শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জান্নাতের সুন্দর দৃশ্যাবলী পর্ব-৩

জান্নাতের সুন্দর দৃশ্যাবলী পর্ব-৩

জান্নাতের নেয়ামত কল্পনা করা যায় না:

পূর্বেও আমি বলে এসেছি, জান্নাতের অবস্থা পুরোপুরি বর্ণনা করতে আমাদের শব্দ, আমাদের চিন্তা এবং আমাদের কল্পনা অপারগ। কারণ হাদিসে কুদসিতে খোদ আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ, " إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ قَالَ, أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا لَا عَيْنٌ رَأَتْ، وَلَا أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلَا خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ

আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন নেয়ামত প্রস্তুত করে রেখেছি যা কোনো চোখ কোনোদিন দেখেনি। কোনো কান তা শোনেনি। কোনো হৃদয় তা কল্পনা করেনি। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, তিরমিজি শরিফ)।

ওলামায়ে কেরাম বলেন, জান্নাতের নেয়ামতের নাম দুনিয়ার নেয়ামতসমূহের নামের মতই হবে। উদাহরণত, সেখানে নানারকম ফলফলাদি থাকবে। আনার থাকবে, খেজুর থাকবে। কিন্তু আনার ও খেজুর কেমন হবে, আজ তা আমরা ধারণা করতে পারি না।

রেওয়ায়েতে আছে, জান্নাতে অনেক মহল থাকবে। আমরা মনে করি, দুনিয়াতে যেরূপ বিভিন্ন মহল আছে, আখেরাতের মহলগুলোও এমন হবে। কিন্তু এখানে বসে মহলগুলোর প্রকৃত রূপ কল্পনা করা যায় না। রেওয়ায়েতে আরো আছে, শরাব, দুধ ও মধুর নহর হবে। আমরা ধারণা করি, সেগুলো দুনিয়ার দুধ ও মধুর মত হবে। এর ফলে সেগুলোর সঠিক মর্যাদা আমাদের হৃদয়ে উপলব্ধি হবে। অথচ সেখানাকার শরাব, দুধ ও মধু কেমন হবে, এখানে বসে আমরা তার কল্পনা করতে পারি না।

জান্নাতে ভয় ও দুঃখ থাকবে না:

জান্নাতের সবচেয়ে বড় নেয়ামত হলো সেখানে কোনো ভয় থাকবে না, দুঃখ ও কষ্ট থাকবে না। অতীতের জন্য দুঃখ হবে না এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোনো শঙ্কা থাকবে না। এটি এমন নেয়ামত, যা দুনিয়ায় কখনো কারো লাভ হয়নি। কারণ পার্থিব জগতকে আল্লাহ তায়ালা এরূপই বানিয়েছেন যে, এখানে কোনো খুশিই পরিপূর্ণ হয় না। কোনো স্বাদই পূর্ণাঙ্গ না। প্রতিটি আনন্দের সঙ্গে কোনো না কোনো বেদনা জড়িয়ে আছে। প্রতিটি স্বাদের সঙ্গে কোনো না কোনো তিক্ততা জাড়িয়ে আছে। ধরুন, আপনি খাবার খাচ্ছেন, খাবার খুব সুস্বাদু, খেতেও মজা লাগছে কিন্তু সঙ্গে এই শঙ্কাও আছে যে, যদি বেশি খাই তা হলে বদহজম হতে পারে কিংবা ধরুন আপনি কোনো পানীয় পান করছেন। খুব ভালো লাগছে কিন্তু সঙ্গে এই শঙ্কাও আছে যে, যদি বেশি পান করে ফেলি তাহলে আবার না শরীর খারাপ করে। কোনো না কোনো কষ্টের বা দুঃখের কিংবা বেদনার আশঙ্কা থাকেই। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের জীবনকে সব শঙ্কা, বেদনা ও কষ্ট মুক্ত বানিয়েছেন। সেখানে কোনোই শঙ্কা থাকবে না। কোনোই দুঃখ থাকবে না। সেখানে অতীতে কিছু হারানোর কোনো বেদনাও থাকবে না এবং ভবিষ্যতে কিছু না পাওয়ার শঙ্কাও থাকবে না বরং মানুষ যা চাইবে তাই পুরা হবে।

দুনিয়ায় জান্নাতের নেয়ামতের ঝলক:

হাদিস শরিফে আছে, জান্নাতবাসীদের প্রতিটি ইচ্ছা পূরণ করা হবে। যেমন, কারো ইচ্ছা হলো আনারের রস খাবে। এখন আনার ভেঙ্গে তা থেকে রস বের করতে হবে না। বরং আনারের জুস এমনিতেই তোমাদের সামনে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের নেয়ামতসূহের কিছু কিছু ঝলক দুনিয়াতেও দেখিয়েছেন। আগেকার যুগে যখন জান্নাতের নেয়ামতসমূহের আলোচনা করা হত তখন লোকেরা তাকে অবিশ্বাস্য ও আশ্চর্যজনক মনে করত। ভাবত, এটা কেমন তেলেছমাতি, কথাগুলো বিশ্বাস করবে কিনা লোকেরা তা ভেবে দেখত। কিন্তু আজ আল্লাহ তায়ালা দেখিয়ে দিয়েছেন যে, মানুষ তার সীমাবদ্ধ বিবেক-বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে এমনসব জিনিস আবিষ্কার করছে, শতবছর পূর্বে এসব জিনিস সম্পর্কে লোকজনকে বলা হলে, তারা পাগল ও উন্মাদ মনে করত। শত বছর তো দূরের কথা, এই বিশ বছর আগেও কেউ যদি বলত, এ ধরনের একটি যন্ত্র আবিষ্কার হচ্ছে, যা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তোমাদের চিঠি আমেরিকাসহ পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে পাঠিয়ে দেবে। তাহলে লোকেরা উক্ত ব্যক্তিকে পাগল বলত যে, বাংলাদেশ কোথায় আর আমেরিকা কোথায়? যদি প্লেনেও যায় তা হলে কমপক্ষে চব্বিশ ঘণ্টা সময় লাগবে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে চিঠি কিভাবে এতদূর যাবে? আল্লাহ তায়ালা ফ্যাক্স মেশিন এবং ট্যালেক্স মেশিন আবিষ্কার করে দেখিয়ে দিয়েছেন, এখানে ফ্যাক্স মেশিনে কাগজ দিচ্ছ আর ওখানে তখনি তার কপি বেরিয়ে আসে। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সীমাবদ্ধ বিবেক-বুদ্ধি ব্যবহার করে এরচেয়েও আরো আশ্চর্যজনক যন্ত্র আবিষ্কার করার তাওফিক দান করেছেন। মানুষের মতো সীমাবদ্ধ জীবের সীমাবদ্ধ বিবেক-বুদ্ধি ব্যবহার করে যখন এরূপ কাজ করার ক্ষমতা রাখে তাহলে আল্লাহ তায়ালা কি তার মহান কুদরত ও রহমতে নিজের বান্দাদের জন্য এই ধরনের জিনিস তৈরি করতে পারেন না যে, একদিকে মানুষের হৃদয়পটে কোনো কিছুর ইচ্ছা জাগ্রত হবে আর অন্যদিকে তা পুরা হয়ে যাবে?

জান্নাত মুত্তাকিদের জন্য:

আসল কথা হলো, মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো জিনিসকে বাস্তবে না দেখে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা উচ্চস্তরের জিনিসগুলোকে অবিশ্বাস্য মনে করে। কিন্তু আমবিয়ায়ে কেরামকে আল্লাহ তায়ালা এমন জ্ঞান দান করেছেন, যা পৃথিবীর আর কাউকে দান করেননি। তারা আমাদেরকে জান্নাত ও তার নেয়ামত সম্পর্কে নিশ্চিত সংবাদ দিয়েছেন, এর চেয়ে নিশ্চিত ও বিশ্বাস্য আর কোনো সংবাদ হতে পারে না। সুতরাং তাদের মাধ্যমে আসা সব সংবাদ সত্য, নির্ভুল ও অকাট্য। জান্নাত সত্য ও জান্নাতের নেয়ামতসমূহ সত্য। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَسَارِعُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ

‘তোমরা ধাবমান হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও সেই জান্নাত লাভের প্রয়াসে, যা প্রশস্ততায় আকাশ ও পৃথিবীর মতো, যা প্রস্তুত করা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য। (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত ১৩৩)।
 
আসুন, আমরা তাকওয়া অবলম্বন করি, মুত্তাকি হই এবং আল্লাহ তায়ালার সব বিধিবিধান সর্বাবন্তঃকরণে মেনে নিই ও তার ওপর আমল করি।

জান্নাতকে বেষ্টন করে আছে কষ্টদায়ক বস্তু:

জান্নাত মহান। জান্নাতের নেয়ামতসমূহ মহান। কিন্তু এক হাদিসে জান্নাত সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

حُفَّتِ الْجَنَّةُ بِالْمَكَارِهِ،

আল্লাহ তায়ালা জান্নাতকে এমন সবজিনিস দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছেন যেগুলোর প্রতি সাধারণত মানুষের অনিচ্ছা ও অনাগ্রহ থাকে এবং যেগুলো করা কষ্টকর হয়। যেমন ধরুন, একটি আলিশান মহল। কিন্তু তার চারদিকে কাঁটা-তারের বেড়া। এ মহলে প্রবেশ করার জন্য কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত কাঁটা-তারের বেড়া ডিঙানো না যায় ততক্ষণ পর্যন্ত মহলের আনন্দ ও মজা উপভোগ করা যায় না। এমনিভাবে আল্লাহ তায়ালা সেই মহান জান্নাতের চারপাশে এমন সব জিনিসের দ্বারা বেড়া স্থাপন করেছেন, যেগুলোর প্রতি মানুষের থাকে অনিচ্ছা ও অনাগ্রহ এবং যেগুলো করা মানুষের জন্য কষ্টকর হয়। উদাহরণত, মানুষের ওপর কিছু ফরজ ও ওয়াজিব বিধান আবশ্যক করা হয়েছে। মানুষের মনের কাছে এটা কষ্টের যে, সব কাজ ফেলে মসজিদে যাবে এবং নামাজ আদায় করবে। এ ধরনের আরো অনেক কাজ যেগুলো মানুষের মন করতে চায় হারাম ও গুনাহর কাজ সাব্যস্ত করা হয়েছে। যেমন, দৃষ্টি সংযত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে যাতে দৃষ্টি ভুল জায়গায় না পড়ে। নাজায়েজ ও গুনাহর কোনো প্রোগ্রাম না দেখে, পরনারীকে না দেখে, এসব কাজ থেকে বিরত থাকা মানুষের জন্য কষ্টের। মন চায় এসব কাজ করতে। অথচ তাকে নিষেধ করা হচ্ছে। এটাই হলো সেই কাঁটা তারের বেড়া, যা জান্নাতের চারপাশে লাগানো আছে। কিংবা ধরুন, বন্ধুদের সঙ্গে বসে আছেন। কারো কথা উঠল মন চাইল তার খুব গিবত করি কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে গিবত কর না। জিহ্বা সংযত রাখ। এটাই হলো সেই কাঁটা তারের বেড়া। যদি জান্নাত লাভ করতে হয় তাহলে কাঁটা তারের বেড়াকে অতিক্রম করতে হবে। এ ছাড়া জান্নাত লাভ করা সম্ভব হবে না।

দোযখকে আবৃতকারী হলো শাহওয়াত:

আলোচ্য হাদিসের পরের অংশে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

وَحُفَّتِ النَّارُ بِالشَّهَوَاتِ

দোযখের চারপাশে আল্লাহ তায়ালা শাহওয়াতের বেড়া স্থাপন করেছেন। যেসব কাজ করতে মানুষের ভালো লাগে এবং যেগুলোর প্রতি মানুষের প্রচণ্ড ঝোঁক, সেগুলো দ্বারা আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামকে ঘিরে রেখেছেন।

কাঁটার বিছানাও ফুলের বিছানায় পরিণত হয়:

জান্নাতের চারদিকে কাঁটা তারের বেড়া লাগানো আছে। কিন্তু এ বেড়ার কাঁটাগুলো যদি কেউ হিম্মত ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করে যে, আমাকে কাঁটার এ বেড়া অতিক্রম করতেই হবে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য সেই কাঁটাগুলোকে ফুল বানিয়ে দেন। কাঁটাগুলো ততক্ষণ পর্যন্ত কাঁটা, যতক্ষণ সেগুলোকে দূর থেকে দেখা হয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত সেগুলোকে কাঁটা ধারণা করা হয়। কিন্তু যখন একবার সাহসে ভর করে, দৃঢ়প্রতিজ্ঞা নিয়ে অগ্রসর হবে যে, আমাকে এ কাঁটাতারের বেড়া অবশ্যই ডিঙাতে হবে। কাঁটাতারের পেছনে যে মনোরম বাগান দেখা যাচ্ছে এবং তার নেয়ামতসমূহ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে, আমাকে কাঁটা তারের বেড়া ডিঙিয়ে সেই বাগানে যেতে হবে। তখন আল্লাহ তায়ালা সেই কাটাগুলোকেই ফুল বানিয়ে দেন এবং তাকেই গুলজার বানিয়ে দেন।

চলবে...

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর
ঈদের দিন ৩ হাসপাতাল পরিদর্শন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
আয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
জুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেই