শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নারীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ: ৫২ কোটির প্রকল্প ঠেকছে ১১৮ কোটিতে

নারীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ: ৫২ কোটির প্রকল্প ঠেকছে ১১৮ কোটিতে

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব তথা তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রসারের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সারাদেশের নারীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলার একটি প্রকল্প আট বছর আগে হাতে নিয়েছিল সরকার। ধারাবাহিকভাবে ৬৪ জেলায় কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে ৪৮ হাজারেরও বেশি নারীকে কম্পিউটারে দক্ষ করে তোলার জন্য সময় নেওয়া হয়েছিল পাঁচ বছর। এর জন্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৫২ কোটি টাকা। আরও অনেক প্রকল্পের মতোই এই প্রকল্পটিও নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি।

দুই দফায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে প্রকল্পের ব্যয়। তাতেও প্রকল্পটি শেষ করতে না পারায় এবার প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব করা হচ্ছে। আর এই প্রস্তাবনায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে আরও এক দফায় দুই বছর। তাতে প্রকল্প শেষ করার সময় দাঁড়াচ্ছে ১০ বছরে। আর এবারে প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকারও বেশি, যা মূল প্রাক্কলনের সোয়া দুই গুণেরও বেশি! তবে বারবার প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ বাড়ানোর পেছনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারা ছাড়া আর তেমন কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি।

জেলাভিত্তিক নারী কম্পিউটার প্রশিক্ষণ (৬৪ জেলা) প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব পর্যালোচনায় এ চিত্র দেখা গেছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে কমিশনে আসার পর প্রস্তাবটি প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে। গত ১০ মার্চ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় কিছু সুপারিশও দেওয়া হয়। সেগুলো প্রতিপালন করায় সংশোধনী প্রস্তাবটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষিত বেকার নারীদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে বেকার সমস্যা দূরীকরণ, উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। ৪২ হাজার ২০৬ জন শিক্ষিত বেকার নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানকে দেশজ টেকসই প্রযুক্তির সঙ্গে প্রয়োগের পরিকল্পনা ছিল। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে জাতীয় মহিলা সংস্থাকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য বলছে, ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য ৫২ কোটি ৫৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা ব্যয়ে মূল প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় একনেক। পরে ৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে প্রাক্কলিত ব্যয় ৬০ কোটি ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকা এবং একবছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুনে প্রকল্প শেষ করার প্রস্তাব দিয়ে প্রথম সংশোধনী এনেছিল মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সে সংশোধনী অনুমোদনও পায় একনেক বৈঠকে।

তবে সময় ও বরাদ্দ ব্যয় বাড়িয়েও প্রকল্পটি শেষ করা যায়নি। পরে প্রকল্পটি শেষ করতে আরও দুই বছর সময় চাওয়া হয়, বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া হয় আরও প্রায় ২৬ কোটি টাকা। সে অনুযায়ী মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৮৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা এবং ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবটি ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই অনুমোদন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

তবে দুই দফায় মেয়াদ ও খরচ বাড়িয়েও প্রকল্পটি শেষ করা যায়নি। এবারে ২০২১ সালের জুন থেকে প্রকল্প শেষ করার জন্য আরও দুই বছর চাওয়া হয়েছে। আর দ্বিতীয় সংশোধনীর প্রাক্কলিত ব্যয়ের তুলনায় ৩৬ শতাংশ বাড়তি প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে। এসব প্রস্তাব রেখে প্রকল্পের তৃতীয় যে সংশোধনীটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে, তাতে প্রকল্প শেষ করার সময় সময় চাওয়া হয়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। আর প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১১৮ কোটি ৭৯ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। অর্থাৎ পাঁচ বছরের মূল প্রকল্পের সময় দ্বিগুণ হয়ে ঠেকছে ১০ বছরে। আর প্রকল্পের সবশেষ প্রাক্কলিত ব্যয় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে মূল প্রাক্কলিত ব্যয়ের সোয়া দুই গুণেরও বেশিতে।

কেন দেশের নারীদের কম্পিউটারে প্রশিক্ষিত করে তোলার প্রকল্পটিতে বারবার সংশোধন প্রয়োজন পড়ছে— জানতে চাওয়া হয় পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে। তারা বলছেন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়াকেই সংশোধনী প্রস্তাবে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪২ হাজার ২০৬ জন বেকার নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর মধ্যে ৩২ হাজার ৬০৬ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বাকি ৯ হাজার ৬০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রকল্পের বর্ধিত মেয়াদে বাড়তি আরও ৬ হাজার ৪০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাতে প্রকল্পটির এ পর্যায়ের অধীনে মোট প্রশিক্ষণ পাবেন ৪৮ হাজার ৬০৬ জন নারী।

সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক খরচই বেড়ে গেছে। তাছাড়া বাড়তি যে ৬ হাজার ৪০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তার জন্যও প্রয়োজন বাড়তি অর্থ। সে কারণেই প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

সময় ও ব্যয় বাড়লেও প্রকল্পটির মাধ্যমে দেশের নারীদের কম্পিউটারে দক্ষ করে তোলা সম্ভব হবে বিবেচনাতেই এই সংশোধনীকেও গ্রহণযোগ্য মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠমো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, প্রকল্পটি শিক্ষিত বেকার নারীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। নারীদের আত্মনির্ভরশীলতার জন্যও উদ্বুদ্ধ করে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।  তাই প্রকল্পটির সংশোধনী অনুমোদনযোগ্য এবং একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর
ঈদের দিন ৩ হাসপাতাল পরিদর্শন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
আয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
জুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেই