শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পাঠের ফজিলত

জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পাঠের ফজিলত

সূরা আল কাহাফ। পবিত্র কোরআনুল কারিমের ১৮তম সূরা, মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা- ১১০। কাহাফ মানে গুহা। এ সূরায় আসহাবে কাহাফ তথা ওই সব মুমিন যুবক যারা দ্বীনকে সংরক্ষণের জন্য নিজেদের কোনো এক পাহাড়ের একটি গুহায় আত্মগোপনে রেখেছিলেন। তাদের ঘটনা বর্ণিত হওয়ায় এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে সূরা আল কাহাফ।

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত নূর বর্ষিত হবে’। (মিশকাত ২১৭৫)

হজরত আনাস (রা.) বর্ণিত, এ পুর্ণাঙ্গ সূরাটি এক সঙ্গে নাজিল হয়েছে এবং এর সঙ্গে ৭০ হাজার ফেরিস্তা দুনিয়াতে আগমন করেছেন।

আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যেমনভাবে নাজিল করা হয়েছে, সেভাবে যে ব্যক্তি সূরা কাহাফ পড়বে, তার জন্য সেটা নিজের স্থান থেকে মক্কা পর্যন্ত আলো হবে এবং যে শেষ দশ আয়াত পড়বে, সে দাজ্জালের গণ্ডির বাইরে থাকবে এবং দাজ্জাল তার ওপর কোনোরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। (সুনানে নাসাঈ, হাদিস নম্বর : ১০৭২২)

সূরা আল কাহাফের শেষ দশ আয়াত

الَّذِينَ كَانَتْ أَعْيُنُهُمْ فِي غِطَاءٍ عَن ذِكْرِي وَكَانُوا لَا يَسْتَطِيعُونَ سَمْعًا
যাদের চক্ষুসমূহের উপর পর্দা ছিল আমার স্মরণ থেকে এবং যারা শুনতেও সক্ষম ছিল না।

أَفَحَسِبَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَن يَتَّخِذُوا عِبَادِي مِن دُونِي أَوْلِيَاءَ ۚ إِنَّا أَعْتَدْنَا جَهَنَّمَ لِلْكَافِرِينَ نُزُلًا
কাফেররা কি মনে করে যে, তারা আমার পরিবর্তে আমার বান্দাদেরকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করবে? আমি কাফেরদের অভ্যর্থনার জন্যে জাহান্নামকে প্রস্তুত করে রেখেছি।

قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُم بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا
বলুনঃ আমি কি তোমাদেরকে সেসব লোকের সংবাদ দেব, যারা কর্মের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত।

الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا
তারাই সে লোক, যাদের প্রচেষ্টা পার্থিবজীবনে বিভ্রান্ত হয়, অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করেছে।

أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَائِهِ فَحَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا
তারাই সে লোক, যারা তাদের পালনকর্তার নিদর্শনাবলী এবং তাঁর সাথে সাক্ষাতের বিষয় অস্বীকার করে। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়। সুতরাং কেয়ামতের দিন তাদের জন্য আমি কোন গুরুত্ব স্থির করব না।

ذَٰلِكَ جَزَاؤُهُمْ جَهَنَّمُ بِمَا كَفَرُوا وَاتَّخَذُوا آيَاتِي وَرُسُلِي هُزُوًا
জাহান্নাম-এটাই তাদের প্রতিফল; কারণ, তারা কাফের হয়েছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও রসূলগণকে বিদ্রূপের বিষয় রূপে গ্রহণ করেছে।

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের অভ্যর্থনার জন্যে আছে জান্নাতুল ফেরদাউস।

خَالِدِينَ فِيهَا لَا يَبْغُونَ عَنْهَا حِوَلًا
সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে স্থান পরিবর্তন করতে চাইবে না।

قُل لَّوْ كَانَ الْبَحْرُ مِدَادًا لِّكَلِمَاتِ رَبِّي لَنَفِدَ الْبَحْرُ قَبْلَ أَن تَنفَدَ كَلِمَاتُ رَبِّي وَلَوْ جِئْنَا بِمِثْلِهِ مَدَدًا
বলুনঃ আমার পালনকর্তার কথা, লেখার জন্যে যদি সমুদ্রের পানি কালি হয়, তবে আমার পালনকর্তার কথা, শেষ হওয়ার আগেই সে সমুদ্র নিঃশেষিত হয়ে যাবে। সাহায্যার্থে অনুরূপ আরেকটি সমুদ্র এনে দিলেও।

قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَىٰ إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَـٰهُكُمْ إِلَـٰهٌ وَاحِدٌ ۖ فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
বলুনঃ আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে।

বিশেষ করে জুমার দিনে সূরা আল কাহাফ পাঠ করতে বলা হয়েছে। এ সূরায় চারটি ঘটনা, চারটি বক্তব্য ও উপদেশ রয়েছে। যেমন-

সূরা আল কাহাফের ১ থেকে ৮ আয়াতে রয়েছে বক্তব্য। ৯ থেকে ২৬ আয়াতে আছে আসহাবে কাহাফের ঘটনা। ২৭ থেকে ৩১ আয়াতে আবার বক্তব্য এসেছে। ৩২ থেকে ৪৪ আয়াতে দুটি বাগানের মালিকের ঘটনা রয়েছে। এরপর আবার লম্বা বক্তব্য ও উপদেশ এসেছে ৪৫ থেকে ৫৯ আয়াতে।

এ সুরায় দুটি কাহিনি এসেছে ৬০ থেকে ১০১ আয়াতে। সে দুটি হলো হজরত মুসা (আ.) এবং খিজির (আ.) জ্ঞানীর ঘটনা ও জুলকারনাইন- সম্পর্কিত ঘটনা। আবার সূরা শেষ হয়েছে বক্তব্য ও উপদেশ দিয়ে।

সূরা আল কাহাফে গুহাবাসীর বিশ্বাসের ঘটনা

আসহাবে কাহাফের ঘটনা আমরা সবাই কমবেশি শুনেছি বা জানি। কয়েকজন যুবক আল্লাহ তাআলার প্রতি পূর্ণ ইমান আনার পর তারা একটি গুহার ভেতরে পৌঁছালেন। আল্লাহ তাদের সবাইকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। ঘুম ভাঙার পর তাদের একজনকে যখন খাবার কেনার জন্য শহরে পাঠানো হলো, তখন তিনি ভেবেছিলেন লোকজন হয়তো তাকে চিনে ফেলবে এবং তার ক্ষতি করবে। কিন্তু দেখা গেল কেউ তাকে চেনে না। শহরের লোকেরা তাকে এবং তার ব্যবহৃত পুরোনো মুদ্রা দেখে বিস্মিত হলো।

মূলত এ ঘটনায় আল্লাহ তার ওপর ভরসাকারী বান্দাদের কী করে চরম প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করেন, তা দেখানো হয়েছে।

সূরা আল কাহাফে বাগানের মালিকের সম্পদের ঘটনা

এক ব্যক্তির সুন্দর বাগান ছিল। তিনি ছিলেন অহংকারী, তার বন্ধুকে বলেছিলেন, ‘আমি তোমার থেকে উত্তম। কেননা, তোমার থেকে আমার বেশি সম্পদ, কর্মচারী ও সন্তান রয়েছে।’ (আয়াত ৩৪)

অহংকারী হয়ে আল্লাহর নিয়ামতের কথা ভুলে যাওয়ায় আল্লাহ তার বাগানগুলো ধ্বংস করে দিলেন। ঘটনাটি তাদের জন্য, যারা দুনিয়ার মোহে আল্লাহর নিয়ামতের কথা ভুলে যায়। তারা ভুলে যায় আল্লাহ ইচ্ছা করলেই তাদের কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিতে পারেন।

সূরা আল কাহাফে হজরত মুসা (আ.) ও খিজির (আ.) এর ঘটনা

হজরত মুসা (আ.) খিজির (আ.) এর সঙ্গে সফর করার সময় তিনটি ঘটনা সংঘটিত হয়। প্রথম ঘটনায় খিজির (আ.) একটি নৌকা ছিদ্র করে ফেলেন অথচ নৌকার মালিক বিনা ভাড়ায় তাকে নৌকায় উঠিয়ে ছিলেন। দ্বিতীয় ঘটনায় তিনি একটি নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করে ফেলেন। তৃতীয় ঘটনায় তিনি একটি দেয়াল উঠিয়ে দেন। হজরত মুসা (আ.) তিনটি ঘটনায় চুপ থাকতে পারেননি। খিজির (আ.) তিনটি ঘটনার ব্যাখ্যা করেন।

হজরত মুসা (আ.) বুঝতে পারলেন আল্লাহ যাকে খুশি তাকেই জ্ঞান দান করেন। যেহেতু সব জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ, তাই কারো জ্ঞান নিয়ে অহংকার করা উচিত নয়। খিজির (আ.) নিজেও বলেছেন, আমি আমার ইচ্ছায় কিছুই করিনি। (সূরা: আল হাহাফ, আয়াত: ৮২)

সূরা আল কাহাফে জুলকারনাইনের ঘটনা

জুলকারনাইন ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ণ ও সৎ বাদশাহ, তিনি পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত সফর করেছিলেন। দুই পর্বতের মাঝে তিনি এক জনগোষ্ঠীকে খুঁজে পেলেন। তারা তার কাছে ইয়াজুজ ও মাজুজের হাত থেকে রক্ষা পেতে একটি দেয়াল নির্মাণের আবেদন জানাল। জুলকারনাইন কাজটি করে দিতে সম্মত হলেন। তিনি তাঁর কাজ নিয়ে গর্ব করেননি। দেয়াল নির্মাণের পর তার দেওয়া ভাষণ কোরআনে এসেছে। ‘সে (জুলকারনাইন) বলল, এগুলো আমার মালিকের অনুগ্রহ, কিন্তু যখন আমার মালিকের নির্ধারিত সময় আসবে, তিনি এগুলো চূর্ণবিচূর্ণ করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেবেন, আর আমার প্রভুর ওয়াদাই চূড়ান্ত সত্য।’ (সূরা: আল কাহাফ, আয়াত: ৯৮)

চারটি ঘটনা থেকে চার রকম পরীক্ষার কথা জানা যায়। আসহাবে কাহাফের ঘটনা থেকে ধর্মবিশ্বাসের ওপর পরীক্ষা, দুটি বাগানের মালিকের ঘটনা থেকে সম্পদের ওপর পরীক্ষা, হজরত মুসা (আ.) ও খিজির (আ.) জ্ঞানী ব্যক্তির ঘটনা থেকে, জ্ঞানের পরীক্ষা ও জুলকারনাইনের ঘটনা থেকে ক্ষমতার পরীক্ষার বিষয়ে জানা যায়।

ইয়া আল্লাহ! আমাদের প্রতি জুমাবারে এই মহিমাম্বিত অসাধারণ সূরাটি পড়ার ও বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর
ঈদের দিন ৩ হাসপাতাল পরিদর্শন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
আয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
জুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেই