বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যেখানে টানা তিন মাস সূর্য অস্ত যায় না

যেখানে টানা তিন মাস সূর্য অস্ত যায় না

এই  অঞ্চলের কিছু কিছু এলাকায় টানা তিন মাস দিন থাকে। এই সময় সূর্য দিগন্ত রেখার নিচে অস্ত যায় না। আবার বছরের প্রায় তিন মাস সূর্য দিগন্তরেখার উপরে ওঠে না। তাই এই সময় এই অঞ্চলের অধিবাসীরা টানা রাতের মধ্যে জীবন যাপন করে। সে সময় শহরজুড়ে কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করে স্থানীয় সরকার। এই স্থানের নাম আলাস্কা।

এই আলাস্কা এক সময় রাশিয়ার ছিল, রাশিয়া এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রী করে দেয়। প্রায় সাত লাখ বর্গমাইল আয়তনের আলাস্কা ১৯৫৯সালে ৩জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৯তম অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে অঙ্গরাজ্য হলেও আলাস্কা থেকে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের দূরত্ব মাত্র ৫৫মাইল বা ৮৮কিলোমিটার। ঊনবিংশ শতকেও আলাস্কা এই রুশ সম্রাজ্যের নিয়মে পরিচালিত হতো। মূলত অষ্টাদশ শতকে এই অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন করে রাশিয়া। 

ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ক্রিমিয়া যুদ্ধের খরচ মেটাতে গিয়ে রুশ সম্রাজ্যের কোষাগার প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে গিয়েছিল। সেই যুদ্ধে আনুষ্ঠনিকভাবে পরাজিত হওয়ার রাজ কোষাগারকে চাঙ্গা করে তুলতে আলাস্কাকে বিক্রী করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রুশ সম্রাট দ্বিতীয় আলেকজান্ডার।

অতিরিক্ত বরফের কারণে এই অঞ্চলের পাকা রাস্তা তিন মাসের বেশি টেকে না

সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাত্র ৭২ লাখ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পুরো আলাস্কা বিক্রী করে দেয় রাশিয়া। অর্থাৎ ১৮৭২সালে আলাস্কার প্রতি একর জমির জন্য মাত্র ২ সেন্ট করে খরচ করে ওয়াশিংটন। বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী সে সময় আলাস্কার দাম পড়েছিল মাত্র এক কোটি ৩৫লাখ মার্কিন ডলার এবং প্রতি একর জমির দাম পড়েছিল ৩৭ সেন্ট নির্দেশ করে। মজার ব্যাপার হলো এই আলাস্কা থেকে প্রতি বছর প্রায় ৫০হাজার বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জ্বালানি তেল রপ্তানি করা হচ্ছে।

আলাস্কার আয়তন ছিল ৫ লক্ষ ৮৬ হাজার ৪১২ বর্গমাইল (১৫ লাখ ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটার)। আলাস্কা ক্রয়ের মাধ্যমে এই বিশাল পরিমাণ অঞ্চল আমেরিকান ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং আমেরিকার আয়তন বৃদ্ধি পায়। সে সময় আলাস্কার জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত লাখের কিছু কম। প্রতি দুই বর্গ কিলোমিটার এলাকায় গড়ে একজন করে বাস করতো। জনসংখ্যা এতো কম থাকার কারণ এই অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকায় হিমবাহ, দূর্গম পর্বত, অগ্নেয়গিরি এবং বনাঞ্চলের দখলে রয়েছে। অনাবিল এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংরক্ষণের জন্য আলাস্কার মোট ১৭ ন্যাশনাল পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। এতো বেশি সংখ্যক ন্যাশনাল পার্ক যুক্তরাষ্ট্রের আর কোনো অঙ্গরাজ্যেই পাওয়া যাবে না।

আলাস্কায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ খুবই কম

পৃথিবীর এই এক স্থানেই তিন রঙের ভাল্লুক দেখা যায়। এর মধ্যে স্থলজ শিকারী মেরু ভাল্লুকের রং ধবধবে সাদা। কোরিয়াক ও বিজলী ভালুকের রং বাদামী হয়। ভালুকদের রাজা হিসেবে পরিচিত কালো ভাল্লুকের দেখাও পাওয়া যাবে এই এলাকায়। আলাস্কা বিক্রীর পর সেখানে বসবাসরত কয়েক হাজার রাশিয়ান পরিবার ও নাগরিক তাদের মাতৃভূমি রাশিয়াতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে কিছুসংখ্যক (রুশ) মানুষ আলাস্কা ত্যাগ করেনি।

বিক্রীর আগ পর্যন্ত আলাস্কাতে কোন কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ আবিষ্কৃত হয়নি। পরবর্তীকালে প্রচুর মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ আবিষ্কৃত হয়। আলাস্কা ক্রয়ের কিছু সময় পর আলাস্কাতে প্রচুর অর্থনৈতিক সাফল্য পায় আমেরিকা। মৎস সম্পদ, পশম বাণিজ্য ও চামড়া বাণিজ্যও প্রসার লাভ করতে থাকে। আলাস্কা ক্রয়ের মাত্র কয়েকবছর পরেই Seal এর চামড়া রফতানি করে আমেরিকা প্রচুর অর্থ আয় করে। সেসব চামড়া ইংল্যাণ্ড এর রাজধানী লণ্ডন নগরীতে পাঠানো হতো। তবে এই বাণিজ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি কারণ আমেরিকা ১৫০ টি ব্রিটিশ জাহাজ আটক করেছিল এবং এতে করে দুই দেশে সংঘাত হয়। মার্কিন মালিকানাধীন আলাস্কাতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ আবিষ্কৃত হয়। এদের মধ্যে বনজ সম্পদ ও প্রাণীজ সম্পদ আছে। তাছাড়া আবিষ্কৃত হয় একাধিক Gold mine  বা স্বর্ণখনি। এখানে পাওয়া যায় কিছু তেলকূপ।

এখানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেশ চড়া-নিউইয়র্কের থেকেও অনেক বেশি

আলাস্কার অধিবাসীরা তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র এমনকি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা মেটাতে রফতানি ওপর বাধ্য হন। এখানে আবাদযোগ্য জমি নেই বললেই চলে। বিচ্ছিন্ন যেটুকু আছে সেখানে হিমশীতল পরিবেশের কারণে চাষাবাদ করা মোটেও সহজ না। সেজন্য এখানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেশ চড়া-নিউইয়র্কের থেকেও অনেক বেশি। তবে আলাস্কার আয় অনেক বেশি হওয়ায় এই বাড়তি ব্যায় আলাস্কার কোন ক্ষতি করে না। এই অঞ্চলের এক একটি পরিবারের বার্ষিক ব্যায় গড়ে ৫৫হাজার মার্কিন ডলার এবং আয় প্রায় ৮০হাজার মার্কিন ডলার।

ইতিহাস অনুযায়ী এই অঙ্গরাজ্যে জুলাই মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে। জানুয়ারি মাসে তা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়। জুলাই মাসের গড় তাপমাত্র ১০থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জানুযারি মাসে তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৫ থেকে মাইনাস ১৫ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন পর্যন্ত আলাস্কার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৯৪৫সালে ২৭শে জুন। ঐ দিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ফোর্ট ইউকোন এলাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিন্ম তাপমাত্রা মাইনাস ৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৭১সালের ২৫জানুয়ারি পোসপেক্ট ট্রি নামের জায়গায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।

এখানে চলাচলের জন্য নৌযান ভালো

অতিরিক্ত বরফের কারণে পাকা রাস্তা এখানে কয়েক মাসের বেশি টেকে না। তাই আলাস্কায় যাতায়াতের জন্য উড়োজাহাজ বা নৌযান বেশি উপযুক্ত। ৩৫ভাগ জলভূমির এই অঞ্চলে পানিতে উঠানামা করতে সক্ষম সী-প্লেনগুলো জন্য আদর্শ। 

 

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

শিরোনাম:

স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট
এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
পুলিশকে সাহায্য করবে ক্রাইম জিপিটি!
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর