শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও ওয়াসার এমডি হচ্ছেন তাকসিম এ খান?

আবারও ওয়াসার এমডি হচ্ছেন তাকসিম এ খান?

ওয়াসাকে যেন ছাড়তেই চাইছেন না প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। আজীবন পদে থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বহুল আলোচিত-সমালোচিত ওয়াসার এই এমডি। সাম্প্রতিক সময়ে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও ষষ্ঠবারের মতো নিজের আসনটি ধরে রাখতে বিভিন্ন কৌশল খাটাচ্ছেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে নিয়োগের মেয়াদ বাড়াতে আজ শনিবার বিকালে ওয়াসার ৯৭ তম বোর্ডসভা ডেকেছেন তিনি। তাকসিম এ খান দীর্ঘদিন একই পদে আসীন থাকায় দুনীর্তি ও অনিয়ম ঝেঁকে ধরেছে ওয়াসাকে। সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছে প্রকাশ্যে অভিযোগ জানিয়েছেন। ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ওয়াসার এমডির ওপর অনাস্থা প্রকাশ করেছেন; এবং খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের ওপর ন্যস্ত করার আহবান জানিয়েছেন। এত অভিযোগের পরও কাদের ম্যানেজ করে প্রকৌশলী তাকসিম এ খান দীর্ঘদিন এমডির পদ আকঁড়ে ধরে আছেন এ দিয়ে খোদ সরকারের ওপর মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে,  ঢাকা ওয়াসায় কর্মরত কেউই যেন তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে না পারে সেজন্য অলিখিত একটি আইনও তিনি করে রেখেছেন। যারাই তার অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজন-প্রীতিসহ অভিযোগের কথা বলবে অথবা যে বা যারা তার ইচ্ছের বাইরে যাচ্ছে তাকেই প্রশাসনিক নানা খড়গ সহ্য করতে হচ্ছে। অবস্থা এমন যে, যাদের তিনি সন্দেহ করছেন তাদের করোনা মহামারির মধ্যেও প্রতিনিয়ত ওএসডি, বদলি, ডিমোশন, চাকরি চ্যুতি করা হচ্ছে। সম্প্রতি তিনি ওয়াসার বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে ভার্চুয়াল মিটিং করছেন। এসব বৈঠকে তিনি স্পষ্ট করেই বলছেন, যে বা যারা তার কথা শুনবে না তারা মরবে (বিপদে পড়বে)। এছাড়া ওয়াসায় বিভিন্ন গ্রুপ সৃষ্টি করে তার পক্ষে প্রচারণাও চালাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে এমডি পদে থেকে তাকসিম এ খান ঢাকা ওয়াসায় রাম রাজত্ব কায়েম করেছেন। তিনি আইনের ধার ধারেন না। নিজের ইচ্ছে মতোই সব কিছু করছেন। যখন ইচ্ছে বিদেশ যাচ্ছেন। যতদিন ইচ্ছে থাকছেন। ওয়াসার বোর্ড সদস্যদেরও জানানোর নূন্যতম প্রয়োজন মনে করেন না।  সূত্র মতে, টানা ১১ বছর ধরে ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে আসীন থাকা তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে নিয়োগ ও প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ দুদক পর্যন্ত গড়িয়েছে। বিভিন্ন কমর্কান্ড নিয়ে বিতর্ক থাকলেও একটানা ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড গড়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, ওয়াসার অনেক বিষয়েই অসংগতি আছে। তিনি (বর্তমান এমডি) কিভাবে বারবার নিয়োগ পেয়েছেন, তা বলা মুশকিল। এগুলো আমার দায়িত্ব নেওয়ার আগে ঘটেছে। ওয়াসায় দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা দূর করতেই হবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তাকসিম এ খান ওয়াসার এমডি হিসেবে প্রথম নিয়োগ পান মহাজোট সরকারের সময় ২০০৯ সালের ১৩ অক্টোবর। এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব শর্ত ও অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়, সে শর্তের কোনোটিই তাকসিম এ খানের নেই। এরপরও রহস্যজনকভাবে ওয়াসা বোর্ড তাকসিম এ খানকেই নিয়োগ দেয় এমডি হিসেবে। কিন্তু এরপর আরও চারবার তিনি নিয়োগ পান। যার কোনো ভিত্তি নেই বলে গুঞ্জন রয়েছে। প্রথমবারের নিয়োগ সংক্রান্ত নথি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এমডি নিয়োগের জন্য ওয়াসা বোর্ড ২০০৯ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনে অথবা সিনিয়র পর্যায়ে সাধারণ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ২০ বছরের আবশ্যিক অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। ওই সময় এই পদের জন্য তাকসিম এ খানের জমা দেওয়া জীবনবৃত্তান্ত অনুযায়ী, পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনে তার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না।

জানা যায়,  শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ওয়াসার কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় ১৩ সদস্যের ওয়াসা বোর্ড। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকল্প বোর্ডে পাস হয়। কিন্তু বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে বারবারই পুনর্নিয়োগ নিয়েছেন তাকসিম এ খান। ২০১২ সালের ১৩ অক্টোবর ওয়াসার এমডি হিসেবে প্রথম দফায় তিন বছরের নিয়োগের মেয়াদ শেষ হলে স্বীয় পদে থাকতে যারপরনাই তদবির শুরু করেন তাকসিম এ খান। ওয়াসা আইনকে পাশ কাটিয়েই ওয়াসা বোর্ড তিন বছরের পরিবর্তে এক বছরের জন্য তাকসিম এ খানকে দ্বিতীয়বারের মতো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। ২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। তারপর আবার তোড়জোড় শুরু করেন তাকসিম এ খান। আবারও ওয়াসার আইন ও নিয়ম ভেঙে কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি এবং পরীক্ষা ছাড়াই তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের অক্টোবরে পঞ্চমবারের মতো নিয়োগ পেতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেন তাকসিম এ খান। আর এ নিয়োগে ওয়াসা বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠানোর অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।

এমডি নিয়োগ বিষয়ে কোনো ধরনের বোর্ডসভা অনুষ্ঠিত না হলেও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে তাকসিমের মেয়াদ নতুন করে এক বছর বাড়ানোর সুপারিশ করে ফাইল পাঠানো হয়। ওয়াসা বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত না হলেও তাকসিম এ খানের পুনর্নিয়োগের একটি ফাইল ওয়াসা থেকে ২৪ আগস্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ করা সে ফাইলে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা ওয়াসার কার্যক্রমের গতিশীলতা অব্যাহত রাখতে ওয়াসা বোর্ডের ২২৫তম সভার সুপারিশে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইনের ধারা ২৮(১), (২) অনুযায়ী প্রকৌশলী তাকসিম এ খানকে তার বর্তমান চাকরির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর অথবা যোগদানের তারিখ থেকে এক বছরের জন্য নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করা যেতে পারে। তবে এ ধরনের নির্দেশনা পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ওই সময়ের বোর্ড চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, তার বোর্ডের সুপারিশে এমডি নিয়োগ হয়নি। তাকসিম খানের পঞ্চম দফার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৪ অক্টোবর। এখন ষষ্ঠ দফায় নিয়োগের জন্য তাকসিম এর খান নানাভাবে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

ষষ্ঠ দফায় চাকরির মেয়াদ বাড়াতে ইতিমধ্যে ওয়াসার কয়েকটি গ্রুপকে দিয়ে প্রচারণাও চালাচ্ছেন তিনি। গত ১৪ আগস্ট ঢাকা ওয়াসা প্রকৌশলি সমিতি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন তাকসিম এ খানের পক্ষ নিয়ে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, কিছু স্বার্থন্বেষী মহল ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচার চালাচ্ছে। এতে ওয়াসার সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। ওয়াসার এমডি একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান। তিনি কখনোই দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোষ করেন নাই। জিরো টলারেন্স নীতিতে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে ওয়াসাকে পরিচালনা করছেন।  

একদিকে যখন একটি পক্ষ এমডির জন্য কাজ করছে তখন ওয়াসা কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যানারে আরেকটি অংশ এমডির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার মানসে নিজের আখের গোছানোর এজেন্ডা বাস্তবায়নেই বেশি তৎপর রয়েছেন। এর অংশ হিসেবে এমডি গড়ে তুলেছেন ‘আরএএমএস’ বাহিনীও। এ বাহিনী সরকার বিরোধীদের অবৈধ সুযোগ সুবিধা দিতেই বেশি ব্যস্ত। এই বাহিনীর মাধ্যমে এমডি প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে অসত্য ও বানোয়াট তথ্য প্রদান করে যাচ্ছে। এমডি সরকার সমর্থকদের নিপীড়নের মধ্যে ফেলে সরকার বিরোধীদের পদোন্নতিসহ অবৈধ সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। তারা এ বিষয়ে সরকারের সদয় দৃষ্টি কামনা করেন।

গত বছর ওয়াসার ১১টি দুর্নীতিগ্রস্ত খাত চিহ্নিত করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওয়াসার প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয় না। নানা প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পের নকশা ও বিবরণ অনুযায়ী কাজ করা হয় না। প্রকল্পে পরামর্শক ও ঠিকাদার নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমন কিছু শর্ত আরোপ করা হয়, যাতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ঠিকাদার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেন। এ ছাড়া ঠিকাদার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট পদ্ধতি ও রাজনৈতিক পরিচয় এবং কাজ পাওয়ার বিনিময়ে ঘুষ লেনদেন বর্তমানে একটি প্রচলিত প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুদকের প্রতিবেদন বলছে, ব্যক্তি মালিকানাধীন গভীর নলকূপ স্থাপন, মিটার রিডিং ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও ব্যাপক দুর্নীতি হয়। এত দুনীর্তি, অনিয়ম, অভিযোগের দায় নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো প্রকৌশলী তাকসিম এ খান নিজের নিয়োগের মেয়াদ বাড়াতে পারেন কিনা- সেটাই এখন দেখার বিষয়।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এবার তাকসিম এ খান যতই চেষ্টা করুক না কেন- তার মেয়াদ আর বাড়ছে না। কারণ বিষয়টি ইতোমধ্যে উপর মহলে চলে গেছে। 

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর
ঈদের দিন ৩ হাসপাতাল পরিদর্শন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
আয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
জুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেই