ইউক্রেনে চলমান রুশ অভিযানের মূল লক্ষ্য দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে (ডনবাস রিপাবলিক) স্বাধীন করা। ইতোমধ্যে অভিযানের প্রাথমিক পর্যায় শেষও করেছে রুশ বাহিনী।
শুক্রবার বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও দেশটির সামরিক বাহিনীর জেনারেল স্টাফ’স মেইন অপারেশনস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান সের্গেই রুডস্কয়।
বিবিসিকে রুডস্কয় বলেন, ‘ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর বিশেষ সামরিক অভিযানের প্রথম পর্যায় শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধ করার মতো সক্ষমতাও ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে।’
‘এ কারণে আমরা এখন আমাদের মূল লক্ষ্যে মনযোগ দিচ্ছি; আর সেটি হলো— ডনবাস রিপাবলিককে স্বাধীন করা।’
কিন্তু সেক্ষেত্রে রাজধানী কিয়েভ ও তার আশপাশের এলাকাগুলোতে কেন হামলা চালাচ্ছে রুশ বাহিনী— বিবিসির এ প্রশ্নের উত্তরে রুডস্কয় বলেন, ডনবাস রিপাবলিক থেকে ইউক্রেনের সেনা বাহিনীর মনযোগ অন্যদিকে সরানোর কৌশল হিসেবে কিয়েভ ও তার আশপাশের এলাকায় বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছে।
‘তবে আমরা মূলত সামরিক স্থাপনাগুলোতেই মনযোগ দিচ্ছি। বেসামরিক স্থাপনাগুলো এড়িয়ে চলতে সেনা সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে,’— বিবিসিকে বলেন রুডস্কয়।
এই প্রথম রাশিয়ার কোনো কর্মকর্তা সুনির্দিষ্টভাবে ইউক্রেনে অভিযান চালানোর কারণ ব্যাখ্যা করলেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর আগে কয়েকবার বলেছেন— ইউক্রেনে অভিযান চালানোর লক্ষ্য দেশটিকে ‘নাৎসীবাদীদের’ কবল থেকে মুক্ত করা, কিন্তু তার এই বক্তব্য অনেকেরই বোধগম্য হয়নি। ফলে, অভিযান শুরুর পর থেকেই পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম ও রাজনীতিবিদরা বলছিলেন— ইউক্রেনের সরকার পতনের মাধ্যমে দেশটিকে দখল করার জন্যই সেখানে অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া।
পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে বেশ কয়েক বছর টানাপোড়েন চলছিল দুই প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। এই টানাপোড়েনের সূত্রপাত ২০০৮ সালে; ওই বছরই ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছিল ইউক্রেন। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করার পর আরও বাড়ে এই দ্বন্দ্ব।
ন্যাটোর সদস্যপদের আবেদন প্রত্যাহারে ইউক্রেনকে চাপে রাখতে গত দুই মাস রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রেখেছিল মস্কো; কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে আসেনি। উপরন্তু এই দু’মাসের প্রায় প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অভিযোগ করে গেছে— যে কোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী।
অবশেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া; এবং তার দু’দিন পর, ২৪ তারিখ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
দোনেতস্ক ও লুহানস্ককে একত্রে ডনবাস রিপাবলিক বলে অভিহিত করা হয়। এই দুই অঞ্চলেই ব্যাপকভাবে সক্রিয় রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। রুশ অভিযান শুরুর আগে থেকেই দুই অঞ্চলের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
বিবিসিকে রুডস্কয় জানান, রুশ অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত লুহানস্কের ৯৩ শতাংশ ও দোনেতস্কের ৫৪ শতাংশ এলাকা রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে গেছে। এছাড়া অভিযানে এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৩৫১ জন ও আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৮২৫ জন রুশ সেনা।
এই সংখ্যা অবশ্য ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের দাবির চেয়ে অনেক কম। এই দেশ দু’টির দাবি— অভিযানে এ পর্যন্ত ১৫ হাজারেরও বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছেন।
আলোকিত সিরাজগঞ্জ