বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সফর মাসের কিছু বিশেষ আমল

সফর মাসের কিছু বিশেষ আমল

 

আরবি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস হলো মুহাররম। এই শব্দটি মূলত: নামবাচক বিশেষ্য নয়, বরং গুণবাচক বিশেষণ। ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে প্রাচীন মক্কার বছর গণনার দু’টি মাস ছিল। প্রথম সফর ও দ্বিতীয় সফর। মুহাররম ও সফরে ছানি একই নামের দ্বিবাচনিক রূপ দেখে তা সহজেই বুঝা যায়। 

প্রাচীন আরব বছরের প্রথম অর্ধ বছরে তিনটি মাস ছিল। যথা সফর রবি এবং জুমাদা। এই তিনমাসের প্রত্যেকটিতে দু’টি করে মাস ছিল। যেমন প্রথম সফর, দ্বিতীয় সফর। প্রথম রবি, দ্বিতীয় রবি। প্রথম জুমাদা এবং দ্বিতীয় জুমাদা। যেহেতু বছর শুরু দুই সফরের প্রথমটি অলঙ্ঘণীয় ও পবিত্র মাসগুলোর অন্যতম ছিল, তাই এর গুণবাচক আখ্যা দেয়া হয়েছিল ‘আল মুহাররম’। ধীরে ধীরে এই গুণবাচক মুহাররম নামটি প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে। আর দ্বিতীয় সফর মাসটি সফর মাস নামেই অভিহিত হয়ে আসছে। এর কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং হবেও না।

আরবি ‘সিফর’ মূল ধাতু থেকে উদ্ভূত হলে ‘সফর’ মানে হলো শূন্য, রিক্ত। আর ‘সাফর’ ক্রিয়া মূল থেকে উৎপন্ন হলে অর্থ হবে হলুদ, হলদেটে, তামাটে, বিবর্ণ, ফ্যাকাশে, ঔজ্জ্বল্যশূন্য, দীপ্তিহীন, রক্তশূন্য ইত্যাদি। তখন আরবরা সৌরবর্ষ হিসাব করত; চান্দ্র মাস গণনা করলেও ঋতু ঠিক রাখার জন্য প্রতি তিন বছর অন্তর বর্ধিত এক মাস যোগ করে ১৩ মাসে বছর ধরে সৌরবর্ষের সঙ্গে সমন্বয় করত। সুতরাং মাসগুলো মোটামুটিভাবে রাশি ও ঋতুতে স্থিত থাকত। ঋতু ও ফল-ফসলের সঙ্গে আমাদের সব কর্মকাণ্ড প্রভাবিত হয়।

মানুষ সাধারণত অবস্থার সঙ্গে সময়কে মূল্যায়ন করে। আরব দেশে সে সময় সফর মাসে খরা হতো এবং খাদ্যাভাব, আকাল ও মঙ্গা দেখা দিত। মাঠঘাট শুকিয়ে বিবর্ণ তামাটে হয়ে যেত। ক্ষুধার্ত মানুষের চেহারাগুলো রক্তশূন্য ও ফ্যাকাশে হয়ে যেত। তাই তারা অবস্থার সঙ্গে মিল রেখে এই মাসের সঙ্গে একটি বিশেষণ যুক্ত করে বলত, ‘আস সাফারুল মুসাফফার’, অর্থাৎ ‘বিবর্ণ সফর মাস’। (লিসানুল আরব, ইবনু মানযুর র.)।

এমন অনেক লোক আছে, যারা সফর মাসকে অলক্ষ্মী বা কুলক্ষণ মনে করে থাকে। কারণ এ মাসে অনেক বিয়োগান্ত ঘটনার অবতারণা ঘটেছে। দিন, মাস, বছর যুগ ও কালে যা কিছু সংঘটিত হয় তা সবই আল্লাহর ইচ্ছায় পরিসাধিত হয়। এতে দিন, মাস, বছরের কোনোই হাত নেই। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, (ক) মনে রেখো, আল্লাহর নিকট অবশ্যই তাদের দুর্ভাগ্য ও অলক্ষ্মী রয়েছে। (সুরা আরাফ : আয়াত ১৩১)। আরো ইরশাদ হয়েছে, (খ) তারা বলল, তোমাদের কর্ম দোষের দুর্ভাগ্য তোমাদের সঙ্গেই আছে। (সুরা ইয়াসিন : আয়াত ১৯)।

জাহেল আরবরা এই মাসকে দুঃখের মাস মনে করত, এমনকি তারা এ মাসের চাঁদ দেখা থেকে পর্যন্ত বিরত থাকত এবং দ্রুত মাস শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করত। ইসলামি বিশ্বাসমতে, সময়ের সঙ্গে কোনো অকল্যাণ নেই; কল্যাণ-অকল্যাণ নির্ভর করে মানুষের বিশ্বাস ও কর্মের ওপর। তাই এই মাসের নামের সেই নেতিবাচক বিশেষণ পরিহার করে একটি সুন্দর ইতিবাচক বিশেষণ যুক্ত করে এর নামকরণ করল ‘আস সাফারুল মুজাফফার’, অর্থাৎ ‘সাফল্যের সফর মাস’।

এতে শুধু একটি বর্ণই পরিবর্তন করা হয়েছে। আর সেটিও আরবি একই বর্গের বর্ণ, যাতে তার স্বরধ্বনি ও বর্ণ মাত্রায় তেমন পার্থক্য না হয়েও শব্দটি নেতিবাচক থেকে ইতিবাচক রূপ লাভ করল; যা ইসলামি সাহিত্যের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্যের স্বাক্ষর বহন করে। ইতিবাচক চিন্তা ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ড দ্বারা এই বিবর্ণ সফরকে বর্ণময় করে তোলাই ছিল এর অন্তর্নিহিত দর্শন।

হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, সংক্রামক ব্যাধি, কুলক্ষণ-অলক্ষ্মী, কথার কুপ্রভাব ও পেটের পীড়ার কোনোই প্রভাব নেই। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)। সহিহ মুসলিমে এই বর্ধিত অংশটুকুও বর্ণিত হয়েছে, তারকার প্রভাব, মেঘ বৃষ্টির প্রভাব এবং ভুত-প্রেতের প্রভাব বলতে কিছুই নেই। সহিহ বুখারি এবং সহিহ মুসলিমে হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, সংক্রামক ব্যাধি এবং অলক্ষ্মী -কুলক্ষণ বলতে কিছুই নেই। তবে ফাল আসা খুব পছন্দনীয়। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ফাল বলতে কী বুঝায়? উত্তরে তিনি বললেন, এটা উত্তম ও পবিত্র কথা বা সৌভাগ্যের চিন্তা করা। তাই, একথা সুস্পষ্ট বলা যায় যে, আরবি বছর গণনার প্রথম পৈঠায় অবস্থিত সফর মাসকে যারা কুলক্ষণ ও অলক্ষ্মীর সাথে তুলনা করে তারা আদৌ ইসলামে পরিপূর্ণ বিশ্বাসী নয়।

পবিত্র সফর মাসে অধিকহারে নেক আমল করা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানেরই উচিত। কেননা এ মাসটি প্রিয় নবী মোহাম্মদ সা. এর এই ধরাধামে আগমনী বার্তা বহন করে রয়েছে। তাই, এ মাসের নেক আমল খুবই ফজিলতপূর্ণ। এর শুভ সংবাদ কোরআনুল কারিমে স্বয়ং আল্লাহপাক প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, (ক) যে ব্যক্তি নির্ধারিত পুণ্যকর্ম সম্পাদন করল, তার জন্য রয়েছে দশগুণ বিনিময়। (সুরা আনআম : আয়াত ১৬০)। আরো ইরশাদ হয়েছে, (খ) যে ব্যক্তি পুণ্যকর্ম সম্পাদন করল, তার জন্য রয়েছে তদপেক্ষা উত্তম বিনিময়। (সুরা কাসাস : আয়াত ৮৪)। আরও ইরশাদ হয়েছে, (গ) যে কেউ সৎকর্ম সম্পাদন করবে, সে উৎকৃষ্টতর প্রতিফল পাবে এবং সে দিন তারা শঙ্কা হতে নিরাপদ থাকবে। (সুরা নামল : আয়াত ৮৯)। এই নিরিখে সফর মাসে যে যত বেশি নফল ইবাদত করবে, আল্লাহপাক তাকে অধিক হারে বিনিময় প্রদান করবেন। এতে কোনোই সন্দেহ নেই। এ মাসে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ, সালাত সালাম, জিকির আজকার, তাসবিহ তাহলিল পাঠ করা খুবই উপকারী। বিশেষ করে এই মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে নফল রোজা রাখা খুবই সওয়াবের কাজ।

হজরত আবু যর (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখল, সে যেন সারা বছরই রোজা আদায় করল। (সুনানে ইবনে মাজাহ : পৃ. ২২২ এবং জামে তিরমিজি: খন্ড ১, পৃ. ১২৬ ও ১২৯)।

সফর মাসের শেষ বুধবারটি আখেরি চাহার শোম্বা নামে খ্যাত। এই দিন প্রিয় নবী মোহাম্মাদ সা. রোগাক্রান্ত অবস্থা হতে নিরাময় লাভ করেছিলেন, গোসল করেছিলেন এবং স্বাভাবিক আহার গ্রহণ করেছিলেন ও মসজিদে নববীতে হাজির হয়ে ইমামতের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এর খুশিতে সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই মুক্ত হস্তে দান খয়রাত করেছিলেন। সুতরাং এই দিনে অধিকহারে দরূদ ও সালাম পেশ করা এবং সামর্থ অনুপাতে দান খয়রাত করা বড়ই পুণ্যের কাজ। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সফর মাসে বেশি করে নেক আমল করার তাওফিক দান করুন।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

শাহজাদপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের সাথে মতবিনিময় সভা
সিরাজগঞ্জে পুরোদমে চলছে কৃষিবান্ধব সোলার প্রকল্পের কাজ
সিরাজগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন
বেলকুচিতে বিএসটিআই অনুমোদন না থাকায় টেক্সটাইল মিলকে জরিমানা
বেলকুচিতে পুষ্টি বিষয়ক সমন্বয় কমিটির দ্বি-মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক-অফিসিয়াল যোগাযোগ বাড়াতে প্রস্তুত বাংলাদেশ
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ
এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির
গবেষণায় আরো জোর দিতে বললেন কৃষিমন্ত্রী
রংপুর ও ভোলার চরের মানুষদের সুখবর দিলেন পরিবেশমন্ত্রী
স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক