বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বাদে অতুলনীয় সিরাজগঞ্জের কুমড়ো বড়ি

স্বাদে অতুলনীয় সিরাজগঞ্জের কুমড়ো বড়ি

দেখতে যেমন সুন্দর, খেতে তার চেয়ে বেশি সুস্বাদু। শীতের খাবারে মুখরোচক স্বাদ আনতে মাছ-সবজিতে কুমড়ো বড়ির প্রচলন দীর্ঘদিনের। শীতকে কেন্দ্র করে যতœসহ শৈল্পিকভাবে এই খাদ্য তৈরি করছেন সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলের নারীরা। এই কুমড়ো বড়ি তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করেও অনেকে সংসারে আনেন সচ্ছলতা। বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু কুমড়া বড়ি তৈরির কাজে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।

জানা যায়, শীত মৌসুমে বাজারে নানা ধরনের সবজির সমাহার দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলের নদী ও খাল-বিলে এই সময়ে পানি কম থাকে। এই সময়ে মাছের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের সবজিও বাজারে ওঠে। এই সবজি আর মাছ রান্নায় ভোজনরসিকরা খাবারে ব্যবহার করেন ঐতিহ্যবাহী কুমড়ো বড়ি। কিন্তু কাজের ব্যস্ততার কারণে অনেকেই ইচ্ছা থাকলেও সুস্বাদু এই কুমড়া বড়ি তৈরি করতে পারেন না। সেই চাহিদার অনেকাংশ পূরণ করছেন সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের নারীরা।

কারিগররা জানান, দেশীয় উপাদানে তৈরি হয় কুমড়ো বড়ি। প্রথমে গাছপাকা সাদা বর্ণের চালকুমড়ো কুচি কুচি করে কাটতে হয়। তারপরে কলাইয়ের ডাল ভিজিয়ে পাটায় বেটে, চালকুমড়ো আর কলায়ের ডাল একসঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে ভালো করে মাখিয়ে বাঁশের চাটাইয়ের ওপরে ছোট ছোট করে বড়ি তৈরি করে বিছিয়ে দেয়া হয়। দুই-তিন দিন ভালো করে রোদে শুকালেই খাওয়ার উপযোগী হয়ে যায় সুস্বাদু কুমড়ো বড়ি।

শাহজাদপুর উপজেলার তালগাছি গ্রামের কুমড়া বড়ি তৈরির কারিগর জাহানারা খাতুন বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে এই কুমড়ো বড়ি তৈরি করছি। মাষকলাইয়ের ডাল আর চালকুমড়োর মিশ্রণে রোদে শুকিয়ে তৈরি করতে হয় এই বড়ি। কুমড়ো বড়ি দিয়ে কৈ, শিং বা শোল মাছের ঝোল ভোজনরসিকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ও সুসাদু। এই কুমড়ো বড়ি তৈরির উপযুক্ত সময় হলো শীতকাল। এ কারণে শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে কুমড়ো বড়ি তৈরির ব্যস্ততা বেড়ে যায়। আমার মতো এখন এলাকার শত শত নারী কুমড়ো বড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

আরেকজন মনোয়ারা খাতুন জানান, শীত মৌসুমে কুমড়ো বড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা বাজারে বিক্রি করা হয়। শীতের সময় ব্যাপক চাহিদা থাকায় গ্রামাঞ্চলের নারীরা বাড়তি আয়ের জন্য কুমড়ো বড়ি তৈরি করেছেন।

তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ গ্রামের বড়ি তৈরির কারিগর আব্দুল মতিন বলেন, এই বড়ি আমরা বংশপরম্পরায় তৈরি করে থাকি। আমার বাপ-দাদা তৈরি করেছেন, আমি তৈরি করেছি, এখন আমার ছেলে আর নাতিপুতি তৈরি করছে। বর্তমানে এই গ্রামের ২০ থেকে ২৫টি পরিবার কুমড়ো বড়ি তৈরি করে। সেই বড়িগুলো স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করে তারা বাড়তি আয় করছেন। শীতের সবজির সঙ্গে কুমড়ো বড়ির একটা যোগসূত্র খুঁজে পান অনেকেই। তাই চাহিদাও বেড়েছে এ সময়।

আরেক কারিগর আল-আমিন বলেন, একটা সময় কুমড়ো বড়ি তৈরির জন্য শীলপাটায় সারারাত ধরে পরিবারের মেয়েরা ডাল বাটতেন। পরের দিন তা বড়ি বানিয়ে শুকাতে দেয়া হতো। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ছেলেমেয়েরা ব্লেন্ডার মেশিনের সাহায্যে ঘণ্টার মধ্যেই অনেক ডাল পিষে বড়ি তৈরি করে ফেলে। এই বড়ি তৈরি করার আগে পারিবারিক অবস্থা তেমন সচ্ছল ছিল না। সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত।

উপজেলার নওগাঁ গ্রামের কুমড়ো বড়ি ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে মাষকলাই ডালের কুমড়ো বড়ি প্রতি কেজি ২০০ টাকা, মসুর ডালের কুমড়ো বড়ি ১৪০ টাকা কেজি। আর অ্যাংকার ডালের কুমড়ো বড়ি প্রতি কেজি ১০০ টাকায় পাইকারি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে খুচরা বিক্রিতে কেজিতে আরও ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হলেও আগের মতো ক্রেতা নেই। সম্প্রতি বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নিন্ম ও মধ্যবিত্ত মানুষের কেনাকাটা কমে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবুল কুমার সূত্রধর জানান, মাচা ও টিনের চালে কৃষকরা চালকুমড়োর চাষ করে থাকেন। উৎপাদিত চালকুমড়ো থেকে এসব বড়ি তৈরি করা হয়। বড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ চালকুমড়োর চাহিদা বাড়ে। তাই অনেক কৃষক চালকুমড়োও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন। গ্রামের নারীরা কুমড়ো বড়ি তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।

যুব উন্নয়ন অফিসার আ ফ ম নজরুল ইসলাম বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী কুমড়ো বড়ি তৈরি করে অনেক যুবকদের বেকার সমস্যা দূর হচ্ছে। আমাদের অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ করিয়ে ঋণের ব্যবস্থা করে তাদের ব্যবসা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করা হবে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. রাশেদুল রহমান বলেন, এই কুমড়ো বড়ি গ্রামবাংলার একটি ঐতিহ্যের অংশ। এই কাজের সঙ্গে বেশিরভাগ নারী শ্রমিক কাজ করে থাকেন। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য বড়ি তৈরির কারিগরদের একটি তালিকা করে তাদের উন্নত প্রশিক্ষণসহ স্বল্প সুদে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করা হবে। বাংলার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে আমরা সবসময় পাশে আছি। বিশেষ করে নারী ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তা যদি আমাদের কাছে আবেদন করে, তবে অবশ্যই তাকে সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

শাহজাদপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের সাথে মতবিনিময় সভা
সিরাজগঞ্জে পুরোদমে চলছে কৃষিবান্ধব সোলার প্রকল্পের কাজ
সিরাজগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন
বেলকুচিতে বিএসটিআই অনুমোদন না থাকায় টেক্সটাইল মিলকে জরিমানা
বেলকুচিতে পুষ্টি বিষয়ক সমন্বয় কমিটির দ্বি-মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক-অফিসিয়াল যোগাযোগ বাড়াতে প্রস্তুত বাংলাদেশ
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ
এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির
গবেষণায় আরো জোর দিতে বললেন কৃষিমন্ত্রী
রংপুর ও ভোলার চরের মানুষদের সুখবর দিলেন পরিবেশমন্ত্রী
স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক