শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্ট টিউব বেবী সংক্রান্ত

টেস্ট টিউব বেবী সংক্রান্ত

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের প্রথম টেস্টটিউব বেবীর জন্মের পর পেরিয়ে গেছে প্রায় এক যুগ। কিন্তু আজও রয়ে গেছে এই সম্পর্কে নানান ভ্রান্ত ধারনা ও ভুল বোঝাবুঝি। সেই সমস্ত দূর করতেই আজকের এই প্রবন্ধ লিখেছেন ডাঃ মুনতাসীর মারুফ। সহজ ভাষায় সাধারণ পাঠকের জন্য তিনি তুলে ধরেছেন সন্তান জন্মদানে টেস্ট টিউব পদ্ধতির নানান দিক। 

টেস্ট টিউব পদ্ধতি কি? 'ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’ শব্দটি অনেকের কাছে অপরিচিত ঠেকলেও ‘টেস্টটিউব বেবী’- এখন আর আমাদের দেশে অপরিচিত কোন শব্দ নয়। যে পদ্ধতিতে টেস্ট টিউব বেবীর জন্ম হয় তার নাম ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন, সংক্ষেপে আইভিএফ। ‘ইন-ভিট্রো’ শব্দটি লাতিন ভাষা থেকে নেয়া। এর অর্থ কাঁচের মধ্যে। অর্থাৎ, সোজা বাংলায় ‘ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’ বলতে বোঝায় দেহের বাইরে নিষিক্তকরণ।

মূল প্রক্রিয়া প্রকৃতপক্ষে ভ্রণ টেস্টটিউবে বেড়ে ওঠে না, বাড়ে মায়ের জরায়ুতেই আর দশটি বাচ্চার মতোই। এ পদ্ধতিতে পুরুষের শুক্রাণু আর নারীর ডিম্বাণুর নিষিক্তকরণটুকুই শুধু স্বাভাবিক পদ্ধতিতে না হয়ে দেহের বাইরে হয়। স্ত্রীর ডিম্বপাত বা ওভুলেশনের সময় ডিম্বাণু যখন পরিপক্ক হয়, তখন তা ডিম্বাশয় থেকে বের করে আনা হয় ল্যাপারোস্কপি নামের এক পদ্ধতির মাধ্যমে। যে সব নারীর ডিম্ব উৎপাদনে সমস্যা, তাদের ক্ষেত্রে প্রথমে ডিম্ব উৎপাদনে সহায়তা করে এমন কিছু ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। ল্যাপারোস্কপি ছাড়াও যোনিপথে ছোট্ট একটি অপারেশনের মাধ্যমেও ডিম্বাণু সংগ্রহ করা যায়। সংগ্রহের পর ডিম্ব রাখা হয় টেস্ট টিউব অথবা বিশেষ ধরণের একটি পাত্রে যার নাম পেট্রিডিশ। এদিকে স্বামীর শুক্রাণু সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। পরে ডিম্বাণুসহ সেই ডিশ বা টিউবে শুক্রাণু রাখা হয়। এ সময় একটি ডিম্বাণুর বিপরীতে থাকে প্রায় পঁচাত্তর হাজার শুক্রাণু। এরপর ডিশ বা টিউবটি কয়েক ঘন্টা রাখা হয় ইনকিউবিটরে। ইনকিউবেটরের পরিবেশ রাখা হয় জরায়ুর অনুরূপ। এখানে উপযুক্ত শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর নিষেকের ফলে মানব ভ্রুনের সৃষ্টি হয়। তারপর বিশেষ নলের সাহায্যে স্ত্রীর জরায়ুতে রাখা হয় ভ্রণটি। অনেক ক্ষেত্রে, ভ্রণকোষটি জরায়ুতে প্রতিস্থাপনের আগে বিশেষ প্রক্রিয়ায় হিমায়িত করে রাখা হয় কিছুদিন। বিশেষতঃ যাদের ক্ষেত্রে ডিম্ব উৎপাদন করা হয় ওষুধের সাহায্যে, তাদের জরায়ুর প্রকৃতি ঐ মাসিক চক্রে স্বাভাবিক থাকার সম্ভাবনা কম থাকে। সে কারণে ভ্রণ প্রতিস্থাপনের জন্য পরবর্তী স্বাভাবিক মাসিক চক্রের জন্য অপেক্ষা করা হয়। সব ভ্রণ অবশ্য কাজে লাগানো হয় না। গর্ভধারণ নিশ্চিত করতে এদের গুণগত মান পরীক্ষা করে স্কোরিং করা হয়। ভ্রণে কোষের সংখ্যা যথাযথ বৃদ্ধি ও বংশবৃদ্ধির গতির উপর ভিত্তি করে উপযুক্ত ভ্রণ বাছাই করা হয়।

প্রসব ও ঝুঁকি জরায়ুতে ভ্রণ স্থাপনের পরের ঘটনা ঘটতে থাকে স্বাভাবিক গর্ভধারণের মতোই। মাতৃগর্ভে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নিষেকের ফলে যেসব ভ্রণ বেড়ে ওঠে, তেমন করেই বেড়ে ওঠে টেস্টটিউব বেবীও। বাচ্চার প্রসবও স্বাভাবিকভাবেই হতে পারে অথবা দরকার হতে পারে সিজারিয়ান অপারেশনের। জন্ম নেয়া শিশুরা অস্বাভাবিক কিছু নয়, তারাও অন্যান্য শিশুর মতোই স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে। কিছু গবেষণায় অবশ্য বলা হয়েছে, স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেয়া শিশুদের চেয়ে টেস্টটিউব শিশুদের বিকলাঙ্গতা ও বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশী। অনেক ক্ষেত্রেই এ প্রক্রিয়ায় একসাথে একাধিক অর্থাৎ দুই-তিন বা চারজন শিশু জন্ম নেবার কথা শোনা যায়। এর কারণ হচ্ছে, সাধারণত এ পদ্ধতিতে জরায়ুতে একাধিক ভ্রণ রাখা হয়। একটি ভ্রণ কোনভাবে বেড়ে উঠতে ব্যর্থ হতেও পারে এ আশংকাতেই এটি করা হয়। একাধিক ভ্রণ একই সাথে বেড়ে উঠলে তখন জন্ম হয় একাধিক শিশুর। এখানে উল্লেখ্য যে, ডিম্বাণু-শুক্রাণুর সফল মিলনের পরও সন্তানের জন্ম না-ও হতে পারে। প্রাকৃতিক নানা কারণেই এ প্রক্রিয়ায় সফলতার হার মাত্র ৩১ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রতি ১০০ টি ফার্টিলাইজেশনে সন্তান জন্ম নেয় ৩১ টি ক্ষেত্রে। টেস্টটিউব বেবির ক্ষেত্রেও সফলতার হার প্রায় অনুরূপ।

যে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যেসব কারণে এ পদ্ধতির আশ্রয় নেয়া হয় তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- নারীর টিউবাল ডিফেক্ট বা ডিম্বনালীর সমস্যা। ওভুলেশনের সময় পরিপক্ক ডিম্বাণু সাধারণত ডিম্বনালীতে শুক্রাণুর সাথে নিষিক্ত হয় এবং এর মাধ্যমেই ভ্রƒণ জরায়ুতে প্রবেশ করে। জন্মগতভাবে বা রোগের কারণে এই নালী সঙ্কুচিত হলে, নষ্ট হলে, এর মুখ বন্ধ হয়ে গেলে বা দেয়ালের নমনীয়তা নষ্ট হয়ে গেলে কিন্তু ডিম্বাশয় ঠিক থাকলে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে পুরুষের কার্যকর শুক্রাণুর সংখ্যা কম থাকলে বা জরায়ুর মুখ থেকে ডিম্বনালী পর্যন্ত প্রয়োজনীয় শুক্রাণু যেতে অসমর্থ হলেও এ পদ্ধতি সন্তান জন্মদানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্বে এ পদ্ধতিতে প্রথম শিশুর জন্ম হয় ইংল্যান্ডের ম্যানচেষ্টারে, ১৯৭৮ সালের ২৫ জুলাই। ওল্ডহ্যাম এন্ড ডিস্ট্রিক্ট জেনারেল হাসপাতালে ডাঃ এডওয়ার্ডস ও স্ত্রীরোগ বিশেসজ্ঞ ডাঃ প্যাট্রিক স্টেপটোর তত্ত্বাবধানে জন্ম নেয় ২.৬১ কেজি ওজনের এই ঐতিহাসিক কন্যাশিশুটি। শিশুর নাম রাখা হয় লুইস ব্রাউন। ডিম্বনালী বন্ধ থাকায় মা লেসলি ব্রাউন ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতি গ্রহণ করেন। সেই লুইস জয় ব্রাউন ২০০৬ সালের ২১ ডিসেম্বর প্রায় ছয় পাউন্ড ওজনের এক সুস্থ ছেলে শিশুর জন্ম দিয়েছেন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়। আর ২০১০ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) প্রযুক্তির জনক বর্তমানে ব্রিটেনের ক্যামব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক রবার্ট জি এডওয়ার্ডস। বাংলাদেশে ২০০১ সালের ৩০ মে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ পারভীন ফাতেমার তত্ত্বাবধানে ফিরোজা বেগম নামের এক প্রসূতি জন্ম দেন এদেশের প্রথম টেস্ট টিউব বেবীর। এক সাথে জন্ম নেয় তিন কন্যাশিশু। তাদের নাম রাখা হয় হীরা, মণি, মুক্তা।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর
ঈদের দিন ৩ হাসপাতাল পরিদর্শন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
আয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
জুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেই