শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আমরাই আসছি, মানুষ আমাদের চাইছেন- আনন্দবাজারকে শেখ হাসিনা

আমরাই আসছি, মানুষ আমাদের চাইছেন- আনন্দবাজারকে শেখ হাসিনা

কলকাতাভিত্তিক বাংলা পত্রিকা আনন্দবাজারকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, দেশের জনগণ চাইছে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসুক। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়- সেটা জনগণ বুঝতে পেরেছে।

পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

রোববার বাংলাদেশে একাদশ সংসদ নির্বাচন। তার আগে বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার ধানমন্ডির সুধাসদনে হাসিনাকে অন্য মেজাজে পাওয়া গেল। সেই হাসিনার মুখে দেখা গেল তৃপ্তির হাসি। বড় নিশ্চিন্তভাবে বললেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের ওপর আমার বিপুল আস্থা। মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। জনগণের ভোটেই আমরা নির্বাচিত হব।’

এতটা নিশ্চিত কীভাবে হচ্ছেন? হাসিনার যুক্তি, ২০১৩-র (২০১৪ হবে) নির্বাচনে প্রায় ছয়'শ স্কুল পোড়ানোর কথা বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। মুছে যায়নি প্রিজাইডিং অফিসারসহ অজস্র নাগরিককে হত্যার স্মৃতি। রাস্তা কেটে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, সেই সময়ে জনগণই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। ভোটও দিয়েছিলেন তারা। সেই জনগণ ফের তাকেই ভোট দেবেন বলে বিশ্বাস হাসিনার।

একই সঙ্গে হাসিনা মনে করিয়ে দিলেন, নির্বাচনের পর বাংলাদেশে একের পর এক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সাধারণ মানুষ সে সব ভোলেননি। আর ভোলেননি বলেই ওই সব ঘটনা যে রাজনৈতিক দল ঘটিয়েছিল, তারা জনসমর্থনহীন হয়ে পড়েছে। আর সেই জোরের জায়গা থেকেই ফের সরকার গঠনের ব্যাপারে আশাবাদী আওয়ামী লীগ।

কিন্তু নির্বাচনের আগে বিরোধীরা তো তার দলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলছে। কথাটা বলতেই যেন একটু বিরক্ত হলেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন, ‘নালিশ করার পাশাপাশি বিভ্রান্তি ছড়াতে এবং মিথ্যা কথা বলতে ওরা ভীষণ পারদর্শী।’

হাসিনার পাল্টা দাবি, নির্বাচনে বিরোধীদের হয়ে যারা প্রার্থী হতে চেয়েছেন, তাদেরই ওরা নমিনেশন দিয়েছে। কিন্তু দলীয় প্রতীক পেয়েছেন একজন। এর পর নিজেদের মধ্যেই সংঘাত শুরু হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর দাবি।

তার কথায়, ‘দলের পুরনো বা জিতবেন এমন নেতাদের নমিনেশন দেয়নি ওরা। যে কারণে বঞ্চিতদের কাছে ওদের আক্রান্ত হতে হচ্ছে।’ কয়েকজন নেতাকর্মীকে খুনের ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ হওয়ার পর সে বিষয়ে তদন্ত হবে বলেও জানালেন হাসিনা।

বাংলাদেশের যুব সম্প্রদায় আওয়ামী লীগ সম্পর্কে খুবই উৎসাহী বলে মনে করেন হাসিনা। তার মতে, বাংলাদেশে মানুষের মন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটাই মুছে ফেলা হয়েছিল। এখনকার নতুন প্রজন্মের মধ্যে সত্যকে জানার একটা আগ্রহ রয়েছে। ইন্টারনেটে খুঁজলেই একাত্তরের অনেক তথ্য এখন জানা যায়। ফলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার বিষয়টি এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার কথায়, ‘এর জেরে আওয়ামী লীগের প্রতি যুব সম্প্রদায়ের মতটাই পাল্টে গেছে।’

নির্বাচন উপলক্ষে হাসিনা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সফর করেছেন। সেই সফরে তিনি মানুষের কাছ থেকে ভালই সাড়া পেয়েছেন বলে এ দিন দাবি করেন শেখ হাসিনা। তার কথায়, ‘মানুষের মধ্যে সেই ভালবাসাটা দেখতে পেলাম জানেন! তারা অন্তর থেকে চাইছেন, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসুক। জনগণ এটা জানেন, আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই তাদের ভাগ্য পরিবর্তিত হবে।’

মহিলাদের থেকে তো বটেই, আওয়ামী লীগ তরুণ সমাজের কাছ থেকেও অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছে বলে এদিন দাবি করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনটা আগের মতো অত চ্যালেঞ্জিং নয়। বৈরিতার পরিবেশও নেই। বরং আমাদের স্বপক্ষে একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর আগের নির্বাচনগুলোয় একটা বিভেদ লক্ষ করতাম। এবার কিন্তু একচেটিয়াভাবে সকলের সমর্থনটা আমাদের সঙ্গে রয়েছে। সেটা টেরও পাচ্ছি।’

পাকিস্তান প্রসঙ্গেও এ দিন মুখ খুলেছেন শেখ হাসিনা। তার দাবি, বাংলাদেশে কিছু পাকিস্তানপ্রেমী মানুষ আছেন। ‘যুদ্ধাপরাধীদের মন পড়ে আছে পাকিস্তানে,’—এমন মন্তব্যও করলেন তিনি। পাশাপাশি জানিয়ে দিলেন, তারা সতর্ক আছেন। কারও সঙ্গে বৈরিতা করতে না চাইলেও, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কাউকে যেকোনোভাবেই নাক গলাতে দেবে না বাংলাদেশ, সে কথাও এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন হাসিনা।

বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত যে আসামিরা লন্ডনে বসে রয়েছে, তাদের সম্পর্কে আওয়ামী লীগের মনোভাব এ দিন স্পষ্ট হয়েছে হাসিনার কথায়। তার মতে, ওই আসামিরা সব সময় বিদেশে বসে দেশের ভেতর একটা অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে চায়। অস্ত্র পাচার, চোরা কারবার এবং দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ওই সব মানুষের অঢেল টাকা বলে হাসিনার অভিযোগ।

তার দাবি, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাতে যারা সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে, সেই ব্যবসায়ীরাও ওই দলকে টাকা-পয়সা দেয়। তার কথায়, ‘ক্ষমতায় ছিল যখন, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ না করলেও নিজেদের আখের ওরা গুছিয়ে নিয়েছে। ওই টাকা তো ওরা এখন ব্যয় করে দেশের ভেতরে অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে।’

পাশাপাশি তার প্রতিশ্রুতি, ব্রিটেনের সঙ্গে কথা বলে ওই আসামিদের দেশে ফেরত এনে রায় কার্যকর করা হবে।

এবারের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী কীভাবে ধানের শীষ প্রতীক পেল তা নিয়েও এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন হাসিনা। তার প্রশ্ন, যাদের নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করলো, তাদের কীভাবে নমিনেশন দেয়া হয়?

তিনি বলেন, ‘জামায়াত তো গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। মেয়েদেরকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া থেকে ঘরবাড়ি দখল করেছিল। ওদের নমিনেশন দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই মানুষ শঙ্কিত!’

এ দিন কামাল হোসেনের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাসিনা। কামাল হোসেনকে দেশের সংবিধান রচয়িতা বলা হয়। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে চলে গিয়ে নিজে দল করেন। ধানমন্ডি থেকে দাঁড়িয়েছিলেন এক বার। ওই নির্বাচনে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল।

হাসিনার কথায়, ‘সেই তিনি কিনা গেলেন জামায়াত-বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে!’ এরপরই একগাল হাসিসহ তার সংযোজন, ‘আমি অবাক হইনি। কারণ কী জানেন? ওর শ্বশুরবাড়ি পাকিস্তানে। ছেলেদের একটু শ্বশুরবাড়ির টানটা বেশি থাকে।’

ঘণ্টাখানেক কথার পর সুধাসদনে তখন সন্ধ্যা বেশ গাঢ় হয়ে নেমে এসেছে। বিদায় পর্বে ফের জিজ্ঞেস করা গেল, ভোটের ফল কেমন হবে? হাসিনা জানালেন, ‘ওই যে প্রথমেই বলেছিলাম, আমরাই আসছি। কারণ, মানুষ আমাদেরই চাইছেন।’

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

শাহজাদপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের সাথে মতবিনিময় সভা
সিরাজগঞ্জে পুরোদমে চলছে কৃষিবান্ধব সোলার প্রকল্পের কাজ
সিরাজগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন
বেলকুচিতে বিএসটিআই অনুমোদন না থাকায় টেক্সটাইল মিলকে জরিমানা
বেলকুচিতে পুষ্টি বিষয়ক সমন্বয় কমিটির দ্বি-মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক-অফিসিয়াল যোগাযোগ বাড়াতে প্রস্তুত বাংলাদেশ
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ
এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির
গবেষণায় আরো জোর দিতে বললেন কৃষিমন্ত্রী
রংপুর ও ভোলার চরের মানুষদের সুখবর দিলেন পরিবেশমন্ত্রী
স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক