকে যাওয়ার সময়ও তারা আমাকে সমর্থন দিয়েছিল। তারা ঠিক সেইভাবে আমার পাশে আছে।

প্রশ্ন: যদিও আজ আর সেই আবহ নেই তারপরও যদি আগামী কালের ম্যাচ নিয়ে যদি একটু বলেন...

মাশরাফি: (হাসি) কেন? আবহ থাকবে না কেন? কালকের ম্যাচ খেলতে হবে না?

প্রশ্ন: খেলতে হবে। প্রধান নির্বাচক আমাদের ধারণা দিয়ে দিয়েছেন মুশফিক কালকের ম্যাচে থাকছেন না। যদিও পাকিস্তানে এক মাস পর ম্যাচ। এতো পরের কথা ভেবে এই ম্যাচে মুশফিককে বিশ্রাম দেওয়া কি দরকার ছিল?

মাশরাফি: দেখেন, এগুলো কিন্তু ছোটোখাটো টেকনিক্যাল সিদ্ধান্ত। এগুলো আসলে ক্যাপ্টেনও দিতে পারে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি মুশফিক এমন একজন খেলোয়াড় কখনো যদি খারাপ সময়ের মাঝেও যায় তারপরও যে পরিমাণ রান সে করেছে, বাংলাদেশের জেতার পেছনে তার অবদান এসব চিন্তা করতে হবে। এখনও চার নম্বরে আমি নিশ্চিত আপনারা যারা ঘাটাঘাটি করেন তারা জানেন যে নাম্বার ফোরে এখন সে বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড়। সবকিছু যদি বিবেচনার জায়গায় আনেন তাহলে যে ছেলেটা পারফর্ম করে আসছে, ১২-১৩ বছর বাংলাদেশের হয়ে খেলেছে, সে যাতে মানসিকভাবে চাপের মধ্যে না থাকে একটা নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত তা একটা নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত খেয়াল রাখা উচিৎ বলে আমি মনে করি।

তবে এই যে প্রক্রিয়া সেটি যদি মুশফিকের সঙ্গে নরমভাবে আলোচনা করা হয়, মুশফিককে যদি বোঝানো সম্ভব হয় যে এটা হচ্ছে আমার প্রক্রিয়া তোমার ধারণাটা কী? তখন যদি দুই পক্ষ একটা জায়গায় আসতে পারে, জিনিসটা আমার কাছে মনে হয় আলোচনার বিষয় না। সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে মুশফিকের সঙ্গে আলোচনা করা বা বোর্ড থেকে একটা ভালো ও যথাযথ সিদ্ধান্তে আসা যেটায় মুশফিকও মানসিকভাবে চাঙা থাকবে এবং বোর্ডেরও পরিকল্পনা সফল হবে। সেই জায়গাটায় আসতে পারলে আমি মনে করি ঠিক আছে।

প্রশ্ন: আপনাকে অধিনায়ক হিসেবে সবসময় মিস করবে বাংলাদেশ। বাজে একটা অবস্থা থেকে দলকে অসাধারণ জায়গায় তুলে নিয়ে গেছেন। নেতৃত্বের এই সময়কালে আপনাকে সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি দেয় কি?

মাশরাফি: অবশ্যই অনেক ভালো স্মৃতি আছে, অনেক। অধিনায়ক হিসেবে, এই দলের সদস্য হিসেবে। তবে নেতৃত্ব যখন পাই তখন থেকে এই পর্যন্ত তো একটা অধ্যায়। সেই হিসেবে ভালো স্মৃতিও আছে। খারাপ স্মৃতিও আছে। যেগুলো আমরা খেলোয়াড়রা বহন করেছি একসাথে। আমার পাশে সবসময় খেলোয়াড়রা ছিল, সাপোর্ট দিয়েছে। কোচরা ছিলেন। আলাদা করা খুব কঠিন। এমন অনেক মুহূর্ত আছে যে সময়ে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল অনেক কঠিন বা অবিশ্বাস্য, হবে কি না। তারপরও হয়েছে। এমনও কিছু আছে যা কেউ চিন্তা করছে না। ভাবছে বাংলাদেশ দল এটা পারবে। কিন্তু আমরা সেটা পারিনি। দুই জায়গায়ই আছে।

প্রশ্ন: একজন অধিনায়কের চলে যাওয়ার সময়ও কারো কাছে দায়িত্বটা রেখে যাওয়া ভালো লাগার হয়। কার কাছে আপনার এই নেতৃত্বের দায়িত্বটা গেলে আপনার সবচেয়ে বেশি লাগতো বা কার কাছে রেখে যেতে চান?

মাশরাফি: দেখেন, এটা খেলোয়াড়ের সিদ্ধান্ত না প্রথমত। এটা অবশ্যই ক্রিকেট বোর্ডের সিদ্ধান্ত। যখন মুশফিকের হাত থেকে আমি পেয়েছিলাম তখন মুশফিককে এই প্রশ্ন করা হয়নি অবশ্যই। কারণ, সেটা মুশফিকেরও হাতে না। এখন আমি যাচ্ছি। আমাদের সিনিয়র খেলোয়াড় আছে। তাদের অবশ্যই সামর্থ্য আছে। তাদের কারো সঙ্গে কথা বলে যাকে মনে হয় দিলে ভালো হয়, পরিসংখ্যান ওপরে যাবে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে যদি আনা হয় তাহলে সেটাই দলের জন্য ভালো। এই মুহূর্তে যারা সিনিয়র আছেন আমি মনে করি তারা সবাই সামর্থ্য রাখেন। আগে-পরে তারা করেছেও। এখন দেখার বিষয় কাকে দেয় বিসিবি। সেটা বিসিবির ব্যাপার আসলে।

প্রশ্ন: যতদিন না সাকিব আল হাসান নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আসছেন ততদিন কি তরুণ কাউকে দায়িত্বটা দিয়ে দেখা যেতে পারে বলে মনে করেন?

মাশরাফি: এটা নির্ভর করে। আমার ব্যক্তিগত মতামত যদি চান তাহলে অনেকটা কঠোর হতে পারে। আমি আগেও একদিন বলেছিলাম একজন তরুণ খেলোয়াড় যখন বাংলাদেশ দলের জার্সি পরে নামে তখন সেটাই তার জন্য অনেক বড় চাপ। আগের মতো ক্রিকেট এখন আর নেই। মানুষ তাকিয়ে থাকে, মিডিয়া তাকিয়ে থাকে। ক্যামেরা থাকে। পারফর্ম কেমন করছে। এত কিছুর ওপর সে ক্যাপ্টেন্সি করবে। এটা ডিপেন্ড করে। ক্রিকেট বোর্ড বা কোচিং স্টাফদের যদি মনে হয় যে এ তরুণ অতটুকু চাপ সামলানোর মতো তাহলে কেন নয়? কিন্তু আমার মনে হয় অনেক বেশি ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ। কারণ ১২-১৪ বছর যারা পার করেছে তারা কিন্তু আপনাদের সামলানো কিছুটা হলেও জানে। বাইরের চাপগুলো নিতে পারে। নির্ভর করে যে সবাই কী ভাবছে। তবে যারা (ক্যাপ্টেন্সি) করেছে তাদের পক্ষে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। বাকিটা তো ক্রিকেট বোর্ড দেখবে।

প্রশ্ন: নেতৃত্ব পাওয়ার পর আপনার জন্য সবচেয়ে কঠিন সময় কোনটা ছিল বলে মনে হয়?

মাশরাফি: সবচেয়ে কষ্টের ছিল তখন, যখন ইন্ডিয়ার সঙ্গে ১ রানে হারলাম, বিশ্বকাপে। সেই রাতটা আমি না শুধু আমাদের পুরো দলের জন্য বিভৎস ছিল। আমরা সবাই হোটেলে এসে করিডোরে বসে ছিলাম। অধিনায়ক হিসেবে খেলোয়াড়দের দেখে খুবই খারাপ লাগছিল। তারপরও অনেক চ্যালেঞ্জিং সময় গেছে। শেষ বিশ্বকাপও অবশ্যই। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আমরা টুর্নামেন্টে টিকে ছিলাম। শেষপর্যন্ত এসে যেভাবে ফিরে আসা অবশ্যই ওটাও কঠিন ছিল এবং যা বললাম ক্যাপ্টেন হিসেবে যে থাকে সে পরিকল্পনা করে ম্যাচ জেতার জন্য। সেটা না হওয়া মানে বাংলাদেশের যেকোনো ম্যাচে হারাই অধিনায়কের জন্য কঠিন সময়। ব্যক্তিগতভাবে বলব প্রত্যেকটা হারই আমার জন্য কঠিন ছিল।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপ থেকে এই পর্যন্ত যাত্রাটা কেমন ছিল?
উত্তর: আমি আগেই বলেছি। আমি ঘুম থেকে ওঠার পর রাত পর্যন্ত কোনো আরামের জায়গায় গেলে… চ্যালেঞ্জটা অবশ্যই কঠিন। কিন্তু আমি এটাকে ব্যক্তিগতভাবে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছি। তবে আমার মতে হাল ছেড়ে দেয়া শব্দটা কোনো অপশন হতে পারে না। আমরা এটা মুখে বলি। আসলে কাজে কেউ প্রমাণ করতে চাই না। কঠিন সময় যেতে পারে, তার চেয়েও কঠিন সময় আসতে পারে। হাল ছেড়ে দেয়া একটা জিনিস আর না করা একটা জিনিস।

প্রশ্ন: আপনি বললেন এই সিদ্ধান্তটা আপনি নিজেই নিয়েছেন। অবশ্যই এটা একটা স্বস্তির জায়গা যে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়েছেন। কিন্তু আপনার ক্যারিয়ারে একটা সময় ছিল ২০১৭ সালে টি-টোয়েন্টি খেলা ছাড়াটা আপনার জন্য সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা কি না?

মাশরাফি: আপনাদের সামনে এসে আমার জীবনে যা হয়েছে বা কে কি বলাবলি হয়েছে বা কাউকে দোষারোপ করা- এগুলো আমার বিষয়গুলোর মধ্যে পড়ে না। আমি একটু ঘুরিয়ে বলতে পারি যে, অবশ্যই কঠিন এমন সময়ে সিদ্ধান্তটা নেয়া। সেটার জন্য আমি মনে করি একটা মানুষকে ন্যূনতম সময় দেয়া উচিত। আমি নিশ্চিত এটার সঙ্গে যে কেউ রাজি হবে। কারণ আপনি যখন একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে ১৫ বছর ধরে আছেন। এক-দুই বছরের ব্যাপার না বা খেলাটা আমি ২০ বছর ধরে খেলি। সবসময় বলে থাকি খেলাটা আমার জীবন না। কিন্তু এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অংশ। আজকে আমি এখানে আছি তাও খেলার জন্য। জীবনের সর্বোচ্চ কিছু যা অর্জন করেছি তাও খেলার জন্য। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অংশ। তো এখানে একটা সিদ্ধান্ত আমাকে বা যে কোনো কাউকে যে ৫ দিন খেলেছে, তাকেও যদি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাহলে একটা ন্যূনতম সময় আপনাকে দিতেই হবে। অবশ্যই সিদ্ধান্তগুলো কঠিন। আমি আপনাকে এভাবেই বলব।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের লোকের মর্যাদা আপনারা পান? রাষ্ট্রীয় একটা সম্মান থাকে- এটা কতটা মিস করবেন? আপনি দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করেছেন, বাংলাদেশের মতো একটা দেশ, এখানে প্রতিটি মানুষ ক্রিকেটের জন্য পাগল। প্রত্যেকটা মানুষ ভুল ধরে, মানুষ মনে করে মাশরাফি এই বলটা এভাবে না করে ওভাবে করলে ভালো হতো বা এই শটটা না খেলে ওই শটটা খেললে ভালো হতো। এমন একটা দেশ যেখানে বোর্ড সবকিছুতে বিশেষ করে টেকনিক্যাল বিষয়ে বোর্ডকে সন্তুষ্ট রাখার একটা বিষয় থাকে- এদের সাথে আপনার সময়টা কীভাবে কেটেছে বা চ্যালেঞ্জটা কীভাবে মোকাবেলা করেছেন?

মাশরাফি: যেভাবেই হোক, আমি বলবো যে তারা (সমালোচক) আমাকে সহযোগিতাই করেছে, যেভাবেই হোক। আর যে কঠিন প্রক্রিয়াটা বললেন, সেটা অস্বীকার করার সুযোগই নেই। মাইকটা সরায় দিলে হয়তো থলে খুলে বসা যাবে। এটাই সত্যি কথা। ভালো করলে সবাই সহযোগিতা করে, একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আপনার ওপর আস্থা দেখাবে। আমি নিশ্চিত অন্য খেলোয়াড়রাও তাই ভাবে যে এটা অনেক বড় একটা দায়িত্ব। আমরা যখন মাঠে নামি, তখন কিন্তু বাংলাদেশের হয়েই নামি, দেশের নামটাকে নিয়েই নামি। ফলে যখন আমার ভুলটা ধরা হয়, তখন আমি আর এর বিরোধিতা করতে পারি না। মনে হয় যে, না আমি ভুলই করেছি। এটা যদি আমার পারিবারিক সিদ্ধান্ত হতো বা আমি পরিবারের জন্য মাঠে নামতাম- তাহলে তর্ক করতে পারতাম। কিন্তু আমরা যখন বাংলাদেশ নামটা নিয়ে নামি, তখন এই সুযোগ থাকে না। এখানে সবার আবেগ জড়িত। আমরা যারা খেলোয়াড় হিসেবে নামি, তাদেরকেই মাথা নত করে থাকতে হয়।

আবার একটা সময় দেখবেন যে, খেলোয়াড়দের এমনও সমালোচনা হয় যে, ওর অনেক সমস্যা বেড়ে গেছে, শৃঙ্খলা নেই বা অনেক কিছু আছে। কিন্তু আপনি স্বাভাবিকভাবেই দেখেন, আমাদের ছোট ভাইরা, অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে, ওরা কেউ কি বলেছে যে আমরা বড় কিছু করে ফেলেছি? কিন্তু ওরাই যখন জাতীয় দলের হয়ে নির্বাচিত হবে কিংবা যুব ক্রিকেটেই কোনো টুর্নামেন্টে ব্যর্থ হবে, তখন শুরু হয়ে যাবে যে এদের এমন হয়েছিল, অমন হয়েছিল তাই এখন এমন হলো। খেলোয়াড়রা তো এটা চায় না যে, আপনারা আমাকে খুব বড় করে ফেলেন। কিংবা আমার পরিবারের কারও সাক্ষাৎকার নেন। আপনাদেরও নিশ্চয়ই কেউ ডাকে না, আপনারা আসেন আমার বাবা-মার সাক্ষাৎকার নেন। এগুলো আপনারা করেন বা যেভাবেই হোক এগুলো মানুষ দেখে আর ওভাবেই প্রতিক্রিয়া দেয়।

আসলে এসব পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গিয়ে একটা প্লেয়ারকে খেলতে হয়। কেউ কিন্তু এসব পয়েন্ট আউট করে না। তারপরও এসব কিছুই মেনে নিতে হবে। এটাই প্রক্রিয়া এটাই বাস্তবতা। আমি মনে করি আমাদের পরিবারের অনেক দায়িত্ব আছে এসব ক্ষেত্রে যে এখনও ছেলের ভালো সময় যাচ্ছে খুব স্বাভাবিক সবাই আছে। কিন্তু যখনই খারাপ সময় আসবে এই জিনিসগুলোই উল্টে যাবে। সিম্পল তাসকিনের উদাহরণ দেই, যখন ৫ উইকেট পাইলো ডেব্যু ম্যাচে আর এখন তাসকিনকে ঠিক ওইসব কারণেই বলা হচ্ছে, তাসকিন ডিসিপ্লিন্ড না বা অন্য কিছু। তো আমি এটাই বলতে চাচ্ছি, তখন পরিবারেরও অনেক দায়-দায়িত্ব থাকে। তো এটার উত্তর আমি আসলে অন্যভাবে আর দিতে পারবো না (হাসি)।

mashrafee

আরেকটা যেটা বললেন, আমি আসলে যখন খেলোয়াড় হিসেবে শুরু করেছি তখনও এটা ফিল করিনি। যখন অধিনায়ক হয়েছি তখনও এটা মনে করিনি। আবার এখন আমার তো আরেকটা পরিচয় আমি সংসদ সদস্য, সেটাও আমি ফিল করিনি। কারণ লাল পাসপোর্ট নেইনি, আমি গাড়ি নেইনি, বাড়ি নেইনি- কিছুই নেইনি। সো আমি আসলে এসব থেকে সবসময় দূরে থাকতেই পছন্দ করেছি।

অধিনায়ক হওয়ার আগ পর্যন্ত আমার সম্ভাব্য সবকিছুই কিন্তু ছিল এই চেয়ারকে ঘিরে। যে আমি যত ভালো করব বা যত কিছুই করবো এই চেয়ারটা ধীরে ধীরে কাছে আসতে থাকবে। যখনই আমি চেয়ারটা পেলাম তখনই ওটা শেষ লেখা হয়ে গেছে। তখন এই চেয়ার পাওয়ার কিন্তু আমার আর আকাঙ্ক্ষা নেই। চেয়ারটার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা উচিত আমার ইতিবাচকভাবে। এমন নয় যে এ প্রভাবটাকে অন্যভাবে ব্যবহার করবো- আমি জিনিসটাকে এভাবেই দেখি।

প্রশ্ন: এখান থেকে আপনার পরিকল্পনা কী? বিসিবিতে কোচের বা আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে ক্রিকেটকে আরও সাহায্য করার বা আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মাশরাফি: আমি যা কিছু হয়েছি, এই ক্রিকেট দিয়েই হয়েছি। সামনে আমার যা কিছু পরিকল্পনা, তার প্রধান অংশেই থাকবে ক্রিকেট। অবশ্যই আমার এলাকার যে কাজ আছে সেগুলো করতে হবে। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রাখলে পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত করতে হবে এগুলো। আমি অবশ্যই এটি থেকে পেছনে সরবো না। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, ক্রিকেট তো আমার রক্তের ভেতরে। যদি খেলোয়াড়রা যে কোনো সময়, যে কোনো প্রয়োজনে মনে করে যে আমাকে প্রয়োজন, আমি অবশ্যই থাকবো, আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করবো।’

প্রশ্ন: আপনি যেহেতু বললেন এমপি, এ কারণেই প্রশ্নটা করা, আপনি এই সিদ্ধান্তটা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন কি না?

মাশরাফি: আসলে প্রধানমন্ত্রী খেলাটাকে পছন্দ করেন অনেক। আপনারাও দেখেছেন সবসময়। প্রধানমন্ত্রী খেলার খোঁজখবর রাখেন। কিন্তু দেশের এতকিছুর দায়িত্বের ভেতরে থেকে এসব ছোটখাটো বিষয় বা ওনার কাছে যাওয়া, ডিস্টার্ব করা আমার কাছে মনে হয় না প্রয়োজন আছে। তারপরও কোনো না কোনোভাবে তিনি এটা জানতে পারবেন, আমি আশা করছি সবাই আমাকে সমর্থন করেছেন, তিনিও করেছেন। এগুলোর ব্যাখ্যা আমি আগেই দিয়েছি। এই সিটটা যখন আমি পেয়েছিলাম তখন এটার শেষ লেখা হয়ে গেছে। তার আগ পর্যন্ত এই সিটটার জন্য সবকিছু উন্মুক্ত ছিল।

প্রশ্ন: আপনার সতীর্থ এবং বন্ধুদের জন্য কী বলবেন?
মাশরাফি: বাংলার প্রত্যেকটা মানুষকে আমি যেভাবে সম্মান করি ভালোবাসি এবং আমার সতীর্থ প্রত্যেকেই আমার পরিবারের অংশ। আমি নিশ্চিত তাদের জায়গায় আমিও তাই। তাদের প্রতি আমার সম্মান এবং শ্রদ্ধা সবসময় ছিল থাকবে এবং আছে শুভ কামনা এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

প্রশ্ন: কালকের ম্যাচ নিয়ে অধিনায়ক হিসেবে আপনার ভাবনা…,

মাশরাফি: একাদশ নিয়ে সত্যি কথা এত তাড়াতাড়ি আলোচনা হয় না। এটা আপনারাও জানেন। জয়টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মাইলস্টোন এত গুরুত্বপূর্ণ না জয়ের চেয়ে। বাংলাদেশের জয়টা যে কারোর মাইফলকের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

প্রশ্ন: কোচের সঙ্গে কথা হয়েছে কি না..,
মাশরাফি: দেখেন, কোচের সঙ্গে আমার এমন কোনো কথা হয়নি। এই প্রক্রিয়ায় ছয় মাসের বেশি সময় হয়েছে; তারও নিজস্ব একটা পরিকল্পনা হয়েছে। আমি মনে করি তার পরিকল্পনাটা উন্মুক্ত হওয়া ভালো। এক সপ্তাহ আমি তার সাথে আছি। এ সময় তার সঙ্গে এটা নিয়ে আলোচনা করিনি। সেটাও হতে পারে তার নিজস্ব একটা চিন্তাভাবনা আছে। আমি মনে করি এটা উন্মুক্ত করে দেওয়ার ভালো সময় এটা। সে যদি আমার সাথে আলোচনা করতো তাহলে আমি হয়তো আপনাদের বলতে পারতাম। সে আমার সাথে এটা নিয়ে আলোচনা করেনি। কাজেই আমার মনে হয় না তার সাথে এটা নিয়ে আলোচনা করার কোনো কিছু আছে।

একটা বিষয় আছে আমি বিসিবির সঙ্গে আলোচনা করতে পারি। পাপন ভাইয়ের সাথে আলোচনা করেই এসেছি। যিনি আমাকে এই দায়িত্বটা দিয়েছেন, আমি মনে করি তার সাথে অলোচনা করাটাই ভালো। আসলে পেশাগত বিষয়ে মুখে বলা এক জিনিস আর কাজে করা আরেক জিনিস। যখন একটা খেরোয়াড়ের খারাপ সময় যায়। তখন পেশাদারিত্ব এমন কঠিন আকার ধারণ করে যে, আমরা প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত পেশাগত জায়গা থেকে নিতে পারি। প্রত্যেকটা জায়গা আপনি দেখনে পেশারারিত্বের চূড়ান্ত জায়গায় যেভাবে বলে সেভাবে কাজ নাই। এটা কিন্তু বিসিবিকে বলছি না, একটা কোচ যখন নতুন আসে সে তার এক্সপেরিমেন্ট করে। আমাদের তার প্রতি একটা ধারণা থাকা উচিত, তাকেও ধারণা দেওয়া উচিৎ। ধরেন মুশফিককে কিভাবে হ্যান্ডেল করবেন? এখন মুশফিককে নিয়ে যদি জোকিংয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে যান। তাহলে আমাদের কি সম্পদ আছে যা নিয়ে আমরা নাড়াচাড়া করছি। মুশফিক কতদিন আর খেলবে। ওকেও আমাদের পেশাদারিত্বের বিষয় ওটাও ওর সাথে আলোচনা করতে হবে। তুমি এটা ঠিক করছো না।

আমি শুধু মুশফিককে নিয়ে বললাম না, আসলে সবার কথাই বলছি। তাকে সর্বোচ্চ সম্মান বা তার কাছ থেকে সেরাটা নিয়ে আসতে যে প্রক্রিয়া আছে সেটাই কঠিন লাগে। এটা আমরা যে শুধু বলি না বিসিবি আমাদের প্লেয়ারেরও দায়িত্ব আছে, টিম ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব আছে, বোর্ডের দায়িত্ব আছে। এমন না যে দুই বছর পরপর একজন কোচ আনলাম, তার মতো করে এক্সপরিমেন্টে করে সে চলে গেলো। কিন্তু আমাদরে সবার ভাবতে হবে এ দেশের খেলোয়াড়রাই দেশকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে। কাজেই এখানে কেউ এসে যদি এক্সপেরিমেন্ট করতে চায় এবং সেটা যদি মনে হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতি হবে তাহলে তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা উচিত। আর যদি তার এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকে তাহলে অব্যশ্যই থামানো উচিত।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ