করোনাভাইরাস আমাদের নতুন এক দুনিয়া চিনিয়েছে। এতদিন আমরা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছি। কিন্তু এখন অনেকটা বাধ্য হয়েই যোগাযোগ বজায় রাখার জন্য ব্যবহার করছি। লকডাউনের মানুষ এখন গৃহবন্দি।
তাই সমাজে চলাফেরা করে যে যোগাযোগটা এতদিন ছিল সেটা এখন সীমিত। তাই বেড়েছে ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ। যে মানুষ রোজ নয়টা পাঁচটা অফিস করতেন। তিনিই এখন ঘুম থেকে উঠেই ল্যাপটপে চোখ রাখেন।
ল্যাপটপেই সেরে নেন অফিসের যাবতীয় কাজ। যে ছেলেটা রোজ সকালে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে স্কুলের পানে ছুটতে। সে এখন স্মার্টফোনের ডিসপ্লেতে তাকিয়ে অনলাইন ক্লাশে অংশ নিচ্ছে। করোনা গেলে এই অভ্যাসটা পুরোপুরি চলে যাবে এমনটা ভাবা অবান্তর। বরং করোনা গেলেও অনেকেরই মধ্যে রয়ে যাবে।
অফিস-আদালতের কাজ, স্কুল-কলেজের ক্লাশ এখন জুমের মতো ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপেই হচ্ছে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয় আগামী বছর পর্যন্ত ফিজিক্যাল ক্লাশ বন্ধ করার চিন্তা ভাবনা করছে। এতদিন ডিজিটাল এবং অ-ডিজিটাল পাঠদানে কেবল মাত্রাগত পার্থক্য ছিল। এবার ডিজিটাল পাঠদান পুরোপুরি পূর্ণতা পাচ্ছে। এসবই ইন্টারনেটে সুফল।
আগে চোরর গৃহস্থের বাড়ি সিঁধ কেটে চুরি করতো। বাসা-বাড়িতে হতো ডাকাতি। রাস্তা ঘাটে হতো ছিনতাই। কিন্তু এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় এসব চুরির ধারণা বদলে গেছে। কিন্তু অন্যেরটা ছিনিয়ে নেয়ার প্রবণতা ঠিকই আছে। আর তাইতো ভার্চুয়ালে হানা বেড়েছে। শিশুদের ক্লাস চলাকালীন পর্দায় অশ্লীল ছবি শেয়ার করা হচ্ছে। গম্ভীর আলোচনার ভেতর হাস্যকর মন্তব্য শোনা যাচ্ছে। ফলে বিঘ্ন যা ঘটার তা ঘটছেই।
জুম অ্যাপের মাধ্যমে স্কুলে পাঠদান নিষিদ্ধ করেছে সিঙ্গাপুরের সরকার। অপর পক্ষে, ব্যবহারকারীদের তরফেও ভ্রান্তির শেষ নেই। অ্যাপের পক্ষ থেকে যেমন ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবহারকারীদেরও এই মাধ্যম সম্পর্কে অবগত হতে হবে।
কোভিড-১৯’এর আপৎকালীন পরিস্থিতি নিশ্চিতভাবেই এক দিন মিটে যাবে। কিন্তু এই পরিবর্তনগুলো চিরস্থায়ী হবে। মানুষের যাত্রা শুরু হবে নতুন এক দুনিয়ায়। যেখানে কেউ কাউকে বাস্তবে দেখবে না। কিন্তু তার উপস্থিতি বহুদূর থেকেও জানান দেবে।
কিছুই চিরস্থায়ী নয়। সৃষ্টির নিয়মে সব কিছুরই শেষ রয়েছে। করোনার শেষ কবে? সেটা সুনিশ্চিত ভাবে কেউই বলতে পারছেন না। বলা যায় বিশ্বজুড়ে অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা যে অনেক কিছু শেষ করে দিলো তাতে সন্দেহ নেই। আশা ভরসা, সম্ভবনা তো বটেই! বহু বদঅভ্যাস বদলে দিয়েছে মারণ এই সংক্রমণ। সমাজতত্তবিদরা বলতে শুরু করেছেন, করোনা পরবর্তী বিশ্বের ছবিটাই বদলে যাবে।
আলোকিত সিরাজগঞ্জ