শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কালোজিরা খাওয়া উচিত যে কারণে

কালোজিরা খাওয়া উচিত যে কারণে

কালোজিরা (ইংরেজি: fennel flower) একটি মাঝারি আকৃতির মৌসুমী গাছ, একবার ফুল ও ফল হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nigella Sativa Linn। 

এর স্ত্রী, পুরুষ দুই ধরণের ফুল হয়, রং সাধারণত হয় নীলচে সাদা (জাত বিশেষে হলুদাভ), পাঁচটি পাঁপড়ি বিশিষ্ট। কিনারায় একটা বাড়তি অংশ থাকে। তিন-কোনা আকৃতির কালো রং এর বীজ হয়। গোলাকার ফল হয় এবং প্রতিটি ফলে ২০-২৫ টি বীজ থাকে। 

কালোজিরা আয়ুর্বেদীয়, ইউনানী, কবিরাজী ও লোকজ চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। মশলা হিসাবে ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে, এটি পাঁচ ফোড়নের একটি উপাদান। বীজ থেকে পাওয়া যায় তেল।

কালোজিরা খুব পরিচিত একটি নাম। ছোট ছোট কালো দানাগুলোর মধ্যে সৃষ্টিকর্তা যে কী বিশাল ক্ষমতা নিহিত রেখেছেন তা সত্যি বিস্ময়কর। প্রাচীনকাল থেকে কালোজিরা মানবদেহের নানা রোগের প্রতিষেধক এবং প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। 

বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কালোজিরা ব্যবহার করবে, কেননা এতে একমাত্র মৃত্যৃ ব্যতীত সর্বরোগের মুক্তি এতে রয়েছে”। (সহীহ বুখারীঃ ১০/১২১)

কালোজিরার মধ্যে রয়েছে ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বো-হাইড্রেট ছাড়াও জীবাণু নাশক বিভিন্ন উপাদান সমূহ। কালোজিরার রয়েছে ক্যন্সার প্রতিরোধক কেরোটিন ও শক্তিশালী হর্মোন, প্রস্রাব সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক।

মস্তিষ্ক, চুল, টাক ও দাঁদ, কান, দাঁত, টনসিল, গলাব্যথা,পোড়া নারাঙ্গা বা বিসর্গ, গ্রন্থি পীড়া, ব্রণ, যাবতীয় চর্মরোগ, আঁচিল, কুষ্ঠ, হাড়ভাঙ্গা,ডায়াবেটিস, রক্তের চাড় ও কোলেষ্টরেল, কিডনী, মুত্র ওপিত্তপাথরী, লিভার ও প্লীহা,ঠান্ডা জনিত বক্ষব্যাধি,হৃদপিন্ড ও রক্তপ্রবাহ, অম্লশূল বেদনা, উদরাময়, পাকস্থলী ও মলাশয়, প্রষ্টেট, আলসার ও ক্যান্সার। চুলপড়া, মাথাব্যথা, অনিদ্রা,মাথা ঝিমঝিম করা, মুখশ্রী ও সৌন্দর্য রক্ষা, অবসন্নতা-দুর্বলতা, নিষ্কিয়তা ও অলসতা, আহারে অরুচি,মস্তিষ্কশক্তি তথা স্মরণশক্তি বাড়াতেও কালোজিরা উপযোগী। কালোজিরার যথাযথ ব্যবহারে দৈনন্দিন জীবনে বাড়তি শক্তি অজির্ত হয়। কালোজিরার তেল ব্যবহারে রাতভর আপনি প্রশান্তিপর্ন নিদ্রা যেতে পারেন। কালোজিরার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

আগেই বলেছি আমরা কালোজিরার টীংচার, বড়ি ও তেল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করছি। কখনো এককভাবে কখনো অন্য ওষুধের সঙ্গে সংমিশ্রিত করে রোগীক্ষেত্র প্রয়োগ করে থাকি। কালোজিরা তেলের সঙ্গে জলপাই তেল, নিম তেল, রসুনের তেল, তিল তেল মিশিয়ে নেয়া যায়। কালোজিরা আরক+কমলার রস। কালোজিরা + পুদিনা, চায়ের সঙ্গে কালোজিরা, কালোজিরা + রসুন + পেঁয়াজ, কালোজিরা + গাজর।

মাথা ব্যথায় কপালে উভয় চিবুকে ও কানের পার্শ্ববর্তি স্থানে দৈনিক ৩/৪বার কালোজিরার তেল মালিশ করুন। ৩ দিন খালি পেটে এক চামচ করে কালোজিরার তেল পান করুন। সচরাচর মাথাব্যথায় মালিশের জন্য রসুনের তেল, তিল তেল ও কালোজিরার তেলের সংমিশ্রণ মাথায় ব্যবহার করুন। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ন্যাট্রম মিউর ও ক্যালকেরিয়া ফসের মধ্যে লক্ষণ মিলিয়ে একটা হোমিওপ্যাথিক ও অপরটা বায়োকেমিক হতে প্রয়োগ করুন। প্রয়োজনবোধে প্রথমে বেলেডোনা ব্যবহার করে নিতে পারেন। লেবু দিয়ে সমস্ত মাথার খুলি ভালোভাবে ঘষুণ। ১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ও ভালোভাবে মাথা মুছে ফেলুন। তারপর মাথার চুল ভালোভাবে শুকানোর পর সম্পুর্ন মাথার খুলিতে কালোজিরার তেল মালিশ করুন। ১ সপ্তাতেই চুলপড়া বন্ধ হবে। মাথার যন্ত্রনায় কালোজিরার তেলের সঙ্গে পুদিনার আরক দেয়া যায়। এক্ষেত্র পুদিনার টীংচার রসুনের তেল, তিলতেল, জলপাই তেল ও কালোজিরার তেল একসঙ্গে মিশিয়েও নেয়া যেতে পারে।

বুকে ও পিঠে কালোজিরার তেল মালিশ করুন। এক্ষেত্রে হাঁপানীতে উপকারী অন্যান্য মালিশের সঙ্গে এটা মিশিয়েও নেয়া যেতে পারে। রীতিমতো হোমোওপ্যাথিক ওষুধ আভ্যন্তরীন প্রয়োগ। চা চামচে ১ চামচ কালোজিরার তেল ও ১০০ গ্রাম পুদিনা সিদ্ধ ১০দিন সেব্য। পাশাপাশি ক্যালকেরিয়া ফস ১২এক্স, ৩০এক্স দিনে ৩ বার ৪ বড়ি করে। সামান্য ঈষদোষ্ণ পানিসহ সেবন। কালোজিরার টীংচার ও পুদিনার টীংচারের মিশ্রণ দিনে ৩ বার ১৫-২০ ফোটা করে আহারের ১ঘন্টা আগে এবং ১ ঘন্টা পরে ক্যালকেরিয়া ফস ১২এক্স ও ৪বড়ি করে। প্রয়োজন বোধে ক্যালি ফস ১২এক্স ও একসঙ্গে দেয়া যেতে পারে।

কালোজিরার চূর্ণ ও ডালিমের খোসাচূর্ণ মিশ্রন, কালোজিরার তেল ডায়াবেটিসে উপকারী। রোগীর অবস্থানুযায়ী অন্যান্য হোমিওপ্যাথিক মাদার ও ভেষজসহ ব্যবস্থায়। কিডনির পাথর ও ব্লাডার ২৫০ গ্রাম কালোজিরা ও সমপরিমান বিশুদ্ধ মধু। কালোজিরা উত্তমরূপে গুড়া করে মধুর সঙ্গে মিশ্রিত করে দুই চামচ মিশ্রন আধাকাপ গরম পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন আধা চা কাপ পরিমাণ তেলসহ পান করতে হবে। কালোজিরার টীংচার মধুসহ দিনে ৩/৪ বার ১৫ ফোটা করে সেবন। পযায়ক্রমে বার্বারিস মুল আরক বা নির্দেশিত হলে অন্য কোনো হোমিও অথবা বায়োকেমিক ওষুধের
পাশাপাশি।

মেদ ও হৃদরোগ/ধমনী সংকোচন: চায়ের সঙ্গে নিয়মিত কালোজিরা মিশিয়ে অথবা এর তেল বা আরক মিশিয়ে পান করলে হৃদরোগে যেমন উপকার হবে, তেমনি মেদ ও বিগলিত হবে। অ্যাসিডিটি ও গ্যাসষ্ট্রিকে এককাপ দুধ ও এক বড় চামচ কালোজিরার তেল দৈনিক ৩বার ৫-৭ দিন সেবনে আরোগ্য হয়।

চোখের পীড়ায় রাতে ঘুমোবার আগে চোখের উভয়পাশে ও ভুরুতে কালোজিরার তেল মালিশ করুন এবং এককাপ গাজরের রসের সঙ্গে একমাস কালোজিরা তেল সেবন করুন। নিয়মিত গাজর খেয়ে ও কালোজিরা টীংচার সেবনে আর তেল মালিশে উপকার হবে। প্রয়োজনে নির্দেশিত হোমিও ও বায়োকেমিক ওষুধ সেবন। 

উচ্চ রক্তচাপে যখনই গরম পানীয় বা চা পান করবেন তখনই কালোজিরা কোনো না কোনো ভাবে সঙ্গে খাবেন। গরম খাদ্য বা ভাত খাওয়ার সময় কালোজিরার ভর্তা খান। এ উভয় পদ্ধতির সঙ্গে রসুনের তেল সঙ্গে নেন। সারা দেহে রসুন ও কালোজিরার তেল মালিশ করুন। কালোজিরা, নিম ও রসুনের তেল একসঙ্গে মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করুন। ভালো মনে করলে পুরাতন রোগীদের ক্ষেত্রে একাজটি ২/৩ দিন অন্তরও করা যায়।

ডায়রিয়া সেলাইন ও হোমিও ওষুধের পাশাপাশি ১ কাপ দই ও বড় এক চামচ কালোজিরার তেল দিনে ২ বার ব্যবস্থেয়। এর মুল আরকও পরীক্ষনীয়। জ্বরে সকাল-সন্ধায় লেবুর রসের সঙ্গে ১ বড় চামচ কালোজিরা তেল পান করুন আর কালোজিরার নস্যি গ্রহন করুন। কালোজিরা ও লেবুর টীংচার (অ্যাসেটিক অ্যাসিড) সংমিশ্রন করেও দেয়া যেতে পারে। যৌন-দুর্বলতা কালোজিরা চুর্ণ ও যয়তুনের তেল (অলিভ অয়েল), ৫০ গ্রাম হেলেঞ্চার রস ও ২০০ গ্রাম খাটি মধু = একত্রে মিশিয়ে সকাল খাবারের পর ১ চামচ করে সেব্য। কালোজিরার মূল আরক, হেলেঞ্চা মুল আরক, প্রয়োজনীয আরো কোন মুল আরক অলিভ অয়েল ও মধুসহ পরীক্ষনীয়। স্ত্রীরোগ, প্রসব ও ভ্রুন সংরক্ষণ কালোজিরা মৌরী ও মধু দৈনিক ৪ বার সেব্য।

স্নায়ুবিক উত্তেজনায় কফির সঙ্গে কালোজিরা সেবনে দুরীভুত হয়। চেহারার কমনীয়তা ও সৌন্দর্যবৃদ্ধি অলিভ অয়েল ও কালোজিরা তেল মিশিয়ে অঙ্গে মেখে ১ ঘন্টা পর সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। উরুসন্ধি প্রদাহ স্থানটি ভালভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিয়ে ৩দিন সন্ধায় আক্রান্ত স্থানে কালোজিরা তেল লাগান সন্ধ্যায়, সকালে ধুয়ে নিন। ছুলি/শ্বেতী আক্রান্ত স্থানে আপেল দিয়ে ঘষে কালোজিরা তেল লাগান। ১৫দিন হতে ১মাস। আঁচিল হেলেঞ্চা দিয়ে ঘষে কালোজিরা তেল লাগান। হেলেঞ্চা মুল আরক মিশিয়ে নিলেও হবে। সঙ্গে খেতে দিন হোমিও ওষুধ। পিঠ ও বাত আক্রান্ত পিঠে ও অন্যান্য বাতের বেদনায় কালোজিরার তেল মালিশ করুন। খেতে দিন কোনো নির্বাচিত হোমিওপ্যাথি ওষুধ। সকল রোগের প্রতিষেধক মধুসহ প্রতিদিন সকালে কালোজিরা সেবনে স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও সকল রোগ মহামারী হতে রক্ষা পাওয়া যায়। নিয়মিত কালোজিরা সেবনে চুলের গোড়ায় পুষ্টি ঠিকমতো পায়, ফলে চুলের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং চুল পড়া বন্ধ হয়। নিয়মিত অল্প পরিমাণ কালোজিরা খেলে মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রক্ত সঞ্চালন ও বৃদ্ধি সঠিকভাবে হয় এবং সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে। 

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

শাহজাদপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের সাথে মতবিনিময় সভা
সিরাজগঞ্জে পুরোদমে চলছে কৃষিবান্ধব সোলার প্রকল্পের কাজ
সিরাজগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন
বেলকুচিতে বিএসটিআই অনুমোদন না থাকায় টেক্সটাইল মিলকে জরিমানা
বেলকুচিতে পুষ্টি বিষয়ক সমন্বয় কমিটির দ্বি-মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক-অফিসিয়াল যোগাযোগ বাড়াতে প্রস্তুত বাংলাদেশ
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ
এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির
গবেষণায় আরো জোর দিতে বললেন কৃষিমন্ত্রী
রংপুর ও ভোলার চরের মানুষদের সুখবর দিলেন পরিবেশমন্ত্রী
স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক