শুটকি মাছের গন্ধ শুনলেই অনেকের জিবে পানি চলে আসে।এই মাছ খেতে খুবই পছন্দ করেন দেশের বহু মানুষ। বহু লোকের কাছে শুটকি মাছের ভর্তা ও নানার রকম পদের বেশির ভাগ মানুষেরই খুব প্রিয়। আবার কেই কেউ শুটকি মাছের নাম শুনলে নাক সিটকায়।এ মাছের একটি আলাদা সুগন্ধ ও স্বাদ রয়েছে। চলনবিল থেকে ধরা দেশিও পুটিমাছ ও নানা প্রজাতির মাছ শুটকি তৈরি করে ভাগ্য বদল হচ্ছে এই এলাকার অনেক পরিবার।
এই শুটকি মাছ দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি ছাড়াও বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে ওই এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। সেই সাথে জাতীয় আয়ের অবদান রাখছেন তারা। চলনবিলের সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ,তাড়াশ,উল্লাপাড়া,শাহজাদপুর উপজেলার মাছের আড়তে শুটকি মাছ শুকানোর ব্যস্ত সময় পার করছেন ওই সব এলাকার নারী ও পুরুষেরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, সিরাজগঞ্জের চলনবিলাঞ্চলের চারটি উপজেলার কয়েক শতাধিক নারি-পুরুষ শ্রমিকরা শুটকি শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোরের আলো শুরু হতে না হতেই শুরু হয় তাদের কর্মযজ্ঞ। মাছে লবণ মাখানো, মাপজোপ করা, বহণ করে মাচায় নিয়ে,মাছ বাছাই করে শুকানো হয়। আর এসব কাজের বেশির ভাগই হয় নারীদের হাতে। মহাজন শুধু মাছ কিনেই দায়মুক্ত।
চলনবিলের মিঠা পানির শুটকি মাছের বেশ সুনাম রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে রাস্তার পাশেই তৈরি হয় বিশাল এলাকাজুড়ে শুটকি মাছ তৈরির কারখানা। চলনবিলের অধিকাংশ মাছ চলে আসে উপজেলার আড়ত ও বাজারে। সেখান থেকে পাইকাররা প্রচুর মাছ শুটকির জন্য কিনে নিয়ে আসেন। বর্ষা মৌসুমের তিন থেকে চার মাস এই মাছ সংগ্রহ করে শুকিয়ে শুটকি তৈরি করা হয়।
।
তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটির শুঁটকি ব্যবসায়ী নান্নু, জাহিদুল,আলম জানান, আমরা দীর্ঘ ১৮বছর ধরে দেশি শুটকি মাছের ব্যবসা করে আসছি। চলনবিলের মিঠা পানির দেশিও পুটি মাছের শুঁটকির স্বাদ ও মান ভালো হওয়ায় দেশ-বিদেশে এর চাহিদা অনেক বেশি। বর্ষা মৌসুম থেকে শুরু করে তিন থেকে চার মাস চাতালে শুটকি মাছ শুকানোর কাজ চলে। প্রতি বছরে ৭০ থেকে ৮০ টন শুটকি উৎপাদন করে বিক্রি করা যায়। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত মাছ শুকাতে ১৪ জন নারী-পুরুষ কাজ করে যাচ্ছেন। দৈনিক ৮ থেকে ১০ মণ মাছ চাতালে শুকানো হয়। ১ কেজি তাজা মাছ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় কিনতে হয়। ৩ কেজি তাজা মাছ শুকিয়ে ১ কেজী শুটকি মাছ পাওয়া যায়। বর্তমানে ১ কেজি দেশিও পুটি মাছের শুটকি উৎপাদন করতে খরচ হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকা। প্রতি কেজি শুটকি মাছ পাইকারি বিক্রি করা যায় ১২০ থেকে ১৬০ টাকা। চলনবিলের দেশিও পুটি মাছের শুটকি বিক্রি করা হয় উওরবঙ্গের সৈয়দ পুর বাজারে।
শুঁটকি তৈরির কাজে নিয়োজিত শ্রমিক সবুরা বেগম,জামেলা বেগম,শাহীদা বেগমসহ অনেকেই জানান, আমরা অনেক বছর ধরে এই কাজ করে আসছি। যে পরিমান পরিশ্রম করি সেই তুলনায় দাম দেওয়া হয় না। এই কাজ খুব ঝুকি পুর্ণ,কারণ হাতের মধ্যে মাছের কাটা বিধে ক্ষত হয়ে যায়। ঝুকি পুর্ণ কাজের দৈনিক মজুরী ২০০ টাকা দেওয়া হয়।এ টাকা দিয়ে পরিবার চালানো খুব কষ্ট হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান বলেন, এখানে প্রতি বছর অনেক শুটকি উৎপাদন কর হয়। চলনবিলের চারটি উপজেলাতে শুটকি উৎপাদন কারীদেরকে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে।
আলোকিত সিরাজগঞ্জ