মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রেম করে বিয়ে; ৫ বছর পরও স্বীকৃতি পাননি স্ত্রী

প্রেম করে বিয়ে; ৫ বছর পরও স্বীকৃতি পাননি স্ত্রী

ছাত্রাবস্থায় ২০১৬ সালে বিয়ে করেন তারা। পড়াশোনার সুবাদে বগুড়া শহরে বাসাভাড়া নিয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে ঘর-সংসারও করেন তারা। সম্প্রতি একটি চাকরি পেয়ে ঢাকায় চলে গিয়ে ওই যুবতীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন ছেলেটি। স্বামীর সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ওই মেয়ে। ছেলে শাহ্ সুলতান শাকিল সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের বরশীভাঙ্গা গ্রামের জহুরুল ইসলামের পুত্র। 

জানা গেছে, ছেলের সঙ্গে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে স্বামী শাকিলের গ্রামের বাড়ির ঠিকানা যোগার করেন ওই ভুক্তভোগী যুবতী। একপর্যায়ে চলে আসেন স্বামীর বাড়িতে। কিন্তু স্বামীর পরিবার ওই মেয়েকে বউ হিসেবে মেনে নিচ্ছিল না। তাদের দাবী ছেলে বিয়েই করেনি। সবশেষ শ্বাশুড়ি, ননদ মিলে মেয়েটিকে মারপিট করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। বিষয়টি জানা জানি হলে গ্রাম্য সালিশে ঘটনার সত্যতা পেয়ে ছেলের পরিবার বিষয়টি মেনে নেয়। পরে গত ২২ জুলাই আবারও নতুন করে তাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। এরপর মেয়েটি স্বামীর সাথে শশুর বাড়িতেই থাকতেন। 

এরই মধ্যে অসুস্থ বাবা নজরুল ইসলামকে দেখতে স্বামীর বাড়ির অনুমতি নিয়েই বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বেলভুজা গ্রামে চলে যান মেয়েটি৷ সেখানে গিয়ে স্বামীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে আর ফোন রিসিভ করেননি ওই স্বামী। একপর্যায়ে গত ৬ আগস্ট ডাকযোগে একটি তালাকের কাগজ হাতে পান মেয়েটি। কাগজ পেয়ে নিরুপায় মেয়ে আবার স্বামীর বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু স্বামীর পরিবার তাকে মেনে না নিয়ে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করেন। পরে মেয়েটি আবার বাবার বাড়ি চলে যান। কয়েকদিনের ব্যবধানে তালাকের আরেকটি তাগজ হাতে পান ওই মেয়ে। পুনরায় চলে আসেন স্বামীর বাড়ি। আবারও মেয়েটিকে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করেন স্বামীর পরিবারের লোকজন। 

গ্রাম্য মাতব্বরগণ আবারো সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করেন। মেয়েটির দুঃখ- দুর্দশা দেখে স্থানীয় মাতব্বরগণ ছেলের চাচা শফিকুল ইসলামের বাড়িতে মেয়েটিকে আশ্রয় দেন। গত ১৬-১৭ দিন যাবৎ মেয়েটি  চাচা শশুর বাড়িতেই অবস্থান করছেন। 

এরই মধ্যে ছেলের চাচা সহ গ্রাম্য মাতব্বরগণ বিষয়টি মিমাংসার জন্য মেয়েটিকে নিয়ে কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট যান। ওই কর্মকর্তা বিষয়টি মধ্যস্থতার চেষ্টা করলেও ছেলের পরিবার তা মানেননি। 

ভুক্তভোগী যুবতী নিলুফা ইয়াসমিন জানান, শ্বশুর বাড়ির লোকজন পূর্ব পরিকল্পিত ভাবেই আমার সাথে এমনটা করেছে৷ তা না হলে মাত্র ৫০ হাজার টাকা মহোরানা দিয়ে কাবিন নামায় আমাকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করতো না। কয়েকদিন না যেতেই আমার নামে তালাকের কাগজপত্র পাঠায়। স্ত্রীর মর্যাদা না দেয়া পর্যন্ত জীবন গেলেও আমি এখান থেকে নড়চড় করবো না। 

অভিযুক্ত শাহ্ সুলতান শাকিলের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি। অফিসের কাজে বিজি আছেন বলে সংযোগটি কেটে দেন।

ছেলের চাচা শফিকুল ইসলাম জানান, মেয়েটা অনেক ভালো। বিষয়টা মিমাংসা করতে আমরা অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। আমার ভাতিজা ও ভাইকেও অনেক বুঝাচ্ছি কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। আমিও খুব চিন্তায় আছি মেয়েটি যে কোন সময় একটা অঘটন ঘটাতে পারে।

কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্তমকর্তা জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও ওই পরিবারটিকে বিষয়টি মিমাংসা করতে বলা হয়েছে। 

আলোকিত সিরাজগঞ্জ