সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার দুর্গম যমুনার চরাঞ্চলে মানুষের একমাত্র বাহন ঘোড়ার গাড়ি। প্রাকৃতিকভাবেই চরাঞ্চলে মানুষগুলো ভীষণ অসহায়। প্রাকৃতিক সৃষ্টির বিশাল জলরাশি যমুনার মাঝে তাদের বেঁচে থাকা। ফলে তাদের জীবিকা নির্বাহের পথটাও তুলনামূলকভাবে অসীম নয়। মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি ) সকালে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, যমুনায় প্রাকৃতিক সৃষ্টি বিশাল জলরাশি ও বালুচরে এ মানুষগুলোর জীবন সংগ্রাম। ফলে তাদের জীবিকা নির্বাহের পথটাও সীমিত। তাই বলে বেঁচে থাকার লড়াইটা বন্ধ রাখলে তো আর চলবে না। বাঁচার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। ঘোড়ার গাড়িতেই চলছে সেই লড়াই। সিরাজগঞ্জের চৌহালী, উমারপুর ও ঘোড়জান ইউনিয়নসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলের মধ্য দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে নানা ধরনের নিত্য ব্যবহার্য মালামাল বহনে ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আর চরাঞ্চলের অনেক মানুষ ঘোড়ার গাড়ির আয় দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। চরাঞ্চলের এ মানুষগুলো বছরের বার মাসকে বিভক্ত করে চলতে শিখেছে। কখনো নৌকায় ভেসে, হেঁটে, আবার কখনো প্রয়োজনের তাগিদে ঘোড়ার গাড়িতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত ও মালামাল বহন করে থাকেন চরাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষ। ব্যবসা ও বসতবাড়িসহ নানা ধরনের কাজে নৌকায় করে পণ্য আনা-নেওয়ার কাজও করেন তারা। খেয়াঘাটে যেতে বা নৌকা থেকে নেমে পণ্য বহন ও চরের ভেতরে যাতায়াতে ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করেন চরের বাসিন্দারা। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, চৌহালীর, ঘুশুরিয়া , দত্তকান্দি ও এনায়েতপুর থানার অনেক ইউনিয়ন যমুনা নদী বেষ্টিত। এসব ইউনিয়নের মানুষ বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌকায় ও ঘোড়ার গাড়ি করে নানা ধরনের পণ্য কিনে আনা-নেওয়া করেন। চরে উৎপাদিত ছন, পাট, বাদাম, মরিচ, ধান, পাট, কাউন, ভুট্টাসহ মৌসুমী বিভিন্ন ধরনের মালামাল ঘোড়ার গাড়িতে বহন করেন এসব চরাঞ্চলের মানুষগুলো।
চরাঞ্চলের মাঝি শাহাদাত ও বাদশা বলেন, চরাঞ্চলের মানুষগুলো নৌপথে প্রতিদিন চরের বিভিন্ন ঘাটে চলাচল করেন। হাটাইল , ঘুশুরিয়া , সলচর, মুরাদপুর , বড় ঘোড়জানসহ আরও চরের ছোট ছোট গ্রামে তারা ছুটে চলেন। তারা বলেন, শুষ্ক মৌসুমে চরের মধ্যে হাঁটুপানি থাকে। তাই এ সময় মানুষের চলাচল কয়েক ধাপে হয়ে থাকে। পণ্য ব্যবহারে কখনো নৌকা আবার কখনো ঘোড়ার গাড়ির প্রয়োজন হয়ে থাকে। চরাঞ্চলের ঘোড়ার গাড়িগুলোতে ১০-১৫ মণ ওজন বহন করা হয়ে থাকে। গড়ে এসব গাড়ি দিনে প্রায় ৫০ কিলোমিটারের বেশি চরের বালুময় রাস্তায় চলাচল করতে পারে। হানিফ , রেজাউল, মালেকসহ ঘোড়ার গাড়ির কয়েকজন চালক প্রতিবেদক কে জানান, পণ্য বহনে কিলোমিটার চুক্তি মোতাবেক ভাড়া পেয়ে থাকেন। প্রতিদিন ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা আয় হয় তাদের”।
আলোকিত সিরাজগঞ্জ