শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মহাকালের শপথ [পর্ব-০৯] ইসলামের দাওয়াত দিতে হবে ভালোবেসে

মহাকালের শপথ [পর্ব-০৯] ইসলামের দাওয়াত দিতে হবে ভালোবেসে

যাকে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে তার প্রতি দাঈর অন্তরে মহব্বত তথা ভালোবাসা ও দরদ থাকতে হবে। দাওয়াহ একটি আর্ট বা শিল্প। দাওয়াতের ময়দানে ফুটে ওঠে একজন দাঈর শিল্প। এ জন্য প্রতিটি দাঈকে হতে হবে নরম, কোমল, নম্র, ভদ্র। পৃথিবীর নিকৃষ্ট তাগুত ফেরাউনের কাছে পাঠানোর সময় মুসা ও হারুন আলাইহিমাস সালামের প্রতি আল্লাহ আদেশ করেছিলেন, 

اذْهَبَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَىٰ - فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَّيِّنًا لَّعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَىٰ

‘তোমরা উভয়ে ফেরাউনের কাছে যাও, সে খুব উদ্ধত হয়ে গেছে। এরপর তোমরা তাকে নম্র কথা বলো, হয়তো সে চিন্তা-ভাবনা করবে অথবা ভীত হবে।’ [সুরা ত্বা-হা, ২০ : ৪৩-৪৪]

তাই কাউকে দাওয়াত প্রদানের সময় এ কথা স্মরণে রাখুন যে, আপনি যাকে দাওয়াত দিচ্ছেন সে ফেরাউনের চেয়ে নিকৃষ্ট বা খারাপ নয়, আর আপনি মুসা বা হারুন আলাইহিস সালামের মতো প্রাজ্ঞ নন। আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবিকে বলেছেন, 

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللّهِ لِنتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لاَنفَضُّواْ مِنْ حَوْلِكَ

‘আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন, পক্ষান্তরে আপনি যদি রূঢ় ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত।’ [সুরা আলি ইমরান, ৩ : ১৫৯]

لَقَدْ جَاءكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ

‘তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসুল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়।’ [সুরা তাওবা, ৯ : ১২৮]

বর্তমানে আমরা দাওয়াহ বলতে বুঝি জোর করে, লজ্জা দিয়ে কিংবা ক্রিটিসাইজ করে, ধরে মসজিদে নিয়ে যাওয়া অথবা ইয়া মোটা তাফসির-হাদিসের কোনো কিতাব ধরিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। অথচ এগুলো দাওয়াহ’র প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে না। বরং দাওয়াতের ক্ষেত্রে আমাদের পদক্ষেপ হওয়া উচিত প্রথমে মাদয়ু বা যাকে দাওয়াত দিতে চাচ্ছি তার সাথে পরিচয়, পরিচয় থেকে ঘনিষ্ঠতা, নিয়মিত খোঁজ-খবর নেওয়া, হাদিয়া দেওয়া, সুখ-দুঃখে তার পাশে দাঁড়ানো, তাকে গুরুত্ব দেওয়া, তার কথা মনযোগের সাথে শোনা, তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করা, কথার ক্ষেত্রে উপযুক্ত শব্দ ব্যবহার করা, বিতর্কে না যাওয়া, নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা… এভাবে ধীরে ধীরে তার হৃদয়-জমিনকে উর্বর করে তোলা, এক পর্যায়ে দীনের মৌলিক বিষয়গুলো উপস্থাপন করা। আর এই পুরো সময়জুড়ে মুখের কথার চেয়ে বরং নিজের আমল ও আখলাকের মাধ্যমে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা। 

মাতব্বরির ঢংয়ে কথা না বলে কথা বলতে হবে বন্ধুভাবাপন্ন হয়ে। মনে রাখতে হবে, ‘আমি দাঈ, বিচারক নই।’

এক্ষেত্রে একটি হাদিস সবিশেষ উল্লেখযোগ্য— একবার কতিপয় ইহুদি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, ‘আস-সামু আলাইকুম (আপনার মৃত্যু হোক)!’ আয়েশা (রা.) রাগান্বিত হয়ে বললেন, ‘তোমাদের মৃত্যু হোক। তোমাদের আল্লাহ অভিশপ্ত করুন এবং তোমাদের ওপর তার ক্রোধ অবতীর্ণ হোক।’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আয়েশা! শান্ত হও। তুমি অবশ্যই সর্বদা বিনম্রতা ও বন্ধুভাবাপন্নতা অবলম্বন করবে। আল্লাহ সকল বিষয়ে বিনম্রতা ও বন্ধুভাবাপন্নতা ভালোবাসেন। আর খবরদার! কখনোই তুমি উগ্রতা ও অভদ্রতার নিকটবর্তী হবে না।’ আয়েশা (রা.) বলেন, ‘তারা কী বলেছে আপনি কি তা শুনেননি?’ তিনি বলেন, ‘আমি কি বলেছি তা কি তুমি শোন নি? আমি বলেছি, ওয়া আলাইকুম অর্থাৎ তোমাদেরও মৃত্যু হোক।’ [বুখারি, আসসাহিহ : ৬৯২৭; মুসলিম, আসসাহিহ : ২১৬৫]

একজন দাঈ সর্বদা উলফত-মুহব্বতের চর্চা করবেন। মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলা, অযথা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা দাঈর বৈশিষ্ট্য নয়। বরং বৃহত্তর স্বার্থের জন্য সর্বদা বিভেদ সৃষ্টিকারী ছোটখাট বিষয়গুলো এড়িয়ে চলবেন। বুখারির কিতাবুল হজে এসেছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কার কাফিরদের নির্মিত কাবাকে ভেঙে দিয়ে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের ভিত্তির ওপর নতুন করে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা এ জন্যই করেননি যে, সদ্য জাহিলিয়্যাত পরিত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণকারী কুরাইশরা এটা মেনে নিত না, আবার কুফুরিতে ফিরে যেত! 

এ জন্যই দাঈকে তার পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। পরিবেশ-পরিস্থিতির আগ-পিছ চিন্তা না করে আবেগের বশে হুটহাট কোনো কাজ করে বসলে এর দ্বারা ইসলামি দাওয়াহ বাধাগ্রস্ত হওয়া ছাড়া তেমন কোনো ফায়দা হবে না।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

শিরোনাম:

স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট
এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
পুলিশকে সাহায্য করবে ক্রাইম জিপিটি!
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর