রাশমিকার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

ভারতের দক্ষিণী চলচ্চিত্রের বর্তমান আলোচিত অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানা। ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন তিনি। অভিনয় দক্ষতা ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের জন্য নেট দুনিয়ায় তিনি তুমুল জনপ্রিয়। কেউ কেউ তাকে এই মুহূর্তে ভারতের ক্রাশ বলেও বিবেচনা করছেন।

ভারতে রাশমিকা মানেই এখন বক্স অফিসে হিট। দর্শকদের একের পর এক সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রাশমিকার ভক্তদের সংখ্যা৷ জানা গেছে, রাশমিকাকে শুধু একবার সামনে থেকে দেখার জন্য ৯০০ কিলোমিটার দূর থেকে কর্ণাটকে চলে এসেছিলেন এক ভক্ত।

কিন্তু রাশমিকার জীবনের গল্প এখনকার মতো এত রঙিন ছিলো না। জীবনের বিভিন্ন সময়ে ছোট ছোট নানা কারণে বিদ্রূপের শিকার হতে হয়েছে এই অভিনেত্রীকে। তারকা ব্যক্তিদের নেটমাধ্যমে কটাক্ষের শিকার হওয়া এখন নৈমিত্তিক ঘটনা। জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সমান তালে ট্রলের শিকার হতে হয়। সুদক্ষ অভিনেত্রী ও সুন্দরী হয়েও এর থেকে রেহাই পান নি রাশমিকা।

ক্রমাগত এই কটাক্ষ, ঘৃণা, উপহাসের মধ্যেও ভালো থাকার চেষ্টা করেছেন রাশমিকা। বাইরের মানুষের অহেতুক আক্রমণ উপেক্ষা করে নিজের মনের সঙ্গে ক্রমাগত যুদ্ধ করেছেন তিনি। যদিও দিনের পর দিন এই কটাক্ষের কারণে মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েন নি।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে শরীর নিয়ে কটাক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন রাশমিকা। কাউকে নিয়ে তামাশা করলে তা কিভাবে তার মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্থ করে সেটি নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

শরীর নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য ও ট্রলিং নিয়ে তিনি বলেন, কেউ যখন ক্রমাগত নিজের দেহ, গায়ের রং ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং বিদ্রূপ করতে থাকে, তখন মনে হয় আমি যেন রাস্তায় জনতার সামনে নগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি। শুধু শরীর নিয়েই নয়, বিদ্রুপকারীরা রাশমিকার পরিবার, ব্যক্তিজীবন, এমনকি তার স্কুল ও সামগ্রিক বেড়ে ওঠা— এ সব কিছু নিয়েই ট্রল করেছে।

পোশাক নিয়ে রাশমিকাকে প্রতিনিয়ত ট্রলের শিকার হতে হয়৷ কখনও আবেদনময়ী প্যান্ট পরার জন্য, কখনও বা অন্তর্বাস নিয়ে তাকে কটাক্ষ করা হয়। একবার গাড়ি থেকে নামার সময় মাস্ক পরতে ভুলে গিয়েছিলেন তিনি৷ সেটি নিয়েও তাকে ট্রলের শিকার হতে হয়েছে।

আরেকবার ছোটবেলার একটি ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন রাশমিকা। সেখানে এক নেটিজেন তাকে ‘দাগার’’ বলে মন্তব্য করেন। কন্নড় ভাষায় এর অর্থ যৌনকর্মী৷ রাশমিকা তৎক্ষণাৎ এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, কোনো ব্যক্তিকে এই ধরনের কুরুচিকর আক্রমণ করা উচিত নয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন- তারকাদের এই ধরনের আক্রমণ করে কী লাভ? শুধু জনপ্রিয় বলেই কি একজনকে যা ইচ্ছে তা বলা যায়?

তিনি বলেন, কাজ নিয়ে সমালোচনা করুন৷ প্রত্যেক পেশার সম্মান আছে৷ অহেতুক পরিবার বা ব্যক্তিজীবন নিয়ে নোংরা মন্তব্য করবেন না। প্রত্যেককে সম্মান করা উচিত।

দিনের পর দিন এসব নেতিবাচক মন্তব্যে ভেঙে পড়ছিলেন রাশমিকা। নিজেকে হারিয়ে ফেলতে শুরু করেন তিনি। নিজের অভিনয় দক্ষতা নিয়ে সন্দিহান হয়ে ওঠেন। এমনকি নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে সঠিক মূল্যায়ন করার শক্তিও হারিয়ে যাচ্ছিলো তার।

এই সময়টি অত্যন্ত কঠিন ছিল। নিজের মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে স্বাভাবিক জীবনের পথে ফেরা, পুনরায় নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ ছিল না, বলছিলেন রাশমিকা। কিন্তু সমস্ত নেতিবাচক ঘৃণ্য মন্তব্যকে পেরিয়ে, মানসিক অবসাদকে হারিয়ে রাশমিকা আজ স্বপ্রতিভায় ভাস্বর।

এ নিয়ে রাশমিকা তার ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, মানুষ হিসেবে সবার মধ্যেই কিছু খুঁত রয়েছে। কিছু বিষয় নিয়ে অপারগতা থাকবেই। কিন্তু এমন এক সময় আসবে, যখন তুমি বুঝবে, লোকে কী বলবে, তার থেকেও তোমার ব্যাপ্তি অনেক বেশি।

তিনি আরও লিখেছেন, তুমি শক্তিশালী, তুমি সুন্দর এবং তুমি একাই পারবে। নিজের মধ্যে এই বোধ এলেই আর কেউ তোমাকে থামাতে পারবে না। অন্য লোকে কী বলবে সেই বিষয়ে আমরা অতিরিক্ত ভাবনা-চিন্তা করি। মানুষ অন্য মানুষের প্রশংসা, ভালোবাসা চায়৷ কিন্তু তোমার নিজের জীবনের মালিক তুমি৷ জীবনকে কিভাবে চালাবে, তা ঠিক করার দায়িত্ব শুধুই তোমার।

রাশমিকার এগিয়ে চলার মূলমন্ত্র আত্মবিশ্বাস। ২০১৬ সালে কন্নড় ছবিতে অভিনয় করে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন তিনি। খুব শিগগিরই বলিউডেও দেখা যাবে তাকে। ‘মিশন মজনু’ ছবিতে সিদ্ধার্থ মালহোত্রার বিপরীতে অভিনয় করার কথা রয়েছে জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা