বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মৃত্যুর পূর্বেই হোক পরকালের প্রস্তুতি (পর্ব-১)

মৃত্যুর পূর্বেই হোক পরকালের প্রস্তুতি (পর্ব-১)

প্রতিটি মানুষকে মরতে হবে। এটা যতটা সুনিশ্চিত এবং সর্বসম্মত, পৃথিবীতে এরচেয়ে সুনিশ্চিত ও সর্বসম্মত দ্বিতীয় কোনো বিষয় নেই। এই কথা শুধু মুসলমানই না, বরং প্রতিটি মানুষই বিশ্বাস করে।

আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ জন্মেনি, মানুষের মৃত্যু হবে না বলে যে মত পেশ করেছে। মানুষ আল্লাহকে অস্বীকার করেছে, আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীদের মুখের ওপর বলে দিয়েছে, আমি আল্লাহকে মানি না। কিন্তু আজ পর্যন্ত মৃত্যুকে অস্বীকারকারী কারো দেখা পাওয়া যায়নি। যত বড় মুশরিক হোক কিংবা নাস্তিক হোক কিংবা ধর্মহীন হোক আজ পর্যন্ত কেউ বলেনি মৃত্যু আসবে না। সব বিষয়ে মতবিরোধ আছে। কিন্তু এটি এমন এক বিষয়, যা সম্পর্কে কারো ভিন্নমত নেই। মৃত্যু কখন আসবে, কেউ জানে না। এ বিষয়েও সবারই একমত।

বিজ্ঞান উন্নতি করছে। মানুষ চাঁদে গিয়েছে। মঙ্গলগ্রহে যাচ্ছে। কম্পিউটার আবিষ্কার হয়েছে। কৃত্রিম মানুষ আবিষ্কার হয়েছে। আরো কত কী হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। কিন্তু বিজ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন যে, ভাই, সামনে উপবিষ্ট এ ব্যক্তির মৃত্যু কখন আসবে?

সব জ্ঞান ও বিদ্যা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এখানে এসে আত্মসমর্পণ করে। কেউ বলতে পারে না, মৃত্যু কখন আসবে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো মৃত্যু যতটা নিশ্চিত বিষয় এবং মৃত্যুর ক্ষণ যতটা অনিশ্চিত, আমরা মৃত্যু থেকে ততটাই উদাসীন ও গাফেল।

মৃত্যুর আগে মরার মানে কি?

মৃত্যু সম্পর্কে দু’টি বিষয় নিশ্চিত। একটি হলো মৃত্যু অবশ্যই আসবে, অন্যটি হলো মৃত্যুর নির্ধারিত সময় জানা নেই। যদি মানুষ গাফলত অবস্থায় দুনিয়া থেকে চলে যায় তাহলে সেখানে পৌঁছে কি অবস্থার মুখোমুখি হবে তা আল্লাহই জানেন। এমন যেন না হয় যে, সেখানে পৌঁছে আল্লাহ তায়ালার গজব-আজাবের মুখোমুখি হতে হয়। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রকৃত মৃত্যু আসার আগে মর। কীভাবে মরবে? মৃত্যুর পূর্বে মরার মানে কি? ওলামায়ে কেরাম এর দু’টি অর্থ বর্ণনা করেছেন। একটি হলো প্রকৃত মৃত্যু আসার পূর্বে তোমাদের মাঝে যে নফসানিয়ে খাহেশাত আছে, যা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ পালনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে এবং তোমাদের হৃদয়ে গুনাহ ও নাজায়েজ কাজ করার, আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যতা ও নাফরমানি করার, যে আবেদন ও চাহিদা হৃদয়ে সৃষ্টি হতে থাকে তাকে পিষে ফেল এবং ধ্বংস কর।

একদিন মৃত্যুবরণ করতে হবে :

দ্বিতীয় অর্থ হলো মৃত্যুর পূর্বে নিজের মরার ধ্যান কর। মাঝে মাঝে ভাবো যে, একদিন আমাকে এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে। তখন খালি হাতে যেতে হবে। টাকা পয়সা, ছেলে-সন্তান, গাড়ি-বাড়ি, বন্ধু-স্বজন কেউ সঙ্গে যাবে না। বরং একা খালি হাতে চলে যাব। বাস্তবতা হলো দুনিয়াতে আমাদের থেকে যেসব অন্যায়, জুলুম, নাফরমানি, অপরাধ ও গুনাহ হয় এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো মানুষ মৃত্যুর কথা ভুলে থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত শরীর সুস্থ থাকে দেহে শক্তি থাকে এবং হাত-পা সচল থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ ভাবে, আমাদের থেকে বড় কেউ নেই। তখন মানুষ অহংকার ও দম্ভ করে। অন্যদের ওপর জুলুম করে। অন্যদের হক নষ্ট করে। সুস্থ অবস্থায় এবং যৌবনে মানুষের মনে এই চিন্তাও আসে না যে, একদিন আমাকে এ দুনিয়া থেকে যেতে হবে। নিজ হাতে প্রিয়জনদেরকে মাটি দিয়ে আসে। প্রিয়জনের জানাযা বহন করে। কিন্তু এরপরও ভাবে যে, মৃত্যু ঘটনা তার ঘটেছে আমার সঙ্গে তো ঘটেনি। এভাবেই উদাসীন অবস্থায় জীবন অতিবাহিত হয়। মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয় না।

দু’টি বড় নেয়ামত ও সেসম্পর্কে উদাসীনতা :

এক হাদিসে রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বড় সুন্দর করে বলেছেন,

قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ, " نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ, الصِّحَّةُ وَالفَرَاغُ 

‘আল্লাহ তায়ালার দু’টি নেয়ামত সম্পর্কে বহু মানুষ ধোঁকায় পড়ে আছে। একটি হলো সুস্থতা অন্যটি হলো অবসর।’

যতক্ষণ মানুষ সুস্থ থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ এই ধোঁকায় পড়ে থাকে যে, সে সর্বদা সুস্থ থাকবে। সুস্থ অবস্থায় ভালো এবং নেক কাজের ব্যাপারে টালবাহানা করতে থাকে। মনে মনে ভাবে, আচ্ছা, এ কাজ কালকে করব। কাল যখন কাজটি হয় না তখন বলে, আচ্ছা পরশু করব। এভাবে সময় পার হতে থাকে।
দ্বিতীয় নেয়ামতটি হলো অবসর। অর্থাৎ এখন ভালো কাজ করার সুযোগ আছে, সময় আছে কিন্তু মানুষ এই ভেবে কাজ পিছিয়ে দেয় যে, আচ্ছা এখনো তো সময় আছে, পরবর্তীতে করব। এখনও তো যৌবন আছে যদি চায় যৌবনে অনেক ইবাদত করতে পারে। কষ্ট, সাধনা ও মুজাহাদা করতে পারে। সৃষ্টির সেবা করতে পারে। আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার জন্য নিজের আমলনামায় নেকির স্তূপ জমা করতে পারে। কিন্তু মাথায় এ কথা বসে আছে যে, একটু জীবনটা উপভোগ করে নিই। এখনও তো আমি যুবক। ইবাদত ও নেক কাজ করার জন্য সারাজীবন পড়ে আছে। পরে করে নেব। এভাবে নেক কাজকে পেছনে ঠেলতে থাকে। কখন যে যৌবন শেষ হয়ে যায় খবরই থাকে না। কখন যে অসুস্থতা ঘিরে ধরে, কিছুই জানা থাকে না। ফলে যৌবন গড়িয়ে যখন বার্ধক্যে উপনীত হয়, তখন ইবাদত ও নেক কাজ করার অনেক ইচ্ছা হয়। কিন্তু দেহে শক্তি নেই কিংবা সময় নেই। কারণ ব্যস্ততা এত বেড়ে গেছে যে, এখন সময় বের করা কঠিন।
এসব কিছু হয়েছে কারণ, মানুষ মৃত্যুর ব্যাপারে উদাসীন। যদি প্রত্যহ সকাল-সন্ধ্যায় মৃত্যুকে স্মরণ করত এবং ভাবত, মৃত্যুর পূর্বে আমাকে এই এই কাজ করতে হবে তা হলে মৃত্যুর স্মরণ ও তার ফিকির আমাকে গুনাহসমূহ থেকে বাঁচাত এবং সৎপথে পরিচালিত করত। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মৃত্যুর পূর্বে মর।

হজরত বাহলুল রহ. এর শিক্ষণীয় ঘটনা :

একজন বুজুর্গ ছিলেন হজরত বাহলুল রহ.। তাকে মাজজুব বাহলুল বলা হয়। আত্মভোলো প্রকৃতির লোক ছিলেন তিনি। কিন্তু তার কথাগুলো ছিল খুব প্রজ্ঞাপূর্ণ। এ কারণে অনেকে তাকে জ্ঞানী বাহলুলও বলে। তিনি খলিফা হারুনুর রশিদের যুগের লোক ছিলেন। হারুনুর রশিদ তার সঙ্গে কখনো কখনো মজাকও করতেন। হারুনুর রশিদ রাজপ্রাসাদের প্রহরীদেরকে বলে রেখেছিলেন যে, ‘বাহলুল কখনো আমার নিকট এলে তোমরা তাকে আসতে দিয়ো। বাঁধা দিয়ো না। তাকে সোজা আমার কাছে পৌঁছে দিয়ো।

একদিনের ঘটনা, হজরত বাহলুল রহ. হারুনুর রশিদের কাছে এলেন। হারুনুর রশিদের হাতে তখন একটি ছড়ি ছিল। তিনি ছড়িটি হজরত বাহলুল রহ. হাতে দিয়ে বললেন, বাহলুল, ছড়িটি তোমাকে আমি আমানতস্বরূপ দিলাম। দুনিয়াতে তোমার চেয়ে বেশি বোকা যাকে পাবে, তাকে আমার পক্ষ থেকে ছড়িটি হাদিয়া দিয়ো। হারুনুর রশিদ ইঙ্গিতে বুঝাতে চাচ্ছিলেন, তোমার চেয়ে বেশি বোকা লোক তো দুনিয়াতে আর নেই। বাহলুল রহ. ছড়িটি নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিলেন। এরপর কেঁটে গেল বহুদিন। মাস গেল, বছর গেল। তারপর একদিন হারুনুর রশিদ অসুস্থ হলেন। অসুস্থতা মারাত্মক আকার ধারণ করল। তিনি বিছানা নিলেন। বাইরে যাওয়া-আসা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেল। হাকিমরা বিছানা ছেড়ে উঠতে নিষেধ করে দিলেন। হজরত বাহলুল রহ. হারুনুর রশিদকে দেখার জন্য এলেন। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আমিরুল মুমিনিন, কী অবস্থা?

হারুনুর রশিদ বললেন, বাহলুল, অবস্থার কথা আর কি বলব। সামনে দীর্ঘ সফর।

বাহলুল রহ., আমিরুল মুমিনিন কোথাকার সফর?

হারুনুর রশিদ, আখেরাতের সফর।

বাহলুল রহ., আচ্ছা, সেখানে আপনি কতজন সৈন্য পাঠিয়েছেন? অফিসার কতজন, তাঁবুর সংখ্যা কত?

হারুনুর রশিদ, বাহলুল, তুমি কি আশ্চর্য কথা বলছ? সেটা এমন সফর, সেখানে কোনো তাঁবু নেয়া যায় না, কোনো দেহরক্ষী এবং কোনো সৈন্য যায় না।

বাহলুল রহ., জনাব, কবে ফিরবেন?

হারুনুর রশিদ, তুমি এ কি সব বলছ? এটা তো আখেরাতের সফর। এখানে একবার কেউ গেলে কখনো ফিরে আসে না।

বাহলুল রহ., আচ্ছা, এত বড় সফর, সেখান থেকে কেউ ফিরেও আসে না এবং সঙ্গে কেউ যায়ও না।

হারুনুর রশিদ, হ্যাঁ, বাহলুল, সেটা সত্যিই বড় সফর।

বাহলুল রহ., আমিরুল মুমিনিনন, তা হলে একটি আমানত আপনি আমার কাছে বহুদিন হয় রেখেছেন। আপনি এই বলে আমানতটি রাখতে দিয়েছিলেন যে, ‘তোমার চেয়ে বেশি বোকা কাউকে পেলে তাকে এটি দিয়ো। আজ আমি এ ছড়ির আপনার চেয়ে বেশি উপযুক্ত আর কাউকে দেখছি না। কারণ পূর্বে আমি দেখেছি, আপনি কোনো ছোট সফরে বের হলেও, যেখান থেকে আপনি শীঘ্রই ফিরে আসবেন তার জন্য আপনি পূর্ব থেকেই সেখানে অনেক সৈন্য-সামন্ত পাঠাতেন। তারা আপনার জন্য পথ তৈরি করত, মঞ্জিল নির্ধারণ করত। কিন্তু এখন আপনার এত দীর্ঘ সফর হচ্ছে এর জন্য কোনো প্রস্তুতিই নেই। আবার সেখান থেকে আপনি ফিরেও আসবেন না, আমি তো আমার চেয়ে বড় বোকা আপনাকে ছাড়া আর কাউকে দেখছি না। নিন এই ছড়ি।

হারুনুর রশিদ এ কথা শুনে কেঁদে ফেললেন। এরপর বললেন, বাহলুল, আমি তো তোমাকে পাগল মনে করতাম কিন্তু এখন বুঝলাম, তোমার চেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি আর কেউ নেই। বাস্তবেই আমি আমার জীবনকে নষ্ট করেছি এবং আখেরাতের সফরের কোনো প্রস্তুতি নিইনি। চলবে...

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

শিরোনাম:

স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট
এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
পুলিশকে সাহায্য করবে ক্রাইম জিপিটি!
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর