শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি-জামায়াত লালিত জঙ্গিবাদী হামলা

বিএনপি-জামায়াত লালিত জঙ্গিবাদী হামলা

একুশ আগস্ট ট্র্যাজেডির দুঃসহ রক্তাক্ত স্মৃতি এখনও বাংলার মানুষকে তাড়া করে ফেরে। '৭৫-এর ১৫ আগস্ট এই বাংলার মাটিতে যে ঘাতক চক্র বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে সমূলে বিনাশ করতে ইতিহাসের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করেছিল, সেই চক্রের দোসররা আবারও ২১ আগস্ট ২০০৪-এ ভাগ্যক্রমে বেঁচে থাকা বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার একজন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের হত্যার জন্য বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় চালায় স্মরণাতীতকালের ভয়াবহ নারকীয় গ্রেনেড হামলা।

শুধু গ্রেনেড হামলাই নয়; জননেত্রীকে হত্যার জন্য তার বুলেটপ্রুফ গাড়িতেও পরিকল্পিতভাবে চালানো হয় একের পর এক গুলি। সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমান ও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী মাহবুবসহ ২৪ জন বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে নিহত হয়েছেন সেদিন। সে ঘটনায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ আহত হয়েছেন কয়েকশ' নেতাকর্মী, যাদের অনেককেই এ নারকীয় হামলার দুঃসহ স্মৃতি বুকে নিয়ে পঙ্গু হয়ে কাটাতে হচ্ছে বাকিটা জীবন। ২১ আগস্ট যেন আরেক ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডিরই পুনরাবৃত্তি। মাহবুব নিজের বুকের রক্ত দিয়ে ও আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেদের জীবনকে মৃত্যুর সঙ্গে বাজি রেখে মানববর্ম তৈরি করে নেত্রীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন বলেই শেখ হাসিনা এ যাত্রায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারকে সমূলে বিনাশ করার জন্য হামলা চালানো হয়েছিল। আর ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে হত্যার জন্য হামলা চালানো হয়।

১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রকারীরা সম্পূর্ণ সফল হলেও ২১ আগস্ট খুনিরা আংশিক সফল হয়েছে। ২১ আগস্ট সে রকম সফল হলে হয়তো '৭৫-এর পর যে রকম অন্ধকার বাংলাদেশকে গ্রাস করেছিল, তার চেয়ে হয়তো আরও গভীর অন্ধকারে আমরা নিমজ্জিত হতাম। গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে আর কিছুই থাকত না। বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার হয়তো আজও দাম্ভিকতার সঙ্গে দেশ শাসন করত; চলত বোমা বিস্টেম্ফারণের উৎসব আর হত্যার রাজনীতি। শুধু তাই নয়, হয়তো এ অপূরণীয় ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে জানি না আমাদের আরও কত বছর অপেক্ষা করতে হতো! রাজপথে ঢেলে দিতে হতো আরও কত বুকের তাজা রক্ত! বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িকতার প্রদীপ জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি ২১ আগস্ট নিহত হতেন, তাহলে সমগ্র বাংলাদেশ বনপোড়া হরিণীর মতো আর্তনাদ করে উঠত। রক্তের স্রোতধারায় ভেসে যেত বাংলাদেশ। আমরা ভাগ্যবান, আমাদের মধ্যে এখনও বেঁচে আছেন বাংলার কোটি মানুষের সাহস ও সংগ্রামের প্রতীক জননেত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশে বোমা, গ্রেনেড হামলা চারদলীয় জোট সরকারের সময় থেকেই নতুন কোনো সংবাদ ছিল না। বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ কেবল আশঙ্কায় থাকত, কখন কোথায় রক্তের স্রোতে ভেসে যায় বাংলার সবুজ মাটি! আমরা আশঙ্কায় থাকতাম বোমা-গ্রেনেডের আঘাতে আরও কত মানুষ লাশ হবে; বাংলাদেশের বুক থেকে আরও কত রক্তক্ষরণ হবে! এ সময় ধ্বংসাত্মক বোমা হামলার বিস্তার ঘটেছিল রমনার বর্ষবরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে গির্জা, মাজার, সিনেমা হল, রাজনৈতিক সমাবেশ এবং আদালতের ভেতরে। এরই ধারাবাহিকতায় ঘাতকরা ২১ আগস্ট ২০০৪ সালে বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃত্বকে হত্যার উদ্দেশ্যে জনসমাবেশ চলাকালীন সভামঞ্চে পরিকল্পিতভাবে নারকীয় বোমা ও গ্রেনেড হামলা চালায়।

জোট সরকারের আমলে বোমা হামলাকারীরা যে কত সংগঠিত ও শক্তিধর, তার সর্বশেষ প্রমাণ মেলে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট একযোগে দেশব্যাপী নজিরবিহীন বোমা বিস্টেম্ফারণে। এর পর দেশবাসী দেখেছে আদালতের ভেতরে-বাইরে কীভাবে নৃশংস কায়দায় বিচারক, আইনজীবী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে! এসব ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত তো হয়নি, বরং খুনিদের বাঁচানোর জন্য ছিল রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টা। যখনই কোনো স্থানে বোমা হামলা সংঘটিত হয়েছে, তখনই প্রশাসন কর্তৃক প্রকৃত সন্ত্রাসীদের আড়াল করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হয়রানি, নির্যাতন করাসহ কোনো কোনো ঘটনাকে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বলে চালিয়ে দেওয়া হতো।

যখন বাংলা ভাইরা দেশে জেএমবির নামে একের পর এক নৃশংস বোমা হামলা পরিচালনা করেছিল, তখন জোট সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী জামায়াতের আমির ও '৭১-এর চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী বলেছিলেন, 'বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি।; চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিএনপির ভেতরে স্বাধীনতাবিরোধী, সাম্প্র্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তির ধারাটি এতই প্রবল যে, দেশে উগ্রবাদী, মৌলবাদী সংগঠনগুলোকে জোট সরকারের আমলে লালন করা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে ঘায়েল করতে। জোট সরকারের আমলে তাদের ছত্রছায়ায় ধর্মান্ধ, সাম্প্র্রদায়িক শক্তি ও উগ্র মৌলবাদী ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলো দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল লেখক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংগঠনকে নির্মূল করতে পরিকল্পিতভাবে এসব হামলা চালিয়েছে। জোট সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত বোমা বিস্টেম্ফারণ ও বোমা তৈরির পেছনে কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের হাত রয়েছে- এ কথা বারবার বলা হলেও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, বরং জঙ্গিবাদকে লালন-পালন করা হয়েছে।

২১ আগস্ট ট্র্যাজেডি ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডির মতো বাঙালির জন্য আরেকটি শোক উপাখ্যান। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যার দায়ে খুনিদের বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় ও কয়েকজন খুনির ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় জাতি হিসেবে যেমন আমাদের জাতীয় দায়মুক্তি ঘটেছে, তেমনি আমরা গ্লানিমুক্ত হয়েছি। ঠিক তেমনি আর একবার গ্লানিমুক্ত হতে ২১ আগস্ট ট্র্যাজেডির হোতাসহ সব ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর দেখার অপেক্ষায় গোটা জাতি।

লেখকঃ অধ্যাপক, আইন বিভাগ ও পরিচালক, শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

শাহজাদপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের সাথে মতবিনিময় সভা
সিরাজগঞ্জে পুরোদমে চলছে কৃষিবান্ধব সোলার প্রকল্পের কাজ
সিরাজগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন
বেলকুচিতে বিএসটিআই অনুমোদন না থাকায় টেক্সটাইল মিলকে জরিমানা
বেলকুচিতে পুষ্টি বিষয়ক সমন্বয় কমিটির দ্বি-মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক-অফিসিয়াল যোগাযোগ বাড়াতে প্রস্তুত বাংলাদেশ
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ
এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির
গবেষণায় আরো জোর দিতে বললেন কৃষিমন্ত্রী
রংপুর ও ভোলার চরের মানুষদের সুখবর দিলেন পরিবেশমন্ত্রী
স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক