রাজধানীর দক্ষিণখানে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার ঘটনায় এখনো খোজ মেলেনি গৃহকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী রকিব উদ্দিনের। এদিকে এ ঘটনার পেছনে অনলাইনে ক্যাসিনো খেলে কোটি টাকা খুইয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত রকিব উদ্দিনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে অনেকখানি নিশ্চিত তদন্ত সংশ্লিস্টরা।
অন্যদিকে এ ঘটনার পেছনে বাড়িওয়ালির সংশ্লিস্টতাকেও গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছেন তারা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, অনলাইনে ক্যাসিনো খেলে প্রায় কোটি টাকা খুইয়েছেন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) উত্তরা কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রকিব উদ্দিন। গত ডিসেম্বরে রকিব একবার নিখোঁজ হলে কয়েকদিন পর আবার ফিরে আসেন। সেসময় নিখোঁজ থাকার সময় তার মোবাইল ফোন বাসায় ছিল। অনেক লোক ফোন করে তার কাছে টাকা পাওয়ার কথা বলেছিল।
তখনই স্বজনরা তার এই বিপুল পরিমাণ ঋণের বিষয়টি জানতে পারেন। কুমিল্লার সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে বাসায় ফিরে আনার পর তাকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি। সেসময় পরিবারের লোকজন তাকে চাপ দিলে বাড়িওয়ালি (ডলি বেগম) তাকে ব্লাকমেইল করছে বলে জানান। রকিবের নোটবুকেও ডলি বেগমের নামে কিছু কথা লেখা রয়েছে। এসব তথ্য মামলার তদন্তকারী সূত্রের।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কে সি মডেল স্কুলের পেছনে দক্ষিণখানের প্রেমবাগান এলাকায় একটি বাড়ির পাঁচতলায় রকিব উদ্দিন ভূঁইয়া লিটনের বাসায় তার স্ত্রী মুন্নি বেগম (৩৭), তাদের ছেলে ফোরকান উদ্দিন (১২) ও মেয়ে লাইভার (৪) লাশ পাওয়া যায়। ঘটনার পর থেকেই গৃহকর্তা রকিব লাপাত্তা। এ ঘটনায় রকিবকে আসামি করে শনিবার রাতে দক্ষিণখান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত মুন্নির ভাই মুন্না রহমান।
মামলার বাদী মুন্না রহমান বলেন, যেভাবেই হোক রকিবকে খুঁজে বের করতে হবে। তাকে ছাড়া হত্যা রহস্যের জট খুলবে না। এ ঘটনার নেপথ্যে বাড়িওয়ালারও কিছু ভূমিকা আছে। আমরা চাই খুনি যেই হোক তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। নাহলে আমরাও বিপদমুক্ত হবো না। খুনি যদি রকিব হয় তাহলে আমাদের উপরও হামলা চালাতে পারে। কারণ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করতে তিনি আমাদের কাছেও টাকা ধার চেয়েছিলেন। তবে টাকা না দেয়ায় আমাদের উপরও তার ক্ষোভ ছিল। আর এ কারণে তিনি স্বজনের উপরও হামলা চালাতে পারেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, ওই বাড়ি থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা জব্দের পর সেখানে কোনো ফুটেজ সংরক্ষিত পাওয়া যায়নি। এতে মনে হচ্ছে খুনি বা তার লোকজন পরিকল্পনা মাফিক সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ মুছে দিয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ডিভিআরটি বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে মুছে ফেলা ভিডিও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
ওই বাড়ির মালিক মনোয়ার হোসেন জানান, ২০১১ সালের জানুয়ারিতে রকিব ভাড়ায় তার বাসায় ওঠেন। এত বছরে পারিবারিক বিবাদের কথা তিনি শোনেননি। তবে কিছুদিন আগে রকিবের ঋণগ্রস্ততার কথা শোনেন তিনি। গত বুধবার দিনের বেলায় রকিবের সঙ্গে তার কথোপকথন হয় বলেও জানান মনোয়ার।
এ ব্যাপারে র্যাব-১ এর পরিচালক লে. কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, রকিবকে সর্বশেষ গত ১২ ফেব্রুয়ারি দেখা গেছে দক্ষিণখান এলাকায়। তারপর থেকে তিনি নিখোঁজ। তার ফোনও বন্ধ। ঘটনার আলামত, আত্মীয়-স্বজনদের বক্তব্য ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে এটা স্পষ্ট যে, তিনজনই হত্যার শিকার। আমরা রকিবের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করছি।
সোমবার নিহতের একাধিক স্বজন ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ, র্যাব ও ডিবির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোটি টাকার ঋণ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতেই এ নৃশংস হত্যার ঘটনা ঘটাতে পারেন রকিব। সেই সঙ্গে তারা আশঙ্কা করছেন, রকিব নিজেও আত্মহত্যা করতে পারেন। কারণ নিজ হাতে লেখা ডায়েরির পাতায় রেল লাইনে পড়ে থাকার সেই ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। এ কারণে দেশের কোনো স্থানে রেলে কাটা পড়ে রকিব
আলোকিত সিরাজগঞ্জ