শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেলকুচিতে বৈঠার ছন্দে ছন্দে যমুনার তীরে উচ্ছ্বাস

বেলকুচিতে বৈঠার ছন্দে ছন্দে যমুনার তীরে উচ্ছ্বাস

নদীমাতৃক বাংলাদেশের আবহমান বাঙালি ঐতিহ্য ও প্রাচীন সাংস্কৃতিক অন্যতম অনুসঙ্গ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। গ্রামীণ লোক সাংস্কৃতির সেই ধারাবাহিকতা বুকে ধারণ করে সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে এবারো অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের আয়োজনে প্রতিযোগিতার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন সাবেক মন্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস।

বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের মেঘুল্লায় যমুনার নদী বক্ষে এই প্রতিযোগিতায় ঢাক-ঢোলের বাজনার সাথে তাল মিলিয়ে জারি-সারি ও ধুয়া গানের সাথে মাঝিদের জোরে টানো ছন্দময় বৈঠার সে দৃশ্য ছিল অতুলনীয়। অর্ধ শতাধিক অংশ নেওয়া নৌকার এ প্রতিযোগিতা দেখতে আসা তখন পাবনা, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষের আবেগ, উত্তেজনা এবং করতালিতে মুখরিত ছিল পুরো এলাকা। গত ২ সপ্তাহ আগে বেলকুচির মেঘুল্লার যমুনা নদীতে (২৭ অক্টোবর) নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা চালায় জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। এজন্য বাইচের দিন মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) সকালেই টাঙ্গাইল, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর, সদর, চৌহালী, এনায়েতপুর ও বেলকুচি এবং উল্লাপাড়ার কয়েকশ বিভিন্ন নৌকাযোগে এবং সড়ক পথে প্রতিযোগিতাস্থল মেঘুল্লা ঈদগা মাঠ যমুনার তীরের ৪ কিলোমিটার জুড়ে সমবেত হয় অন্তত অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। প্রতিযোগী পানশি, কোষা ও বৃহৎ আকারের খেলনা নৌকাও দুপুর ১টার মধ্যে চলে আসে। এরপর বেলা ২টায় শুরু হয় মুল প্রতিযোগিতা।

ঘণ্টির ঝনঝনানি, ঢোল, বাদ্যযন্ত্রের তালে-তালে উদ্বুদ্ধ করণদাতাদের ‘জোরসে বল হেইও, আরো জোরে হেইও, বাইয়া যাও হেইও’র ছন্দে ছন্দে মাঝিরা বৈঠা হাতে বেয়ে যায় নৌকা। তখন তীরবর্তী স্থানে সমান তালে ছুটে চলে সমর্থকরা। দুই তীরে করতালি, হর্ষধ্বনি পরিশ্রান্ত মাঝিদের উৎসাহ জোগায়। তখন বেলকুচি পৌর এলাকার চালা গ্রাম থেকে আসা বিজয় বাংলা ৭১ নৌকার তত্ত্বাবধায়ক ও বেলকুচি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী শেখ জানান, এ রকম স্বতঃস্ফূর্ত জনতার উৎসব মুখর আয়োজনের নৌকা বাইচ আগে কখনো দেখিনি। আমরা ছোট বেলায় দেখেছি বন্যার সময় হলেই চারদিকে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার ধুম পড়তো। কিন্তু এখন আর খুব একটা এ আয়োজন হয় না। তবে ব্যতিক্রম লতিফ বিশ্বাস গ্রামীণ ঐতিহ্যকে লালন করে প্রতিবার নৌকা বাইচের আয়োজন করছে। আমরা চাই নির্মল আনন্দের এ ধারা যেন অব্যাহত থাকে।

সেখানেও ছিল নারী-পুরুষ বিভিন্ন বয়সী মানুষের ভিড়। শাহজাদপুরের মামুন বিশ্বাস, বেলকুচির মেঘুল্লার কামাল আহামামেদ, দৌলতপুর ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদ রানা জানান, আসলেই নৌকা বাইচের এই বিশাল আয়োজন আমাদের সবাইকে মুগ্ধ করেছে। সকল ভেদাভেদ ভুলে অন্তত কয়েক ঘণ্টার জন্য সবাই আমরা এক কাতারে মিশে ছিলাম। এই আয়োজনের মাধ্যমে মাদক, যৌতুক, জঙ্গি, সন্ত্রাস বন্ধ করে সবাইকে এক হয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করার যে আহ্বান জানানোয় পুরো উদ্যোগটি পূর্ণতা পেয়েছে। এ ছাড়া ঐতিহ্যের এই বাইচ উপলক্ষে মেঘুল্লা, আজগরা, জামতৈল, ক্ষিদ্রমাটিয়া, বংখুড়ি, চর মেঘুল্লা সহ আশ পাশের গ্রামের বাড়িতে-বাড়িতে নায়রে আনা হয়েছিল ঝি-বেটিসহ আত্মীয় স্বজনদের। এ যেন ঈদের মতোই আরেক আনন্দ।

এ ব্যাপারে দৌলতপুর ইউপি সদস্য ও মেঘুল্লা গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, ঈদের আনন্দ এক দিনের জন্য হলেও নৌকা বাইচের আনন্দ আমাদের এলাকার ৮/১০টি গ্রামের মানুষ ৩ দিন উপভোগ করছে। প্রতি বাড়িতেই স্বজনদের এনে তালের পিঠার আয়োজন চলছে। খেলায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি ও বর্তমান উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম (শফি), বেলকুচি উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী শেখ, বেলকুচি পৌর মেয়র বেগম আশানূর বিশ্বাস, বেলকুচি থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মোস্তফা।

বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি একে,এম ইউসুফজী খাঁন, দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদ রানা সহ থানা আওয়ামী লীগের নেতৃবিন্দ এবং জেলা পরিষদের সদস্য ও অন্যান্য কর্মকর্তারা। তখন এই অতিথিরা বিজয় বাংলা ৭১, স্বপ্ন তৈরি, আল্লারদান, প্রথম আলো, করতোয়া, পাটুল এক্সপেজসহ বিজয়ী নৌকার মালিকদের হাতে ফ্রিজ এবং পরাজিতদের এলইডি টিভি উপহার দেওয়া হয়। আয়োজন প্রসঙ্গে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, নৌকা উন্নয়ন অগ্রগতী ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতীক। এই নৌকাই আখিরাতের কাণ্ডারি। সেই নৌকা বাইচের আমরা আয়োজন করেছিলাম সকল পাপাচারের বিরুদ্ধে। সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদের মুগ্ধ করেছে। আগামীতেও বাল্যবিবাহ, সন্ত্রাস, জঙ্গি মুক্ত সোনার বাংলা গড়তে সকলে উৎসাহ যোগাতে এই আয়োজন অব্যাহত থাকবে।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর
ঈদের দিন ৩ হাসপাতাল পরিদর্শন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
আয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
জুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেই