বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১

জনসচেতনতা

ফাতেমা তাসনিম উপদেষ্টা নাহিদের বোন নন, তাঁর কোটায় চাকরি পাওয়ার দাবি গুজব 

ফাতেমা তাসনিম উপদেষ্টা নাহিদের বোন নন, তাঁর কোটায় চাকরি পাওয়ার দাবি গুজব 

সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পতন ঘটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের। এরপর ৮ আগস্ট দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব নেয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ। এই সরকারে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বড় বোন ফাতেমা তাসনিম চাকরি পেয়েছেন ‘কোটা’ বা বিশেষ বিবেচনায়। তাঁকে কানাডার বাংলাদেশ মিশনের পাবলিক রিলেশন অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

উপদেষ্টা নাহিদের বোন নন ফাতেমা তাসনিম, দূতাবাসে চাকরির পাওয়ার দাবি। ছবি: ফেসবুক

উপদেষ্টা নাহিদের বোন নন ফাতেমা তাসনিম, দূতাবাসে চাকরির পাওয়ার দাবি। ছবি: ফেসবুক ‘সাপোর্টার্স অব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে গতকাল মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় এমন একটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটি করা হয় ‘দিনাজপুর আওয়ামী যুবলীগ’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে। পোস্টটিতে দাবি করা হয়, ফাতেমা তাসনিম দূতাবাসে নিয়োগ পাওয়ার আগে কোচিং সেন্টারের শিক্ষক ছিলেন। পোস্টটিতে সূত্র হিসেবে ‘বিডি প্যানোরামা (BD Panorama)’ নামের একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশটও যুক্ত করা হয়েছে। 

বিডি প্যানোরামা নামের ওয়েবসাইটটিতে প্রতিবেদনটি গত ৭ সেপ্টেম্বর ‘কোটায় চাকরি পেলেন উপদেষ্টা নাহিদের বোন ফাতেমা তাসনিম’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, ফাতেমা তাসনিমকে কানাডার বাংলাদেশ মিশনের পাবলিক রিলেশন অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে কানাডার বাংলাদেশ মিশনে সম্প্রতি চাকরিচ্যুত মিথিলা ফারজানার স্থানে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিন বছরের মেয়াদে ফাতেমা তাসনিম এই চাকরি পেয়েছেন। তাঁকে আগামী ১ অক্টোবর কানাডায় জয়েন করার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

প্রতিবেদনটিতে আরও দাবি করা হয়, ফাতেমা তাসনিম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংলিশে অনার্স ও মাস্টার্স করে মগবাজারে একটি কোচিং সেন্টারে পড়াতেন। বিশেষ বিবেচনায় এই নিয়োগে ফাতেমা তাসনিম তাঁর স্বামী আরিফ সোহেলসহ কানাডায় যেতে পারবেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। এই নিয়োগপত্রে ফাতেমা তাসনিম টরন্টোতে বাংলাদেশ মিশনের ভাড়া করা বাসা, ড্রাইভারসহ গাড়ি ছাড়াও প্রতি মাসে ৬ হাজার কানাডীয় ডলার বেতন পাবেন। 

এসব দাবির বিপরীতে কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও এমন কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, কানাডার অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে কাউন্সিলর হিসেবে ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর ২ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান একাত্তর টেলিভিশনের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান মিথিলা ফারজানা। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের পরিচালক ও কাউন্সিলর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তবে গত ১৭ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখা থেকে উপসচিব আব্দুল্লাহ আরিফ মোহাম্মদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাঁর এ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের তালিকায়ও ফাতেমা তাসনিম নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। 

পরে বিডি প্যানোরামার ওয়েবসাইটে থাকা ফাতেমা তাসনিমের ছবিটি রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের ফেসবুক পেজে তাঁর একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটি থেকে জানা যায়, তিনি গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য। 

উপদেষ্টা নাহিদের বোন নন ফাতেমা তাসনিম, দূতাবাসে চাকরির পাওয়ার দাবি। ছবি: বিডি প্যানোরামা

উপদেষ্টা নাহিদের বোন নন ফাতেমা তাসনিম, দূতাবাসে চাকরির পাওয়ার দাবি। ছবি: বিডি প্যানোরামা ফেসবুকে ভাইরাল দাবিটি সম্পর্কে জানতে ফাতেমা তাসনিমের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। তিনি বলেন, ‘এটি আসলে টোটালি রিউমর। কিছু অনিবন্ধিত অনলাইন পোর্টাল অসত্য কিছু তথ্য দিয়ে এগুলো প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনগুলোর প্রথম কলাম থেকে শেষ কলাম পর্যন্ত যা যা বলেছে, সব ভুল, প্রোপাগান্ডা ও মিথ্যা।’ 

তাঁকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দাবি করা হলেও তিনি বলেন, ‘এটিও মিথ্যা। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছি। বর্তমানে সেন্ট্রাল ল কলেজে আইন নিয়ে পড়াশোনা করছি। পাশাপাশি রাজধানীর মৌচাকে আমার একটি জুয়েলারি, কসমেটিক আইটেমের শপ আছে।’ 

উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও ফেসবুকে ভাইরাল দাবিটি সঠিক নয় বলৈ দৈনিক প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে জানান, ‘ফাতিমা তাসনিম নামের এই নারী আমার পরিবারের কেউ নন। তিনি কোথায় নিয়োগ পেয়েছেন, তা আমি জানি না। তাঁর সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগও নেই। তিনি মূলত গণঅধিকার পরিষদের নেত্রী।’

সর্বশেষ: