আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক-মুখপাত্র ও প্রয়াত মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের ৭৪তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায় জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহিদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও মা মোসাম্মাৎ আমেনা মনসুরের ঘরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মোহাম্মদ নাসিমের জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠন দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।
তার বাবা এম মনসুর আলী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছিলেন। এম মনসুর আলী ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল হওয়ার কারণে ঘাতকের বুলেটে কারাগারে প্রাণ দিতে হয় এম মনসুর আলীকে।
আর তার সন্তান মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আস্থা ভাজন। রাজনীতিতে সক্রিয় একজন ব্যক্তি হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সামনের কাতারে থেকে রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পিতার মতো তিনিও সাহসী, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অবিচল, ত্যাগী ও রাজপথের একজন সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। গতবছর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর স্ট্রোক করে ১৩ জুন না ফেরার পথে চলে যান নাসিম।
মোহাম্মদ নাসিম জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। গত শতকের ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় নেতা ছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ ২১টি বছর সামরিক ও খালেদা জিয়াবিরোধী আন্দোলনে রাজপথের সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। এ কারণে রাজপথে তাকে বারবার নির্যাতনের শিকার হতে হয়। কারাগারেও যেতে হয় বারবার।
ছাত্ররাজনীতি ছাড়ার পরে যুবলীগের রাজনীতি করলেও ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন মোহাম্মদ নাসিম।
ওই সম্মেলনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের যুব সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৭ সালের সম্মেলনে তিনি দলের প্রচার সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৮৬ সালে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। তখন সংসদে বিরোধীদলীয় হুইপের দায়িত্ব পান তিনি। এরপর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে সারাদেশে সংগঠনকে গড়ে তোলার দায়িত্বও পালন করে। ১৯৯১ সালের সংসদে বিরোধী দলের প্রধান হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ নাসিম। এরপর ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালেয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের প্রথমেই রাজপথের সাহসী যোদ্ধা মোহাম্মদ নাসিমকে গ্রেফতার করে নির্যাতন চালানো হয়। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই প্রথম দফায় স্ট্রোক করেন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসলে মোহাম্মদ নাসিমকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনেও মোহাম্মদ নাসিম সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি জাতীয় সংসদে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এছাড়া রাজনীতির পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। ঢাকাসহ নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছাড়াও মোহাম্মদ নাসিম নির্বাচনী জোট কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র হিসেবে আমৃত্যু নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
আলোকিত সিরাজগঞ্জ
