বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতীয় হিন্দু নারীর ঈমানদীপ্ত সাক্ষাৎকার

ভারতীয় হিন্দু নারীর ঈমানদীপ্ত সাক্ষাৎকার

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : সানা হুজাইফা

উর্দু থেকে ভাষান্তর : মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন

সানা হুজাইফা : আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। 

খাদিজা খাতুন : ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।

সানা হুজাইফা : আমার নাম সানা। মামা আমাকে আপনার একটা ইন্টারভিউ নিতে বলেছেন। বলুন আপনার বর্তমান নাম কী? এর আগে আপনার কী নাম ছিল?

খাদিজা খাতুন : আমার পূর্বের নাম বুবলি জাওহার। ইসলাম কবুল করার পর আমি খাদিজা খাতুন নাম গ্রহণ করেছি। 

সানা হুজাইফা : কতোদিন হলো মুসলমান হয়েছেন?

খাদিজা খাতুন : প্রায় ছয় বছর হলো আমি ইসলাম কবুল করেছি। 

সানা হুজাইফা : আপনি কোথাকার অধিবাসী? আপনার পরিবারে আর কে কে আছেন? আপনার পরিবার সম্পর্কে সামান্য কিছু বলুন।

খাদিজা খাতুন : হ্যাঁ, আমি যমুনানগর জেলার সাঢুরার মানুষ। আমার পরিবারে মা-বাবা, তিন ভাই এবং আমরা তিন বোন আছি। সঙ্গে তিন ভাবি এবং তাদের সন্তানরা আছে। বোনেরা সকলেই বিবাহিত। আমার বড় বোনের নাম নিলাম জাওহার। ছোট বোনের নাম রজনি জাওহার। আমি মেঝ। আমার নাম বুবলি জাওহার। সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার। তিনি অনুগ্রহপূর্বক আমাকে একটি ভালো পরিবারে সৃষ্টি করেছেন। তারপর আমাকে আরেকটু অনুগ্রহ করে ঈমানের সম্পদে ভূষিত করেছেন। বেহেশতের অধিকারী করেছেন। আমিন। আমি সবসময় দোয়া করি, আমাকে যেভাবে তিনি অন্ধকার থেকে, পথভ্রষ্টতা থেকে, শিরক ও অপবিত্রতা থেকে এবং বেদআত ও যাবতীয় কুসংস্কার থেকে বের করে এনে সত্য ও সততার পাটাতনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন; যেভাবে তিনি আমাকে গুনাহমুক্ত করেছেন, পাপের পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করেছেন এসবই তাঁর অনুগ্রহ। তাঁর এই অনুগ্রহ অন্তহীন। আমাকে তাঁর প্রতি ঈমানের বিশ্বাসে বিশ্বাসী করেছেন। বেহেশতের টিকিট নসিব করেছেন। আমি বরাবর আমার পরম করুণাময় প্রভুর কাছে এই প্রার্থনা করি আমি অধম পাপির প্রতি তিনি যেমন অনুগ্রহ করেছেন, ঈমানের অমূল্য ধনে বিভূষিত করেছেন তেমনই আমার পরিবার, প্রতিবেশী, প্রিয় স্বজন এবং জগতের সকল অমুসলিমকে পথভ্রষ্টতার অন্ধকার থেকে এবং প্রজ্জ্বলিত জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে ঈমানের সামিয়ানার নিচে ঠাঁই দান করুন। সকলকে নসিব করুন জান্নাতুল ফেরদৌস। 

বলছিলাম আমি সাঢুরার মানুষ। ওখানেই জন্মেছি। আমাদের পরিবারটির বসবাস মুসলমানদের বসতির ঠিক মাঝখানটায়। আমাদের ঘরের দেয়াল একজন মুসলমানের ঘরের দেয়ালের সঙ্গে মিলিত। ওই প্রতিবেশীর চারজন কন্যা আছেন। দু’জন বড় দু’জন ছোট। বড় দু’জনের নাম জরিনা খাতুন ও ইয়াসমিন। ছোট দু’জনের নাম চাঁদনি এবং চুন্নু। জরিনা ও ইয়াসমিন আমার সমবয়স্কা। আমরা একসঙ্গেই বেড়ে উঠেছি। একই প্লেটে খানাপিনা করেছি। আমাদের ঘরে যা রান্না হতো তারা আমাদের সঙ্গে বসে খেয়ে নিতেন। তাদের ঘরে যা রান্না হতো আমিও তাদের সঙ্গে বসে খেয়ে নিতাম। যখন ঈদ আসতো আমিও তাদের মতো নতুন কাপড় কিনতাম। নতুন কাপড় পড়ে তাদের ঈদে শরিক হতাম। যখন আমাদের হুলি কিংবা দেওয়ালি উৎসব সমাগত হতো ওই আনন্দে তারাও অংশগ্রহণ করতো। একই সঙ্গে স্কুলে গিয়েছি। কলেজে পড়েছি একই সঙ্গে।

আমরা প্লাস টু পাস। অধিকাংশ সময় তারা আমাকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। আমাদের সাঢুরাতে প্রায় ছয় সাতটি মসজিদ আছে। যখন সেখানে আজান হতো আমি ভেতরে ভেতরে এক অদ্ভূত দোলাচলে আন্দোলিত হতাম। ভেবে বিব্রত হতাম জানি না সত্য কোথায় এবং কোনটা সত্য! আমি আজানের বাণী কানে পড়া মাত্র বরাবর উৎকর্ণ হতাম। মনে মনে বিরবির করতাম হে প্রভু! তুমি সত্য। আজান শেষ হওয়ার পর আবার আমি আমার কাজে মনযোগ দিতাম। আমাদের শহরের কাছে গ্রামের অনেক মুসলমান মেয়ে পড়তে আসতো। ওই সুবাধে তাদের সঙ্গেও আমার বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। তাদের মাথায় শোভিত ওড়না আমাকে খুব টানতো। সত্যি কথা কী, আমার মুসলমান হওয়ার পেছনে ওইসব মেয়েদের আন্তরিক আদর যত্নের একটা বড় প্রভাব আছে। তাদের দোয়া এবং আন্তরিকতার বরকতেই আমি আজ মুসলমান। আমি আজ সামান্য ইবাদত বন্দেগি করতে পারছি। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন।

সানা হুজাইফা :  অনেক সময় দেখা যায় আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের নানা পরীক্ষা ও পেরেশানির ভেতর দিয়ে তাদের ধৈর্য ক্ষমতা যাচাই করেন।  আপনি যখন দ্বীনের দৌলত লাভ করলেন তখন কি আপনাকে অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে? একটু বিস্তারিত বলুন।

খাদিজা খাতুন : প্রথমে আমি আল্লাহ তায়ালার প্রতি গভীর শুকরিয়া জানাবো। তিনি আমাকে দ্বীন ও ঈমানের ধনে ধন্য করেছেন। তারপর দ্বীনের ওপর চলবার এবং থিতু হবার শক্তি দিয়েছেন। তিনি অনুগ্রহ করে আমাকে তার দাসি রূপে কবুল করেছেন। দেখুন, অনেক কষ্ট এবং নিবিষ্ট চেষ্টায় এ ধন অর্জন করেছি। ইসলাম কবুল করতে গিয়ে আমাকে কী কী প্রতিকূলতার মুখে পড়তে হয়েছে সে কথা বলছি। সত্যি কথা কি ইসলাম সম্পর্কে কথা বলতে আমার খুব ভালো লাগে। আমি যখন হিন্দু ছিলাম তখন আমার ঘরের সামনে দিয়ে মুসলমানগণ দল বেঁধে ঈদগাহে যেতেন। আমি প্রীত মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম। তাদের মাথায় শোভিত শুভ্র টুপি এবং গায়ে সুন্নতি পোশাক আমাকে খুবই আলোড়িত করতো। যখনই মুসলমানদের ছেলে মেয়েদের দেখতাম অন্তরে ভীষণ সুখ অনুভব করতাম। এভাবে মুসলমান ছেলে মেয়েদের দেখতে দেখতে কখন যে যুবতী হই নিজেও বলতে পারবো না। 

পরিবারের লোকদের ভাবনা তৈরি হয় আমাকে বিয়ে দিতে হবে। হিন্দু রেওয়াজ মতে আমার পরিবার আমার উপযুক্ত পাত্র খুঁজতে থাকে। তারপর যথা সময়ে খুব ধুমধাম করে আমার বিয়ে হয়। এতোদিন আমি একরকমের মুসলিম পরিবেশেই বেড়ে উঠছিলাম। বিয়ের পর আমাকে এই পরিবেশ থেকে সরে গিয়ে যেন এক সুনসান পরিবেশে পড়তে হয়। সেখানে কোনো মসজিদ নেই, আজান নেই। যখনই আমি আমার স্বামীর সঙ্গে মুসলমানদের বিষয়ে কথা বলতাম সে কৌশলে কথা অন্য দিকে নিয়ে যেতো। আমার মুসলমান বান্ধবীদেরকেও আমার স্বামীর নাম্বারে ফোন করলে বিরক্ত হতো। কিছুটা কুন্ঠিত হয়ে আমাকে ফোন দিতো। আমার কথা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে বলতো দেখ বুবলি আমি তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসি। আমি চাই না তুমি আমাদের এ পরিবেশে এসেও মুসলমান মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখো। একসময় তুমি কুমারী ছিলে তখন তুমি ছিলে স্বাধীন। এখন তুমি বিবাহিতা। এখন আর হিন্দু মুসলমানের মধ্যে কীসের সম্পর্ক? তুমি তোমার মুসলিম সখীদের বলে দাও তারা যেন তোমার সঙ্গে যোগাযোগ না রাখে। তার এই কথায় আমি ভেতরে ভেতরে শক্ত রকমের ধাক্কা খাই। চুপ থাকি। এভাবে আমার সময় পার হতে থাকে। এরই মধ্যে আমি তিন সন্তানের জননী হই। দুইজন পুত্র সন্তান সমরণ ও হরপরিদ। একজন কন্যা সন্তান নাম দীপক।

অবশেষে সেই প্রতিক্ষিত ক্ষণ উপস্থিত হলো যা আমার জন্য ছিল স্বর্ণপ্রহর। ঘটনাটা ছিল এই। আমার সখী ইয়াসমীনের বিয়ে। তার ভাই আব্দুল্লাহ এবং আমার ভাই দেবকে দিয়ে বিয়ের কার্ড পাঠায়। তারা কার্ড নিয়ে আমার শ্বশুরালয়ে উপস্থিত হয়। এতে করে আমার হিন্দু স্বামী ভয়ঙ্করভাবে ক্ষেপে যায়। অনেক বলা কওয়ার পর কোনো মতে আমি আমার বান্ধবীর বিয়েতে যাওয়ার অনুমতি পাই। বিয়েতে যাওয়ার পর আমি ভেতরে ভেতরে শক্ত রকমের ঝাকুনি অনুভব করি। আমরা একদল সখী একসঙ্গে বেড়ে উঠেছি। অথচ আমাদের বিয়ে হচ্ছে আলাদা আলাদা রীতিতে । ইয়াসমীনের বিয়ে হলো মুসলিম রীতিতে। আমার বিয়ে হয়েছে হিন্দু রীতিতে। তার বিয়েতে মুসলমান বোনদের দেখে আমি খুবই আকর্ষিত বোধ করেছি। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে আমি আমার শ্বশুরালয়ে ফিরে আসি। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানের স্মৃতি ও অনুভূতিগুলো কোনোভাবেই আমি আমার মন থেকে তাড়াতে পারিনি। আমাকে বরাবর দগ্ধ করতে থাকে।

মূর্তিপূজা আমি আগেও করতাম না। আমি একদিন আমার স্বামীকে বললাম, আমরা সকলে মিলে যদি আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে মেনে নিই এবং ইসলাম ধর্ম কবুল করি তাহলে আমাদের জন্যে খুবই ভালো হয়। আমরা পুরো পরিবার তখন মুসলমান হয়ে একসঙ্গে বসবাস করবো। যার যার মতো নাম গ্রহণ করবো। নিজেদের ঘরে বসে নামাজ রোজা করবো। আমার স্বামী বললেন কী, তুমি তো আগে থেকেই মুসলমান। তোমাকে দেখতেও মুসলমানের মতোই মনে হয়। তুমি চাইলে মুসলমান হয়ে যাও। আমরা এমনিতেই ভালো আছি। এর কিছুদিন পর আমি আমার সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়ি যাই। আমার বাবাকে পুরো বিষয়টি খুলে বলি। বাবা বললেন, দেখো মা তোমার সবকিছুই হিন্দু মত ও রীতিতে সম্পাদিত। সুতরাং তুমি মুসলমানদের কথা বলো না। তাছাড়া এখন তুমি বড় হয়েছ। তোমার বিয়ে হয়েছে। তুমি একজন বুদ্ধিমতী মেয়ে। তুমি হিন্দু ধর্ম মতো জীবন যাপন করো এটাই তোমার জন্য ভালো। চলবে...

সূত্র: মাসিক আরমোগান

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

শিরোনাম:

স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট
এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
পুলিশকে সাহায্য করবে ক্রাইম জিপিটি!
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর