মহান আল্লাহ পাক তার বান্দাদের গুনাহ থেকে দূরে থাকার কথা বলেছেন। কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল তা জানাতে দিয়েছেন পবিত্র গ্রন্থ কোরআন এবং অসংখ্য নবী রাসূল। ইসলামে ধর্ষণ-ব্যভিচার হত্যাযোগ্য মারাত্মক অপরাধ। এ অপরাধের সুষ্পষ্ট শাস্তির বিধান দিয়েছেন ইসলাম।
একবার কুরাইশ বংশের এক যুবক প্রিয় নবী (সা.) এর কাছেই ব্যভিচারের অনুমতি চেয়ে বসে। যুবকের অনুমতি চাওয়ার প্রেক্ষিতে ধর্ষণ-ব্যভিচার রোধে যুগশ্রেষ্ঠ শিক্ষা ও কৌশল তুলে ধরলেন বিশ্বনবী। ধর্ষণ রোধে কী সেই অনুপম শিক্ষা ও কৌশল চলুন জেনে নেয়া যাক-
কুরাইশ বংশের এক যুবক প্রিয় নবী (সা.) এর কাছে ব্যভিচারের অনুমতি চাইলেন। কিন্তু বিশ্বনবী যুবকের প্রতি মোটেই বিদ্বেষ পোষণ করেননি বরং ধর্ষণ-ব্যভিচাররোধে তিনি যুবকের সঙ্গে কথা বললেন। যুবকের কাছে কিছু বিষয়ে মতামত জানতে চাইলেন। বিশ্বনবীর অনুপম শিক্ষা ও কৌশল যুবককে ব্যভিচার থেকে নিবৃত্ত রেখেছিল। হাদিসের বর্ণনায় পুরো ঘটনাটি এভাবে ওঠে এসেছে-
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর- এর কাছে এক কুরাইশ যুবক ব্যভিচারের অনুমতি প্রার্থনা করে। প্রিয় নবির সামনে উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম রেগে ওঠে সে যুবককে শাস্তি দিতে উদ্যত হলেন। কিন্তু এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি শান্তচিত্তে যুবকটিকে তার একেবারে কাছে আসতে বললেন। অতঃপর কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন-
১. তুমি কি তোমার মায়ের জন্যে এটা (ব্যভিচার) মেনে নেবে?
যুবক জবাব দিল- ‘না’।
তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘(অন্য) লোকেরাও এটা তাদের জন্য অনুমোদন করবে না।’
২. অতঃপর তিনি আবার যুবককে জিজ্ঞাসা করলেন এটা (ব্যভিচার) সে তার কন্যা, বোন ও চাচির জন্য অনুমোদন করবে কিনা?
এবারও যুবক জবাব দিল- ‘না’।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এবারো বললেন, ‘(অন্য) লোকরাও এটা তাদের জন্য অনুমোদন করবে না।’
৩. অতঃপর তিনি (প্রিয় নবী) যুবকটির হাত ধরে বললেন, ‘আল্লাহ্ তার (যুবকের) পাপ মাফ করে দিন, তার অন্তর পবিত্র করুন এবং তাকে সহিষ্ণু করুন (তার এই কামনার বিরুদ্ধে)। সাহাবাগণ বলেন, এরপর থেকে ওই যুবক কোনো দিন অন্যায়ের দিকে পা বাড়ায়নি।’ (মুসনাদে আহমদ, তাবরানি, মাজমাউয যাওয়াইদ)
মুসলিম উম্মাহর জন্য শিক্ষা
কত সুন্দরভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) যুবকটিকে সংশোধন করলেন। প্রতিটি যুবক/যুবতি প্রতিটি নারী-পুরুষের অন্তরে যদি এ বিষয়টি জাগরুক থাকে তাহলে কখনোই একজন নারী/পুরুষ ধর্ষণ-ব্যাভিচারের বিপদের সম্মুখীন হবে না।
এ ছিল যুবকের সঙ্গে প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) এর উদারতামূলক জিজ্ঞাসাবাদের অনুপম শিক্ষা ও কৌশল। যার ফলে উদ্যত সেই কুরাইশ যুবক ব্যভিচার থেকে বিরত ছিলেন।
সুতরাং শুধু আইন করেই অপরাধ দমন সম্ভব নয়; বরং আইনের পাশাপাশি অপরাধী কিংবা অপরাধের মানসিকতা পোষণকারীদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করার মাধ্যমেও অপরাধ প্রবণতা থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আলোচ্য হাদিসটি এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
অপরাধীর প্রতি উত্তম আচরণ
ইসলাম যে অপরাধীর প্রতিও উদার তার আরেকটি প্রমাণ এসেছে প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাদিসের অন্য এক বর্ণনায়। তাহলো-
এক নারী সাহাবি ব্যভিচারের মাধ্যমে গর্ভবর্তী হয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে তার এ অপরাধ/দোষ স্বীকার করে এবং তার প্রতি (ইসলাম নির্দেশিত) শাস্তি প্রয়োগের আহ্বান জানায়। অতঃপর প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) ওই নারীকে শাস্তিস্বরূপ পাথর মারার নির্দেশ দেন।
ব্যাভিচারের অপরাধে অভিযুক্ত নারীকে পাথর মারার সময় হজরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) সেই নারীকে অভিশাপ দিচ্ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে (খালিদ ইবনে ওয়ালিদ) বললেন-‘হে খালিদ! (তার প্রতি) নম্র হও। যার হাতে আমার জীবন; তার শপথ করে বলছি, সে (ব্যভিচারি নারী) এমন অনুশোচনা করেছে যে, যদি একজন দোষী খাজনা আদায়কারীও তার মতো অনুতপ্ত হতো তবে তাকেও ক্ষমা করা হতো।’ (মুসলিম)
সুতরাং হে যুবক/যুবতি! যৌবনের উম্মাদনায় জোরপূর্বক ধর্ষণ কিংবা সমঝোতায় ব্যভিচার নয়; বরং বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ (সা.) এর অনুপম শিক্ষা ও কৌশল অবলম্বন করা জরুরি। যে শিক্ষা ও কৌশল সব যুবক/যুবতিকে ধর্ষণ-ব্যভিচার থেকে মুক্ত রাখত সক্ষম।
আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহর যুবক সমাজকে যেনা-ব্যভিচারের মতো জঘন্য অপরাধ থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) এর এ হাদিসকে হৃদয় দিয়ে উপলব্দি করার মাধ্যমে ধর্ষণ-ব্যভিচার মুক্ত সমাজ গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আলোকিত সিরাজগঞ্জ