এই উপমহাদশে ক্রিকেট শক্তির দিক দিয়ে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। দেশটির জাতীয় ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রতিনিধিত্ব করে আসছে। তারা বেঙ্গল টাইগার নামেও পরিচিত। দলটি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) দ্বারা পরিচালিত।
দেশটি আইসিসি'র টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিক মর্যাদা প্রাপ্ত স্থায়ী সদস্য দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত। ইতিপূর্বে আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতে খেলে দল হিসেবে তাদের সামর্থের জানান দিয়েছে বহুবার।
দীর্ঘ পথচলার ইতিহাস
আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয় ১৯৭২ সালে। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে নিজস্ব ক্রিকেট খেলা আয়োজনের ব্যবস্থা গড়ে উঠে। এ সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেট প্রতিযোগিতা শুরু হয় বাংলাদেশে।
১৯৭৯ সালে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ ঘটে। সেবার ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে আবির্ভাব হয় নতুন এক নক্ষত্র বাংলাদেশের।
এরপর ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ প্রথম একদিনের ম্যাচ খেলে এবং ১৯৯৭ সালে কেনিয়াকে শেষ বলে হারিয়ে আইসিসি ট্রফি জেতার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।
বিশ্বকাপে পাকিস্তান এবং স্কটল্যান্ডকে পরাজিত করে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দেয় বাংলাদেশ। পরের বছরেই টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে আবির্ভাব হয় বাংলাদেশের। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ মর্যাদার খেলা টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ ছিলো ভারত।
ইতিমধ্যে দেশটি বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, তারপর পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ, ভারত এবং সাউথ আফ্রিকাকে সিরিজ হারানোর মতো সাফল্য উজ্জল করে জ্বলবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে।
বিশ্বকাপে দলীয় পরিসংখ্যান
১৯৯৯ থেকেই বিশ্বকাপে অংশ নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আর এই পর্যন্ত ক্রিকেট দল সর্বমোট ৫টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলো ২০১৫ বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত উঠতে পারে বাংলাদেশ দল। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ মোট ম্যাচ খেলে ৩৩টি। জয় ১১টি। পরাজয় ২০টি। ফলাফল হয়নি ২টিতে।
বিগত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ
১৯৯৯ সালে প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে এসেই বাংলাদেশ সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান কে হারিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে হইচই ফেলে দেয়। এছাড়াও স্কটল্যান্ডকে হারায়। মোট ৫ ম্যাচ খেলে ২টি তে জয়লাভ করে বাংলার টাইগাররা। ১ম পর্বেই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শেষ হলেও ১২ দলে বাংলাদেশ ৯ম স্থান নিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করে।
এরপর ২০০৩ বিশ্বকাপ। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ আসর ছিল আফ্রিকা, কেনিয়া ও জিম্বাবুয়েতে। ৬ ম্যাচ খেলে ৫টাতেই হারে টাইগাররা, অন্যটি পরিত্যক্ত হয়। প্রাপ্তির খাতা শূন্য থাকা এই টুর্নামেন্টে ১৪ দলের মধ্যে ১৩ তম হয়েই টুর্নামেন্ট শেষ করেছে সেবার ।
পরবর্তী ২০০৭, বিশ্বকাপের ৯ম আসর। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল বিশ্বকাপ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বীপপুঞ্জে অনুষ্ঠিত হওয়া এই বিশ্বকাপ। এখন পর্যন্ত ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচাইতে বেশি দল অংশগ্রহণ করে ঐ বিশ্বকাপে।
১৬ দলের টুর্নামেন্টে ৪টি করে দল ৪ ভাগে ভাগ হয়ে খেলে। বাংলাদেশ ১ম রাউন্ডে তৎকালীন ক্রিকেট বিশ্বের প্রভাবশালী ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপ আসর থেকে ছিটকে দেয়। সুপার এইটের খেলায় বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকে হারায়। ৯ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ ৩ টিতে জয় লাভ করে ও ৬ ম্যাচ হেরে যায়। ১৬ দলের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ৭ম অবস্থানে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করে।
২০১১ সালে যৌথভাবে বিশ্বকাপের ১০ম আসর বসে বাংলাদেশ, ভারত, ও শ্রীলংকায়। স্বাগতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ তেমন ভাল করতে পারেনি বিশ্বকাপের এই আসরে। প্রথম রাউন্ড খেলেই বিদায় নেয় সাকিবের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। এই আসরের একমাত্র প্রাপ্তি ছিল ইংল্যান্ডকে হারানো। ৬ ম্যাচ খেলে ৩টিতে জয় ও ৩ ম্যাচে হারে বাংলাদেশ। সেবার ১৪ দলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯ নাম্বারে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা আসর ছিল ২০১৫ বিশ্বকাপের আসরটি। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এর বিরুদ্ধ কন্ডিশনেও দারুণ ক্রিকেট খেলে বাংলাদেশ। রুবেলের স্বপ্নিল বোলিং আর ম্যাশের ক্যারিশম্যাটিক অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ ইংল্যান্ড কে হারিয়ে প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে।
কোয়ার্টার ফাইনালে বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ের শিকার হয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বাদ পড়ে যায় ম্যাশ বাহিনী। তবুও এই আসর টি বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা আসর হিসেবে বিবেচিত। ৭ ম্যাচ খেলে ৩ ম্যাচে জয়লাভ করে টিম টাইগার্স। বাকি ৩ ম্যাচে হার আর অন্যটি পরিত্যক্ত হয়।
দলীয় পারফরমেন্সঃ
সাল |
ম্যাচ |
জয় |
পরাজয় |
পরিত্যক্ত |
অধিনায়ক |
অবস্থান |
১৯৯৯ |
০৫ |
০২ |
০৩ |
০০ |
আমিনুল ইসলাম |
৯ম (১২টি দলের মধ্যে) |
২০০৩ |
০৬ |
০০ |
০৫ |
০১ |
খালেদ মাসুদ পাইলট |
১৩তম(১৪টি দলের মধ্যে) |
২০০৭ |
০৯ |
০৩ |
০৬ |
০০ |
হাবিবুল বাশার |
৭ম (১৬টি দেশের মধ্যে) |
২০১১ |
০৬ |
০৩ |
০৩ |
০০ |
সাকিব আল হাসান |
৯ম(১৪টি দেশের মধ্যে) |
২০১৫ |
০৭ |
০৩ |
০৩ |
০১ |
মাশরাফি মোর্ত্তজা |
জা৭ম(১৪টি দেশের মধ্যে) |
সর্বমোট |
৩৩ |
১১ |
২০ |
০২ |
বিশ্বকাপের দলীয় পরিসংখ্যান
সর্বোচ্চ রান |
৬৪০ (সাকিব) |
|
|
সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত রান |
১২৮ (মাহমুদুল্লাহ) |
|
|
সর্বোচ্চ দলীয় রান |
৩২২ (বিপক্ষ-স্কটল্যান্ড) |
|
|
সর্বনিম্ন দলীয় রান |
৩২ (বিপক্ষ-উইন্ডিজ) |
|
|
সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয় |
৩১৮ (বিপক্ষ-স্কটল্যান্ড) |
|
|
সর্বোচ্চ পার্টনারশীপ |
১৪১ (মুশি-রিয়াদ) |
|
|
সবচেয়ে ভালো ব্যাটিং গড় |
৫৬.৭১ (মাহমুদুল্লাহ) |
|
|
সবচেয়ে বেশি উইকেট |
২১ (সাকিব) |
|
|
বেস্ট বোলিং ফিগার |
৪/২১ (শফিউল) |
|
|
সবচেয়ে বেশী ক্যাচ ধরেছেন |
৯টি (তামিম ইকবাল) |
|
|
বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন |
মুশফিক, তামিম, সাকিব(২১টি) |
|
|
সবচেয়ে বেশি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন |
|
আলোকিত সিরাজগঞ্জ