শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অলসতা দূর করার আট আমল

অলসতা দূর করার আট আমল

অলসতা মানে কর্মবিমুখতা। নিষ্ক্রিয়, কর্মবিমুখ, মন্থর, উদাস কিংবা উদ্যমহীন ব্যক্তিকে অলস বলা হয়। আলসেমি নিজের ও সমাজের অবক্ষয় ডেকে আনে। অলসতা ব্যক্তি ও জাতির উন্নতির অন্তরায়। অলসতা দূর করার আটটি আমল এখানে উল্লেখ করা হলো—

এক. দীর্ঘ আশা ইবাদতে অলসতা তৈরি ও তাওবার ক্ষেত্রে গড়িমসি তৈরি করে। অনেক মুসলমান না জেনে আল্লাহ তাআলার রহমত ও মাগফিরাতের ভুল অর্থ করে থাকে। একদিকে তারা বেপরোয়াভাবে পাপকাজে লিপ্ত হয়, অন্যদিকে আল্লাহ তাআলার রহমত ও মাগফিরাতের আশা করতে থাকে। এটা স্পষ্ট ভ্রান্তি। এটি মানুষকে বিপথগামী করে এবং তাদের ধ্বংসের মুখে নিয়ে যায়। কেননা আল্লাহ তাআলা যেমন ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু, তেমনি তিনি কঠিন শাস্তিদাতাও। পবিত্র কোরআনে অনেক স্থানে এ বিষয়ে আল্লাহ আমাদের সাবধান করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘আমার বান্দাদের বলে দাও, আমি তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর আমার শাস্তি—সেটাও অতি মর্মন্তুদ!’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৪৯-৫০)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে : ‘হা-মিম। এই কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর পক্ষ থেকে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন, তাওবা কবুল করেন। যিনি শাস্তিদানে কঠোর, শক্তিশালী।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ১-৩) এ জন্য ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ আকিদা ও বিশ্বাস হলো, আল্লাহ তাআলাকে ভয় করতে হবে আশা ও ভয়ের সমন্বয়ে।

দুই. এখনই নেক আমলে মনোযোগ দিন। আরো বয়স হলে আমল করব—এমন চিন্তা পরিহার করুন। ইরশাদ হয়েছে, তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং এমন জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার প্রশস্ততা হবে আকাশসমূহ ও জমিনসম। তা মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, সাতটি বিষয়ের আগে তোমরা দ্রুত নেক আমল করো। তোমরা কি এমন দারিদ্র্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদের সব কিছু ভুলিয়ে দেবে? নাকি ওই ঐশ্বর্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদের দর্পিত বানিয়ে ছাড়বে? নাকি এমন রোগের জন্য অপেক্ষা করছ, যার আঘাতে তোমরা জরাজীর্ণ হয়ে পড়বে? নাকি সেই বার্ধক্যের অপেক্ষায় আছ, যা তোমাদের অথর্ব করে ছাড়বে? নাকি মৃত্যুর, যা আকস্মিক এসে পড়বে? নাকি দাজ্জালের, অনুপস্থিত যা কিছুর জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে, সে হচ্ছে সেসবের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। নাকি কিয়ামতের অপেক্ষা করছ, যে কিয়ামত সর্বাপেক্ষা বিভীষিকাময় ও সর্বাপেক্ষা তিক্ত হবে? (তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৬)

তিন. অলসতার অন্যতম কারণ চেতনা ও স্পৃহা না থাকা। নিজের মধ্যে প্রেরণা, চেতনা ও উদ্দীপনা জাগাতে মনীষীদের জীবনী ও  বাণী পড়ুন। অলসতা দূর করতে খুব বেশি কাজে লাগবে এগুলো। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘পূর্বপুরুষদের কাহিনিতে বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। এটা (কোরআনের বাণী) মিথ্যা রচনা নয়; বরং তা আগের ধর্মগ্রন্থগুলোর সমর্থক, সব কিছুর বিশদ বিবরণ এবং ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্য পথ নির্দেশ ও রহমত।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১১১)

চার. তৎপর, উদ্যমী ও কর্মচঞ্চল মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা করুন। নেককার মানুষের সংস্পর্শ গ্রহণ করুন। এতে নিজের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১৯)

পাঁচ. হিজের হিম্মত ও মনোবল বৃদ্ধি করুন। ভাবুন, অলসতা, উদ্যমহীনতা ও উদাসীনতা ব্যর্থ মানুষের স্বভাব। গ্রামবাংলার এই প্রবাদ মনে রাখুন—‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা।’

সুতরাং আমি কেন শয়তানের শিকারে পরিণত হয়ে ব্যর্থদের কাতারে শামিল হব। তারপর তাআউয (আউযুবিল্লাহ) শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে বেশি বেশি ‘আউজুবিল্লাহ’ ও ‘ইস্তেগফার’ পাঠ করুন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর কাছে শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিন থেকে বেশি উত্তম ও প্রিয়। তুমি ওই জিনিসে যত্নবান হও, যার মধ্যে তোমার উপকার আছে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও আর উৎসাহহীন (হিম্মতহারা) হয়ো না। (মুসলিম, হাদিস : ৪৮২২)

ছয়. গোটা জীবনকে এই মূলনীতির অধীনে নিয়ে আসুন যে আমি কোনো অহেতুক কাজ করব না; আমি কোনো অহেতুক কথা বলব না। এই প্রতিজ্ঞা আপনার জন্য নেক কাজ ও কল্যাণময় কাজ করা সহজ করে দেবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘একজন ব্যক্তির ইসলামের পরিপূর্ণতার একটি লক্ষণ হলো, তার জন্য জরুরি নয়—এমন কাজ সে ত্যাগ করে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২২৩৯)

সাত. ফজরের নামাজের প্রতি যত্নবান হোন। কেননা অলসতার কারণে ফজরের নামাজ না পড়তে পারলে এটাই হবে সারা দিনের আমলহীনতা, গুনাহমুখিতা ও অলসতার সূচনা। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায়, তখন তার গ্রীবাদেশে শয়তান তিনটি করে গাঁট বেঁধে দেয়; প্রত্যেক গাঁটে সে এই বলে মন্ত্র পড়ে যে তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি ঘুমাও। অতঃপর যদি সে জেগে ওঠে আল্লাহর জিকির করে, তাহলে একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি অজু করে, তবে তার আর একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি নামাজ পড়ে, তাহলে সমস্ত গাঁট খুলে যায়। আর তার প্রভাত হয় স্ফুর্তি ও ভালো মনে। নচেৎ সে সকালে ওঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে। (বুখারি, হাদিস : ১১৪২)

আট. অলসতা ও উদাসীনতা থেকে মুক্তির জন্য হাদিসে বর্ণিত দোয়া পড়ুন। যেমন—

চিন্তা ও পেরেশানির সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো—‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আউযুবিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযুবিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’

অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।

আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) চিন্তাযুক্ত অবস্থায় এই দোয়া পড়তেন। (বুখারি, হাদিস : ২৮৯৩) মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর
ঈদের দিন ৩ হাসপাতাল পরিদর্শন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
আয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
জুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেই