বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মের মাধ্যমে আশা তৈরি করি ও প্রিয়জনকে রক্ষা করি

কর্মের মাধ্যমে আশা তৈরি করি ও প্রিয়জনকে রক্ষা করি

আজ ১০ই সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস’ এবারের প্রতিপাদ্য ‘কর্মের মাধ্যমে আশা তৈরি করা’।  বাংলাদেশেও এই দিবসটি যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে আত্মহত্যার জন্য সমাজবিজ্ঞানীরা সাধারণত পারিবারিক কলহ, নারী নির্যাতন, দাম্পত্য সমস্যা, অসুস্থতা, ভালোবাসায় ব্যর্থতা, আর্থিক সমস্যা, যৌতুক সমস্যা, আর্থিক সমস্যা, কর্মহীনতা ইত্যাদিকে দায়ী মনে করেন।

গবেষণায় দেখা যায় যে, বাংলাদেশের আত্মহত্যাকারীদের ৪৬ দশমিক ২ শতাংশবিষন্নতায় ভুগতো। শহরাঞ্চলে গ্রামের চেয়ে দ্বিগুণ মানুষ আত্মহত্যা করেন। আর নারীরা পুরুষের তুলনায় তিনগুণ বেশি আত্মহত্যা করেন। এনআইএমএইচ এর আরেকগবেষণায় দেখা যায়, ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা ৫ শতাংশ জীবনে কমপক্ষে একবার আত্মহত্যার চিন্তা করেছিল। 

আত্মহত্যা!! একটি জীবন্ত জীবনের হাহাকার, একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু, একটি পরিবারের অপূরনীয় দীর্ঘশ্বাস আর কতগুলো বিলম্বিত প্রশ্নের হতাশাজনক উত্তর। প্রতিটি আত্মহত্যাই সে পরিবারের জন্য অসহনীয় চাপা কষ্ট।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৮ লাখ এবং প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন মানুষ আত্মহত্যা করে। আর বাংলাদেশে গত বছর মার্চ,  ২০২০ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত  ১৪০০০ এর বেশি লোক আত্মহত্যা করেন, যা এই সময়  করোনাভাইরাসে মৃত্যুর চেয়েও বেশি। সংখ্যা টা আমাদের জন্য শুধুই একটা তথ্য হলেও সে পরিবারের জন্য এটা বিরাট একটা পাথর সমান কষ্ট। 

গতবছর ১৭ই আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের কথা আমাদের অনেকেরই মনে আছে হয়ত। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২য় বর্ষের ছাত্র ইমাম হোসেন তার প্রেমিকার সঙ্গে বিচ্ছেদ টা মেনে নিতে না পেরেই খুবই বিষন্ন হয়ে যায় যেটা তখন তার ফেইসবুক পোস্ট থেকে পরিষ্কার বোঝা গেল। বিষন্নতার একটা সাধারণ লক্ষণ হলো নিজেকে অযোগ্য, অসহায়,  অবহেলিত মনে করা এবং অযথাযত ভাবে নিজেকে দোষারোপ করা হয়। বেঁচে থাকার ইচ্ছে টা তখন আস্তে আস্তে কমে যায়। এবং এ সময় ব্যক্তির মাথায় প্রথমে আত্মহত্যার চিন্তা আসে, এ সময় যদি কারো কাছে সহায়তা বা সাপোর্ট না পায় তাহলে পরবর্তী ধাপে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করে। মূলত এ দুটো ধাপে ব্যক্তি যদি কাঙ্ক্ষিত  সাপোর্ট পায় তাহলে আত্মহত্যার শেষ ধাপ থেকে রক্ষা পেতে পারে। এবং এ সময়েই আত্মহত্যার বিভিন্ন  সতর্ক সংকেত আচরণ ও কথাবার্তায়  প্রকাশিত হয়। ব্যক্তির আশেপাশে যারা আছেন তারা যদি এ সতর্ক সংকেত গুলো বুঝতে না পারেন তাহলে শেষ ধাপ আত্মহত্যার প্রচেষ্টা করে। অনেকেই প্রথমবার সৌভাগ্যবশত বিফল হয় অনেকেই দূর্ভাগ্যবশত সফল হয়। যারা বিফল হয় তাদের অতিদ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়াটা বাধ্যতামূলক। তা না হলে তারা আবার আত্মহত্যার প্রচেষ্টা করতে পারে। 

অধিকাংশ  মানুষই কোন সতর্ক সংকেত ছাড়া হুট করে আত্মহত্যা করে না। আচরনে, কথাবার্তায়, চিন্তা ভাবনায় আত্মহত্যার সম্ভাবনা বা লক্ষ্মণগুলো প্রকাশিত হয়। যেটা ব্যাক্তির আশেপাশের মানুষ বুঝতে পারার কথা । আসুন আত্মহত্যার সতর্ক সংকেত গুলো জেনে নেই। 

আত্মহত্যার সতর্কসংকেত: 

১. প্রিয়জন, বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধবের কাছে বা সোস্যাল মিডিয়া  নিজেকে আঘাত বা মেরে ফেলার হুমকি দেয়া। "মরে যাব, সবাইকে ছেড়ে অজানা অনেক দূরে চলে যাবো" এমনটি বলতে শুরু করে। 
২. আত্মহত্যা করার সরঞ্জামাদি যেমন বন্দুক, চাকু, ব্লেড, ঘুমের ঔষধ, দড়ি, কীটনাশক ইত্যাদি যোগাড় করতে থাকে।
৩. সবার কাছ থেকে কথা প্রসঙ্গে বিদায় চায়, ক্ষমা চায়৷ " আর দেখা না ও হতে পারে, আমাকে মাফ করে দিবেন/দিও"। এরকম বলতে পারে। 
৪. হঠাৎ আচরনের সাংঘাতিক এবং ভয়ংকর পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। যেসব কাজ করে আগে আনন্দ পেত, আগ্রহ নিয়ে করতো সেসব কাজের প্রতি উদাসীন হয়ে যেতে পারে। 
৫. দৈনন্দিন জীবন যাত্রায় যেমন খাওয়া-দাওয়া, ঘুমের সময়, পোষাক আশাক নিয়ে অসচেতন হয়ে উঠে। 
৬. বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল বা আলাদা করে নেয়। একাকিত্ব ব্যক্তিকে পেয়ে বসে। 
৭. নিজেকে অসফল,অযোগ্য, অবহেলিত মনে করে। নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা, বিরক্ত বেড়ে যায়। 
৮. নিজের ব্যবহার্য জিনিসপত্র, জামা কাপড় টাকা পয়সা দান করতে শুরু করে। 
৯. "আমার দ্বারা আর সম্ভব হচ্ছে না, আমি আর সহ্য করতে পারছি না, আমি আর ধৈর্য ধরতে পারছি না, আমি আর পেরে উঠতে পারছি না" এমন করে কথা বলতে পারে। 
১০. সম্পর্কের জটিলতা বা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সেটা নিয়ে সারাক্ষণ মন যন্ত্রণায় চটপট করতে পারে। 
১১. টেলিভিশনে বা বিভিন্ন মিডিয়ায় আত্মহত্যার সংবাদ গুলোর প্রতি খুবই আগ্রহ প্রকাশ করা। 
১২. আত্মহত্যার চিঠি লিখা। 
১৩. হঠাৎ করে মাদকের ব্যবহার বাড়িয়ে দেয়া। 
১৪. ফেইসবুক বা বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় হতাশাজনক, বিষন্ন লিখা, ছবি ইত্যাদি পোস্ট করা। 

আমাদের বন্ধু বান্ধব বা পরিবারের কারো মধ্যে উপরোক্ত সতর্ক সংকেত গুলো লক্ষ্য করা গেলে সেটা খুবই গুরুত্বসহকারে নিতে হবে। দূর্ঘটনা ঘটে গেলে তখন আপসোস করে একটি জীবন আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। 

যদি কারো মধ্যে উপরোক্ত সতর্ক সংকেত গুলো দেখা যায় তাহলে নিন্মোক্ত তিনভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করতে পারেন: 

আপনি তার প্রতি যত্নশীল সেটা প্রকাশ করুন:
আত্মহত্যা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করুন। আপনার যদি মনে হয় ব্যক্তিটি নিজের জীবন শেষ করে দিতে পারে, তাহলো সেটা বিশ্বাস করুন। মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনুন। তর্ক না করে আপনি যা শুনছেন, বুঝছেন সেটা তাকে বুঝতে দিন। অন্তত একজন মানুষ এই মুহূর্তে তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে সেটা তাকে বুঝান। সত্যিকার ভাবে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন যে আপনি তাকে সত্যিই কেয়ার করছেন। যে কোন প্রয়োজনে আপনি তার পাশে আছেন, সেটা তাকে নিশ্চিত করুন।  আপনার অনুভূতিগুলো তাকে বলুন। তার অনুভূতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন। 

আত্মহত্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন:

সরাসরি আত্মহত্যা বিষয়টা উপস্থাপন করতে দ্বিধা করবেন না। আত্মহত্যা সম্পর্কে তার চিন্তা ভাবনা, তার পরিকল্পনা জিজ্ঞেস করুন। কতদিন ধরে এসব চিন্তা করতেছে, কি কি পরিকল্পনা করেছে সেটা জানার চেষ্টা করুন। তার কাছে আত্মহত্যা করার সরঞ্জামাদি আছে কিনা জানার চেষ্টা করুন। সেকি আসলেই নিজের জীবন শেষ করতে চাচ্ছে নাকি কষ্ট লাঘব করতে চাচ্ছে,  জিজ্ঞেস করুন।

চিকিৎসা/সাপোর্ট  সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন:

ব্যক্তি কোনো ধরনের চিকিৎসা নিচ্ছে কিনা, ঔষধ নিয়মিত নিচ্ছে কিনা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করুন। যদি না নিয়ে থাকে তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের/ মনোবিজ্ঞানীর কাছে নিয়ে যান। ব্যক্তিকে একা ছেড়ে যাবেন না। ২৪ ঘন্টা নজরদারি করার ব্যবস্থা করুন। কোথায় রেফার করা দরকার খোঁজ নিন। ব্যক্তিকে উতসাহ দিন সহযোগিতা নিতে।  

সবশেষে আমি যেটা বলবো সেটা হলো বন্ধু-বান্ধবসহ প্রতিটি সম্পর্কের প্রতি যতটা যত্নবান হওয়া যায় ততটাই হওয়া উচিৎ। বর্তমানে আমরা ভার্চুয়াল জগতেই বেশি বিরাজমান। বন্ধুর মা বাবার চেয়ে ও আমরা যারা ফেইসবুকে দূরে আছি, তারা এসব ঘটনা গুলো আগেই জানতে পারি। যেমন ইমাম হোসেনের বেলায় যা সে ফেইসবুকে শেয়ার করলো তা যদি গুরুত্ব দিয়ে তার বাবা মা কে জানিয়ে ২৪ ঘন্টা নজরদারি তে রাখা যেত, তাহলে হয়ত তাকে আত্মহত্যা থেকে নিবৃত্ত করা যেত। আমাদের কোনো বন্ধু বান্ধব ফেইসবুকে হঠাৎ এরকম সতর্ক সংকেত মূলক পোস্ট দিলে সেখানে হা হা রিয়েক্ট না দিয়ে বিষয়টা কে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করা দরকার। তাকে কল দিয়ে কথা বলা। তার পরিবারের কাছের কাউকে বিষয়টা জানিয়ে রাখা। সম্ভব হলে তাকে মনোবিজ্ঞানীর কাছে নিয়ে যাওয়া। বর্তমানে অনলাইনে মনোবৈজ্ঞানিক সাপোর্ট পাওয়া অনেক সহজ। 

অনেক ঘাত প্রতিঘাত প্রতিটি জীবনেই আছে। খারাপ সময় শেষ হয়ে ভাল সময় আসবেই।  নিজেকে ভালোবাসুন। ভালোবাসুন নিজের অমূল্য জীবন কে। আর যত্ন করুন প্রতিটি সম্পর্ককে। 

মোঃ আকবর হোসেন 
মেন্টাল হেলথ্ এক্সপাট (মনোবিজ্ঞানী) 
এমএসএফ - হল্যান্ড এবং  চীফ এডভাইজর, সাইকোলজি এন্ড মাইন্ড

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

শিরোনাম:

স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট
এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
পুলিশকে সাহায্য করবে ক্রাইম জিপিটি!
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর