শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চাঁদের অন্ধকারে চীনের আলো!

চাঁদের অন্ধকারে চীনের আলো!

চাঁদের যে অংশে আলো ফেলতে পারে না সূর্য, সেই অন্ধকার অংশেই আলো ফেলল চীন। আক্ষরিক অর্থে কথাটা শতভাগ সঠিক নয়। কিন্তু মহাকাশ গবেষণার তাৎপর্যের দিক থেকে এটাই বাস্তবতা।

মহাকাশ গবেষণায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কাতারে ওঠার বহুদিনের চেষ্টা চীনের। এর মধ্যেই অন্তত একটি জায়গায় রুশ-মার্কিনদের টেক্কা দিয়েছে চাঁদের দেবী চাং’ইয়ের দেশটি। আর তা হলো পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদের অন্ধকার অংশে পৌঁছে গেছে তাদের মহাকাশযান। শুধু তাই নয়, অবতরণের এক ঘণ্টার মধ্যেই সে অন্ধকার অংশটিতে প্রথমবারের মতো ক্যামেরার আলো ফেলেছে, ছবিও তুলে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার পেইচিং সময় সকাল ১০টা ২৬ মিনিট (বাংলাদেশ সময় ৮টা ২৬ মিনিট) চীনের পাঠানো চাংই-৪ নামের মনুষ্যবিহীন মহাকাশযানটি চাঁদের দূরবর্তী অঞ্চল দক্ষিণ মেরুর ‘অ্যাইটকেন অববাহিকায়’ অবতরণ করে। চাঁদের এ অংশটি সাধারণভাবে অন্ধকার অংশ (ডার্ক সাইড) নামে পরিচিত। কারণ এ অংশে সূর্যের আলো পড়া খুব বিরল ঘটনা। চাঁদে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণার জন্য মহাকাশযানটি পাঠানো হয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো এ খবর প্রচার করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন চাঁদে পা ফেলার প্রায় ৫০ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু চাঁদের দূরবর্তী অঞ্চলে এখনো কোনো মানুষ কিংবা মহাকাশযান পৌঁছতে পারেনি। এর বড় কারণ পৃথিবীর সঙ্গে ওই অংশের যোগাযোগ জটিলতা। টাইডাল লকিংয়ের (আবদ্ধ আবর্তন) কারণে নিজ অক্ষের ওপর চাঁদের আবর্তন সীমাবদ্ধ থাকায় ওই অংশটি পৃথিবীর সামনে আসে না। তাই সেখান থেকে পৃথিবীর সঙ্গে রেডিও যোগাযোগও সম্ভব হয় না। চীন এবার সেই বাধাটি ভেঙে দিয়েছে।

চীনের এই চন্দ্রযানটি চাঁদের ওই অঞ্চলের দুটি দিক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে। একটি হচ্ছে সেখানকার ভূতত্ত্ব, আরেকটি জীববৈজ্ঞানিক পরীক্ষা। এ লক্ষ্যে চন্দ্রযানটিকে সেভাবেই সাজানো হয়েছে। ফলে চাঁদের অন্ধকার পিঠে যানটির এই অবতরণকে মহাকাশ গবেষণায় অন্যতম প্রধান মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করছেন বিজ্ঞানীরা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাঁদে অনেকগুলো মিশন পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু এর সিংহভাগই চাঁদের কক্ষপথ, এর পরিভ্রমণ ও প্রভাব নিয়েই পরিচালনা করা হয়েছে। চাঁদে মনুষ্যযান যাওয়ার সর্বশেষ মিশনটি ছিল ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো ১৭। কিন্তু চাঁদের অন্ধকার দিক মানুষের কাছে এতকাল ধরে অন্ধকারই থেকে গেছে। গতকাল চাংই-৪ সেখানে পৌঁছার কিছুক্ষণ পরই অন্ধকার চন্দ্রপৃষ্ঠে আলো ফেলে এবং ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠায়। তবে সরাসরি নয়, আরেকটি কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে সেই ছবি ও উপাত্তগুলো চীনে অবস্থিত আর্থ-স্টেশনে পাঠায় মহাকাশযানটি। এ অভিযানের অংশ হিসেবেই কিউকিয়াও নামের এই কৃত্রিম উপগ্রহটিও গত মে মাসে মহাকাশে পাঠিয়েছিল চীন। চাঁদ থেকে এই কৃত্রিম উপগ্রহটির দূরত্ব ৬৫ হাজার কিলোমিটার।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের সব চন্দ্রযানগুলো চাঁদের পৃথিবীমুখী অংশে অবতরণ করে। কিন্তু এই প্রথমবারের মতো চীনের চন্দ্রযানটি অনাবিষ্কৃতি জায়গায় অবতরণ করল।

ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (ক্যালটেক) জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইয়ে কুয়ানঝি বিবিসিকে বলেন, অন্য মহাকাশ শক্তিগুলো আগে যা করেনি, চীন প্রথমবারের মতো তা করল। তিনি জানান, গত ৭ ডিসেম্বর চীনের শিচাং স্যাটেলাইট লঞ্চ সেন্টার থেকে চাংই মহাযানটি উেক্ষপণ করা হয়েছিল। এর পাঁচ দিন পর ১২ ডিসেম্বর তা চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছে।

চীনা গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, চাংই-৪ অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে চাঁদের দক্ষিণ মেরু-অ্যাইটকেন (স্পা) বেসিনে (গর্ত) অবস্থিত আলোচিত ‘ভন কারমান ক্যাটার’ এলাকা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা। ধারণ করা হয়, চাঁদের গঠনের শুরুর দিকে বৃহৎ কোনো ঘটনার ইমপ্যাক্টের (প্রভাব) কারণে এই অববাহিকার সৃষ্টি হয়েছিল।

এ বিষয়ে ব্রিটেনের মুলার্ড স্পেস সায়েন্স ল্যাবরেটরির অধ্যাপক অ্যান্ড্রু কোওটস বলেন, ডায়ামিটারে আড়াই হাজার কিলোমিটার ও ১৩ কিলোমিটার গভীর এই বেসিনে রয়েছে বিশাল কাঠামো। সৌর জগতের অন্যতম বৃহৎ ইমপ্যাক্টের ফল হচ্ছে এই বেসিন। স্পা বেসিন নামে পরিচিত এই গর্তটি চাঁদের বৃহত্তম, গভীরতম ও প্রাচীনতম বেসিন।

মহাকাশ যান চাংই-৪-এর রয়েছে দুটি ক্যামেরা। একটি অংশে আছে জার্মান তৈরি তেজস্ক্রিয়তা যাচাই যন্ত্র, যা এলএনডি নামে পরিচিত। অন্যটি হচ্ছে স্পেকট্রোমিটার, স্বল্প মাত্রার মহাকাশ তরঙ্গ রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি পর্যবেক্ষণ করবে। চাঁদের ভূপৃষ্ঠের নিচে কী আছে, সেটি পরীক্ষা করে দেখার জন্য একটি রাডার রয়েছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ওই এলাকা রেডিও অ্যাস্ট্রোনমির জন্য উপযোগী জায়গা হতে পারে। কারণ পৃথিবীর রেডিও নয়েজ (বিড়ম্বনা) থেকে এ জায়গাটি একদম নিরাপদ। আর স্পেকট্রোমিটার এই ধারণাটি পরীক্ষা করে দেখতে পারবে।

শুধু তাই নয়, এই মিশনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে প্রাণের অস্তিত্ব যাচাইয়ের চেষ্টাটি। সেটি হচ্ছে মিশনের মহাকাশযানটির একটি কনটেইনারে তিন কেজি আলুর বীজ এবং সরিষাজাতীয় এক ধরনের ফুলের বীজ ও রেশমগুটির ডিম পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমে চাঁদে জীব বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালানো হবে। এ জন্য চাঁদে কৃত্রিম পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে ‘চাঁদের ছোট জীবমণ্ডল’ নামের এই নকশাও পাঠানো হয়েছে। চীনের ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনায় এ নকশা তৈরি করা হয়েছে।

চীনের চন্দ্রাভিযানের বৃহত্তম কর্মসূচি হিসেবে এই মিশনটি পাঠানো হয়েছে। এবারের মহাকাশযানটি হচ্ছে চাংই-৩-এর পরবর্তী সংস্করণ। ২০১৩ সালে চাংই-৩ মিশন চাঁদে পাঠিয়েছিল চীন। তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় চন্দ্র অভিযান ছিল কক্ষপথ থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করা। আর তৃতীয় ও বর্তমানের চতুর্থ অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে চাঁদের ওপরের অংশ নিয়ে গবেষণা।

চীন এখানেই থেমে যেতে চায় না। এরপর তারা আরো দুটি মিশন চাঁদে পাঠাতে চায়। চাংই-৫ ও চাংই-৬ নামের ভবিষ্যৎ মিশন দুটির লক্ষ্য হবে চাঁদ থেকে সংগৃহীত পাথর আর মাটির নমুনা পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনে গবেষণাগারে জোগান দেওয়া। দেশটি ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে তাঁরা চাঁদে মানুষ পাঠাবে এবং নিজস্ব মহাকাশকেন্দ্র স্থাপন করবে। সূত্র : বিবিসি, টাইম ও সি-নেট।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

শাহজাদপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের সাথে মতবিনিময় সভা
সিরাজগঞ্জে পুরোদমে চলছে কৃষিবান্ধব সোলার প্রকল্পের কাজ
সিরাজগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন
বেলকুচিতে বিএসটিআই অনুমোদন না থাকায় টেক্সটাইল মিলকে জরিমানা
বেলকুচিতে পুষ্টি বিষয়ক সমন্বয় কমিটির দ্বি-মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক-অফিসিয়াল যোগাযোগ বাড়াতে প্রস্তুত বাংলাদেশ
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ
এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির
গবেষণায় আরো জোর দিতে বললেন কৃষিমন্ত্রী
রংপুর ও ভোলার চরের মানুষদের সুখবর দিলেন পরিবেশমন্ত্রী
স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক