সিরাজগঞ্জের আবুজর হোসেন জিম ও লিজা আক্তারের পরিচয় ২০১৫ সাল থেকে। পরিচয় থেকে সম্পর্ক গড়ায় ভালোবাসায়। ২০২১ সালে বিয়ে করেন তারা। আবুজার হোসেন পেশায় একজন ফ্রিল্যান্সার। বিয়ের পর স্বামী আবুজার হোসেনের অনুপ্রেরণায় লিজাও শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। এখন স্বামী স্ত্রীর দু’জনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে মাসে আয় করেন পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা।
শুরুর গল্প জানতে চাইলে স্ত্রী লিজা আক্তার বলেন, পরিবারের সবাই ভাবতো আমার স্বামী বেকার। তাই আমার পরিবারের সদস্যরা বিয়ে দিতে অনিচ্ছুক ছিলেন। পরে আমি বুঝিয়ে বলার পর তারা রাজি হন।
তিনি আরো বলেন, বিয়ের আগে থেকেই আমার স্বামী ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং করতেন। ঘরই তার অফিস। একদিন আমাকে বললেন তুমিও তো চাইলে আমার সঙ্গে বসে কাজ করতে পারো। এতে দু’জনেরই সময় কাটবে ও ইনকাম হবে। আমিও কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে গেলাম। কিন্তু সমস্যা হলো আমি তো কাজ জানি না। এক্ষেত্রে আমার স্বামী আমার প্রথম টিউটর। তিনি আমাকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের সব কাজ শিখিয়ে দিতে শুরু করে। দীর্ঘ এক বছর পুরোপুরি কাজ শিখে স্বামীর পাশে থেকে আমিও শুরু করলাম ফ্রিল্যান্সিং। এখন এ থেকে আমার নিজরই আয় হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। দু’জনের মিলে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকার মতো আয় হয়।
শুধু তাই নয়, এলাকার বেকার নারী-পুরুষদেরও ফ্রিল্যান্সিং শেখান তারা। যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ, তাদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। আবুজার হোসেন জীম বলেন, আমার স্ত্রী ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করছে, এটা আমার খুব ভালো লাগছে। দু’জন মিলে ঘরে বসে আয় করতে পেরে আমরা আনন্দিত।
শুরুর গল্প জানতে চাইলে জিম বলেন, কিছু শিখবো বলে ২০০৮ সালে বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে কম্পিউটার কিনেছিলাম। ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত নিজে নিজে চেষ্টা করে তেমন কিছুই শিখতে পারিনি। তখন আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়তাম। ২০১৩ সালে পুরান ঢাকায় একটা আইটি ট্রেনিং সেন্টারে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও ওয়ার্ডপ্রেসের কোর্সে ভর্তি হই।
তিনি আরো বলেন, কোর্স শেষে সুযোগ পেলাম টিম মেম্বার হিসেবে কাজ করার। ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম বায়ার পেলাম বাংলাদেশি, প্রথম পেমেন্ট ছিল ৩০ হাজার টাকা। প্রথম আয় হিসেবে খুশি ছিলাম। এরপর শুরু করলাম ফাইভার মার্কেট প্লেসে কাজ করা। এখনকার মতো এতটা সহজ ছিল না। নতুন একাউন্ট খুললেই কাজ আয়া শুরু করে- এমনটা নয়। তবে বেশ কিছুদিন পর কাজ পেলাম। টানা দুই রাত জেগে কাজগুলো জমা দিয়েছিলাম। কাজগুলো তখন আমার কাছে ছিল মহামূল্যবান। সারাদিন রাত মাথায় শুধু কাজ নিয়ে চিন্তা ছিল।
‘এরপর ২০১৫ সালে অনার্স শেষ করলাম। বাবা-মা চাকরির কথা বলতে শুরু করেন। কিন্তু আমি কোনো চাকরির জন্য আবেদন করিনি। আমার মাথার মধ্যে ছিল ওয়েব ডেভেলপমেন্টের বিষয়টি। চাকরির সব চিন্তা বাদ দিয়ে আরো বেশি কীভাবে শেখা যায়, সেই চিন্তা শুরু করলাম। আবার একটা ১২ হাজার টাকার কোর্সে ভর্তি হই। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি। এখন মাস শেষে লাখ টাকা ঘরে নিয়ে আসি। পার্সোনাল ক্লাইয়েন্টসহ মার্কেট প্লেস মিলে কাজ করছি’ বলেন তিনি।
লিজার সঙ্গে পরিচয়ের গল্প জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৫ শেষের দিকে লিজার সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর প্রেম। আমার কাছেই তার প্রথম ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শেখা। ইমেইল মার্কেটিং শিখে সেও কাজ শুরু করলো ২০১৭ সালে। অনলাইনে যখন যেটা চায়, কাজ শিখতে আমি না করিনি। গ্রাফিক্স ডিজাইন, ইউএক্স ডিজাইন এবং ডিজিটাল মার্কেটিং। খুবই পরিশ্রমী সে। ২০২১ সালে বাবা-মা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে আমার বউ করে। নতুন সংসার, সঙ্গে আবার কাজ। সব মিলিয়ে হিমশিম খেয়ে যায়। সারারাত জেগে কাজ, আবার ফজর পর থেকে সংসারের কাজ। ওকে দেখলে অবাক হই মাঝে মাঝে। খুব অল্প সময়েই সে সাফল্য পেয়েছে। মাসে সে এখন দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মতো ইনকাম আয় করে। লিজা ও আবুজার হোসেন জিমের ইচ্ছা- তারা বড় পরিসরে বেকার যুবকদের ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রশিক্ষণ দেবেন। তাদের পরামর্শ, চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে কিছু করা। হোক সেটা কোনো উদ্যোগ, ব্যবসা কিংবা ফ্রিল্যান্সিং।
আলোকিত সিরাজগঞ্জ