তীব্র গরম বাইরে প্রখর রোদ, আবার ঘরেও দাবদাহে যেন শান্তি নেই। এয়ার কন্ডিশনার ছাড়া ঘরে টেকাও কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের বাড়িতেই এসি নেই। এ পরিস্থিতিতে তাদের চেষ্টা করতে হবে ঘরোয়া পদ্ধতিতেই ঘর ঠান্ডা রাখার।
যাদের ঘরের দেওয়ালের রং হালকা বা সিলিংয়ে সাদা রং লাগানো আছে, তাদের ঘর ঠান্ডা রাখাও অপেক্ষাকৃত সহজ। আবার যদি আপনার ঘরে যদি পশ্চিমমুখী জানালা বা বারান্দা থাকে, তা হলে বেশি তাপ ঢুকবে।
উত্তাপ কমাবে ঘরে থাকা গাছ
অ্যালোভেরা, অ্যারিকা পাম, গোল্ডেন পোথোস বা সাদা-সবুজ মিশেলের মানী প্ল্যান্ট, স্নেক প্ল্যান্ট বা ফণীমনসা, ফার্নসহ অসংখ্য গাছ রয়েছে, যা তাপমাত্রা ঠান্ডা রাখতে সক্ষম। এছাড়াও আইভি, দ্রুত বর্ধনশীল লতা এবং আলংকারিক গৃহস্থালির উদ্ভিদ দেওয়াল বা জানালায় ব্যবহার করা যেতে পারে। সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি তাপ আর রোদ প্রবেশ নিরোধক হিসেবেও এটি কাজ করবে।
জানালার সঠিক ব্যবহার
যেসব জানালা দিয়ে প্রচুর পরিমাণের সূর্যের আলো ও তাপ প্রবেশ করে সেগুলো দিনের বেলা বন্ধ রাখা উচিত। কারণ ঘরের সবচেয়ে বেশি তাপ জানালা দিয়েই প্রবেশ করে। ঘর ঠান্ডা রাখতে দিনের বেলা বা দিনের যে সময় সবচেয়ে বেশি রৌদ্রোজ্জ্বল থাকে তখন তাপ প্রবেশ করার পথ বন্ধ করে দিলে উত্তাপ কম থাকবে।
তবে রাতে ঘুমাবার আগে জানালা খুলে শীতল বাতাস প্রবেশ করতে দিতে হবে। এতে করে ভেতরের গরম বাতাস বাইরে বের হয়ে ঘরকে শীতল করবে। দিনের বেলা নতুন ভাবে রোদ না ঢুকলে এই শীতল বাতাস প্রশান্তি দেবে। এছাড়া বাজারে বাহারি ধরনের পর্দা থাকলেও গরম কমাতে চাইলে মোটা কাপড়ের এবং গাঢ় রং যেমন কালো, বেগুনি, নীল, খয়েরি এমন রংগুলো বাছাই করতে পারেন। কারণ এগুলোর তাপ শোষণ ক্ষমতা বেশি, তাপ বিকিরণ ক্ষমতা কম থাকে৷
সিলিং ফ্যানের ঘূর্ণন
গ্রীষ্মকালে এমন ভাবে ফ্যান সেট করতে হবে যাতে সেটি ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে ঘুরে। গরমের সময় এমন ঘূর্ণনের ফলে ফ্যান গরম বাতাস দ্রুত অপসারণ করতে পারে।
ডাবল গ্লাসযুক্ত জানালার ব্যবহার
কাঁচের ২ স্তর বিশিষ্ট প্যানেলকেই সাধারণত ডাবল গ্লাসযুক্ত জানালা বলা হয়। ডাবল গ্লাসযুক্ত জানালার কাঁচের স্তর ৩ থেকে ১০ মিলিমিটার পুরু হয়ে থাকে। এসব কাঁচের মধ্যকার জায়গা গ্যাস দিয়ে পূর্ণ করা হয় এবং গ্যাস যেন বেড়িয়ে যেতে না পারে তাই সিল করে দেওয়া হয়।
কাঁচের ২ স্তরের মধ্যে শূন্যস্থান সিল করা থাকে বলে ডাবল গ্লাসযুক্ত জানালা সাধারণ জানালার থেকে অনেক ভাল তাপ নিরোধক হিসেবে কাজ করে। গ্রীষ্ম ও শীতকালের চরম তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। গ্রীষ্মের গরম দিনে, ডাবল গ্লাসযুক্ত জানালা আপনাকে রক্ষা করবে প্রচণ্ড তাপ থেকে। শীতকালে এই জানালা বাইরে থেকে শীতকে ঘরের ভেতর ঢুকতে বাধা দেবে। আবহাওয়া যাই হোক না কেন, বাড়ি বা অফিসে ডাবল গ্লাসযুক্ত জানালা ঘরের ভেতরে আরামদায়ক পরিস্থিতি নিশ্চিত করে।
জানালার পাল্লা কাঁচের হলে গরম বেশি অনুভূত হয়। কারণ কাঁচের মধ্যে দিয়ে সূর্যের তাপ দ্রুত শোষণ হয় এবং ঘরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এক্ষেত্রে যেসব জানালায় সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে সেসব জানালায় হিট প্রটেক্টিং উইন্ডো ফিল্ম লাগানো যেতে পারে। যার ফলে জানালার ভেতর দিয়ে সূর্যের তাপ শোষণ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায় এবং ঘর ঠান্ডা থাকে। এছাড়াও সাদা কাগজ, সাদা হার্ডবোর্ড, জানালার পাল্লার বাহিরের দিকে লাগালে সাদা রং প্রায় সব শক্তিই বিকিরণ করবে বাইরের দিকে। ঘরে খুব কম তাপ প্রবেশ করবে।
অপ্রয়োজনে বৈদ্যুতিক যন্ত্র বন্ধ রাখা
অব্যবহৃত যে কোনো কিছু বন্ধ করা উচিত। কম্পিউটার, টেলিভিশন, ওভেন, কিংবা এমন ডিভাইস যা প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে তা বন্ধ রাখতে হবে। ঘরে ব্যবহৃত বাল্বগুলোও তাপের উৎস। তাই সব লাইট বন্ধ করা সবসময় সম্ভব না হলেও আলো যতটা সম্ভব কম রাখতে পারেন।
প্রাচীন দুই পদ্ধতি
প্রাচীন মিশরীয়রা ঘর শীতল রাখতে বেশ পটু ছিলেন। ঘর শীতল করতে তাদের সাধারণ ও কার্যকর একটি নিয়ম ছিল শীতল জলাবদ্ধতা তৈরি করা। তারা জানালা-দরজায় বা রোদ প্রবেশের স্থানে ভেজা চট রেখে দিত। রোদের তাপ ভেজা চটের পানি শুকিয়ে ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা তেমন একটা বাড়ানোর সুযোগ পেতো না।
এছাড়া ঘর ঠান্ডা রাখার জনপ্রিয় এবং প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে বরফের ব্যবহার। ফ্যানের নিচে বাটিতে বরফের টুকরা রাখলে এটি গরম তাপ শুষে নিয়ে গলতে শুরু করবে। এতে ঘর ঠান্ডা রাখা যায়।
আলোকিত সিরাজগঞ্জ