শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা ১৩ গুণ বৃদ্ধি করার কাজ করছে সরকার

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা ১৩ গুণ বৃদ্ধি করার কাজ করছে সরকার

সক্ষমতা বাড়ার অর্থ যদি উন্নয়ন হয়, তা হলে যেকোনো ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাশাও বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। উন্নয়নকে আরো ব্যাপক অর্থে সভ্যতার চাবিকাঠিও বলা যেতে পারে। উন্নয়ন বাদ দিয়ে সভ্যতার অগ্রগতির কথা চিন্তা করাই যায় না। যেকোনো উন্নয়ন মানুষের প্রত্যাশাকে বাড়িয়ে দেয়। আর সেই প্রত্যাশা সব ক্ষেত্রে মানুষের চিন্তাকে গতিশীল করে। এ গতিশীল চিন্তাই আবার সভ্যতাকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যায়।

কর্ণফুলীতে জেটি নির্মাণের মাধ্যমে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে বহু গুণ। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গ্রিন পোর্টের উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। গ্রহণ করা হয়েছে নানামুখী প্রকল্প। আর এ নানামুখী প্রকল্প গ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বন্দর ব্যবহারকারীদের প্রত্যাশাও বেড়েছে। ব্যবহারকারীরা মনে করেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মক্ষমতা বেড়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে যোগ্য নেতৃত্ব, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত এবং পৃষ্ঠপোষকতা। অতীতে অপেক্ষার গড় যেখানে আট দিন ছিল, বর্তমানে তা দুই দিনে নেমে এসেছে। কনটেইনারের ওঠানামার হারও বেড়েছে অনেক। ফলে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি হয়েছে ৯ শতাংশ। অন্যদিকে, সাধারণ কার্গো ওঠানামায়ও বৃদ্ধির হার আশাব্যঞ্জক।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কিছু পদক্ষেপের ফলে জাহাজের অবস্থানকাল কমে যাওয়ার পাশাপাশি পণ্য হ্যান্ডলিংও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত রেখে বন্দরের সক্ষমতা ১৩ গুণ বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করে আগামীর বন্দরখ্যাত বে-টার্মিনাল নির্মাণ, পতেঙ্গায় কন্টেইনার টার্মিনাল, লালদিয়া টার্মিনাল ও কর্ণফুলী কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কন্টেইনার জট কমাতে ৩৭ একর জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে ওভারফ্লো কন্টেইনার ইয়ার্ড। সাউথ কন্টেইনার ইয়ার্ডে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে নিলামকৃত পণ্যের কন্টেইনার। সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর এলাকায় আরেকটি টার্মিনাল নির্মাণের ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ হালিশহর সমুদ্র উপকূলে প্রায় আড়াই হাজার একর ভূমিতে বে-টার্মিনাল গড়ে তুলছে। বিস্তৃত এই ভূমিতে বিদ্যমান চট্টগ্রাম বন্দরের পাঁচ গুণেরও বেশি বড় বে-টার্মিনাল গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে হুকুম দখলকৃত ব্যক্তিমালিকানাধীন ৬৮ একর ভূমিতে ট্রাক টার্মিনালসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে তোলার কাজ চলছে। আগামী বছর এই টার্মিনালে কিছু কার্যক্রম শুরু হবে।

পতেঙ্গায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। বোট ক্লাবের কাছে বিমানবন্দর সড়ক সোজা করা এবং কয়েকটি স্থাপনা সরিয়ে ২৬ একর জায়গায় টার্মিনালটি হবে।

২০২০ সালের জুনের মধ্যে এখানে জাহাজ ভিড়বে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা। এই প্রকল্পের আওতায় ৬শ মিটার জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে ৩টি কন্টেইনার জাহাজ বার্থিং নিতে পারবে। একইসাথে নির্মাণ করা হচ্ছে ২২০ মিটার ডলফিন জেটি। এখানে ভোজ্য তেলবাহী জাহাজ বার্থিং নিতে পারবে। পতেঙ্গা টার্মিনালে বছরে সাড়ে ৪ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মিত পতেঙ্গা টার্মিনালের প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

বন্দরে বর্তমানে ১০টি গ্যান্ট্রি ক্রেন দিয়ে চলছে কন্টেইনার ওঠানামার কাজ। টার্মিনালের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন, স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার, রিচ স্ট্যাকার, রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি, রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের কার্যক্রমও গ্রহণ করা হবে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ পতেঙ্গার লালদিয়ার চর এলাকায় লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ করবে। ৫৮ একর ভূমিতে ৮২০ মিটার লম্বা জেটিসহ অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। এই টার্মিনালে কন্টেইনারের পাশাপাশি জেনারেল কার্গোবাহী জাহাজও হ্যান্ডলিং করা হবে।

সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর এলাকায় একটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই চারটি টার্মিনাল নির্মিত হলে চট্টগ্রাম বন্দর জাহাজ, খোলা পণ্য কিংবা কন্টেইনার হ্যান্ডলিং নিয়ে অনেকদিন নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ গতকাল বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেবা বাড়ানোর নানা পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বন্দরের সংরক্ষিত এলাকা বাড়ানো হয়েছে। জাহাজ এবং কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা বাড়াতে গৃহীত এসব পরিকল্পনায় চট্টগ্রাম বন্দরকে অন্তত ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে এই বন্দরের সক্ষমতা ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাবে। তা দিয়ে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের সব চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।

তিনি জানান, মাত্র ৬ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে ১৯৭৬ সালে কন্টেইনার পোর্টের যাত্রা শুরু হয়েছিল। গত বছর তা ২৯ লাখ ৩ হাজার ৯৯৬টি কন্টেইনারে উন্নীত হয়েছে। ২০৩৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ৫৬ লাখ টিইইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে হবে বলে ইতোমধ্যে বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

 

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর
ঈদের দিন ৩ হাসপাতাল পরিদর্শন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
আয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
জুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেই