শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যমুনা চরাঞ্চলের অর্থনৈতিক চালচিত্র বদলে দিয়েছে কৃষি-খামার

যমুনা চরাঞ্চলের অর্থনৈতিক চালচিত্র বদলে দিয়েছে কৃষি-খামার

যমুনার বিস্তীর্ণ বালুচরে কৃষি বিপ্লব ঘটেছে। আর এ বিপ্লবের মূল সারথি হচ্ছে নদীভাঙা মানুষ। এক সময় নদীই যাদের ভূমিহীন সর্বহারা করেছে, এখন সে নদীর চরই তাদের আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। নদীভাঙা ভূমিহারা মানুষ আজ চরে ফলাচ্ছেন বাদাম, মরিচ ভূট্টা, সরিষা, শাক-সবজি, কালাই, তিল, কলা ও থাই কুলসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসল। এ ছাড়া চরে ছোট ছোট অসংখ্য গরু ও ছাগলের খামার গড়ে উঠেছে। আর খামারের দুধ ও কৃষিজপণ্য বদলে দিয়েছে তাদের ভাগ্য।

সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলায় যমুনায় জেগে ওঠা চরে নদীভাঙা শত শত মানুষ শুধু কৃষিজপণ্য উৎপাদনই করছেন না। তারা ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গড়ে তুলেছেন গরু, মহিষ ও ছাগলের খামার। খামারগুলোতে প্রতিদিন উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার লিটার খাঁটি দুধ। এ দুধ চরবাসীর চাহিদা মিটিয়ে জেলা ও উপজেলার হাট-বাজারে বিক্রি হচ্ছে। গত এক যুগে গো-মহিষের খামারে নদীভাঙা মানুষের জীবনযাত্রার মান ও অর্থনৈতিক চালচিত্র বদলে দিয়েছে।

নদীভাঙনে বাস্তহারা নিঃস্ব শত শত পরিবার সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, সদর উপজেলা, চৌহালী, শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা বুকে জেগে ওঠা চরে বসতি গড়ে তোলে। তাদেরই একজন শহিদুল ইসলাম উপজেলার ভেটুয়া গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেন। ১৮/২০ বছর আগে অন্যের জমিতে কামলা খেটে ও বর্গাচাষি হিসেবে কাজ করে এক বেলা খাবার জুটলেও আরেক বেলা থাকতে হতো উপোস। আর আজ তার সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে অন্তত ৫০ লাখ টাকা। বন্যা আর নদীভাঙনের সাথে যুদ্ধ করতে হয় বলে অর্থনৈতিক দুর্দশা চরবাসীদের স্বাভাবিক দৃশ্য। কিন্তু এখন ব্যাপক লাভের মুখ দেখে চরবাসীরা যেভাবে গরু পালনে ঝুঁকছেন তাতে শিগগিরই গরু পালনই চরবাসীর প্রধান পেশা হয়ে দাঁড়াবে বলে অনেকের ধারণা।

 

যমুনা নদীপাড়ের নাটুয়ারপাড়া ও কুমারিয়াবাড়ী বাজারটি উপজেলার অন্তত ৩০টি চরের বাসিন্দাদের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র। এ বাজারের ঘাটে কথা হচ্ছিল চরগিরিশ জাতীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও কুমারিয়াবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা এম কামরুল হাসান ওরফে গুলজারের সাথে। তার মতে ১৫ বছর আগে হাতে গোণা কিছু গৃহস্থ উন্নত জাতের গাভী, আবার কেউ ষাঁড় বাছুর এনে পালন করতে থাকেন। এর দুধ থেকে ভালো আয় আর গরু মোটাতাজা করার করণে ব্যাপক লাভ হওয়ায় গরু পালনে আগ্রহীর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। তিনি আরো বলেন, চরে গরু পালন ১৫ বছর আগে শুরু হলেও বছর চারেক ধরে এ বিপ্লব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এতে চরের অন্তত ৯০ ভাগ মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে।

জানা গেছে, জেলার শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলা নিয়ে দেশের প্রধান দুগ্ধ উৎপাদনকারী ও গরু পালনকারী এলাকা গড়ে উঠেছে। তবে গরুর খামার ও গরু পালনকারীর সংখ্যা চর এলাকায় এত ব্যাপকহারে বেড়ে চলছে যে তা রীতিমত বিস্ময়কর। সিরাজগঞ্জের কয়েক উপজেলা থেকে মিল্ক ভিটা, ফার্মফ্রেসসহ প্রায় ২০টি দুগ্ধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে বাজারজাত করে আসছে। এ দুধের অন্তত ৬০ হাজার লিটারই চরের বলে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় ও কয়েকটি দুগ্ধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে।

রবিবার (২৮ মে) সকালে কাজিপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম বলেন, গরু পালন করে চরের মানুষ গত এক যুগে যে সাফল্য পেয়েছে তা সত্যিই বিস্ময়কর। নাটুয়ারপাড়া, খাসরাজবাড়ী, মনসুর নগর, তেকানী, চরগিরিশ, নিশ্চিন্তপুর, শুভগাছা ও মাইজবাড়ী ইউনিয়নের চরগুলোর মধ্যে কয়েকটি চরে বলা চলে গরু-ছাগল-মহিষ পালনে বিপ্লব ঘটে গেছে। চরে নাটুয়ারপাড়ায় প্রতি শনিবার ও বুধবারের বিশাল গরু ছাগলের হাট বসে। বেচাকেনা হয় প্রচুর।

যমুনা নদীপাড়ের নাটুয়ারপাড়ায় ৬টি ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি চরের বাসিন্দাদের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র। নাটুয়ারপাড়া নৌকা ঘাটে কথা হচ্ছিল নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রহিম সরকারের সাথে। তার মতে ১০/১২ বছর আগে হাতে গোণা কিছু গৃহস্থ দেশি গরু ছাগল পালন করতে। এখন উন্নত জাতের গাভী, আবার কেউ ষাঁড় বাছুর এনে পালন করতে থাকেন। এর দুধ থেকে ভালো আয় আর গরু মোটাতাজা করে এখন অনেকেই লাভবান হচ্ছেন।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার জানান, প্রতি বছরই যমুনার চরে জেগে ওঠা চরাঞ্চলে সবুজ ঘাস খাওয়ানোর জন্য পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে মহিষ ও গরু বাথান নিয়ে আসে। চৌহালী থেকে কাজিপুরের দুর্গম চরের তৃণভূমিতে শত শত মহিষ ও গরুকে ঘাস খাচ্ছে।

 

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর
ঈদের দিন ৩ হাসপাতাল পরিদর্শন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
আয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
জুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেই