
সংগৃহীত
সিরাজগঞ্জের যমুনার বুক চিরে নিরমিত বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর ৬৫ ভাগ কাজ দৃশ্যমান। এতে করে উত্তরবঙ্গে নবদিগন্তের সুচনা ঘটবে। আমদানি খরচ কমবে, যানবাহনের চাপ হাস পাবে। বাড়বে রেলের গতিও।
দেশের সবচেয়ে বড় ডুয়েলগেজ ডাবল ট্রাকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুর ২৫টি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এতে সেতুর ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার স্প্যান এখন দৃশ্যমান। ইতোমধ্যে ৩২টি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। ৫০টি পিলারের উপর ৪৯টি স্প্যানে তৈরি হচ্ছে এই সেতু। সেতু নির্মাণ শেষ হলে ১২০ কিলোমিটার গতিতে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে এই সেতু দিয়ে। এতে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। পাশাপাশি মালপত্র আমদানি-রপ্তানি খরচ কমে যাওয়াসহ চাপ কমবে বঙ্গবন্ধু সেতুতে।
প্রকল্প সুত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর বুকে বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩শ’ মিটার উজানে নির্মাণ করা হচ্ছে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দেশের সর্ববৃহৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে তৈরি হওয়া পিলার গুলোর উপর স্প্যান বসানোর কাজ করছেন দেশি বিদেশি প্রকৌশলীরা। ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা বিশেষ ধরনের বড় বড় স্টিলের পাটাতন দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে স্প্যানগুলো। এটি তৈরি করা হচ্ছে ওয়েদার স্টিল দিয়ে যা দেশের রেলসেতুতে এ ধরনের স্টিল ব্যবহার এই প্রথম।
সংশ্লিস্টদের দাবি, এই নতুন স্টিল ব্যবহারের কারণে স্প্যানগুলো আলাদাভাবে রঙ করার প্রয়োজন হবে না। বলা হচ্ছে, এর ফলে আগামী ১শ’ বছরেও সেতুর কাঠামোয় মরিচা ধরবে না। সময়ের সঙ্গে গাডারের উজ্জ্বলতাও বাড়বে। এ ছাড়া এই সেতুতে সিøপার ছাড়াও বিশেষ পদ্ধতিতে বসানো হবে রেলট্র্যাক। এতে ঘণ্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার বেগে চলবে পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন। বাংলাদেশ ও জাপানের যৌথ অর্থায়নে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকায় রেলসেতু প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে জাইকা। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সেতুটির নির্মাণকাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। সেতুর প্রকল্প পপরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর অগ্রগতি এখন ৭৫ শতাংশ। ২৬টি পিলারের ওপর ২৫টি স্প্যান বসানো ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ৫০ পিলারের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩২টির কাজ সম্পুর্ণ হয়েছে। বাকি পিলারের কাজ চলমান রয়েছে। তিনি আরো বলেন, সেতুর পূর্ব এবং পশ্চিম স্টেশন কানেক্ট করার কাজ চলমান রয়েছে। এটি যেহেতু ডাবল লাইন ব্রিজ হিসেবে নির্মিত হচ্ছে, সেজন্য ইয়ার্ডের কাজটি সম্পুর্ণ মোডিফাই করা হচ্ছে। দুইপাশের ইয়ার্ডের কনস্ট্রাকশনের কাজ শুরু হয়েছে আর অ্যাপ্রোচের দুই পাশে সাড়ে ৭ কিলোমিটার মতো ট্র্যাক আছে, এটির মাটির কাজ সম্পুর্ণ হয়েছে। সাবব্যালাস্টের কাজ চলছে। দুইপাশে স্টেশন বিল্ডিংয়ের কাজ ও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপন হয়। তবে, ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুর উত্তর লেনে প্রথম ফাটল দেখা দেয়। পরে ফাটলটি দক্ষিণ লেনেও ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করা ট্রেনের গতিসীমা কমিয়ে দেয়া হয়।